সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
চাঁদের বুড়ির চরকা-চিঠিঃ ১৪২৯/০১- সবুজ থাকার প্রতিশ্রুতি

কেমন আছ ? নতুন বাংলা সন ১৪২৯ এর দুটো মাস পেরিয়ে গেল, এসে গেছে বাংলার আষাঢ় মাস, ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নেমেছে কোনো কোনো জায়গায়। এই সময়ে আমরা একটু পাহাড়ে বেড়াতে এসেছি। ভাবলাম, আবহাওয়া তো সমতলের থেকে অনেক ভালো হবেই, গরমও কম লাগবে নিশ্চয়। পাহাড়ে বেড়াতে আসব ভাবলেই সঙ্গে গুছিয়ে নিতে হয় দুয়েকটা শীতের কাপড়, কারণ পাহাড়, বিশেষ করে হিমালয়ের কাছাকাছি এলে তো ঠান্ডা লাগারই কথা । সেসব হিসেব কষে পৌঁছে দেখি — কোথায় কী! এখানে যে বেজায় গরম।  হিমালয়ের পাদদেশে, উত্তরাখন্ড রাজ্যের রাজধানী দেরাদুনে এসে আমরা রীতিমত গরমে ঘামছি। এখানে যাঁরা থাকেন, তাঁরা বললেন, এমন গরম যে এখানে পড়তে পারে সে তাঁরা কোনোদিন ভাবেননি।

এদিকে ইচ্ছামতী তো ভেবেছিল দিব্যি ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়া থাকবে। তার বদলে এমন অভিজ্ঞতায় সে খুব দুখী মুখ করে আমাকে এসে বলল, আমি জানি এমন আবহাওয়া কেন হচ্ছে —  এ হল বিশ্ব উষ্ণায়নের ফল । আমরা ছোটরা এসব ঠিক বুঝি, তোমরা বড়রা কেন বোঝো না? এই তো সবে গেল 'বিশ্ব পরিবেশ দিবস', তার কিছুদিন আগেই হইহই করে পালন করলে 'বসুন্ধরা দিবস'। কিন্তু ওই একদিন হইহই করে উৎসব পালন করলেই কি চলবে? বছরের বাকি দিন গুলো পরিবেশ নিয়ে, উষ্ণায়ন নিয়ে ভাববে না?

সত্যিই, আমরা বড়রা আমাদের দায়িত্ব কি সবসময়ে যথাযথভাবে পালন করি? বছর দুয়েক আগে, এক বিয়েবাড়িতে, আমাদের সবাইকে পাতলা প্লাস্টিকের কাপে করে চা দেওয়া হচ্ছিল। সেইখানে উপস্থিত একমাত্র ছোট্ট মানুষ — সেই বাড়ির ছোট্ট মেয়েটি — সবাইকে বারণ করেছিল ওই কাপগুলো ব্যবহার না করতে। কিন্তু আমরা কেউ তার কথা কানে নিইনি। এখন ভাবলে মনে হয় আমরা সবাই সেদিন অন্যায় করেছিলাম- নিজেদের প্রতি, পরিবেশের প্রতি।

প্রতিদিন যেভাবে জলবায়ু পরিবর্তন হয়ে চলেছে, তাতে পৃথিবীকে দীর্ঘদিন বাসযোগ্য বানিয়ে রাখার জন্য ছোট থেকে বড়, সব মানুষের সমান ভাবে সক্রিয় থাকা উচিত। চলতি বছরে দক্ষিণ এশিয়াতে যেভাবে তাপ প্রবাহ চলেছে, তার ফলে আমরা সবাই প্রচন্ড গরমে কষ্ট পেয়েছি আর পাচ্ছি, চারদিকে বাড়ছে জলসংকট, খাদ্যসংকট;  শস্যের ক্ষতি হচ্ছে। পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা যদি আমরা নিয়ন্ত্রনে না রাখতে পারি, তাহলে এমন তাপ প্রবাহ প্রতিবছর আরও হবে, এমনই সতর্কতা জারি করেছেন বিজ্ঞানীরা।

ওদিকে ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২,শুরু হয়েছে রাশিয়া আর ইউক্রেনের যুদ্ধ;  হিসেবমত সাড়ে তিন মাস পেরিয়ে গেছে। যুদ্ধ এখনও চলছে। ধ্বংস্তূপে পরিণত হয়েছে ছোট -বড় শহর। বহু বহু মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন। নিহত হয়েছেন অগুন্তি অসহায় মানুষ, যাদের মধ্যে রয়েছে অনেক শিশু। বাবাকে বা মা কে ছেড়ে, হয়ত বা একেবারে একা একা, অন্য দেশের শরণার্থী হয়ে চলে যেতে হয়েছে।

ইউনিসেফের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ইউক্রেনে চলতে থাকা যুদ্ধের কারণে

- প্রতিদিন গড়ে ২ জন করে শিশুর মৃত্যু হচ্ছে
- প্রতিদিন ৪ জনের বেশি শিশু আহত হচ্ছে
- প্রতি ৩ জনের মধ্যে ২ জন শিশু ঘরছাড়া

এই যুদ্ধের ফলে শুধুমাত্র ওই দুই দেশের মানুষের ক্ষতি হচ্ছে তা নয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শুরু হয়েছে এবং চলতে থাকবে খাদ্যসংকট। প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়বে। সব মিলিয়ে এই পৃথিবী, বা মানুষ কেউই খুব ভালো নেই বোধহয়।

জীবনটা যদি রূপকথার গল্পের মত হত, তাহলে নাহয় গুপী গাইন আর বাঘা বাইনকে পাঠানো যেত গান গেয়ে যুদ্ধ থামিয়ে দেওয়ার জন্য। কিংবা মোয়ানা আর মাউইকে বলা যেত পৃথিবীকে সুশীতল করে দিতে। কিন্তু সে তো কেবল গল্পেই হয়ে থাকে, তাই না?

চাঁদের বুড়ির চরকা-চিঠিঃ ১৪২৯/০১- সবুজ থাকার প্রতিশ্রুতি

কিন্তু হতাশ হয়ে পড়লে তো চলবে না। আমরা প্রত্যেকে যদি একটু করে হলেও পৃথিবীর, পরিবেশের যত্ন নিই, তাহলে হয়ত পৃথিবীর একটু আরাম হবে, যার ফলে আমরাও আরামে থাকতে পারব। এই বর্ষায়, সম্ভব হলে নিজের বাড়ির বারান্দায় বা জানলার গ্রিলে ঝুলিয়ে দাও ছোট্ট এক- দুটো ফুলের টব, সেখানে পুঁতে দাও ছোট্ট কোনো পাতাবাহার বা ফুল গাছের চারা। কয়েকদিনের মধ্যেই দেখবে, কেমন নতুন পাতা গজাচ্ছে, নতুন ফুল ফুটে সকাল বেলা তোমাকে বলছে - সুপ্রভাত। সবুজ গাছপালাকে করে তোলো তোমার নিত্যদিনের সঙ্গী। ছোট্ট ছোট্ট হাতে নিজের চারপাশটা সবুজ রঙে ভরিয়ে দাও। পৃথিবীকে আরামে থাকতে সাহায্য করো।

ভালো থেকো, সুস্থ থেকো,
নিজের মনকে সবুজ রেখো। 

১১ আষাঢ়, ১৪২৮
২৬ জুন, ২০২২

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা