খেলাঘরখেলাঘর

ঈদ

কিছু আনন্দ কেবল অনুভবের। সে আনন্দ যতটা মনে অনুভব করা যায় ততটা লিখে ঠিক প্রকাশ করা যায় না।  ঈদ তেমনই একটা আনন্দ। মুসলমানদের জন্য ধর্মীয় এই মহাউৎসব শুধু যেন উৎসব নয়, এ এক মহামিলনের দিন। আমরা জানি সব ধর্মেই নানারকম ধর্মীয় উৎসব পালন করা হয়। ইসলাম ধর্মেও ঠিক সেরকম উৎসব হল ঈদ। ঈদ এলে সকল দুঃখকষ্ট  ভুলে  ঈদের আনন্দে  সমাজের সকলের সাথে আমরা মিলিত হই। এ আনন্দের উৎস কোথায়? উৎস মনে, উৎস হৃদয়ে। এই বিশেষ দিনটিতে সকলরকম ভেদাভেদ ভুলে ছোট-বড় সকলে মেতে ওঠে আনন্দে। ঈদের সকালে ঈদগাহে গিয়ে  ঈদের নামাজ পড়ে একে অন্যকে কোলাকুলি করে ঈদ মুবারক বলে শুভেচ্ছা জানানো হয়।  ঘরে ঘরে তৈরী হয় সেমাই, পায়েস, ফিরনী, পোলাও, কোরমা, বিরিয়ানীর মত সুস্বাদু সব খাবার। একে অপরের বাড়ি গিয়ে কুশল বিনিময় করে। মোট কথা নতুন জামাকাপড়ে, সুস্বাদু খাবারে, হাসিআনন্দে পরিপূর্ণ হয়ে সমাজের ধনী-গরীব একত্রিত হয়ে আমরা ঈদের বিশেষ দিনটি পালন করি।

ঈদ শব্দটি আরবী ভাষা থেকে এসেছে। এর অর্থ খুশি, আনন্দ, আনন্দোৎসব ইত্যাদি।

ইসলাম ধর্মে এই ঈদ দুটো। ঈদুল ফিতর আর ঈদুল আজহা। ইসলাম ধর্মে চাঁদের অবস্থানের উপর ভিত্তি করে চান্দ্রমাস নির্ধারণ করা হয়। প্রতিবছর চাঁদের হিসেবে দেখা যায় এই ঈদ পনের দিন করে এগিয়ে আসে। যে কারণে প্রতিবছর একই দিনে ঈদ হয় না। বাংলা বা ইংরেজী বছরে আমরা বার মাসের নাম নিশ্চয়ই জানি! আরবী বছরেও ঠিক তেমন বার মাস রয়েছে। আমরা প্রথমে জেনে নিই আরবী মাসের নামগুলো।

আরবী বারো মাসের নাম

১) মহররম ২) সফর ৩) রবিউল আউয়াল ৪) রবিউস সানি ৫) জমাদিউল আউয়াল ৬) জমাদিউস সানি ৭) রজব ৮) শাবান ৯) রমজান ১০) শাওয়াল  ১১) জিলক্বদ ১২) জিলহজ্ব
এই যে আরবী মাসের নবম মাসটির নাম রমজান, এই রমজান মাসটি রোজা রাখার মধ্য দিয়ে পালিত হয়।
তাহলে রোজা কি?

রোজা

সূর্য ওঠা থেকে সূর্য ডোবা পর্যন্ত পানাহার এবং সেই সাথে যাবতীয় ভোগবিলাস থেকে বিরত থাকার নাম রোজা। রোজা রেখে সকাল থেকে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত কোনো কিছুই খাওয়া যাবে না। সন্ধ্যায় সরবত, খেজুর, ছোলা নানারকম ফল খেয়ে রোজা ভাঙা হয়। এর নাম ইফতার। আবার ঠিক ভোরের আগে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যে খাবারটি খেয়ে আবার পরদিনের জন্য রোজা রাখা হয় তার নাম সেহরী।

মসজিদে ইফতারের আয়োজন হচ্ছে
মসজিদে ইফতারের আয়োজন হচ্ছে

তবে না খেয়ে শুধু উপোস করলে কিন্তু রোজা হবে না। রোজা রেখে কোনোরকম খারাপ কাজ করা বারণ। কারো সাথে ঝগড়া বিবাদ বা মিথ্যে কথা বলা, রাগ করা এসব কিছুই করা যাবে না। যারা ছোটো তারা রোজা রাখতে পারে না কিন্তু বেশী বেশী ভালো কাজ এসময় করার চেষ্টা করবে। বড়দের কথা মেনে চলবে এবং নামাজ (প্রার্থনা) পড়া এবং পবিত্র কোরান (ধর্মগ্রন্থ) পড়বে।

আমাদের দেশে বহু লোক দরিদ্র। রোজা রাখলে সেসব লোকের দুঃখ কষ্টগুলো বোঝা যায়। এই রমজান মাসে দরিদ্রদের বেশী বেশী সাহায্য করতে পারলে মহান আল্লাহতালা (সৃষ্টিকর্তা) অত্যন্ত খুশি হন। একটা মজার হিসেব কিন্তু এমাসে আছে। যাদের অর্থসম্পদ আছে এবং সোনা-রূপার গয়না আছে তার ওপর একটা হিসেব ধরে সেই হিসেবের ভিত্তিতে টাকা, কাপড় ইত্যাদি  এ মাসে গরীবদের মাঝে দান করতে হয় এর নাম যাকাত।  

ঈদুল ফিতর

অনেক কাল আগের কথা। আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলায়হুয়াসাল্লাম) মদীনাতে এসে দেখেন মদীনাবাসীর দুটি জাতীয় উৎসব কিন্তু এ উৎসব দুটির রীতি-নীতি, আচার-আচারণ ছিল শ্রেণী-বৈষম্য, ধনী ও দরিদ্রের মাঝে পার্থক্যের, ঐশ্বর্য-অহমিকা ও অশালীনতায় পূর্ণ।  ইসলামের দৃষ্টিতে রাজা-প্রজা, ধনী-গরীব সাদা কালোতে কোন ভেদাভেদ নেই। তাই  মহানবী (সাঃ) তাদের ঘোষণা দিলেন আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য দিয়েছেন এ দুটো দিবস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ দুটো দিবস আর সে পূণ্যময় দিবস হলো ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। সুতরাং তোমরা পূর্বের অনুষ্ঠান বর্জন করে এ দু-দিবসের অনুষ্ঠানাদি পালন কর। এভাবেই জন্ম নিল একটি প্রীতিঘন মিলন উৎসব। সাদা কালো, ধনী দরিদ্র, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, রাজা-প্রজা, মালিক-শ্রমিক, নারী-পুরুষ সকলের ভোগ ও মহা মিলনের দিন হতে পারে এ পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিবসটি।

More articles from this author