খেলাঘরখেলাঘর

'ইন্দ্রিয়' কাকে বলে জান ?

আমাদের অনুভূতির জন্য যে সব অঙ্গ রয়েছে, সে গুলোই ইন্দ্রিয়। মানুষের কটা ইন্দ্রিয় বলত ? পাঁচটা। ওরা হল- চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহবা, আর ত্বক অর্থাৎ দেখা, শোনা, গন্ধ অনুভব করা, স্বাদ পাওয়া,আর স্পর্শ অনুভব করার অঙ্গেরা সব।

এদের মধ্যে চোখই সব থেকে তালেবর, কেননা অন্য সকলের কার্যকারিতা কমবেশী হলেও চলে যায় কিন্তু চোখের বেলায় সে সব খাটবে না!

আচ্ছা, একটা খটকা কখনও লাগে না তোমাদের ? একটা চোখ বন্ধ করে দেখ,অন্য চোখ দিয়ে মোটামুটি ভালই দেখা যায় সব, অথচ আমাদের সবার দু'টো করে চোখ! আশ্চর্য না ? আবার দেখ, কান, নাকের বেলাতেও তাই। দিব্যি এক কানে বা নাকে কাজ চলে গেলেও দু'টো কান, নাকের দু'টো ফুটো! কিসের জন্য ? অবাককান্ড আর কাকে বলে! কি ব্যাপারখানা, সেটা বলতে পারবে!

চল দেখা যাক।

তোমার দু হাত সামনের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে হাত মুঠো কর। এবার কেবল দুই তর্জনী মুখোমুখি করে হাত দু'টো দু' দিকে প্রসারিত কর দাঁড়াও। এবার এক চোখ বন্ধ করে অন্য চোখ খোলা রেখে দু' তর্জনীর মাথা দু'টো কাছা কাছি নিয়ে এসে, একবারে একটার সাথে আর একটা ছোঁয়াও ত দেখি ! পারবে না। তবে বার কয়েক চেষ্টা করলে পারতেও পার। দু'টো দেশলাই কাঠির মাথা এমন করে কিছুতেই ছোঁয়াতে পারবে না ! আর এক চোখে যদি সূঁচে সুতো পরাতে বলা হয়, তাহলে ত সারা জীবন লেগে যাবে মনে হয়! দেখ না একবার চেষ্টা করে ! কিন্তু, যদি দু'চোখ খুলে পরাতে বলি ? তখন কিন্তু চট করে সুতো পরানো হয়ে যাবে! কি বল, হবে না ?

আসলে দুটো চোখের দরকার হয় কোন বস্তুর সঠিক অবস্থান জানতে। এক চোখ দিয়ে এটা কখনোই সম্ভব নয়।

কানের ব্যাপারটাও একই রকম! এক কান একদম বন্ধ করে দিয়ে যদি কোথাও পটকা ফাটার শব্দ শোন, তাহলে বাকি অন্য কান দিয়ে শুনে কিছুতেই বুঝতে পারবে না শব্দটা কোথায় হল! কেউ তোমার নাম ধরে ডাকলেও বুঝতে পারবে না কে, কোন দিক থেকে তোমাকে ডাকল ! যেমন এক চোখ দিয়ে কোন বস্তুর সঠিক অবস্থান বোঝা যায় না, ঠিক তেমনি এক কান দিয়ে কোনও শব্দের উৎপত্তিস্থলের হদিশ পাওয়া সম্ভব নয়।

কানের বাইরের অংশ, যা বাইরে থেকে দেখা যায়, তার দরকারটাই বা কি ? দেখ, এটা কিন্তু খুব দরকারি! কুকুর, বেড়াল বা গরূকে কখনও লক্ষ্য করেছ ? হঠাৎ হঠাৎ কান দুটো খাড়া করে ওরা! কেন বল দেখি ? ওরা দুরের বা কোন মৃদু শব্দ শোনার চেষ্টা করে! কানের বাইরের অংশ দুটো প্রতিফলকের কাজ করে। যখন এমনি এমনি নেতানো থাকে তখন অনেক শব্দই হয়ত ওরা শুনতে পায় না, কিন্তু কোন ভয়ের বা কৌতুহলোদ্দীপক শব্দ হলে কান খাড়া করে শুনবার চেষ্টা করে! দুর্বল বা দুরের শব্দ প্রতিফলকে ধাক্কা খেয়ে কানের মধ্যে বেশী করে ঢুকে পড়ে! শুনতে সুবিধা হয়। আমাদের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার, তবে সর্বদাই কান খাড়া থাকে, কখনও নেতানো থাকে না। সব সময়ে সব শব্দই যাতে ঠিকঠাক ঢুকতে পারে তার জন্যই এমন ব্যবস্থা!

আর নাকের ব্যাপারটা প্রায় একরকম হলেও কিছুটা আলাদা।

আমাদের নাকের দুটো ফুটো দিয়ে একরকম উপায়ে গন্ধের সন্ধান পেলেও, সব সময় দু' নাক দিয়ে সম তীব্রতার গন্ধ পাই না। মানে, কোন সময় নাকের এক ছিদ্র দিয়ে বেশী গন্ধ পেলেও অন্য ছিদ্র দিয়ে একই তীব্রতার গন্ধ নাও পেতে পার! নাকের দুটো ছিদ্রের গন্ধ আকর্ষনের যন্ত্র সব সময় একই রকম সক্রিয় না থাকতেও পারে!

একটা উদাহরন দিচ্ছি। ধর, বাড়িতে মাংস রান্না হচ্ছে। সারা বাড়ি গন্ধে ম ম করছে। সেই সময় এক নাকের ছিদ্র বন্ধ করে গন্ধ নেবার চেষ্টা কর, তখন দু নাকের একটাতে বেশী, অন্যটাতে কম পেতে পার ।একই রকম গন্ধ দু নাকে পাবে না! যখন স্কুলের উঁচু শ্রেনীতে পড়বে তখন এর কারণটা আরও বিশদে জানতে পারবে।

যখন এক নাক কম কাজ করবে তখন অন্য নাক সেই ঘাটতি পুরন করে দেবে! কি, কেমন আশ্চর্য ব্যবস্থা, তাই না ? তাহলে বুঝতে পারছ, কেন নাকের দুটো ছিদ্র থাকা দরকার!

অন্য দু'টি ইন্দ্রিয় জিহবা আর ত্বকের কি কাজ তা' ত জানই। জিভ না থাকলে খাওয়া-দাওয়া বন্ধের উপক্রম হবে, আর ত্বকের অনুভুতি না থাকলে ঠান্ডা-গরমের বা শরীরে আঘাতজনিত ব্যথা বেদনার মত ব্যাপারগুলি জানতেই পারা যেত না!

এবার বুঝতে পারছ ত', সর্ব ইন্দ্রিয়ের প্রয়োজনীয়তার কথা!

অবশ্য আরও একটা দরকার থাকে এদের নিয়ে, সেটা একটু বলি। আয়নার সমনে গিয়ে দাঁড়াও। নিজের মুখখানা দেখ। দুটো চোখ, দুটো কান আর নাক নিয়ে কেমন সুন্দর দেখতে তোমার মুখখানা! কিন্তু ভেবে দেখ একবার, যদি একখানাই চোখ থাকত কপালের নীচে, মুখের মাঝ বরাবর, চোখ যেখানে রয়েছে সেই উচ্চতায় ? আর তার নীচে থাকত নাকের একটাই ছিদ্র ? আর কানের ফুটো দুদিকে না থেকে, একটাই থাকত মাথার ডান বা বাম দিকে বা পেছনে ? তাহলে কেমন দেখাত চেহারাখাণা ? নিজের ভৌতিক চেহারা দেখে নিজেই ভিরমি খেতে হত! তাই কিনা ? চেহারা ভাল হওয়ার প্রয়োজনেও দুটো করে চোখ, কান, নাক দরকার ছিল হয়ত, তাই এমন হয়েছে !

তবে তেমন যদি হতই তাহলে সেটাও অবশ্যই চোখ সওয়া হয়ে যেত, কি বল! আমাদের এই বর্তমান চেহারাটাই যে ভাল সেটাই বা কে বলল! আমরাই ত বলি, নাকি ?


সন্তোষ কুমার রায় অবসরপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক। বিষয় পদার্থবিজ্ঞান। শৈশব ও কৈশোর যথাক্রমে বাংলাদেশে এবং কলকাতায় কাটলেও, কর্মজীবন কেটেছে বাংলা বিহার সীমান্তের হিন্দুস্থান কেব্‌ল্‌স্‌ শিল্পনগরীতে। শিল্পনগরী থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকায় ছোটদের এবং বড়দের জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক লেখা লিখেছেন বহুবছর। বর্তমানে ইচ্ছামতীর পরশমণি বিভাগে নিয়মিত লেখা ছাড়াও তিনি একটি গ্রুপ ব্লগের সদস্য রূপে লেখালিখি করেন ।