খেলাঘরখেলাঘর




“এই ছোকরা। তোর বাবু কোথায়?”
“আজ্ঞে, আপনাকে যে বললুম গতকাল। উনি তো সেই পুনা না কোথায় গেচেন, অনেক দূর শুনেছি। এর মধ্যেই কি আর ফিরবেন?  ”
“বটে, তা তোর বাবু কোন খবর দিয়ে যায় নি কবে ফিরবে?”
“আজ্ঞে না বাবু। কিছু তো বলেন নি। ”
“ বটে!”

খানিক পায়চারি করে বসার ঘরের সোফায় ধুপ করে বসে পড়লেন গোবিন্দবাবু। হঠাৎ জিজ্ঞেস করলেন, ‘হ্যাঁ রে, বাবু ক চামচ চিনি খেয়েছেন আজ সকালে?’
“এজ্ঞে, দু চামচ।”
গোবিন্দবাবু এক লাফে উঠে দাঁড়িয়ে বাঘের মত চোখ বড় বড় করে বললেন, “তবে রে ব্যাটা। এতক্ষন আমার সঙ্গে চালাকি করছিলিস?”
“এজ্ঞে না বাবু”, খেঁদু তখনও বুঝে উঠতে পারেনি সে কি গোলমালটা করেছে।
গোবিন্দবাবু লাফিয়ে এসে একরকম জামার কলারটাই চেপে ধরলেন, “তবে রে। বুঝতে পারিস নি? তোর বাবু নাকি পুনে গেছে? তো সকালবেলায় কি ভূতের পিঠে চড়ে এসেছিল চা খেতে? আমি তখনই বুঝেছি একটা গড়বড় আছে। এখনও সময় আছে। ভালো চাস তো বল তোর বাবু কোথায় আছে আর কি করছে?”
খেঁদু আর থাকতে পারল না। হেঁচে কেঁদে একটা বৃত্তান্ত সে জাহির করলে। গোবিন্দবাবু খুব মন দিয়ে শুনলেন। তারপর দুদ্দাড় করে উঠে এলেন তিনতলায়। নিচু ছাত। মাথা আর একটু হলেই ছাতে ঠুকে যাবে।
 
“বলি তোর আক্কেল খানা কি রে? এসব কি?”
পটলবাবু একটা নকশা করছিলেন। কিন্তু ব্যাপারটা ঠিকপথে এগোচ্ছিল না। এখন বন্ধুর কাছে ধরা পড়ে গিয়ে একটু লজ্জিতই হয়ে পড়লেন। কি বলবেন কি করছিলেন? গোবিন্দ হয়তো হেসেই উড়িয়ে দেবে। নিরুপায় হয়ে সব কথা স্বীকার করতেই হল। 
গোবিন্দবাবু সব শুনলেন। তারপর বললেন, “তা এখন কি নিয়ে গবেষনা হচ্ছে শুনি?”
“কি নিয়ে গবেষণা করব তাই নিয়েই -”
কথাটা শেষ করতে দিলেন না গোবিন্দবাউ, বললেন, “কালকে সকাল পাঁচটায়”

প্রবল অনিচ্ছা সত্তেও দু দিন পর সকালবেলা মর্নিং ওয়াকে বেরোতেই হল পটলবাবুকে।  বাড়ি থেকে দু’পা এগিয়ে পার্কের এক কোনে একটা ভাঙা ট্যাক্সি দেখা গেল। নিঃসন্দেহে উড়ুক্কু ট্যাক্সিই হবে। ট্যক্সি ঘিরে লোকের জটলা। এই সক্কালবেলাতেও এমন ধাক্কা লাগবে কেউ কল্পনাতেও ভাবেনি। গোবিন্দবাবু মুচকি হেসে বললেন, “ওহে সায়েন্টিস্ট। এই সমস্যার একটা সমাধান করো দেখি কেমন পারো? মানুষ তো সেই কবে থেকেই পাখি হতে চেয়েছে, পেরেছে কি?”

পটলবাবু প্রতিবাদ করতে যাচ্ছিলেন, “এ জিনিস কি আমি বানিয়েছি নাকি যে সারাবো, তৈরী করেছেন সরকারি বিজ্ঞানীরা, ওরাই বুঝবেন।” তারপর হঠাৎ করে কি মনে হওয়ায় থমকে গেলেন। সত্যিই তো! নিজের ল্যাবরেটরিতে বসে ঘষে মেজে রোবট বানিয়ে কি হবে? এর চেয়ে তো এত বড় সমস্যা রয়েছে হাতের সামনেই। ওদিকে গোবিন্দবাবু হাঁকালেন, “কিরে ব্যাটা এখানেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফাঁকি দিলে চলবে?”

পটলবাবুও পা চালালেন।