খেলাঘরখেলাঘর

বাছবিচার করে তুঁত গাছের পাতা খাওয়া যে শুঁয়ো- পোকার কথা একটু আগে বলেছিলাম, সেটা এখন বলি।সিল্কের  সুতো, যা দিয়ে সিল্কের শাড়ী বা জামা তৈরী হয়,  তা তৈরী করে ঐ তুঁতপাতা খেকো শুঁয়ো পোকা!
      
এরকম আরও কয়েকপ্রকার পোকা আছে যারা অন্য রকমের গাছের পাতা খায়, তারা অন্য রকম সুতো তৈরী করে। সেই সব সুতো দিয়ে তৈরী হয় তসর, এন্ডি, মুগা--- এই সব কাপড়। দেখেছো এসব ?
      
যাকগে, আমরা সিল্ক তৈরী করা পোকা নিয়ে কথা বলছিলাম, সেই কথা বলি।
      
সিল্ক-মথ থেকে সিল্কের সুতো তৈরী করা আমাদের দেশে একটা ব্যাবসায় বিশেষ। ব্যাবসায়িক ভিত্তিতেই এই মথের চাষ করা হয়। মথেরা ডিম পাড়ে প্রায় শ'পাঁচেকের মত আর ১০-১২ দিন পর ডিম ফুটে লার্ভা বা পোকা বেরিয়ে পড়ে। বেরিয়েই শুরু করে খাই খাই। ওদের সামনে তখন প্রচুর তুঁত গাছের টাটকা পাতা দেওয়া হয়। গোগ্রাসে সেই পাতা গিলে ১৮-২০ দিনের মধ্যেই পূর্ণবয়স্ক পোকায় রূপান্তরিত হয়।

তুঁতগাছ
তুঁতগাছ

তখন  এই পোকার রং ধুসর বা ক্রীম, আর এরা প্রায় তিন  সাড়ে তিন ইঞ্চির মত দীর্ঘ হয়। পোকাদের মুখের ঠিক নীচে একটা ছিদ্রপথে বের হয় একরকম লালা। এই লালা জমেই তৈরী হয় সিল্ক। কি করে ? সেটা বলি।

সিল্কমথের লার্ভা
সিল্কমথের লার্ভা

ক'দিন খাওয়া-দাওয়া করে পোকাগুলো পূর্ণবয়স্ক হয়ে গেলে ওরা মূককীট অবস্থায় যাবার জন্য প্রস্তুত হয়। তখন মুখের নীচের ছিদ্রপথে লালা বের করে সরু সরু লালার সুতো দিয়ে এরা নিজেকে ক্রমে ক্রমে জড়িয়ে ফেলে। হাওয়ায় শুকিয়ে লালার সুতো শক্ত সুতোয় পরিণত হয়।                                  

এতে যে জিনিষটা তৈরী হয় তাকে বলা  হয় 'রেশমের গুটি'। এই গুটি ডিম্বাকৃতির। তবে ডিমের মত অত বড় নয়।প্রায় ৮০০/ ৯০০ গজ বা তারও বেশী দীর্ঘ সুতো জড়ানো থাকে ঐটুকু জায়গার মধ্যে। তাহলে বুঝছ তো, কেমন সরু ঐ সুতো!
      
এই গুটির মধ্যে থাকে শূককীট থেকে রূপান্তরিত হয় মূককীট। মূককীট আবার ক্রমশঃ পরিবর্তিত হয়ে শেষ পর্যন্ত সিল্ক মথে পরিণত হয়। এই মথ গুটি কেটে বাইরে বেরিয়ে আসে।
      
মথকে গুটি কেটে বাইরে বেরিয়ে আসার সুযোগ করে দিলে গোটা গুটির সুতোই নষ্ট হয়ে যাবে। কেননা, সুতো কেটে বেরোলে সুতোও টুকরো টুকরো হয়ে যাবে কিনা !
      
তাই গুটি পরিণত হলেই সেগুলিকে গরম জলে সেদ্ধ করা হয়।এর ফলে ভেতরের মূককীট গুলি মরে যায়।  এটা মোটেই ভাল  কাজ নয়, কিন্তু কি আর করা যাবে, সিল্ক বা রেশম উতপাদন করতে গেলে এই ভাবেই করতে হয়।

সিল্কমথের চাষ এক গুরুত্বপূর্ন ব্যবসা
সিল্কমথের চাষ এক গুরুত্বপূর্ন ব্যবসা

প্রয়োজনে অত সরু সুতোকে মোটা করার দরকার হলে আরও  কয়েকটা সুতোকে একত্রে পাকিয়ে নিলেই হল। আর সেই সুতো দিয়ে তৈরী হয় পছন্দ মত কাপড়। কাপড়কে আবার রং ও করা যায় মনোমত।

সিল্কের সুতো দিয়ে শাড়ি বোনা হচ্ছে
সিল্কের সুতো দিয়ে শাড়ি বোনা হচ্ছে

কি মনে হচ্ছে ? শুঁয়োপোকা নিয়ে পরীক্ষাটা করে দেখবে নাকি ? তবে সাবধানে কোরো কিন্তু! হাতে শুঁয়া লেগে  গেলে ভারি মুশকিল !
     

সন্তোষ কুমার রায়
কোদালিয়া, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

ছবিঃ
উইকিপিডিয়া

সন্তোষ কুমার রায় অবসরপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক। বিষয় পদার্থবিজ্ঞান। শৈশব ও কৈশোর যথাক্রমে বাংলাদেশে এবং কলকাতায় কাটলেও, কর্মজীবন কেটেছে বাংলা বিহার সীমান্তের হিন্দুস্থান কেব্‌ল্‌স্‌ শিল্পনগরীতে। শিল্পনগরী থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকায় ছোটদের এবং বড়দের জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক লেখা লিখেছেন বহুবছর। বর্তমানে ইচ্ছামতীর পরশমণি বিভাগে নিয়মিত লেখা ছাড়াও তিনি একটি গ্রুপ ব্লগের সদস্য রূপে লেখালিখি করেন ।