সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
বিজ্ঞানে বিদূষী: ইডা নোড্যাক ও নিউক্লীয় বিভাজন

নমস্কার বন্ধুরা। আমি গেছোদিদি। আমার ভাইকে হয়ত তোমরা চেনো, সে যেখানে খুশি যেতে পারে। আর আমি? আমি যখন খুশি যেতে পারি। গত পাঁচ কিস্তিতে আমরা কেটি বাউম্যানের (Katie Bouman) কৃষ্ণগহ্বরের ছবি, রোজালিন্ড ফ্র্যাঙ্কলিনের (Rosalind Franklin) ডিএনএ অণুর ছবি, মার্গারেট হ্যামিল্টনের (Margaret Hamilton) অ্যাপলো ১১ কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, হেডি লামারের (Hedy Lamarr) ফ্রিকোয়েন্সী হপিং, লিজে মাইটনারের (Lise Meitner) নিউক্লীয় বিভাজন তত্ত্ব, ও হ্যারিয়েট ব্রুক্সের (Harriet Brooks) নিউক্লীয় বিজ্ঞান গবেষণা নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। জেনেছিলাম কীভাবে ছবিদুটো তোলা মোটেও সহজ ছিল না, প্রচুর মেহনত ও গণনা করেই ফল মিলেছিল। জেনেছিলাম কীভাবে হ্যামিল্টনের প্রায়রিটি ডিস্প্লে না থাকলে হয়ত আর্মস্ট্রং আর অল্ড্রিনের চাঁদে নামাই হত না। জেনেছিলাম কীভাবে লামারের ফ্রিকোয়েন্সি হপিং স্প্রেড স্পেক্ট্রাম প্রযুক্তি ব্যবহার করেই প্রথমদিকের ব্লুটুথ ও ওয়াই-ফাই শুরু হয়েছিল। জেনেছিলাম কীভাবে নিউক্লীয় বিভাজনের (nuclear fission) তাত্ত্বিক ব্যাখা দিয়েছিলেন মাইটনার ও অটো ফ্রিশ। জেনেছিলাম বিশ্বের প্রথম নিউক্লিয়ার সায়েন্টিস্ট হ্যারিয়েট ব্রুক্সকে কীভাবে বিবাহ আর চাকরির মধ্যে একটাকে বেছে নিতে হয়েছিল। ডিএনএ আবিস্কারের জন্য প্রাপ্য নোবেল ফ্র্যাঙ্কলিন পাননি। নিউক্লীয় বিভাজনের জন্য প্রাপ্য নোবেলও মাইটনার পাননি। ব্রুক্স অতি অল্প বয়সে গবেষণা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন।
প্রফেসর মাইটনারঃ বাউমশোয়েস্টার, ডিনার শেষ, অটো বেশ ভাল রাঁধে, কী বল?
জার্মান ভাষায় বাউম অর্থ গাছ, আর শোয়েস্টার দিদি। অতএব গেছোদিদি। দিব্যি। অটো হলেন অটো ফ্রিশ, মাইটনারের ভাইপো ও নিউক্লীয় বিভাজন তত্ত্বের সহ-আবিষ্কর্তা। মাইটনার ও ফ্রিশ দুজনেরই নোবেল পাওয়া উচিত ছিল। কেউই পাননি, পেয়েছিলেন অটো হান ও ফ্রিৎস স্ট্রাসমান।
মাইটনারঃ বাইরে বেশ ঠান্ডা পড়েছে। অবশ্য এটা ক্রিসমাসের সময়, সুইডেন দেশ, ক্যুনগেল্ভ শহর, সন্ধ্যে বেলা। শীত বেশি হওয়াটা খুব একটা আশ্চর্যের নয়। বলাই বাহুল্য, এখানকার শীত রাশিয়ার --- এখন অবিশ্যি সোভিয়েতউনিয়ন (sowjetunion) হয়ে গেছে --- সাইবেরিয়ার তবলস্ক (Tobolsk) শহরের তুলনায় কিছুই নয়।
এখানে এখন ১৯৩৮ সালে। ২০২২-২৩ সালের নিরিখে চুরাশি বছর আগের ঘটনা। তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন (Soviet Union) অবশ্যই আছে, আর জার্মান ভাষায় তাকে সোভিয়েতউনিয়নই বলে বটে। কিন্তু সাইবেরিয়া?
মাইটনারঃ অবাক হচ্ছ? ভাবছ, ইডা নড্যাকের গল্প বলব, ইডা ডয়েচ (Deutsch), সাইবেরিয়া কোত্থেকে আসছে?
ডয়েচ, অর্থাৎ জার্মান। ডয়েচল্যান্ড (Deutschland) হল দেশটার নাম, অনেকটা আমাদের ভারত ও ইন্ডিয়ার (India) মত, বা মিশর ও ঈজিপ্টের (Egypt) মত। জার্মানি শব্দটা লাতিন জার্মেনিয়া (Germania) থেকে এসেছে। ডয়েচল্যান্ড (Deutschland) শব্দটা এসেছে প্রাচীন ডয়েচ দিউতিস্ক (diutisc) থেকে।
মাইটনারঃ (কুর্সিটাকে ফায়ারপ্লেসের কাছে নিয়ে গিয়ে হট চকোলেটের কাপটা পাশের ছোট চায়ের টেবিলে রেখে) দিমিত্রি মেন্দেলিয়েভের (Dmitri Mendeleev) নাম শুনেছ?
এইবার বুঝলাম। পর্যায় সারণি (periodic table) নিয়ে কিছু আলোচনা চার নম্বর কিস্তিতে করেছি। মেন্দেলিয়েভ (Mendeleyev, Mendeleiev, or Mendeleef), যাঁর নামের উচ্চারণ মেন্দেলীভ, মেন্দেলেয়েফ, বা ওই উচ্চারণীয় পাড়ায় যে কিছু একটা হতে পারে (ভাই, আমি ডক্টর হু’র মত সময়পথিক, ভাষাবিদ নই), হলেন পর্যায় সারণীর জনক।
মাইটনারঃ মেন্দেলিয়েভ রসায়নের শিক্ষক ছিলেন। সময়টা ১৮৬৩। ইংরেজদের লন্ডন শহরে আন্ডারগ্রাউন্ড চালু হচ্ছে। বিজ্ঞানপ্রযুক্তি লাফিয়ে লাফিয়ে উন্নয়নের পথে এগোচ্ছে। রসায়নে তখন হৈহৈকাণ্ড চলছে, ৫৬টি মৌল ততদিনে আবিষ্কার হয়েছে, বছরে গড়ে একটা করে নতুন মৌল আবিষ্কার হচ্ছে। মানে ব্যাপারটা বুঝতে পারছ তো? রৈরৈব্যাপার একেবারে।
এতটাই রৈরৈ যে হট চকোলেট খানিকটা চলকে কার্পেটে পড়ল, ফ্রিশের ফ্রিশিয়ান সারমেয় স্তাবিজ সেটা চাটতে এসে মাইটনারের কাছে বকা খেয়ে ফের গিয়ে অন্য কাউচটায় লেজ গুটিয়ে শুয়ে পড়ল।

বিজ্ঞানে বিদূষী: ইডা নোড্যাক ও নিউক্লীয় বিভাজন
আঁতোয়ান লাভোয়াজিয়ে (বাঁদিকে), ইয়োহান ভোলফগাং ড্যবেরেইনার (মাঝখানে), ও জন নিউল্যান্ডস (ডানদিকে)

মাইটনারঃ এতগুলো মৌল, এত কৌতুহলী রসায়নবিদ, কিছু বিশেষ প্যাটার্ন ধরা পড়তেই হত। ফরাসি রসায়নবিদ আঁতোয়ান লাভোয়াজিয়ে (Antoine Lavoisier) ১৭৮৯ সালে তখন অবধি আবিষ্কৃত ৩৩টি মৌলকে ধাতু বা অধাতু, এই দুই শ্রেণীতে বিভক্ত করেন। ১৮২৯ সালে ডয়েচ রসায়নবিদ ইয়োহান ভোলফগাং ড্যবেরেইনার (Johann Wolfgang Döbereiner) তাঁর ট্রায়াড (Triad) বা ত্রয়ী তত্ত্ব প্রকাশ করেন। উদাহরণঃ ক্লোরিন (chlorine), ব্রোমিন (bromine), আর আয়োডিন (iodine)। এরা তিনজনেই হ্যালোজেন (halogen), একইরকম রাসায়নিক ধর্ম এদের, এবং ব্রোমিনের পারমাণবিক ভর (atomic weight) ক্লোরিনের আর আয়োডিনের পারমাণবিক ভরের গড়। এই তিন মৌল মিলে ত্রয়ী। অবশ্য ফ্লুরিনও হ্যালোজেন, ক্লোরিনের পারমাণবিক ভর কিন্তু ফ্লুরিন আর ব্রোমিনের গড় নয়।
অর্থাৎ ত্রয়ীতত্ত্ব সব মৌলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
মাইটনারঃ নয় তো। ড্যবেরেইনার আইডিয়াটা খারাপ ছিল না যদিও। ১৮৬৪ সালে বৃটিশ রসায়নবিদ জন নিউল্যান্ড খুব সম্ভব সঙ্গীত থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁর ল অফ অক্টেভস (Law of Octaves) প্রকাশ করেন। পারমাণবিক ভর অনুযায়ী মৌলদের সাজালে আটটা মৌল পরে পরে রাসায়নিক ও ভৌত ধর্মের মধ্যে মিল পাওয়া যায়। যদিও এই ছকে কিছু গোলমালও ছিল। ছক অনুযায়ী ২২ নং স্থানে নিউল্যান্ডস দুটো মৌল ঢুকিয়েছেন, কোব্যাল্ট (cobalt) ও নিকেল (nickel)। এর কারণ কোব্যাল্ট ও নিকেলের পারমাণবিক ভর প্রায় সমান, ৫৯।
এখনকার হিসেবে কোব্যাল্টের পারমাণবিক ভর ৫৮.৯৩৩, নিকেলের ৫৮.৬৯৩। এক মনে হতেই পারে।
মাইটনারঃ অক্টেভ ছক লোকে তখন মেনে তো নেয়ই, উলটে তিরস্কার হাসিঠাট্টা ইত্যাদি সহ্য করতে হয়েছে নিউল্যান্ডসকে। “লোকে” বলতে আমি অবিশ্যি লন্ডনের কেমিক্যাল সোসাইটি (Chemical Society) বোঝাচ্ছি।
তাহলে শেষমেশ মেন্দেলিয়েভ?

বিজ্ঞানে বিদূষী: ইডা নোড্যাক ও নিউক্লীয় বিভাজন
দিমিত্রি মেন্দেলিয়েভ

মাইটনারঃ শেষমেশ মেন্দেলিয়েভ। ভদ্রলোক রসায়নের টেক্সটবুক লিখছিলেন। প্রিন্সিপলস অফ কেমিস্ট্রি (Principles of Chemistry) বা অসনভি খিমী (Osnovy khimii)। ট্রেনে যেতে যেতে নাকি সলিটেয়ার বা পেশেন্স খেলতেন। তাস দিয়ে নয়, রাসায়নিক মৌলের নাম ও পারমাণবিক ভর লেখা কার্ড দিয়ে। এইসব করতে করতেই প্যাটার্ন দেখতে পেলেন, ছাপিয়ে ফেললেন পর্যায় সারণি। পারমাণবিক ভর অনুযায়ী মৌলদের সাজালেন তো বটেই, তখনও অনাবিষ্কৃত কিছু মৌলের অস্তিত্বরও ভবিষ্যদ্বাণী করলেন। নস্ত্রাদামুস বা জ্যোতিষী ভবিষ্যদ্বাণী নয়, রীতিমত রাসায়নিক যুক্তি দিয়ে গঠিত ভবিষ্যদ্বাণী। যেমন ধর, একা-ম্যাঙ্গানিজ (eka-manganese) এবং ত্রি-ম্যাঙ্গানিজ (tri-manganese)। ম্যাঙ্গানিজ ধাতুর কথা নিশ্চয়ই জানো। পারমাণবিক ভর ৫৫, রূপোলি ধাতু। মেন্দেলিয়েভ ভবিষ্যদ্বাণী করলেন এরকমই আরো দুটো ধাতু পাওয়া উচিত, পারমাণবিক ভর ১০০ আর ১৯০, পারমাণবিক সংখ্যা (atomic number) ৪৩ ও ৭৫, একইরকম রাসায়নিক ধর্ম ইত্যাদি।

বিজ্ঞানে বিদূষী: ইডা নোড্যাক ও নিউক্লীয় বিভাজন
(ওপরে) নিউল্যান্ডসের মৌলছক (নীচে) মেন্দেলিয়েভের পর্যায় সারণি (১৮৭১)

১৯২৫ সাল। ডয়েচল্যান্ডেরই ফিজিকালিশ-টেকনিশ বুন্ডেসআনস্টাল্ট (Physikalisch-Technische Bundesanstalt) ইনস্টিটিউট। তিন বিজ্ঞানী রাসায়নিক গবেষণা করছেন। অটো কার্ল বার্গ (Otto Carl Berg) এক্স-রে স্পেক্ট্রোস্কোপি স্পেশালিস্ট, আর রাসায়নিক পদার্থের অ্যানালিসিসে এক্সপার্ট স্বামী-স্ত্রী ভাল্ট্য (Walter Noddack) ও ইডা নোড্যাক টাকে (Ida Noddack Tacke)। খোঁজ চলছে একা- ও ত্রি-ম্যাঙ্গানিজের। প্ল্যাটিনামের (platinum) আকরিক ও কলাম্বাইট খনিজ আকরিকের ওপর ইলেক্ট্রন রশ্মি ফেলে তার রঞ্জনরশ্মি অপবর্তন বর্ণালি (xray diffraction spectrum) পরীক্ষা করে এই ত্রয়ী সফল হলেন। আবিষ্কর্তা, অতএব নামকরণের অধিকার প্রাপ্য। একা-ম্যাঙ্গানিজের নাম দেওয়া হল মাসুরিয়াম (masurium), ত্রি-ম্যাঙ্গানিজের নাম হল রেনিয়াম (rhenium)।
রেনিয়াম নিয়ে কোনও অসুবিধে হল না। বাধ সাধল মাসুরিয়াম। একই গবেষণা বিভিন্ন গবেষণাগারে করা হল, কিন্তু রঞ্জনরশ্মির অপবর্তন বর্ণালি পরীক্ষা করে মাসুরিয়ামের কোনও ইঙ্গিত পাওয়া গেল না। নড্যাকদ্বয় ও বার্গ প্রমাদ গুনলেন, শুধু রঞ্জনরশ্মীয় ইঙ্গিত দিয়ে নতুন মৌলের আবিষ্কার প্রমাণিত নাও হতে পারে, বিশেষ করে যেখানে অন্য গবেষণাগারে ভিন্ন ফল এসেছে। হাতেনাতে পেতে হবে নতুন মৌলের প্রমাণ। অতএব ফের গবেষণা শুরু হল। প্রায় ১৮০০ আকরিক পরীক্ষা করা হল, রেনিয়াম কিছুটা হলেও পাওয়া গেলেও মাসুরিয়ামের খোঁজ মিলল না। ১৯৩৮ সালে আবার এমিলিও সেগ্রে (Emilio Segre) ও কার্লো পেরিয়ার (Carlo Perrier) সাইক্লোট্রনের (cyclotron) বাতিল যন্ত্রাংশের মধ্যে মৌল ৪৩ বা একা-ম্যাঙ্গানিজ খুঁজে পেলেন। মাসুরিয়াম নাম তক্ষুণি বাতিল হল না যদিও। অনেক চিঠিপত্র পেপার আলোচনা ইত্যাদির পর শেষে ১৯৪৭ সালে নতুন মৌলের নাম রাখা হল টেকনেশিয়াম (Technetium)। গ্রীক ভাষায় τεχνητος (টেকনেটোস) অর্থাৎ কৃত্রিম। সাইক্লোট্রনে কৃত্রিমরূপে এই মৌলের সৃষ্টি, অতএব এহেন নাম দিলেন সেগ্রে ও পেরিয়ার। নড্যাকদ্বয় ও বার্গের নামে রেনিয়াম থাকল।

বিজ্ঞানে বিদূষী: ইডা নোড্যাক ও নিউক্লীয় বিভাজন
(বাঁদিকে) ইডা নড্যাক টাকে (ডানদিকে) ভাল্ট্য নড্যাক

রেনিয়াম কেন? কারণ ১৮৯৬ সালে জার্মানির রাইন প্রদেশের ল্যাকহাউজেন জেলায় (Rhine Province, Lackhausen) জন্মগ্রহণ করেন ইডা টাকে (Ida Tacke)। শিক্ষিকা হওয়ার ইচ্ছে ছিল না, আর পদার্থবিদ্যায় তখন অ্যাকাডেমিক বৃত্তের বাইরে চাকরির বাজার খারাপ। অতএব রসায়নবিদ হিসাবেই নিজেকে তৈরি করলেন ইডা। ১৯১৮ সালে বার্লিনের টেকনিশ হখশুল (Technical University) থেকে রাসায়নিক ও ধাতুবিদ্যার প্রকৌশলে ডিগ্রী নিয়ে পাশ করলেন। ইডার ভাগ্য ভাল ছিল, ১৯০৯ সালের আগে বার্লিনের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে মহিলাদের ভর্তি নিষিদ্ধ ছিল। ইডা এবং তাঁর মহিলা ব্যাচমেটরাই জার্মানির প্রথম রসায়নবিদ।
টেকনিশ হখশুলে আলাপ ভাল্ট্য নড্যাকের সঙ্গে। পিএইচডি করছিলেন ভাল্ট্য, সুপারভাইজার নোবেল লরিয়েট ভাল্ট্য নের্ন্সট (Walther Nernst)। ১৯২২ সালে নের্ন্সট ফিজিকালিশ-টেকনিশ বুন্ডেসআনস্টাল্টের (PTR) ডিরেক্টর পদ পেলেন। সঙ্গে এলেন জুনিয়র ভাল্ট্য। ১৯২৪ সালে টেকনিশ হখশুল ছেড়ে ইডাও গেলেন PTR-এ। এখানেই নড্যাক ও টাকের বিয়েও হল, আবার রেনিয়াম আর মাসুরিয়ামের খোঁজও মিলল। শেষমেশ মাসুরিয়াম হাতছাড়া হলেও রেনিয়ামের আবিষ্কারের জন্য লীবিগ মেডেল (Liebig Medal) পেলেন নড্যাকদ্বয়। মৌল ও আইসোটোপ নিয়ে কাজ চালিয়ে গেলেন ইডা।

বিজ্ঞানে বিদূষী: ইডা নোড্যাক ও নিউক্লীয় বিভাজন
(ওপরে বাঁদিকে) ম্যাঙ্গানিজ, (ওপরে ডানদিকে) টেকনেশিয়াম বা একা-ম্যাঙ্গানিজ,
(নীচে বাঁদিকে) এমিলিও সেগ্রে, (নীচে ডানদিকে) রেনিয়াম বা ত্রি-ম্যাঙ্গানিজ

১৯৩৪ সাল। মৌল নং ৯২ ইউরেনিয়াম। এর চেয়ে ভারী কোন মৌল প্রাকৃতিক রূপে অনাবিষ্কৃত। কৃত্রিম রূপে তৈরি করতে বাধা নেই অবশ্য। রোম শহরে এনরিকো ফের্মি (Enrico Fermi) সেই কাজেই নিযুক্ত। ইউরেনিয়ামের দিকে তাক করে নিউট্রন নিক্ষেপ করে দাবী করলেন, মৌল নং ৯৩ ও ৯৪র খোঁজ পাওয়া গেছে। ইউরেনিয়ামের সঙ্গে নিউট্রনের নিউক্লীয় রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ার পরে যা পড়ে থাকে, তাতে ইউরেনিয়ামের চেয়ে কম পারমাণবিক সংখ্যার কোনও মৌল নেই, সেটাও দেখিয়ে দিলেন ফের্মি। অতএব নিঃসন্দেহে ৯৩ ও ৯৪ সংখ্যক মৌলই পাওয়া গেছে। সবাই বাহবা দিল, ফের্মি বলে কথা! ১৯৩৮ সালে নোবেল প্রাইজও পেয়ে গেলেন। একই সালে অটো হান ও ফ্রিৎজ স্ট্রাসমান দেখালেন যে ফের্মি আসলে যা পেয়েছেন সেটা মৌল নং ৫৬, বেরিয়াম। হান সেই কথা জানালেন মাইটনারকে। মাইটনার ও ফ্রিশ অঙ্ক কষে নিউক্লীয় বিভাজন তত্ত্ব পেশ করলেন। গল্প শেষ।
ইয়ে, না, শেষ নয়। এর মাঝে একটা ছোট ব্যাপার আছে। ব্যাপার না বলে পেপারও বলা চলে। গবেষণার পেপার। মেন্দেলিয়েভের জন্মশতবর্ষে লেখা ও প্রকাশিত। ১৯৩৪ সালের পেপারটির নাম য়ুব্য দ্যস এলিমেন্ট ৯৩ (Über das Element 93)। লেখিকা ইডা নড্যাক। এতে নড্যাক দুটো বক্তব্য রাখলেনঃ এক, ইউরেনিয়াম ও নিউট্রনের নিউক্লীয় রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট বস্তুর মধ্যে ইউরেনিয়ামের চেয়ে কম পারমাণবিক সংখ্যার কোন মৌল নেই, এই দাবী করেছেন বটে ফের্মি, কিন্তু আদপে তিনি মাত্র ৮০ নম্বর মৌল সীসা (lead) অবধি পরীক্ষা করেছেন। ৮০র নীচেও অনেক মৌল আছে, হয়ত নিউট্রনের ধাক্কায় ইউরেনিয়াম সের’ম কোন একটা মৌলে রূপান্তরিত হয়েছে। অবশ্য তখনকার নিউক্লীয়বিজ্ঞান অনুযায়ী এটা সম্ভব নয়, নিউট্রনের সঙ্গে সংঘর্ষে মৌলরা খুব একটা পাড়াচ্যুত হয় না, নেহাত পাড়াতুতো কোনও মৌলের ঘরেই আশ্রয় নেয়টেয়। এটাই ১৯৩৪ সালের বৈজ্ঞানিক মতবাদ, ডগমা (dogma)।
বৈজ্ঞানিক ডগমাকে নড্যাক ঠিক কী চোখে দেখতেন সেটা তাঁর বই ও পেপার পড়লেই বোঝা যাচ্ছে। দুটো উদাহরণ দিচ্ছি, “the fate of all dogmas…is…it would one day be contradicted” আর “science must constantly rid itself of dogmas, because they are always a sign of human incompleteness and retard the development of science”।
মতবাদ কখনই চিরস্থায়ী হতে পারে না। একদিন না একদিন নতুন তথ্য আসবে, তাতে মতবাদ হয় ভাঙবে নয় মচকাবে। মতবাদ মানেই তাতে সাব্জেক্টিভিটি খানিকটা হলেও থাকতে বাধ্য, অতএব মতবাদ আঁকড়ে পড়ে থাকলে বিজ্ঞানের অগ্রগতির ক্ষতিই হবে।
এবার ফিরে যাওয়া যাক নড্যাকের ১৯৩৪র পেপারের দ্বিতীয় বক্তব্যেঃ নিউট্রন আর ইউরেনিয়াম সংঘর্ষ হলে ইউরেনিয়াম যে শুধু পাড়াচ্যুত হবে তা নয়, ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। টুকরোগুলি মৌল বা তাদের আইসোটোপই হবে, কিন্তু তাদের পারমাণবিক সংখ্যা ইউরেনিয়ামের চেয়ে অনেক কম হবে।
ছবিটা চেনা চেনা লাগছে? ১৯৩৮ সাল, অর্থাৎ এর চার বছর পরে হান কী পেলেন? বেরিয়াম, মৌল ৫৬। ইউরেনিয়ামের পাড়ায় তো নয়ই, একদম বিদেশ। মাইটনার ও ফ্রিশ অঙ্ক কষলেন। ফ্রিশ প্রক্রিয়ার নাম দিলেন নিউক্লীয় বিভাজন।
নড্যাকের পেপারের চার বছর পরে।
নড্যাক কী পেলেন? নোবেল যে পাননি সে কথা বলাই বাহুল্য। রেনিয়ামের জন্যও অন্তত পেতে পারতেন, পেলেন না মাসুরিয়ামের বিতর্কের জন্য। ১৯৩২, ১৯৩৩, ১৯৩৫, ও ১৯৩৭ সালে নোবেলের জন্য নামও উঠেছিল। ১৯৩৮ সালে সেগ্রের টেকনেশিয়াম আবিষ্কারের পর সে দিকটাও গেল।
আচ্ছা, অন্তত নিউক্লীয় বিভাজনের তত্ত্বের সহজননী বলা যায় না নড্যাককে?
হান ও স্ট্রাসমান গবেষণাগারে পরীক্ষা করে বেরিয়াম পেয়েছিলেন। মাইটনার ও ফ্রিশ অঙ্ক কষে তত্ত্বটাকে খাড়া করেছিলেন। নিউক্লীয় বিভাজনের পক্ষে নড্যাকের কোনও তাত্ত্বিক বা পরীক্ষামূলক প্রামাণ্য তথ্য ছিল না। ছিল একটা অনুমানমাত্র, যে এইটা হলেও হতে পারে। একটা আইডিয়া দিয়েছিলেন, কিন্তু সেই আইডিয়াটা প্রমাণ করার জন্য তেমন কিছু করেননি ইডা নড্যাক।
করেননি কেন? ১৯২৯ সালের ওয়াল স্ট্রিট স্টক মার্কেট ক্র্যাশ (Wall Street stock market crash) হল, সমস্ত বিশ্বের অর্থনীতিতে মন্দা এল। ১৯৩২ সালে মন্দা ঠেকাতে জার্মানিতে আইন পাশ হল, বিবাহিত মহিলাদের চাকরি ছেড়ে দিতে হবে, যাতে পুরুষে বেশি বেশি চাকরি পায়। নড্যাক চাকরি ছাড়েননি বটে, কিন্তু বেতন পেতেন না। এর ওপর উনি তখন কাজ করছেন নাৎসি জার্মানিতে। ইডা বা ভাল্ট্য কেউই ইহুদি নন, তাই মাইটনারের মত প্রাণ হাতে পালানোর প্রয়োজন কখনও পড়েনি। কিন্তু তার উল্টো ফলও আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে নয়া জার্মান সরকার সবাইকে জেরা করল, তারা নাৎসি কিনা তার পরীক্ষা হল। নড্যাকদ্বয় বেকসুর প্রমাণিত হলেন বটে, কিন্তু কোথাও না কোথাও একটা অদৃশ্য লেবেল সেঁটেই যায়। যুদ্ধের পরে নড্যাকদ্বয় তেমন পোজিশনও পাননি কোথাও। মাসুরিয়াম নিয়ে বিতর্কের জেরে নড্যাকদ্বয়ের সম্মানহানি হয় খানিক।
মাসুরিয়াম। বিতর্কিত নাম, সন্দেহ নেই। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের তখন শুরুর দিক, আগষ্ট মাস, ১৯১৪ সাল। মুখোমুখি জার্মান ও রুশ সেনা। স্থান ট্যানেনবার্গ (Tannenberg) শহরের ৩০ কিলোমিটার দূরে। মাসুরিয়া অঞ্চলেই অবশ্যই। জার্মান সাম্রাজ্যের সৈন্যর সর্বময় কর্তা ফীল্ড মার্শাল পল ফন হিন্ডেনবার্গ (Paul von Hindenburg)। নামটা চেনা চেনা লাগছে? অন্তত পদবীটা? ১৯২৫ সালে এই হিন্ডেনবার্গই জার্মানি প্রেসিডেন্ট পদে নিযুক্ত হন, ১৯৩৩ সালে এই হিন্ডেনবার্গই অ্যাডলফ হিটলারকে (Adolf Hitler) জার্মানির চান্সেলর (Chancellor) পদে নিযুক্ত করেন। এই হিন্ডেনবার্গের নামেই আকাশযানটি, ১৯৩৭ সালে যেটা আগুন লেগে ধ্বংস হয়ে যায়।
সময়ের স্রোতে একবার ভাসতে শুরু করলে থামা মুশকিল। ফিরে আসি মাসুরিয়ায়। সেনানায়ক হিন্ডেনবার্গের নেতৃত্বে জার্মানরা জয়ী হয়, ধ্বংস হয় রুশ প্রথম ও দ্বিতীয় সেনাবাহিনী। শেষমেশ প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয় স্বীকার করলেও মাসুরিয়ার এই জয় জার্মান জাতীয়তাবাদীদের জন্য গর্বের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। মাসুরিয়া জার্মান সাম্রাজ্যের অংশ হলেও, আদপে সেখানকার অধিবাসীর পোল, (Pole), পোল্যান্ডের অধিবাসী। প্রুশিয়া (Prussia) ও পরে জার্মান সাম্রাজ্যের অধীনস্ত তাঁরা। রাজনৈতিকভাবে তারা পূর্ব প্রুশিয়ার (East Prussia) অংশবিশেষ। জাতীয় পরিচয় প্রুশিয়ার এবং জার্মান হলেও সাংস্কৃতিক পরিচয় তাদের একান্তই পোলিশ (Polish)।

বিজ্ঞানে বিদূষী: ইডা নোড্যাক ও নিউক্লীয় বিভাজন
(বাঁদিকে) ১৮৭৮ সালে জার্মান সাম্রাজ্যের পূর্ব প্রুশিয়া অঞ্চল (লাল), এরই অংশবিশেষ মাসুরিয়া
(ডানদিকে) আধুনিককালে পোল্যান্ডের অংশ মাসুরিয়া (নীল)

ভাল্ট্য নড্যাকের বংশ এই পূর্ব প্রুশিয়া ও মাসুয়ারিয়ারই বাসিন্দা, যদিও তাঁরা খাস জার্মান। ভাল্ট্যর নিজের জন্ম বার্লিন শহরে হলেও তিনি সম্ভবত নিজেকে মাসুরিয়ার লোক বলেই মানতেন। অতএব ১৯২৫ সালে দুই মৌলের আবিষ্কারের পর ৭৫ নং মৌলের নাম দেওয়া হলে ইডার নিজস্ব রাইন জেলার নামে, আর ৪৩ নং মৌলের নাম হল ভাল্ট্যর নিজস্ব মাসুরিয়ার নামে। এদিকে ১৯৩০র দশকে জার্মান উগ্র জাতীয়তাবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। হিটলার ও নাৎসি পার্টি ক্ষমতায় আসছে। এহেন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মাসুরিয়াম নামটা অ্যাকাডেমিক মহলে যে খুব একটা জনপ্রিয় হবে না, এ নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থাকে না। এতে ভাল্ট্য নডাকের সঙ্গ দেওয়ার জন্য ইডারও যে ভালরকম সম্মানহানি হয়, সে কথা বলাই বাহুল্য।

বিজ্ঞানে বিদূষী: ইডা নোড্যাক ও নিউক্লীয় বিভাজন
অটো (ওপরে) অটো হান ও লিজে মাইটনার (নীচে) ইডা ও ভাল্ট্য নড্যাক

তবে নিউক্লীয় বিভাজন নিয়ে ইডার বক্তব্যের কফিনে শেষ পেরেকটা বোধহয় পুঁতেছিলেন স্বয়ং অটো হান। ইউরেনিয়াম ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে? অসম্ভব! হাস্যকর! Ridiculous!
১৯৩৪ সালে জার্মান রসায়নজগতে হান সুপারস্টার, অতএব নড্যাকের পেপার জার্নালের পাতাতেই রইল।
কমেডি হল, এর চার বছর পরে সেই হানই কিন্তু বেরিয়াম…যাকগে, সে গল্প তো বলেইছি। নড্যাক তখন বলার চেষ্টা করেছিলেন, (Die Naturwissenschaften পত্রিকায়, ১৯৩৯ সালে) আমি তো চার বছর আগেই…
ট্র্যাজেডি হল, সেই বছরই সেগ্রে টেকনিশিয়াম আবিষ্কার করেছেন, অতএব রাসায়নিক জগতে নড্যাকদ্বয়ের ভাবমূর্তি একদম অক্ষুণ্ন নেই। তারই জেরে নড্যাকের এই দাবী নিয়েও বৈজ্ঞানিক জগত অতটা মাথা ঘামালেন না। হয়ত ভাবলেন, একে তো মহিলা, তার ওপর নির্ঘাত জাল জোচ্চর, অতএব পাত্তা দেওয়ার দরকারটাই বা কী? এই এই ফের্মির নোবেলটা হানকে দেওয়া যায় না এই?
এটাও ডগমা। তবে বৈজ্ঞানিক নয়, সামাজিক।
কমেডি হল, ট্র্যাজেডি হল, এবার শেক্সপিয়রের কেরিয়ার টাইমলাইন অনুযায়ী ট্র্যাজিকমেডি হোক।
১৯৬৬ সাল। অটো হান রেডিওতে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন। প্রশ্ন এল, ও মশাই, ইডা নড্যাক ভুলটা কী বলেছিলেন? আপনি তো নড্যাকের ১৯৩৯ পেপারটাও অগ্রাহ্য করেছিলেন। হাটে হাড়িটা ভাঙুন দেখি।
(না, সাক্ষাৎকার যিনি নিচ্ছিলেন তিনি ঠিক এইভাবে বলেননি। এটা সম্পূর্ণ গেছোদিদির স্টাইল।)
অনেকক্ষণ চুপ থেকে হান বলেছিলেন, “die Ida hatte doch Recht”।
ইডার বক্তব্য নির্ভুল ছিল। Ida was right after all.
তবে, বন্ধুরা, সত্যি বলতে কী, অটো হান অত পরে কী স্বীকার করলেন না করলেন তাতে কিস্যু যায় আসে না। নিউক্লীয় বিভাজন বলে যে একটা জিনিস হতেও পারে, মনুষ্য ইতিহাসে প্রথম এই আইডিয়া দিয়েছিলেন ইডা নড্যাক টাকে। Ida Noddack Tacke.

সূত্রছবিঃ ইডা নড্যাক, রেনিয়াম, ও নিউক্লীয় বিভাজনের ডায়াগ্রাম

ছবিসূত্রঃ
Header: https://twitter.com/mcnees/status/1100045387245731840, KU Leuven Archives
Fig 1: https://en.wikipedia.org/wiki/Antoine_Lavoisier, https://en.wikipedia.org/wiki/Johann_Wolfgang_D%C3%B6bereiner, https://en.wikipedia.org/wiki/John_Newlands_(chemist)
Fig 2: https://www.redalyc.org/journal/1816/181661081014/html/
Fig 3: https://en.wikipedia.org/wiki/John_Newlands_(chemist), https://en.wikipedia.org/wiki/File:Mendelejevs_periodiska_system_1871.png
Fig 4: https://en.wikipedia.org/wiki/Ida_Noddack, https://en.wikipedia.org/wiki/Walter_Noddack
Fig 5: https://en.wikipedia.org/wiki/Group_7_element, https://commons.wikimedia.org/wiki/File:Rhenium.svg, https://en.wikipedia.org/wiki/Emilio_Segr%C3%A8
Fig 6: https://en.wikipedia.org/wiki/East_Prussia, https://en.wikipedia.org/wiki/Masuria
Fig 7: https://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/7/73/Hahn_and_Meitner_in_1912.jpg, https://rinconeducativo.org/en/anniversaries/24-de-septiembre-de-1978-fallece-ida-eva-tacke-noddack-quimica-alemana-que/

সোঘো যাঁর সিক্রেট আইডেন্টিটি তিনি পদার্থবিদ্যার লোক। থিওরেটিকাল ফিজিক্স নিয়ে গবেষণা করেটরে এখন ইংরিজি ও বাংলায় বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখি করেন। জীবনে প্রচুর টেনিদা, জটায়ু , টিনটিন , অ্যাস্টেরিক্স পড়ার সুবাদে সিরিয়াস থাকার ও লেখার প্রাণপণ চেষ্টা করেও প্রবলভাবেই ব্যর্থ হন।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা