খেলাঘরখেলাঘর

পটলবাবু ও একজন বিজ্ঞানী

 



কলকাতার রাস্তায়, থুড়ি আকাশে, পুরোদমে উড়ুক্কু ট্যাক্সি চালু হওয়ার পরেই নামল এক মহা বিপদ। এমন একটা বিপদ যা কেউ কল্পনাও করতে পারেন নি।

প্রথমে যখন সেগুলোকে পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হচ্ছিল, তখন সবাই অবাক। পথচলতি মানুষ হাঁ করে তাকিয়ে দেখত বৈজ্ঞানিকদের কান্ডকারখানা। গল্পে আড্ডায়, তর্কে বিতর্কে সবার মুখে এই একই কথা। সবাই বলতে লাগল এতদিন পরে ভগবান মুখ তুলে চাইলেন, এই প্রথম কলকাতায় একটা জিনিস চালু হতে চলেছে যা তাক লাগিয়ে দেবে দুনিয়াকে। সাহেবরা যা তৈরী করতে পারল না, তা করে ফেলল বাঙালী। কয়েকদিন এরকম চলার পর অবশেষে ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে এসে দাঁড়ালো নতুন ট্যাক্সি। তাতে থাকবে একটা করে নতুন গিয়ার যা রাস্তা থেকে সোজা ওপরে উঠিয়ে নিয়ে যাবে গাড়ি।

লাইন পড়তে শুরু করল। এবার আর ট্রাফিক জ্যামে দাঁড়াতে হবে না, কষ্ট করতে হবে না। কেউ  কেউ বলতে লাগল, ওপরটা তো একটু ঠাণ্ডাও। গরমে ঘামতে হবে না, ধুলো মাখতে হবে না। আরো কত কি। কিন্তু আদপে হল উল্টোটা। যে সমস্যাটার কথা কেউই ভাবেন নি।

বিজ্ঞানীরা গাড়িকে ওড়ানোর ব্যবস্থা করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু রাস্তার কথাটা তো আর মাথায় রাখেন নি। আর রাখবেনই বা কেন? আকাশে কোন জিনিস উড়তে গেলে রাস্তার দরকারটাই বা কি। যেমন খুশি উড়ে গেলেই হল। আর সেইখানটাতেই বাধল গোলমাল। হু হু করে উড়ে যাওয়া ট্যাক্সির মধ্যে ধাক্কা লাগতে শুরু করল। ড্রাইভারদেরও কোন দোষ দেওয়া যায় না। তারা তো আর পাইলট নয়, তারা আজীবন গাড়ি চালিয়েছে ধুলোমাখা রাস্তায়। আর প্লেনের মত অগুনতি ট্যাক্সিকে রাডার দিয়ে কোনও নির্দিষ্ট পথে চালানোও সম্ভব নয় -আর সে কথা কেউ আগে ভাবেনও নি।  বিজ্ঞানীরা আশ্বাস দিয়েছিলেন, ট্যাক্সির উড়ান সফল হওয়ার পরে ধীরে ধীরে চালু হবে উড়ুক্কু বাস। ধাক্কাধাক্কির বহর দেখে তাঁরা আর এই নিয়ে উচ্চবাচ্য করলেন না।  সকলেই বলাবলি শুরু করল যে এবার এই ট্যাক্সি বন্ধ না হয়ে যায়।

এদিকে উড়ুক্কু গাড়ির জন্য তো আর সিগন্যালও নেই। মাটিতে চৌরাস্তার মোড়ে দাঁড়ানো ট্রাফিক পুলিস যে তা উড়তি গাড়ি সামলাবেন সে গুড়ে বালি। এমনিতেই রাস্তা সামলাতেই হিমশিম। তার ওপরে আবার আকাশে নজর রাখবে কে? ফলে ধাক্কা লাগা যে কমিয়ে আনা যাবে তাও সম্ভব হল না। বিজ্ঞান কাউন্সিলে একজন পরামর্শ দিয়েছিলেন যে আকাশ থেকে যখন ট্রাফিক সিগনাল দেখা যাচ্ছে না বা মানা যাচ্ছে না, তখন না হয় উড়ুক্কু ট্রাফিক পুলিস বহাল করা হোক। বলাই বাহুল্য, ধাক্কার বহর দেখে কেউ সে দায়িত্ত নিতে রাজি হননি। 

শেষটায় অবস্থা এমন দাঁড়ালো যে উড়ুক্কু ট্যাক্সির মালিকরা নিজেরাই নেমে এলেন মাটিতে। কেউ আর রাজি হলেন না গাড়ি নিয়ে ওপরে উঠতে।

ক্যান্টিনে, রাস্তার মোড়ে, পান দোকানে আবার একরাশ জল্পনা কল্পনা শুরু হয়ে গেল - এবার বৈজ্ঞানিকরা কি করবেন? বাঙালীর গর্বের উড়ুক্কু ট্যাক্সি কি বন্ধ হয়ে গেল? এদিকে পূজো এগিয়ে আসছে। সেজন্য বিশেষ নোটিস জারি হল, যাদের উড়ুক্কু ট্যাক্সি আছে, তারা চাইলেও অক্টোবরের কটা দিন উড়তে পারবেন না। 

অনেকে ভেবেছিলেন আকাশ থেকে রঙচঙে প্যান্ডেল গুলো দেখবে। তারা কেবলই হা হুতাশ করতে থাকলেন।