খেলাঘরখেলাঘর

ছুটি আর ছুটির মন


আজ সকাল থেকেই ছুটির মনটা তাধাই নাধাই আগাডুম্ বাগাডুম্‍ তিড়িং বিড়িং করছে। পড়ায় মন নেই। অবাধ্য মন কেবলই ছুটে যাচ্ছে বই থেকে। মা বাবা পিন্টুকাকুর বাড়ি গেছেন। পিন্টুকাকুর বাড়ি বাবা, মা প্রায়ঃশই যান। পিন্টুকাকু বাবার কেমন যেন দূরসম্পর্কের ভাই হন। মা যাবার সময় বলে গেছেন সব হোমওয়ার্ক শেষ করে রাখতে। হোমওয়ার্ক করা তো দূরের কথা। ছুটির মাথায় লাল, নীল, হলুদ, সবুজ নানারঙের ঢেউ। ঢেউগুলো কখনো থেমে থাকছে না। বিভিন্ন আকার অবয়ব নিচ্ছে ক্রমাগত। কখনো ত্রিভূজ, কখনো বর্গক্ষেত্র, কখনো আয়তক্ষেত্র, কখনো বা সম্পূর্ণ একটা রঙবাহারের বৃত্ত। তারই মধ্যে একটা অস্পষ্ট মুখ চিন্তাটাকে ভেঙেচুরে দিচ্ছে। ছুটির খুব কান্না পাচ্ছে। কেন এমন হয়?

সকাল থেকেই মনের কোন তল পাচ্ছে না সে। ঘুম থেকে উঠেই বাইরেটা দেখে ছুটির মনটা খুশীতে ভরে উঠেছিল। বৃষ্টিধোয়া সতেজ সবুজ দিনে আকাশ জুড়ে রামধনু দেখে ছুটির মনে আনন্দের বুদ্ বুদ্। কাল সারারাত্তির বৃষ্টি হয়েছে। এখন মেঘ কেটে পরিষ্কার আকাশে নানারঙের খেলা। রোদ ঝলমলে দিন হলেই ছুটির মন ভালো হয়ে যায়। মনের মধ্যে রিন্ রিন্ ঝিন্ ঝিন্ করে। ইস্কুলে যেতে মনখারাপ হয় না। আজ অবশ্য ছুটির ইস্কুল নেই। গতকাল থেকে গরমের ছুটি পড়েছে। এমনিতে ছুটি ইস্কুলে যেতে ভালোবাসে না। সে পড়াশোনায় খারাপ না। কিন্তু ইস্কুল তার একদম ভালো লাগে না। চারদেয়ালের মধ্যে ছুটির দম বন্ধ লাগে। কিন্তু আজ দিনটা অন্যরকম। ইস্কুল নেই। তার ওপরে চনমনে রোদ। ঘুম থেকে উঠেই ছুটির ভালোলাগায় মনটা ভরে উঠেছিলো।
 
এমনি সময়েই চোখে পড়লো মেয়েটাকে। ছুটিরই বয়সী। জামাকাপড় ময়লা। কাদা ভর্তি পা নিয়ে মুখ কালো করে বসে আছে। মুখটা খুব করুণ। ছুটির মনটা খারাপ হয়ে গেল। এমন দিনে কেউ মনে দুঃখ নিয়ে বসে থাকতে পারে? রোদ্দুর আর নানাবাহারের রঙের খেলা। তবুও মনে দুঃখ? কিসের কষ্ট ওর?

ঊর্ম্মি ঘোষদস্তিদার (দত্তগুপ্ত) অঙ্ক নিয়ে পড়াশোনা করে এখন ব্রুকলিন্, নিউইয়র্কের একটা কলেজে অঙ্ক পড়ান এবং অঙ্ক নিয়ে গবেষণা করেন। তাঁর কাজের অবসরে সময় পেলে অথবা সাব্ওয়ে বা বাসে করে কাজে যাওয়ার পথে তিনি লিখতে বা আকঁতে ভালোবাসেন। তাঁর স্বামী অভিজিত আর দুই ছেলেমেয়ে – সায়ম্ আর ইমনকে নিয়ে তিনি আমেরিকার নিউজার্সিতে থাকেন।