খেলাঘরখেলাঘর

তোমার বাবা-মা এর সাথে তোমার মিল কোথায় জান ? বাইরের চেহারায়, এ ছাড়া আর কিসে হবে! তাঁদের যেমন দুটো হাত, দুটো পা, মুখ, নাক, চোখ, কান- --তোমারও ঠিক তেমনই আছে।
        
একটা বিড়ালছানা বা একটা কুকুরছানারও তাই। ওরা ওদের মা-বাবার মত দেখতে। কিন্তু কিছু কিছু প্রাণীর ক্ষেত্রে কিন্তু বাচ্চাদের সঙ্গে মা-বাবার চেহারার কোনও মিল নেই!
        
বলতে পারবে এমন কোনও প্রাণীর নাম ?এমন প্রাণীদের মধ্যে নাম করতে পারা যায়, এই যেমন ধর, প্রজাপতি বা মথ। ডিম ফুটে বেরোন বাচ্চা, ('লার্ভা') একেবারেই প্রজাপতি বা মথের মত নয়। এদের নিয়ে দু'চার কথা  বলি ।(কেবল যে প্রজাপতি বা মথইএমন প্রাণী, তা কিন্তু নয়। মশা, মাছি বা আরও কিছু কিছু পোকা-মাকড়ও এই শ্রেণীভুক্ত)।
        
প্রজাপতি বা মথেরা  ডিম পাড়ে গাছের পাতায়, সাধারণত পাতার নীচের দিকে। ডিমের গায়ে আঠার মত একটা কিছু থাকে যা ডিমগুলোকে পাতার সাথে আটকে রাখে। কয়েক সপ্তাহ পরে ডিম ফুটে যে বাচ্চা বের হয়, সে কিন্তু মোটেই প্রজাপতি বা মথের মত নয়!    তবে ?
       
সেটা একটা এমন জিনিষ যা আমরা অহরহই দেখতে পাই। সেটা আসলে একটা  শুঁয়োপোকা -- মথ বা প্রজাপতির 'শূককীট'  বা' লার্ভা'।এদের কেউ কেউ নিরীহ গোছের, কেউ কেউ আবার ভয়ংকর। দেখলেই গা শির শির করে! শত্রুর হাত থেকে বাঁচবার জন্য এদের গায়ে থাকে অসংখ্য শুঁয়ো, আক্রান্ত হলে যা এরা শত্রুর গায়ে বিঁধিয়ে দেয়। (সঠিকভাবে বলতে গেলে ওরা নিজেরা বিঁধিয়ে দিতে পারে না, ওদের ধরতে গেলে আপনা থেকেই বিঁধে যায়)। সেই জন্য এদের নাম শুঁয়োপোকা। কি, কোনও দিন শুঁয়োর কাঁটা গায়ে বিঁধেছে কি ? কেমন জ্বালা!

শুঁয়োপোকা
শুঁয়োপোকা

কারও  শুঁয়ো থাকে না, তারা আবার নানা রঙের হয়। এই রং গুলো আবার এমনি এমনিই হয় না, এ সবও ঐ আত্মরক্ষার ব্যাপার। রং গুলো ভারি বিষাক্ত হয়। পতঙ্গভুক পাখিরা ভয়ে শুঁয়োপোকা ধরে খায় না !
       
সবুজ রঙ্গের শুঁয়োহীন একরকমের পোকা দেখা যায় লেবু বা গন্ধরাজ জাতিয় ফুলগাছে। সবুজ হওয়ার কারণে পাখী বা ঐ জাতীয় শত্রুরা সবুজ পাতার সাথে শুঁয়োদের গুলিয়ে ফেলে! শত্রুর আক্রমনের হাত থেকে ওরা বেঁচে যায়। তা বলে আবার ভেবে বস না যে সবাই সবুজ হবে!
      
শুঁয়োপোকা গুলোর ভীষন খিদে, সারা দিন কোন কাজ নেই কেবল খাওয়া ছাড়া। ওরা সাধারণত সব রকমের পাতা খায়, তবে  কারও কারও আবার একটু বাছবিচারও আছে! আমাদের বাগানে লিলি ফুল গাছে এক রকমের পোকা দেখেছি যাদের গায়ের রং গাঢ় বেগুনির ওপর হলুদ হলুদ দাগ, ভারি সুন্দর দেখতে। সুন্দর হলে কি হবে, ভীষন হাভাতে! কয়েকজন মিলে আট দশটা ( আনারস পাতার মত) লম্বা পাতাওয়ালা একটা গাছকে একদিনেই শেষ করে দিতে ওস্তাদ! পাতা শেষ হয়ে গেলে এমনকি মাটির নীচে থাকা পেঁয়াজের মত (যাকে 'বাল্ব' বলে) অংশটা পর্য্যন্ত খেয়ে সাফ করে দেয়! এদের অন্য কোন গাছের পাতা খেতে দেখিনি।
      
এরকম বাছবিচার করে তুঁত ( Mulberry)গাছের পাতা খায় আর এক রকমের পোকা। এদের কথা একটু পরে বলছি।
       
ক'দিন খুবসে খাওয়া দাওয়া করে শরীরটা মজবুত করে--এটা  করতে হয়, কেন না বেশ কিছুদিন আর খাওয়া চলবে না কিনা-- ওরা একটা নিশ্চিন্ত জায়গা খোঁজে, যেখানে কেউ কোন ভাবে যাতে উত্তক্ত না করতে পারে!
তেমন জায়গা হতে পারে কোন গাছের পাতার নীচে বা কোন স্যাঁতসেঁতে ঘরের দেওয়ালের কোণে। তেমন একটা মনোমত জায়গা পেলে ওরা স্থির হয়ে নিজেদের চারপাশে একটা খোলস তৈরী করে ফেলে, আর তার মধ্যে আশ্রয় নেয়। এই অবস্থাকে বলে 'পিউপা' বা 'মূককীট' অবস্থা। এই অবস্থায় খোলসের মধ্যেই গড়ে ওঠে আস্ত একটা প্রজাপতি অথবা মথ। গঠন সম্পূর্ণ হলে খোলস কেটে প্রজাপতি বেরিয়ে আসে। প্রজাপতিরা যত রংচং-এ হয়, মথেরা অতটা হয় না।                                         

এদের কটা পাখনা বল দেখি! একখুনি বলবে যে, এ আর এমন কথা কি, দু'খানাই ত হবে, নাকি!কিন্তু এটা সঠিক হল না। প্রতি দিকে দু'খানা করে মোট চারখানা পাখনা থাকে এদের, ফলে উড়বার সময় ওদের খুব সুন্দর দেখায়। অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখলে দেখা যায় ওদের পাখনায় রয়েছে অজস্র ছোট্ট ছোট্ট রঙ্গিন আঁশ যার জন্য ওদের রং অত সুন্দর।
       
তুমি একটা পরীক্ষা  করে দেখতে পার, যা থেকে নিজেই জানতে পারবে ওপরে লেখা ব্যাপারগুলো। টিনের ঢাকনাওয়ালা কাচের তৈরী একটা খালি জেলির শিশি যোগাড় করে ফেলো রান্নাঘর থেকে, এর পর পেরেক ঠুকে ঠুকে ঐ ঢাকনায় কয়েকটা ছিদ্র করে ফেলো। এবার কায়দা করে পাতায় বসা একটা শুঁয়োপোকা ধরে ঐ শিশির মধ্যে রেখে তার মধ্যে কিছু টাটকা পাতা (যে গাছের পাতা খাচ্ছিল ) ফেলে দাও। এবার শিশির মুখটা বন্ধ করে দাও। এর পর লক্ষ্য কর  ঐ পোকাটা কি করছে! কি আর করবে, খালি ঘুরবে আর পাতা খেতে থাকবে। পাতা ফুরিয়ে গেলে সাবধানে ঢাকনা খুলে আরও কিছু পাতা দিয়ে দেবে।


ঢাকনায় ছিদ্র করতে বললাম কেন বলতে পার ? শিশির মধ্যে বাতাস ঢুকবার জন্য। না হলে পোকাটা দম বন্ধ হয়ে মারা পড়বে ত!
      
ওপরে যা যা লিখেছি সব তোমার চোখের সামনে ঘটতে দেখতে পাবে! যেদিন প্রজাপতি দেখা যাবে, সেদিন ঢাকনা খুললেই সেটা দিব্যি ফুর ফুর করে উড়ে যাবে।
           

সন্তোষ কুমার রায় অবসরপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক। বিষয় পদার্থবিজ্ঞান। শৈশব ও কৈশোর যথাক্রমে বাংলাদেশে এবং কলকাতায় কাটলেও, কর্মজীবন কেটেছে বাংলা বিহার সীমান্তের হিন্দুস্থান কেব্‌ল্‌স্‌ শিল্পনগরীতে। শিল্পনগরী থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকায় ছোটদের এবং বড়দের জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক লেখা লিখেছেন বহুবছর। বর্তমানে ইচ্ছামতীর পরশমণি বিভাগে নিয়মিত লেখা ছাড়াও তিনি একটি গ্রুপ ব্লগের সদস্য রূপে লেখালিখি করেন ।