সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

এই গল্পটা নিশ্চয়ই তোমরা অনেকেই জানো। দুই চোর ক্যাবলা আর বিলু কী ভাবে যেন এক বড়লোকদের পার্টিতে ঢুকে পড়েছে। সব দামি দামি কাঁচের প্লেটে খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে আর চামচ, ছুরি, কাঁটা চামচগুলো সব রূপোর!ক্যাবলা তো লোভ সামলাতে না পেরে চট করে কয়েকটা পকেটে ঢুকিয়ে ফেলেছে! বিলু ভাবল ক্যাবলাটা সেই ক্যাবলাই থেকে গেল! ওর ওই ভাবে চামচগুলোকে পকেটে ঢোকানো যদি কেউ দেখে ফেলে থাকে তাহলে তো মহা বিপদ হবে তাই সে বুদ্ধি করে একটা চাল চালল।

উঠে দাঁড়িয়ে সবাইকে বলল, "ভদ্র মহোদয়গণ! আসুন আমি আপনাদের একটা জাদুর খেলা দেখাই! এই আমি টেবিল থেকে কয়েকটা চামচ, কাঁটা আর ছুরি তুলে আমার পকেটে ঢোকালাম! এইবার দেখুন আশ্চর্য ঘটনা, সেগুলো সব বেরোবে এই ভদ্রলোকের কোটের পকেট থেকে!" বলে সটান ক্যাবলার কাছে গিয়ে ওর পকেট থেকে কয়েকটা চামচ, কাঁটা আর ছুরি বার করে ফেলল! উপস্থিত লোকজন ব্যাপারটাকে এক আশ্চর্য জাদু ভেবে হাততালি দিয়ে উঠল। তারপর অবশ্য আর বেশিক্ষণ ওখানে থাকেনি বিলু। ক্যাবলাকে সঙ্গে নিয়ে চটপট কেটে পড়েছিল। তখন ওদের দুজনেরই পকেট ভর্তি রূপোর চামচ, কাঁটা আর ছুরি!

ক্যাবলা আর বিলুকে অবশ্য পরে অন্য চুরির জন্যে ধরা পড়ে হাজতবাস করতে হয়েছিল। কিন্তু সেদিন ওদের গল্পটা পড়তে পড়তে আমার হঠাৎ মনে হল আচ্ছা, চামচ, কাঁটাচামচ আর ছুরি কে আবিষ্কার করেছিল? পড়াশোনা করে যা জানতে পারলাম সেটাই তোমাদের জানাচ্ছি।

চামচ নামের জিনিসটা যে কে আবিষ্কার করেছিল কেউ জানে না! ধরে নেওয়া যায় যবে থেকে মানুষ খাওয়া দাওয়া করছে তবে থেকেই খাবার তোলার জন্যে কিছু একটা দরকার হয়ে পড়েছে। আর চামচ তৈরি করা সব থেকে সহজ। এমনকি প্রকৃতিতেই তো কত রকম চামচ পাওয়া যায়, যেমন ঝিনুক বা চ্যাপটা পাথর। সেই সব চামচের অবশ্য হাতল নেই!

ইতিহাসবিদরা বলেন যীশুখৃষ্টের জন্মের ১০০০ বছর আগেও নাকি চামচ ব্যবহার হত! বেশির ভাগ সময় সেগুলো তৈরি করা হত মৃত জন্তুর হাড় দিয়ে! মিশরের ধ্বংসাবশেষ থেকে অনেক ধরনের চামচ পাওয়া গেছে যেমন হাতির দাঁতের, কাঠের, পাথরের। সেই সব চামচের গায়ে প্রচুর কারুকার্য এবং লেখা টেখাও দেখা গেছে। প্রাচীন চিনা এবং ভারতীয় গ্রন্থেও চামচের উল্লেখ পাওয়া গেছে। এমনকি ঋকবেদেও চামচের কথা বলা আছে!

মজার কথা হল ইউরোপে ১৭০০ সালের আগে পর্যন্ত লোকে কারও বাড়ি গেলে টাকা পয়সার ব্যাগের মতন সঙ্গে করে নিজের চামচটাও নিয়ে যেত! ১৭০০ খৃষ্টাব্দের পর টেবিল সাজানোর প্রথা চালু হয়। বড়লোকেদের চামচ সোনা বা রূপোর হত। ১৭২১ সালে ডন কিয়টের উপন্যাস থেকে 'বর্ন উইথ আ সিলভার স্পুন' কথাটা প্রচলিত হয়। অর্থাৎ বড়লোকের সন্তান। রূপর চামচ নিয়ে আরেকটা অভিনব তথ্য হল সেগুলো দিয়ে অনেক সময় খাবারে বিষ আছে কিনা সেটা পরীক্ষা করে দেখা হত! আগেকার দিনের বিষ আর্সেনিক বেশির ভাগ সময় আর্সেনিক সালফাইড হত। এদিকে রূপোর সঙ্গে সালফার বা গন্ধকের প্রতিক্রিয়া রূপোকে কালো করে দেয় তাই আর্সেনিক সালফাইড সহজেই ধরা পড়ে যেত।

আমরা এখন যে ধরনের চামচ দেখতে অভ্যস্ত সেই চামচ ১৮০০ শতাব্দী থেকে চলছে। মানে সামনের দিকটা ঈষৎ ছুঁচোল আর হাতল দেওয়া। আগে সামনের অংশটা গোলই হত। কাঁটাচামচও অনেক দিন পৃথিবীতে রয়েছে। আগেকার কাঁটাচামচের অবশ্য দুটো করে কাঁটা থাকত আর সেগুলো ব্যবহার হত রান্না করা বা পরিবেশনে। খাওয়াটা লোকে হাত, চামচ বা ছুরি দিয়েই করত।

চামচের মতন মিশরের কাঁটাচামচও পাওয়া গেছে। চিন দেশে ২৪০০-১৯০০ খৃষ্টপূর্বাব্দেও চামচ ব্যবহার হত। এদিকে মিশর থেকেই নাকি কাঁটাচামচ ভেনিসে যায়। ১১০০ শতাব্দীতে নাকি এক রাজকন্যা তার বিয়ের যৌতুক হিসেবে কাঁটাচামচ এনেছিলেন এবং তাতে তাঁর হবু শ্বশুর বাড়িতে বেশ কলরবের সৃষ্টি হয়! ধর্মভীরু ভেনিসের লোকজন মনে করত কাঁটাচামচ দিয়ে খাওয়া মানে ভগবানকে অসম্মান করা কারণ তিনি তো আমাদের খাবার জন্যে আঙ্গুল দিয়েছেন! সেই রাজকন্যা যখন দু বছর বাদে কোন এক অজানা অসুখে মারা যায় তখন লোকে ভগবানের অভিশাপ বলেই ধরে নিয়েছিল। এই ভাবেই কাঁটাচামচের প্রতি লোকেদের ভীতি বেশ কিছুদিন চলেছিল। শেষে ১৬০০ শতাব্দীতে ক্যাথারিন ডি মেডিসি দ্বিতীয় হেনরির সঙ্গে বিয়ের পর খাওয়ার জন্যে কাঁটা ব্যবহার করা শুরু করেন।

১৮০০ শতাব্দীতে ইউরোপের বড়লোকরা কাঁটাচামচ ব্যবহার করতেন এবং নিজের কাঁটা চামচ নিজের সঙ্গে করে নিয়ে ঘুরতেন! সাধারণ মানুষ কাঁটা চামচ ব্যবহার করতে পেরেছিল আরো ১০০ বছর পরে এবং তখন দাম এতটাই কমে যায় যে সবাই নিজেদের বাড়িতে বেশি বেশি করে কিনে অতিথিদের থালার সঙ্গে ব্যবহারের জন্যে দিতে সক্ষম হয়।

এর পর থেকে বিভিন্ন ধরনের খাবারের জন্যে অনেক রকমের কাঁটাচামচ তৈরি হতে থাকে। যেমন মাংস খাওয়ার জন্যে এক রকম, চিজ খাওয়ার জন্যে এক রকম, স্যালাড খাওয়ার জন্যে এক রকম ইত্যাদি। পাশ্চাত্যে এখনও কাঁটা চামচের কদর বেশ বেশি।

আর ছুরি? ছুরি জিনিসটা আদিম যুগের মানুষও ব্যবহার করেছে – অস্ত্র হিসেবেও আর খাবার কাটার জন্যেও! তবে আগেকার দিনে খাওয়ার টেবিলে রাখা ছুরিগুলোও ধারলো হত আর তাই খেতে খেতে কথা কাটাকাটি লেগে গেলে হুলুস্থুল অবস্থা! তাছাড়া খেতে গিয়ে গাল মুখ কেটে রক্তারক্তি হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে তাই খাবার টেবিলের ছুরিকে ক্রমে ভোঁতা করে দেওয়া হয়! তবে স্টেনলেস স্টিলের ছুরি তৈরি হয়েছে মাত্র বিংশ শতাব্দীতে!

তোমরা পারো নাকি চামচ, কাঁটা চামচ আর ছুরি দিয়ে খেতে? আমার তো মনে হয় হাত দিয়ে খেতেই বেশি মজা, তাই না?


ছবিঃ ফ্রি ইমেজ ওয়েবসাইট

অনন্যা দাশ কর্মসূত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। নেশা বই পড়া আর গল্প লেখা। শিশুদের জন্যে সামাজিক গল্প ও কিশোরদের জন্যে রহস্য গল্প লিখতে ভালবাসেন। বাংলাতে প্রকাশিত অধিকাংশ শিশু কিশোর পত্রিকাতেই লিখেছেন কোন না কোন সময়ে।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা