সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

এরপর ফাল্গুন মাসের সংক্রান্তিতে অর্থাৎ ফাল্গুন মাসের শেষ দিনে হয় ঘেঁটু সংক্রান্তির পূজো। আগে ওই দিন সন্ধে বেলায় আমি আর আমার বন্ধুরা কলা গাছের ঘর বানিয়ে আর তাতে একটা প্রদীপ জ্বালিয়ে সেটা কাঁধে করে নিয়ে গোটা গ্রাম ঘুরতাম , প্রত্যেক বাড়িতে গিয়ে ছড়া কাটতাম , 'ঘেঁটু গাই ঘেঁটু গাই ঘোষ পাড়া / আয়রে ঘেঁটু নড়ে / ষষ্ঠী কাঁধে করে ...' আর সকলে আমদের হাতের ছোট ছোট ঝোলা গুলোকে চালে ভরিয়ে দিত। শহরের বাচ্চাদের কাছে ' টুইংকল টুইংকল লিটল স্টার' রাইমটা যেমন জনপ্রিয় ঠিক তেমনই আমাদের কাছে ঘেঁটু ছড়া ছিল সমান জনপ্রিয় । ঘেঁটু গাইতে বেড়িয়ে প্রচুর দুষ্টুমিও করেছি আমরা, আর তার জন্য গ্রামের বড়রা শাসনও করেছেন । তবে দুষ্টুমি করলেও পড়াশুনোয় আমি খুব একটা খারাপ ছিলাম না। চারদিকে যাই ঘটুক না কেন সেদিকে আমার ছিল সজাগ নজর। বাবা মজা করে আমার নাম দিয়েছিলেন অলইন্ডিয়া রেডিও । প্রাইমারি স্কুলের পড়া শেষ করে যখন পাশের গ্রামে হাইস্কুলে পঞ্চম ভর্তি হলাম তখন নতুন স্কুল, নতুন বন্ধু আর নতুন বইয়ের গন্ধ এসব নিয়েই আমার আমোদের শেষ ছিল না ।

আমাদের গ্রামে আজও কোন যানবাহন চলে না, তখনও চলত না। মাঝেমাঝে একটা ট্রেকার যদিওবা নিজের খেয়ালে উদয় হত আবার সেটা আপন খেয়ালেই কোথায় যেন লুকিয়ে পড়ত । তাই এই লুকোচুরি খেলার মধ্যে যাতায়াতের জন্য সাইকেল আর বদমাশ গাড়িই হল আমাদের প্রধান ভরসা। আমিও সাইকেলে করেই স্কুল যেতাম । আমরা চার বন্ধু হাত ধরাধরি করে গোটা রাস্তাটা জুড়ে সাইকেল চালাতাম, এতে যদিও রাস্তার অন্যদের খুব অসুবিধা হত। অনেক বকুনিও খেয়েছি এর জন্য। আমাদের বাড়ি থেকে হাইস্কুল যাবার পথে একটা বড় দিঘি পরে। সেই দিঘিতে মাছ কতগুলো হয় জানিনা তবে তার টলটলে জলে প্রচুর শালুক ফোটে । খুব ভাল মনে আছে আমি আর আমার বন্ধুরা স্কুল থেকে বাড়ি ফেরবার সময় সেই দিঘিতে নেমে শালুকগুলোর উপর রীতিমত অত্যাচার চালাতাম। আবার কখনও বা সাইকেল থেকে নেমে রাস্তার ছাগলগুলোকে কোলে চড়িয়ে আদর করতাম। যখন ক্লাস সিক্সে পড়ি তখন স্কুল থেকে আমাদের পাশের আরেকটি গ্রামের 'বিবেকানন্দ গ্রামীণ সেবা সঙ্ঘ' আয়োজিত গ্রামীণ শীতকালীন কৃষি , পুষ্প, পশম, মুচি, হস্তশিল্প, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল । সেখানে আমি কবিগুরুর 'লুকোচুরি ' কবিতাটি আবৃতি করে প্রথম হয়েছিলাম। তারপর থেকে প্রতিবছর আমি সেখানে অংশ নিতাম । এটা আমার কাছে একটা পার্বণের মতই হয়ে দাঁড়িয়েছিল । প্রতিবছর পৌষমাস এলেই অধীর আগ্রহে দিন গুনতাম কবে প্রতিযোগিতা শুরু হবে। সেখানে এই ছোট্ট চপল মেয়েটি তার আবৃতির অনেক ভক্তও পেয়ে গিয়েছিল । সাহিত্যে পুরস্কারপ্রাপ্ত জনৈক কবি আমার আবৃতির ভূয়সী প্রশংসা করেন । খড়ের ছাঊনি দেওয়া মাটির ঘরের দেওয়ালে খেলতে থাকা টিকটিকিগুলোকে দেখে মায়ের কোলে বসে দুধভাত খেয়ে যে মেয়েটি বড় হয়েছে তার কাছে নিঃসন্দেহে এই প্রশংসা ছিল একটা বিরাট প্রাপ্তি ।

আজ আমার সেই ছোটবেলাটা আর নেই। পড়াশুনোর জন্য এখন বলতে গেলে পাকাপাকিভাবে আমি শহরের বাসিন্দা তাই পল্লীর অখ্যাত উৎসবগুলোও আজ আমার জীবনের পুরনো একটা অধ্যায় হয়ে গেছে। এমনকি নবান্নের সময়ও বাড়ি গিয়ে চাল বাঁটা আর নারকেল ভাজা খাওয়ার সুযোগ হয়না । আজ শুধু হোটেলের বেশি তেল মশলা দেওয়া খাবার খেতে হয় আর শুনতে হয় শহরের বাস আর ফোর হুইলাররের হর্ন। আজ আর কোথাও শুনতে পাইনা ঘেঁটু পার্বণের সেই বিখ্যাত ছড়া । তবে এখনও রয়েছে গ্রামের সেই কাঁচা রাস্তা, আম গাছ, কুল গাছ, সেই বড় দীঘি আর সেই দীঘিভর্তি শালুক ফুল। তবে শীতকালীন সেই সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতাটা আজ আর হয় কিনা জানিওনা। এই প্রতিযোগিতা ঘিরে ছেলেবেলার সেই উল্লাস, আগ্রহের সিকি ভাগও আজ আর আমার মধ্যে অবশিষ্ট নেই। রয়েছে শুধু অভিজ্ঞান পত্রগুলো । সেখানে সবাই আমাকে নতুনভাবে দেখেছিল। নিজেকে সবার সামনে নবরূপে আলোকপাত করার সেই স্বর্ণমুহূর্তগুলো আজও চোখ বুজলেই আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে ।

নিবেদিতা মন্ডল কর্ণাটক স্টেট ওপেন ইউনিভার্সিটিতে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে ইচ্ছেমতন লেখালেখিতে হাত পাকাচ্ছে সে।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা