সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
 

পুজো এসে গেল।পুজো হয় শরৎকালে, আর শরৎকাল আসে বর্ষার পর। অনেক জলের ঝামেলা সে এড়িয়ে এল, কিন্তু  এলে কী হবে ! বর্ষা ত পিছু ছাড়ছেই না । এখনও নিম্নচাপের কারনে বৃষ্টি হয়েই চলেছে।আজ  বসে ইচ্ছামতীর জন্য লেখালিখি করার চেষ্টা করছি, আর আজও আকাশে মেঘ! পুজোর আর মাত্র ১৫ দিন বাকী! অথচ---।
আবার পুজোর সময় হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু উপায় নেই কিনা, তাই মানতেই হয়। সুতরাং--।

পুজোর আগে আষাঢ়-শ্রাবণ মাস জুড়ে বর্ষাকাল । আর হিসেব মোতাবেক ভাদ্র-আশ্বিন শরৎ কাল হলেও বর্ষাকাল ভাদ্রকে প্রায় গিলে নেয়। শরতের ভাগে থাকে মাত্র একমাস। তাতেও নিস্তার নেই, বর্ষা পেছনে লেগেই আছে! এত বর্ষা বর্ষা করছি, তা নিয়ে দু'চার কথা না হয়  বলা যেতেই পারে!

তাহলে আজ বর্ষাকাল নিয়ে কিছু বলি ?

প্রতিবছর একই সময় বর্ষা আসে কেন, বা কী করে আসে বলতে পার ?

আমাদের সব কাজের মূলেই তো রয়েছে সূর্য!

এখন গ্রীষ্মকাল। এখন সূর্য কোথায় থাকে? এই সময়ে, মানে, গ্রীষ্মকালে সূর্য উত্তর গোলার্ধে খাড়া ভাবে আমাদের মাথার ওপর  থাকে। ভারত বা বাংলাদেশ, দুটো দেশই কোন গোলার্ধে  ? উত্তর গোলার্ধে।  

শীতকালে আবার  দক্ষিন গোলার্ধে  সূর্য খাড়া মাথার ওপর থাকে। এর জন্য আবার আমাদের দেশে তেরচা ভাবে আলো দেয়।

ফলে কী হল ? গরমকালে উত্তর গোলার্ধ গরম হয়ে পড়ে, বেশি রোদের জন্য।

প্রতিবছর গরমকালে সূর্যের তাপে উত্তর গোলার্ধের মাটি গরম হয়ে পড়ে দক্ষিন গোলার্ধের তুলনায়। তাই সেখানে তৈরী হয় নিম্নচাপ।

নিম্নচাপ? আগে তো শোনাই হয় নি কথাটা, তাই গুলিয়ে গেল তো সব ?

তাই দেখা যাক সেটা কী বস্তু! কোনও কারণে বাতাস গরম হয়ে গেলে হালকা হয়ে ওপরে উঠে যায়, ফলে বাতাসের চাপ কমে যায়। এর জন্য হালকা বাতাস ওপরের দিকে হু হু করে উঠে যায়।  প্রকৃতিতে কোন জায়গা তো ফাঁকা থাকতে পারে না! তাই চার পাশ থেকে ঠান্ডা বাতাস ছুটে এসে সে ফাঁকা জায়গাটা ভরাট করে।


স্থল বায়ু এবং সমুদ্র বায়ু

তাহলে, গ্রীষ্মকালে উত্তর গোলার্ধে,আমাদের দেশের মাটি গরম হয়ে পড়ে আর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। ঠান্ডা বাতাস দরকার। তা ছুটে আসে সেই জায়গা দখল করার জন্য! দক্ষিন গোলার্ধে সেই বাতাস তো মজুদ আছেই। সেখানে তো শীতকাল তখন। তাই সেখান থেকেই ছুটে আসা সেই বাতাস সমুদ্রের ওপর দিয়ে আসে, আর সমুদ্রের ওপর দিয়ে আসে বলেই সে বাতাস জলীয় বাষ্প পূর্ণ!

কিন্তু পৃথিবীর নিজস্ব গতি আছে না ? দক্ষিন থেকে ছুটে আসা বাতাসের গতি আর পৃথিবির গতি এই দুয়ে মিলে দক্ষিন-পশ্চিম দিক থেকে বায়ু প্রবাহ হতে থাকে আমাদের দেশের দিকে। এই বাতাসকেই বলে গ্রীষ্মকালীন মৌসুমী বায়ু! সমুদ্রে ওপর দিয়ে আসার সময় প্রচুর জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে, আর এই জলীয় বাষ্প মেঘের আকারে আমাদের দেশের ওপর দিয়ে দক্ষিন থেকে উত্তর দিকে  উড়ে যায়। উত্তরমুখো মেঘ দেখতে পাও না এ সময় ?

যাবার পথে কোন বাধা পেলে সেখানে আটকে গিয়ে জল হয় আর ফোঁটা ফোঁটা করে  জল ঝড়ায়! একেই আমরা বৃষ্টি বলি।
 
মাস তিনেক ধরে চলে এই ব্যাপারটা।  সে সময়টাকেই বলে বর্ষাকাল।  কোথায়  বাধা পায় গতিশীল  মেঘ ?


ভারতীয় উপমহাদেশে বর্ষার মেঘের যাতায়াত

বাধা পাক আর না পাক আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের ওপর বৃষ্টি পড়ে প্রথমে, পরে মূল ভূখন্ডের ওপর এসে পড়ে।

আমাদের দেশের উত্তর দিকে পাঁচিলের মত খাড়া দাঁড়িয়ে রয়েছে এক বিশাল পর্বতমালা। এর নাম হিমালয়। সেখানে জলীয় বাষ্প আটকে যায়। কিন্তু সেখানে যেতে অনেক সময় লাগে। বাতাস তো বললাম দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে আসে। উত্তর দিকে যাবে কী করে ? তাই সে যায় মায়ানমার অভিমুখে। কিন্তু হিমালয়ের ল্যাজও ত সেই তক বিস্তৃত।
সেখানে আটকে যায় বাতাস, ফলে সেখানে বৃষ্টি হয়। এর পর  কিছু বাতাস উত্তর মুখী ধেয়ে যায়। পাহাড়ে ঠোক্কর খেতে খেতে আসামের খাসিয়া-জয়ন্তিয়া পাহাড়ে আটকে গিয়ে সেখানে বৃষ্টিপাত ঘটায়। এখানে খুবই বৃষ্টিপাত ঘটায়, তাই এখানে বিশ্বের সব থেকে বেশি বৃষ্টিপাত হয়, আর তার কেন্দ্র হল মৌসিনরাম নামের একটি জায়গা! এক নাগাড়ে মাস তিনেক ধরে প্রতিদিন বৃষ্টি হচ্ছে সেখানে! হয়েই চলেছে! কী ঝামেলা বলত! কোনও কোনও সময় বৃষ্টি ভাল লাগে, কিন্তু তা বলে সব সময় ? এটা ঝামেলা নয় ?

এর পর  জলপূর্ণ সেই মেঘ হিমালয়ের গা বেয়ে আরও পশ্চিম দিকে এগিয়ে যায় । এর জন্য উত্তরবঙ্গে  কলকাতার আগেই বৃষ্টি হয়!

উত্তর বাংলায় বৃষ্টি এসে গেলে, এর পর  আমরা দক্ষিন বাংলায় (কলকাতাসহ) বৃষ্টি পাই। এই ভাবে জল ফেলতে ফেলতে মেঘ ক্রমাগত পশ্চিম দিকে এগিয়ে যায়!
ওদিকে আরব সাগর থেকে আসা মৌসুমী বাতাসের জন্য পশ্চিম ভারতে বৃষ্টিপাত শুরু হয়ে যায়। এই পুব-পশ্চিমের দুই ধারা মিলে গোটা দেশেই বর্ষা শুরু হয়ে যায়। চলে অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত।

শীতকালে আবার অন্য ব্যাপার! আমরা কথায় বলি শীতকালে 'উত্তুরে হাওয়া' বয়। অনেকে পশ্চিমা হাওয়াও বলেন এই হাওয়া উত্তর দিক থেকে আমাদের দেশে ঢুকে পড়ে! আমরা উত্তুরে  বললেও ঠিক উত্তর থেকে আসে না, আসে উত্তর-পূর্ব থেকে। সেদিকে আছে কয়েকটা দেশ আছে যারা শীত কালে খুব কষ্টে পড়ে যায়। খুব ঠান্ডা সেখানে। চীন,  রাশিয়া প্রভৃতি দেশ রয়েছে সেখানে। খুব ঠান্ডা!  জোব্বা-জাব্বা পড়া ছবি দেখেছ ওদের ? আমাদের পরিত্রাতা হিসেবে রয়েছে হিমালয় পর্বতমালা। খাড়া পাঁচিলের মত সেই-ই প্রবল ঠান্ডা বাতাস আটকে দিয়ে আমাদের রক্ষা করে।

 কিন্তু উত্তর দিক থেকে আসে কেন বল দেখি। সেই একই ব্যাপার। উত্তর গোলার্ধে যখন শীতকাল, দক্ষিণ তখন গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল! আগেই বলেছি সেকথা।
 
উত্তরের ঠান্ডা তো যে সে ঠান্ডা নয়,সাইবেরিয়ার ঠান্ডায়  হি হি করে কাঁপা মানুষজন অবাক করা শীতবস্ত্র পড়া অবস্থার কথা তো একটু আগেই বললাম !

শীতকালে উত্তরের ঠান্ডা বাতাসকে যদি হিমালয়  পাঁচিলের মত না আটকে দিত তাহলে আমাদের দেশটা মরুভূমি হয়ে যেত, ঠিক তিব্বতের গোবি মরুভুমির মত, ঠান্ডায় আমরাও ওই সব বিদঘুটে পোষাক পড়তে বাধ্য হতাম!

কিন্তু তাহলেও কিছু বাতাস তো হিমালয় ডিঙিয়ে এদিকে এসে পড়েই। তাতেই আমাদের শীতকাল হয়। এই সময় বাতাস ত উল্টোমুখো, অর্থাৎ উত্তর থেকে দক্ষিন দিকে। সঠিক বলতে গেলে উত্তর-পুর্ব দিক থেকে।

 আমাদের বাংলাকে ঠান্ডা করে সমুদ্রের ওপর দিয়ে যে পথে এসেছিল সেই পথেই ফিরে যায় উল্টোমুখো উত্তর-পুর্ব মৌসুমী বাতাস! আসার সময়ের মত যাবার সময়ও চেন্নাই বা দক্ষিন ভারত আর আন্দামনের ওপর দিয়ে যায়।
 
যাবার সময় সমুদ্র থেকে জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে সে সব জায়গায় আবার বৃষ্টিপাত ঘটায়!

এই কারনেই উক্ত অঞ্চলে বছরে দুবার বর্ষা হয়, একবার গরমকালে দক্ষিন-পশ্চিম, আর একবার উত্তর-পুর্ব মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে!

দক্ষিন ভারতের কোন জায়গায়, ধর তামিল নাড়ুতে একবার শীতকালে গিয়ে থাকলে বুঝতে পারবে ব্যাপারটা!


ছবিঃ উইকিপিডিয়া

সন্তোষ কুমার রায় অবসরপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক। বিষয় পদার্থবিজ্ঞান। শৈশব ও কৈশোর যথাক্রমে বাংলাদেশে এবং কলকাতায় কাটলেও, কর্মজীবন কেটেছে বাংলা বিহার সীমান্তের হিন্দুস্থান কেব্‌ল্‌স্‌ শিল্পনগরীতে। শিল্পনগরী থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকায় ছোটদের এবং বড়দের জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক লেখা লিখেছেন বহুবছর। বর্তমানে ইচ্ছামতীর পরশমণি বিভাগে নিয়মিত লেখা ছাড়াও তিনি একটি গ্রুপ ব্লগের সদস্য রূপে লেখালিখি করেন ।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা