খেলাঘরখেলাঘর

জংলি ঘোড়া

আমরা জানি যে ভারতের গুজরাতে জংলি গাধা পাওয়া যায়, আফ্রিকায়ে জংলি কুকুর পাওয়া যায় আর বুনো মোষ, কিন্তু তুমি কি জংলি ঘোড়ার কথা শুনেছ ?
কি বললে? শোননি ?
ঠিক আছে, তাহলে আজ আমি তোমাকে জংলি ঘোড়ার কথা শোনাই, কেমন ?
কয়েকদিন আগে আমরা “হুস্তাই নাশানাল পার্কে” বেড়াতে গেছিলাম । এই পার্ক মঙ্গোলিয়ার রাজধানী উলানবাতার থেকে ১০০ কিমি দুরে অবস্থিত ।

আমরা দুপুরবেলার খাওয়া দাওয়া সেরে, একজন বন্ধুর গাড়ি চেপে ওই পার্কে বেড়াতে গেলাম ।
পার্কে ঢুকতে গেলে বিদেশীদের টিকিট কাটতে হয় । প্রতি টিকিট দশ ডলার ।
সুতরাং আমরাও টিকিট কেটে, পার্কে ঢুকলাম । আমাদের সঙ্গে ছিল একজন মঙ্গোলিয়ান মেয়ে গাইড । সে আমাদের রাস্তা দেখিয়ে নিয়ে চললো । কিছুদুর যাওয়ার পরে এক জায়গায়ে সে গাড়ি থামাতে বললো। আমরা ওখানে গাড়ি থেকে নেমে অপেক্ষায়ে বসে রইলাম । মেয়েটি আমাদের বললো যে জংলি ঘোড়া ওখান দিয়ে যাওয়া আসা করে । আমরা ছাড়াও ওখানে আরো অনেক লোক ছিল যারা বেড়াতে এসেছিলো ।
ঘন্টা খানেক বসে থাকার পর, হঠাৎ দেখি সবাই একদিকে ইশারা করে কিছু বলছে । ভালো করে দেখার পর বুঝতে পারলাম যে বেশ দূরে কিছু জংলি ঘোড়া দেখা যাচ্ছিলো । আমাদের গাইড মেয়েটির কাছে দুরবিন ছিলো । সেই দুরবিন দিয়ে ঘোড়াগুলিকে দেখলাম । খানিকক্ষণের মধ্যেই ঘোড়া গুলো ঘাস খেতে খেতে বেশ কাছে চলে এলো । এবার তো দুরবিন ছাড়াও বেশ ভালো ভাবেই দেখা যাচ্ছিলো ।

জংলি ঘোড়া


এই ঘোড়া দের “শেবাল্স্কি হর্স” বলা হয় । পোষা ঘোড়ার তুলনায় শরীরে একটু ছোট খাটো, ওদের ওজন প্রায় ৩০০ কিলোর কাছকাছি হয় । রং হালকা খয়েরি-সাদা মেশানো । ঘাড়ের কাছে ঘন খয়েরি রং । মঙ্গোলিয়ায় এদের 'জংলি ঘোড়া' বা 'টাখি' বলা হয় । এরা মধ্য এশিয়া আর গোবি মরুভূমির বাসিন্দা ।

জংলি ঘোড়া

প্রায় চার দশক আগে এই ঘোড়া প্রাকৃতিক পরিবেশে লুপ্ত হয়ে গেছিলো । ইউরোপের কিছু চিড়িয়াখানা ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যেতনা । প্রায় দু দশক আগে এই ঘোড়া গুলিকে ইউরোপ থেকে চীন ও মঙ্গোলিয়া আনা হয় এবং পুনরায় প্রাকৃতিক পরিবেশে ছাড়ার চেষ্টা করা হয় । এখন সারা পৃথিবীতে সব মিলিয়ে প্রায় ১৫০০ শেবাল্স্কি ঘোড়া আছে । মঙ্গোলিয়ার এই “হুস্তাই নাশানাল পার্ক” ছাড়াও এদের চিনের “কালামেলি পর্বতমালা”, উক্রেনের “অস্কানিয়া নোভা” আর “চেরনোবিল” এলাকা এবং হাঙ্গারির “হর্তব্ব্গী পুস্যা” এলাকায়ে পাওয়া যায় ।


এবার আবার আমি আমাদের কথায় ফিরে আসি । আমরা দেখলাম প্রায় দশটা ঘোড়ার একটা দল দূরের পাহাড় থেকে নেমে এসে আমাদের বেশ কাছ দিয়ে দৌড়ে বেড়িয়ে গেলো। আমরা যেখানে দাড়িয়ে ছিলাম, ওখান থেকে প্রায় দু-তিন শো মিটার দুরে একটি ছোট নালা ছিল । ঘোড়া গুলি দৌড়ে ওদিকে চলে গেলো আর নালার জল খেতে লাগলো, নালার আশেপাশের ঘাস চরতে লাগলো । আমরা খানিক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখার পর আবার ফিরে এলাম । একটি লুপ্তপ্রায় প্রাণীকে দেখতে পেয়ে আমরা নিজেদের ধন্য মনে করছিলাম ।

জংলি ঘোড়া



লেখা ও ছবিঃ
তৃপ্তি ভট্টাচার্যি
উলান বাতার, মঙ্গোলিয়া