খেলাঘরখেলাঘর

কুলতলির ময়নামাসি

 

ময়নামাসি বলল, তা এবার তোমার মেয়ে দেখাও।
কুসুমপাড়ার ময়নাদিদি বলল, মেয়ে এখন সাজ করছে, সাজ শেষ হলেই নিয়ে আসব। তা আপনার ছেলে কী কী করে শুনি?
-কী আর করবে, এ বছর ইয়ে পাশ করেছে। নানা কাজে ওকে কখনো পলাশপুর, কখনও শিমুলতলি কখনও হাটতলায় যেতে হয়।ঘর পৌঁছোতে পৌঁছোতে সন্ধ্যে হয়ে যায়। শুনছি ও নাকি কুলতুলির নেতা হবে। খাওয়াদাওয়ার কোনই অভাব নেই আমাদের ওখানে। ডালগমের ক্ষেত আছে। কাজেই আমাদের ঘরে সবসময়ই খাবার মজুত থাকে। পোকামাকড় বড়ো একটা খাই না। আমরা এখন উচ্চঘর কি না!
-বাঃ এ তো ভালো খবর। আমার মেয়ে তবে সুখেই থাকবে, বলল কুসুমপাড়ার ময়নাদিদি।
-হ্যাঁ, হ্যাঁ সুখে থাকবে বৈ কী! শুধু ঘর দেখবে আর কাচ্চাবাচ্চা সামলাবে।কাজকর্ম বিশেষ করতে হবে না, এটুকু বলতে পারি।
-হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিকই বলেছে ময়নামাসি। বলল পলাশপুরের শালিকদিদি। এরপর আরো দু-তিন কথার মধ্যেই শালিকমেয়ে এসে পড়ল ওদের মাঝখানে।
ময়নামাসি বলল, তা তোমার নাম কী মা?
-টি-টি-টি, বলল শালিকমেয়ে।
-বাহ্‌, কী কী কাজ করতে পারো?  
-আখের মাঠ থেকে আখের ছিবড়ে আনতে পারি, জলে গিয়ে নাইতে পারি, কেউ বললে গাইতে পারি।
-আর কী কী পারো মা?
- মাসির বাড়ি যেতে পারি, পিসির বাড়ি যেতে পারি, রেলগাড়ির মাথায় চড়তে পারি, একলা একলা হাঁটতে পারি।
-বাহ্‌, খুব ভালো, বাহ্‌ খুব ভালো। এবার যেতে পারো মা।- বলল ময়নামাসি।
এরপর আলাদা করে কুসুমপাড়ার ময়নাদিদিকে বলল ময়নামাসি, তা বিয়েতে কী কী দিতে পারবে শুনি? আমার ছেলে তো ইয়ে পাশ করেছে, নেতাও হবে, ওর তো কিছু চাই।
-বেশ্‌, সজনখালির মাঠ আমাদের নামে ছিল, ওটা তোমার ছেলের নামে করে দেব, কুসুমপাড়ার ঘাট তোমার ছেলের নামে করে দেব আর কুসুমপাড়ার ভোট তাও তোমার ছেলে পাবে, এটুকু বলতে পারি।
এসব শুনে ময়নামাসির খুবই আনন্দ হল। পলাশপুরের শালিকদিদিকে বলল, ভালোই হল, এবার ছেলেকে গিয়ে সব বলতে হবে। তুমি আমার জন্য অনেক করলে বোন।
-এ এমন আর কী! বলল পলাশপুরের শালিকদিদি।
-তোমাকে কিন্তু আমাদের সঙ্গে বরযাত্রী যেতে হবে। তোমার নিমন্ত্রণ রইল। যাবে তো?
নিশ্চয়ই যাব, বলল শালিকদিদি।
কুসুমপাড়ার ময়নাদিদিকে ময়নামাসি এবারে বলল, মেয়ে পছন্দ হয়েছে, এবারে যাই।
-আবার আসবেন, হাসিমুখে বলল কুসুমপাড়ার ময়নাদিদি।
-আচ্ছা। বলল ময়নামাসি।
বেলা গড়াল।
এরপর একজন উড়ে চলল কুলতলিতে আর একজন উড়ে চলল পলাশপুরে।
সূর্যঠাকুর তখন পশ্চিম আকাশে যাই যাই করছেন।


সুনির্মল চক্রবর্তী

প্রখ্যাত শিশু সাহিত্যিক সুনির্মল চক্রবর্তী তাঁর এই গল্পটি ইচ্ছামতীতে প্রকাশিত হবার অনুমতি দিয়েছেন। এই গল্পটি পূর্বে অন্যত্র প্রকাশিত হয়েছে। মূল বানান অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।