খেলাঘরখেলাঘর

পরশমনি
কি, পুজো তো এসে গেল...আর সামনে তো বেশ কয়েকদিন ছুটি, তাই না? নাকি তোমার স্কুলে এখনই ছুটি পড়ে গেছে? অনেক সময়, আর হোমটাস্ক ও সব শেষ? হাতের কাছে করার মত কিছু পাচ্ছ না, তাই কি? কি করা যায় বল দেখি?
আচ্ছা চল। আরেকবার রান্নাঘরে যাই। ওখানে গেলেই কিছু একটা পেয়ে যাবে করার মত।
মা'কে বলে কয়ে আধ স্যসপ্যান জল ফুটিয়ে নিতে পারবে? একটু আবদার করলে মা রাজি হয়ে যাবেন মনে হয়।
মা যতক্ষন জল ফোটাচ্ছেন, ততক্ষনে তুমি একটা কাজ করে ফেলতে পারো। রেফ্রিজারেটরের ডীপ ফ্রিজ থেকে এক ট্রে বরফ বের করে বরফের টুকরোগুলি একটা বাটিতে করে টেবলে রাখো।
এবার মাকে বল গরম জলের পাত্রটা এনে বরফের বাটির পাশে রাখতে।
ভালো করে পরখ করতো কিছু দেখতে পাচ্ছ কিনা! পাচ্ছে কি? আরে, দুটো পাত্র থেকেই তো ধোঁয়া উঠছে, তাই না! ধোঁয়া বললাম বটে, চলতি কথায় তাই বলে থাকি আমরা, যদিও মোটেই ধোঁয়া নয়। ধোঁয়ার মত দেখতে ওটা কি সেটা পরে বলছি।
তার আগে একটু ভাবার ব্যপার রয়েছে। একটা গরম, আর একটা ঠান্ডা, দুটো পাত্র থেকে একই রকমভাবেই ধোঁয়ার মত উঠছে। ব্যপারটাতে একটু অবাক হচ্ছো না? আসলে অবাক হওয়ার মত কিছু নেই। বললেই বুঝবে যে ব্যপারটা কত সহজ।
জলীয় বাষ্প কাকে বলে জানো বোধ হয়। তাহলেও সংক্ষেপে একটু বলি। যেকোন পদার্থ তিনটি অবস্থায় থাকতে পারে, যেমন কঠিন অবস্থা, তরল অবস্থা এবং গ্যাসীয় বা বায়বীয় অবস্থা। বরফ তো কঠিন। একে তাপ দিলে তরল জলে পরিণত  হয়। আবার জল কে তাপ দিলে জলীয় বাষ্পে (জলের বায়বীয় অবস্থা) পরিণত হয়।
আমরা এই জলীয় বাষ্পকে দেখতে পাইনা। জলীয় বাষ্প দেখতে পেলে আমাদের চারপাশের বাতাসকে সব সময় ধোঁয়াটে দেখাতো। পরিষ্কার ভাবে কিছুই দেখতে পেতাম না, কেননা বাতাসে সব সময় কিছুটা জলীয় বাষ্প থাকেই। প্রমান চাই? তাহলে এই সহজ পরীক্ষাটা করে দেখ।
বাইরেটা শুকনো এমন একটা কাঁচের গ্লাসে দু'এক টুকরো বরফ সহ কিছুটা জল রাখো, দেখো যেন, এটা করতে গিয়ে বাইরের দিকটা ভিজে না যায়। দেখবে কিছুক্ষণের মধ্যেই গ্লাসের বাইরের দিকটা ঘোলাটে হয়ে উঠলো এবং শেষ পর্যন্ত সেখানে বিন্দু বিন্দু জল জমতে শুরু করলো। এর কারণ কি হতে পারে? বাতাসে যে অদৃশ্য জলীয় বাষ্প ছিল সেটা ঠাণ্ডা গ্লাসের ছোঁয়ায় জমে জল হয়ে গ্লাসের গায়ে লেগে বিন্দু বিন্দু জলকণায় পরিণত হচ্ছে। বাতাসে যে জলীয় বাষ্প আছে সেটা এভাবেই প্রমাণ হলো।
এবার আমাদের টেবলে রাখা বরফের কথায় আসি। বাতাস তো সব জায়গাতেই থাকে। তাই বরফের পাশেও রয়েছে আর তাতে অদৃশ্য জলীয় বাষ্পও রয়েছে। সেই বাতাস যখন বরফের কাছে এসে ঠান্ডা হচ্ছে, তখন তাতে থাকা বাষ্পও ঠান্ডা হয়ে বিন্দু বিন্দু জলকণায় পরিণত হয়ে বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। এই জলকণাগুলোই আমাদের কাছে ধোঁয়ার মত লাগছে। আমাদের মনে ধন্দ জাগাচ্ছে যেন বরফের ধোঁয়া হচ্ছে।
আর গরম জলের ব্যপারটা তাহলে কি? সেটাও একই রকম ব্যপার। গরম জল থেকে যে বাষ্পটা উঠছে সেটা দেখতে পাওয়ার কথা নয়। গরম বাষ্পটা কিছুটা উঠে চারপাশের অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা জায়গায় (স্যসপ্যানের জলের থেকে ঠাণ্ডা ) এসে জলবিন্দুতে পরিণত হয়ে ধোঁয়াটে হয়ে যাচ্ছে। তাই ধোঁয়ার মত লাগছে।
তাহলে দুটি অবস্থার পার্থক্য বুঝলেতো? গোলমালটা কাটলো তো?
*********************************************
ডীপ ফ্রিজ থেকে যখন বরফের ট্রে টা বার করছিলে তখন হাতে কিছু টের পেয়েছিলে? ট্রে টা চটচটে লাগেনি?মনে হচ্ছিল না, যে ওটার গায়ে আঠা লাগানো আছে?কেন মনে হচ্ছিল বলতে পারবে?
আমি বলে দিচ্ছি। বরফের ট্রে-এর বাইরের দিকে গুঁড়ো গুঁড়ো বরফ লেগে থাকে। কখনও খেয়াল করেছো? আর একটা ব্যপার কখনও খেয়াল করেছ কি যে আমাদের হাতটাতে সর্বদাই একটা ভিজে ভিজে ভাব থাকে। অনেকের তো এমনও হয় বেশিক্ষণ কলম বা পেন্সিল ধরে লিখতে পারে না, সেগুলি এতটাই ভিজে যায় যে হাত থেকে পিছলেও যায় অনেক সময়।
ট্রে-কে হাত দিয়ে ধরলে ঠাণ্ডা বরফের কণার স্পর্শে হাতের জল জমে যায়। আর হাতের আঙুলের চাপের ফলে হাতের জমে যাওয়া জল বরফ কণার গায়ে আটকে যায় আঠার মত। তাই হাত ছাড়াতে গেলে একটু টেনে ধরে।
যেখানে জল বেশী সেখানে এই টানটা অনেক বেশী হয়। যদি ট্রে -এর গায়ে ঠোঁট বা বিশেষ করে জিভ ঠেকাও, তাহলে বিপদ হতে পারে।কেননা জিভে বেশী জল থাকায় বেশী বরফ হয়ে টানটা বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে কিন্তু জিভ ছাড়াবার সময়ে জিভের ওপরের স্তরটা ছড়ে যেতে পারে।




সন্তোষ কুমার রায়
রূপনারায়ণপুর, বর্ধমান

সন্তোষ কুমার রায় অবসরপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক। বিষয় পদার্থবিজ্ঞান। শৈশব ও কৈশোর যথাক্রমে বাংলাদেশে এবং কলকাতায় কাটলেও, কর্মজীবন কেটেছে বাংলা বিহার সীমান্তের হিন্দুস্থান কেব্‌ল্‌স্‌ শিল্পনগরীতে। শিল্পনগরী থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকায় ছোটদের এবং বড়দের জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক লেখা লিখেছেন বহুবছর। বর্তমানে ইচ্ছামতীর পরশমণি বিভাগে নিয়মিত লেখা ছাড়াও তিনি একটি গ্রুপ ব্লগের সদস্য রূপে লেখালিখি করেন ।