সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
 সেই শিউলি ফুল কুড়ানোর দিন

আমার বাড়ির ছাদটা বেশ বড় ।বাড়িতে অনেক পুরানো দিনের বলে ছাদে চারিদিকে দেওয়াল গুলো খানিকটা মোটা এখনকার বাড়ির তুলনায়। আমি সেই ছাদের ধারে বসে থাকতে ভালবাসি - কখনো বই হাতে বা মাঝে মাঝে প্রকৃতিকে উপভোগ করতে ।সবচেয়ে ভালো লাগে শরৎ কালে যখন পূজো আসবে আসবে, তখন আমাদের বাগানে শিউলি গাছ ভরে ওঠে শিউলি ফুলে। গাছের পাতা পর্যন্ত দেখা যায়না, গোটা গাছ সাদা রঙে মেতে ওঠে। সেই শিউলি ফুলের মধুর মতো সৌরভে গোটা ঘরে একটা ফুরফুরে মেজাজ বয়ে বেড়ায় আর আমি বসে থাকি আমার ছাদের কোনে এবং হারিয়ে যাই নিজের জগতে ।


শরৎকালের সকাল মানেই ভোর বেলা আমার ঠাম্মা আমায় ঘুম থেকে তুলবে বলতে বলতে “কিরে ওঠ ফুল কুড়াতে যাবি না ?”আর আমি আধা ঘুম অবস্থায় উঠে দৌড়ে নিচে নামব ঠাম্মার পায় পায় । সেই কুয়াশা ভরা প্রভাতে শিউলি ফুল কুড়ানোর মজাই আলাদা। তারপর ঠাম্মা ঠাকুর ঘরে গিয়ে মালা বানাতে বসবে আর আমি পাশে বসে থাকবো চুপটি করে একটা মালা নিজের জন্য পাওয়ার অপেক্ষায় । সব মালা গাঁথা হলে ঠাম্মা আমাকে আলাদা করে একটা গেঁথে দেন কিন্তু এই মালা হয় সবার থেকে আলাদা। এই মালার মধ্যে একদম মাঝখানে থাকে একটা অন্য ফুল সে গোলাপ হোক বা জবাব ।কিন্তু এইসব ছিল ছোটবেলাকার কথা …এখন আমি কলেজে পড়ি তাই বাড়িতে থাকতে চাইলেও থাকতে পারিনা। এখন দুর্গাপুজোও কেটে যায় বইয়ের সামনে বসে। যে বছর স্কুল পাশ করলাম এবং মুম্বাইতে একটা কলেজে ভর্তি হলাম ভেবেছিলাম ছুটি পেলেই চলে আসব। কিন্তু জীবনের ব্যস্ততা কাটিয়ে বছরের খুব বেশি হলে এখন একবার আসা হয় তাও এক সপ্তাহের জন্য। কিন্তু কালকে বাবার ফোন পাওয়ার পর মনে হচ্ছে যে সেই বছরে একবারের জন্যেও যাওয়া আর হবে না …বাবা কাল ফোন করে বলল যে আমাদের বাড়িটা নাকি প্রমোটিং করতে দিয়ে দিয়েছে ।“এত বড় বাড়ি এখন অনেক দাম” বাবার বক্তব্য ।আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে বাবা আমাদের বাড়িটা যেখানে আমার ছেলেবেলা লুকিয়ে আছে, যেখানে আমাদের স্মৃতি, খারাপ লাগা ,ভালোলাগা বাড়ি কোনায় ছেয়ে আছে বাবা সেটাকে টাকার জন্য দিয়ে দিতে পারে । প্রথমে খুব রাগ হয়েছিল আমার, তারপরে সেই রাগ কেবলমাত্র কষ্টে পরিণত হয় ।আমি যেন আবার সেই শিউলি ফুলের গন্ধ পাচ্ছি …আমার যেন আবার মনে হচ্ছে আমি আমার বাড়ির ছাদে বসে আছি এক কুয়াশা ভেজা সকালে ….একটা বাড়ি শুধু ইট পাথর দিয়ে হয়না একটা বাড়ির মূল্য হয় তার স্মৃতি দিয়ে। আর স্মৃতিকে টাকা দিয়ে কেনা যায় না। কেন জানি না আজ শুধু মনে হচ্ছে যে আজ আমার বাড়ির সাথে সাথে আমি নিজের শৈশব এবং কৈশোর কে হারিয়ে ফেলেছি।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা