খেলাঘরখেলাঘর

বোকা উগং

উত্তর চীনের হান ও জিঝু নদীর মধ্যিখানে প্রায় সত্তর মাইল এলাকা জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে  কয়েক হাজার ফিট উঁচু তায়হাং-ওয়ান্গু পর্বতদ্বয়।
অনেক অনেক কাল আগে ওই পর্বত দুটোর মাঝের সমতল অংশে কুটির বেঁধে বাস করতো এক নির্বোধ বুড়ো। নাম তার উগং।বয়স গড়িয়ে নিরানব্বই ছুঁয়েছে।ছেলেমেয়ে নাতিপুতি নিয়ে এমনিতে বেশ সুখের সংসার।অথচ বুড়োর মনে শান্তি নেই।অশান্তির স্রষ্টা আর কেউ নয়,ওই তায়হাং-ওয়ান্গু!উগংয়ের আস্তানার দু’পাশে ওদের বিশাল উচ্চতার আড়ালে ঢাকা পড়ে গেছে আশেপাশের সব দৃশ্যপট।মনে মনে চরম ক্ষোভ পুষেই দিন কাটছিলো বেচারার।কারণ বহু ভেবেও সমস্যাটার কুলকিনারা পাওয়া যাচ্ছে না!

শততম জন্মদিনের দিন যথারীতি বৃদ্ধের চোখ চলে গেলো তায়হাংয়ের দিকে।বুক চিরে উঠে এলো নীরব দীর্ঘশ্বাস!এই প্রকান্ড পাহাড় টপকে কোথাও বেড়াতে যাবার সামর্থ আজ আর নেই।ঘরে বসেই শেষ জীবনটা আদিগন্ত প্রকৃতি দেখে কাটাবে ভেবেছিলো,সেও হবার নয়!সমস্ত দিন বিছানা আঁকড়ে শুয়ে থাকলো উগং।বুড়ি নানা ভাবে চেষ্টা করলো স্বামীর গোসা ভাঙানোর।মোটে লাভ হল না।জীবনের এতোগুলো বছর ওই রাক্ষুসে পর্বত দুটোর আবডাল কত সহস্র অপূর্ব দৃশ্য উপভোগ থেকে তাকে বঞ্চিত করেছে কে জানে!দুহাতে মুখ ঢাকলো বুড়ো।

প্রথম প্রথম সবাই ধরে নিয়েছিলো দিন কয়েক পেরোলে উগংয়ের ভিমরতি আপনিই দূর হবে।কার্যক্ষেত্রে দেখা গেলো ভিন্ন ছবি।পরিবারের লোকজন ব্যাপারটা যত মজার ছলে নিয়েছিলো,তেমন তো নয়!

ঠিক কী ঘটতে চলেছে কাউকে আঁচ করার সুযোগমাত্র না দিয়ে আচমকাই একদিন আত্মীয় বন্ধুদের জরুরী তলব পাঠালো বৃদ্ধ।চিঠি পেয়ে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো যে যেখানে ছিলো।তার নিজের সন্তান এবং তস্য সন্তানাদি মিলিয়ে জমায়েত যা দাঁড়ালো,ঘরে মাছি গলার জায়গা নেই!আপনজনেরা একে একে সবাই উপস্হিত হলে উগং তার মনোবাসনাটি খোলসা করে জানালো।

ইচ্ছেটা এই প্রকারের: সে পায়ে হেঁটে পবিত্র হান নদী দর্শন করতে চায়।কিন্তু অতি বার্দ্ধক্যের কারণে অমন উঁচু পাহাড় ডিঙোনো তার পক্ষে অসম্ভব।সকলে একযোগে পাহাড় কেটে হান নদী পর্যন্ত একটা সোজা পথ বানিয়ে দিলে বেচারার মনোকামনা পূর্ণ হতে পারে।