সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

ক'দিন আগেই গেল পুজোর মরসুম। রং-বেরং এর পোষাকে সেজে ঘুরল সবাই। তারপরে কালীপুজো গেল, তাতে কত রকম রং-এর আলো আর বাজিই না দেখলাম ! কত রকমের রং যে আমাদের চোখের সামনে সব সময়েই দেখতে পাচ্ছি তা বলে শেষ করা যাবে না। এই যে কম্পিউটার বা ট্যাবে তুমি এই লেখাটা পড়ছ, তার মনিটর বা স্ক্রীন দেখাতে পারে ১৬.৮ মিলিয়নের কাছাকাছি রঙ ! ভাবতে পার?

চারপাশে এত রংএর যে বাহার দেখতে পাই, তার উৎস কি জান ? বলছি শোন।

এটা ত জান যে আমাদের সব শক্তির মুলে রয়েছে সূর্য, আগে কখনও বলেছি মনে হয়। আলোও এমন এক প্রকারের শক্তি! আর সেই আলোর বিভিন্ন রং হওয়ার কারনও সেই সূর্য! কি করে ? সেটাই দেখি এখন ।

সূর্য যে আলো আমাদের পৃথিবীকে পাঠায় সেটা সাদা। বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার আইজাক নিউটনের নাম শুনে থাকবে। তিনি প্রথম দেখান যে সূর্যের আলোর রং সাদা দেখালেও আসলে তা সাতটা বিভিন্ন রং দিয়ে তৈরী। প্রিজম দেখেছ ? না দেখে থাকলেও নাম শুনে থাকবে। এর আর এক নাম হল 'ত্রিশির' কাচ, মানে তিনটি শির বিশিষ্ট এক খন্ড কাচ আর কি । এর এক দিক দিয়ে সাদা আলো পাঠালে অন্য দিকে যে আলো বেরোবে তা আর সাদা থাকবে না, সাতটা বিভিন্ন রঙে বিশ্লেষিত হয়ে বেরোবে। এরা একটা রঙিন পটির (band) আকারে বেরোবে। এই রঙিন পটির নাম হল 'বর্ণালী' (spectrum)। পটির এই রং গুলো কি কি জান ? ক্রম অনুযায়ী ( কার পরে কে থাকে তাকে ক্রম বলে), রং গুলোর ইংরাজি নামের আদ্য অক্ষর পর পর সাজালে এ রকম লেখা যায় VIBGYOR, যা আসলে V(Violet-বেগুনি), I(Indigo-নীল), B(Blue-আকাশী), G(Green-সবুজ), Y(Yellow-হলুদ), O(Orange-কমলা), R(Red-লাল)। আর বাংলা আদ্য অক্ষরে সাজালে ? 'বেনীআসহকলা' হবে (ওপরের বাংলা নামের আদ্য অক্ষরগুলো নিয়ে এটা হয়েছে)। বাংলা বা ইংরাজী, যে কোন নামের আদ্য অক্ষরগুলো দেখ, কার পর কে আসবে সেটা এই সজ্জা থেকেই বুঝতে পারবে। মনে রাখারও খুব সহজ উপায়, কি বল ?

এমনিতে বলতে যত সোজা বুঝতে ততটা নয়। তাই বোঝার জন্য বাড়িতে একটা সহজ পরীক্ষা করে দেখতে পার। একটা পরিষ্কার কাচের গ্লাসে অর্ধেকটা জল নাও। যে জানালা দিয়ে রোদ আসছে সেই জানালার আলসের (জানালার ভেতর দিকে, ফ্রেমের পাশে একটু তাকের মত জায়গা থাকে, সেটা) ওপর গ্লাসটাকে এমন ভাবে বসাও যেন জলটা সরাসরি রোদ পায়। এবার মেঝের দিকে দেখ। কেমন সুন্দর গোলাকার রঙিন আলো দেখতে পাবে, কতকটা রামধনুর মত। ওপরে যে সব রঙের কথা বলা হয়েছে, খুব ভাল করে দেখলে ঐ সাতটা রঙ দেখতে পাবে। এরা পর পর সাজানো থাকলেও পরিষ্কার দেখাবে না, মনে হবে যেন এক রঙের সাথে আর এক রঙ মাখা মাখি হয়ে আছে। পরিষ্কার আলাদা দেখাবেই বা কি করে ?

(কিন্তু এটা হল কি করে ? প্রিজম কোথায় ? গ্লাসের জলের ওপরের তল আর কাচের দেওয়ালের খাড়া অংশ মিলে একটা কোনাকৃতি অংশ তৈরী হয়েছে , লক্ষ্য করলেই দেখতে পাবে।)

পরীক্ষাগারে না গেলে, ভাল করে দেখার ব্যবস্থা না করলে কি ভাল করে দেখা যায় ? স্কুলের বিজ্ঞান পরীক্ষাগারে সব কিছু আছে। প্রিজম না পেলে বা পরীক্ষাগারে না গেলেও, বাড়িতে এইভাবে সূর্যের আলো বিশ্লিষ্ট করে 'বেনীআসহকলা' দেখতে পারো। আর স্কুলের দিদিমণি বা স্যারকে বললে তিনি পরিষ্কার বর্ণালী দেখার ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন।

আমাদের চারপাশে কত রঙের বাহার দেখি বলত ? বিভিন্ন রং-এর ফুল- ফল-সব্জী-বাড়িঘরের নানারং- তোমার ছবি আঁকার প্যাস্টেল-জলরং-রাস্তার আলো---আরও কত রকমের রং যে আমরা দেখি তার ইয়ত্তা নেই।

আমরা কোন কিছু দেখি কি করে, জান ? কোন বস্তু থেকে আলো প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে পড়ে বলে। অন্ধকারে বস্তুতে আলো পড়ে না। আলো না পড়লে কোন আলো প্রতিফলিত হবে না, তাই দেখতেও পাই না!

ব্রাজিলের হলুদ রং-এর জার্সি হলুদ কেন, এটা জিজ্ঞেস করলে নিশ্চয়ই ভাববে এটা ত একটা বোকা বোকা প্রশ্ন হল, তাই ত ? কিন্তু মোটেই তা নয়। কোন জিনিষকে আমরা হলুদ দেখি কারন সে সূর্যের সাতটা রং থেকে হলুদ বাদে আর সব রং শোষন করে নেয়, আর হলুদকে প্রতিফলিত করে। সেই প্রতিফলিত রং-টাই আমরা দেখি। লাল ফুলকে লাল দেখাবে একেবারে সেই কারনেই। অস্বচ্ছ বস্তুর ক্ষেত্রে এমন হবে।

কিন্তু স্বচ্ছ বস্তুর ক্ষেত্রে হবে একটু অন্য রকম। স্বচ্ছ বস্তু, যেমন রং হীন কাচে আলো পড়লে, সব গুলো রং-ই কাচ ভেদ করে ওপর পাশে চলে যায়। কাজেই যে সাদা আলো ঢুকবে সেই সাদা আলোই বেরোবে অন্য পাশ দিয়ে। কিন্তু রঙ্গিন কাচ হলে এমন হবে না। লাল কাচ হলে লাল ছাড়া অন্য সব আলো আটকে যাবে ঐ কাচে। আর তা ভেদ করে বেরিয়ে যাবে কেবলমাত্র লাল রং ! সেই জন্য সূর্যের সাদা আলো লাল কাচে পড়লে যে ছায়া পড়ে সেটা লাল দেখায়। একই কারনে সাদা কাগজকে স্বচ্ছ নীল কাচ দিয়ে দেখলে নীলই দেখাবে।

এখন, ধরা যাক নীল-সাদা ডোরাওয়ালা আর্জেন্টিনার জার্সি পরে হলুদ আলোতে খেলছে কেউ। তার জার্সিটা কেমন দেখাবে ? নীল অংশে হলুদ আলো পড়লে সেটা শোষিত হবে, কোন আলো প্রতিফলিত হবে না অর্থাৎ তোমার চোখে কোন রং-ই পৌঁছবে না, তাই নীল ডোরাগুলো কালো দেখাবে। কিন্তু সাদা ডোরা ? সেগুলো হলুদ দেখাবে, কেননা অন্য সব আলো শোষিত হয়ে কেবল হলুদ আলো প্রতিফলিত হয়ে তোমার চোখে পৌঁছবে! আর্জেন্টিনার এত প্রিয় নীল-সাদা জার্সিটা হলুদ-কালো হয়ে যাবে! অ্যাঃ !

লাল ফুলকে লাল কাচে দেখলে টকটকে লাল দেখাবে ঠিকই, কিন্তু নীল কাচে দেখলে ভারি গোলমাল হবে! কারন লাল কাচ কেবল লাল রং-কেই তার মধ্যে দিয়ে পার হতে দেয় বলে লাল ফুলকে লাল দেখায়, নীল কাচ কিন্তু তার মধ্যে দিয়ে লাল রং পার হতে দেবে না মোটেই, মানে তোমার চোখে কোন আলো আসবেই না। সব অন্ধকার দেখাবে। তাহলে নীল কাচে লাল ফুল দেখলে সেটা একেবারে কালো দেখাবে! কালো ফুল হয় কখনও ? আর নীল কাচে আর্জেন্টিনার জার্সিটা কেমন দেখাবে ? সবটাই নীল ছাড়া আবার কি ? নীলটা ত নীল দেখাবেই সাদাটাও নীল দেখাবে। তাহলে বল, কলকাতার ইষ্টবেঙ্গল ক্লাবের জার্সির রং লাল-হলুদ, নীল কাচে দেখলে কেমন দেখাবে সেটা ?

আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি তোমাদের। এক খন্ড কাচকে রোদে রাখলে কখন লাল বা নীল দেখাবে ? উত্তর হল যদি সে তার ভেতর দিয়ে লাল আলো পার হতে দেয় তবে লাল দেখাবে, আর যদি নীল আলো পার হতে পারে তবে সেটা নীল দেখাবে!

এখন,যদি সবুজ আলো ফেল এই লাল আর নীল কাচের ওপর তবে সে দু'টোই কালো দেখাবে তাতে আর সন্দেহ কি ! কারনটা কি বলত ?

আবার কাচখন্ড দু'টো একসাথে পর পর রেখে সূর্যের আলোয় ধর। তবে দেখতে পাবে তা কালো দেখাচ্ছে! শুধু তা'ই নয়, নীচের মাটিতে বা নীচে রাখা কাগজে যে রোদ পড়বে, তাতে সব জায়গা সাদা দেখালেও যেখানে কাচ ভেদ করে আলো পড়ার কথা সেখানটা কালো দেখাচ্ছে, মানে আলো পৌঁছচ্ছে না!

আলো আর রঙ নিয়ে আমাদের গপ্পো আজ এইটুকুই থাক। বাকি কথা পরেরবার।


ছবিঃউইকিপিডিয়া

সন্তোষ কুমার রায় অবসরপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক। বিষয় পদার্থবিজ্ঞান। শৈশব ও কৈশোর যথাক্রমে বাংলাদেশে এবং কলকাতায় কাটলেও, কর্মজীবন কেটেছে বাংলা বিহার সীমান্তের হিন্দুস্থান কেব্‌ল্‌স্‌ শিল্পনগরীতে। শিল্পনগরী থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকায় ছোটদের এবং বড়দের জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক লেখা লিখেছেন বহুবছর। বর্তমানে ইচ্ছামতীর পরশমণি বিভাগে নিয়মিত লেখা ছাড়াও তিনি একটি গ্রুপ ব্লগের সদস্য রূপে লেখালিখি করেন ।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা