খেলাঘরখেলাঘর

বনের ধারে নদীর পাড়ে

 

 

বনের ধারে নদীর পাড়ে

বনের ধারে নদীর পারে রহিমদের বাড়ি। গাঁয়ের নাম মকুলি। সেখানে আবার কয়লার খাদ। সেই খাদে কাজ করে রহিমের বাবা।
মকুলিগাঁয়ের পাশের গ্রাম- নওয়াডি। সেখানে রামেদের বাড়ি। রামের বাবা রোজ আসে মকুলি। রহিমের বাবার সাথে একসঙ্গে কাজ করে।
রহিমের বাবা প্রতি রোববার আসে রহিমদের বাড়ি। সঙ্গে আসে ছোটো ছেলে রহিম।
ঠিক পরের রোববার রামের বাবা আসে রহিমদের বাড়ি। সঙ্গে আসে ছোটো ছেলে রাম।
রামের সাথে রহিমের খুব ভাব। মকুলিতে এলে রহিম রামকে নিয়ে অটোরিক্‌সায় চেপে বলে, চল্‌ নদীর পাড়ে যাই।
নদীর পাড়ে সারি সারি গাছ। আর নদীর জলে কত রকমের মাছ। রাম নদীর পাড়ের গাছ দেখতে ভালোবাসে। আর রহিম ভালোবাসে নদীর জলের মাছ দেখতে।
নওয়াডিতে এলে রাম রহিমকে নিয়ে গোরুর গাড়িতে চাপে। বলে, চল্‌ মাসির বাড়ি।
সেখানে একসাথে দুজনে মাঠে খেলা করে। রামের মাসি বাটি ভরে ওদের মুড়ি খেতে দেয়। সঙ্গে থাকে পেঁয়াজ ও খেতের কাঁচালঙ্কা। রাম ওর বাবার মত পেঁয়াজ খেতে ভালোবাসে। আর রহিম ওর আব্বাজানের মতো কাঁচালঙ্কা কচ্‌ কচ্‌ করে খায়।সন্ধে হলেই ওরা বাড়ি ফিরে আসে।
রাম বাড়িতে এসে যে বই পড়ে, রহিমও সেই বই পড়তে বসে যায়। রাম বাড়িতে এসে যে অঙ্ক কষে রহিমও সেই অঙ্ক কষতে বসে যায়। আসলে দুজনেই এক ক্লাসে পড়ে আর একই ইশকুলে। ইশকুলের নাম শিশু বিদ্যামন্দির। মকুলি আর নওয়াডি ছাড়িয়ে সেই ইশ্‌কুল। ইশ্‌কুলে ওরা বাসে চেপে যায়। সবাই বলে , কোলিয়ারির বাস। বাসে উঠেই জানালার পাশের সীটে বসে ওরা হাওয়া খেতে খেতে যায়। রহিম খুশি হয় রামকে পেয়ে। রামও খুশি হয় রহিমকে পেয়ে। গান গাইতে গাইতে হাততালি দিতে দিতে ওরা ইশ্‌কুলে পৌঁছোয়।
এমনি করেই দিন চলে। রামের বাবা কালিঝুলি মেখে বাড়িতে ঢোকে। রহিমের আব্বাজানও ঝোড়া-বেলচা কাঁধে বাড়িতে আসে।
রহিম দেশ বলতে জানে এই ছোট্ট গ্রাম মকুলিকে। আর রাম জানে ওদের গ্রাম নওয়াডি-কে।
এত বড় একটা দেশে কত কিছু ঘটে যায়। কত দিন যায়, কত রাত যায়।
রাম রহিমকে ঈদের দিনে এসে বলে যায়- ঈদ মোবারক। রহিম রামকে বুকে টেনে নেয়। রহিমের মা রামকে খেতে দেয় কত রকমের সেউ-এর পায়েস।
আর দুগ্‌গোপুজোর দিনগুলিতে রহিম রামেদের বাড়ি ছাড়তেই চায় না। নতুন জামা পরে রামের সাথে সে-ও ঠাকুর দেখতে যায়। ট্রেকারে চেপে ঘুরে বেড়ায় ডুমরি, সুরী ও গিরিডি। রামের মা রহিমকে ডেকে আদর করে সেদিন খেতে দেয় বাসমতী চালের পায়েস। আর দেয় চার-চারখানা লাড্ডু। যা পেলে রহিম আনন্দে লাফিয়ে ওঠে।
রাম আর এই রহিম যেন
ছোট্ট দুটি ভাই,
বনের ধারে, বলো এমন
বন্ধু কোথা পাই?

বনের ধারে নদীর পাড়ে

সুনির্মল চক্রবর্তী

প্রখ্যাত শিশু সাহিত্যিক সুনির্মল চক্রবর্তী তাঁর এই গল্পটি ইচ্ছামতীতে প্রকাশিত হবার অনুমতি দিয়েছেন। এই গল্পটি পূর্বে অন্যত্র প্রকাশিত হয়েছে। মূল বানান অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।