সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
মুক্তি

অন্ধকার ঘরের এক কোনায় বসে সে বই পড়ছিল। নিস্তব্ধ পরিবেশে শুধু মাঝে মাঝে গানের আওয়াজ- “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি”। গানটা বাজছে রেডিওতে, দারোয়ান রেডিও। দেওয়ালের গায়ে হেলান দিয়ে সে ঝিমোচ্ছে । অনেক রাত হয়েছে ।গভীর কালো অন্ধকার শুধু নৃত্যর ঘরে জ্বলছে একটি লন্ঠন। হঠাৎ শোনা গেল ঘন্টার আওয়াজ। ঢং ঢং ঢং তিনবার বাজলো কারাগারের ঘন্টা। রাত রাত তখন তিনটা কেবল এক ঘন্টা বাকি।

নৃত্যর বই যে আর মন বসলো না। বই টা বন্ধ করে পাশে রেখে দিল। তার পরনে ধবধবে সাদা জামা, মাথায় নেহেরু টুপি। সে উঠে দাঁড়ালো। এখন আর কি করার আছে তার? জীবনের শেষ কয়েকটি মুহূর্তে সে কাটাবে এই বদ্ধ পরিবেশে। এই চার দেয়ালে বন্দি সে, খাঁচায় বন্দি পাখির মতো। মনে মনে হাসল নৃত্য। আর যে বেশি দেরি নেই। আর কিছুক্ষণ পরেই পাবে মুক্তি। দেশের মাটি হাতে ধরে ঠেকাবে কপালে। ভারতের বুকে পা ফেলবে, আবার সেই বৃষ্টিতে ভেজা মাটির গন্ধ নেবে বুক ভরে। যে দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়ছে দিনরাত সে দেশের স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দেবে সে আর সেই ভারতের মাটি উপর মুক্ত হয়ে বেড়াবে। যাবে ভারতের কোনায় কোনায়, দেখবে কত মানুষ, কত বাড়ি, কত সৌন্দর্য। যে মৃত্যুকে সকলে এড়িয়ে চলে সে মৃত্যূই তো এনে দেবে মুক্তি পূরণ করবে তার চাহিদা।

এই কথা ভেবে চোখ বুঝলো নৃত্য। আস্তে আস্তে তার মন চলে গেল সেই দিন যে দিনের জন্য আজ মৃত্যুর কোলে পতিত হবে। কিন্তু তার পিছনে লুকিয়ে আছে এক ইতিহাস। ১৯০২ সালে কলকাতা শহরের এক ছোট বাড়িতে জন্ম হয় নৃত্যর। পরাধীন ভারতে ব্রিটিশ রাজ্যে নির্মম হাতের নীচে সকল দেশবাসি কুন্ঠিত। দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলছে স্বাধীনতা আন্দোলন। ছোট থেকেই এই স্বাধীনতা বিষয়টা আকৃষ্ট করত নৃত্যকে। তার বাবা নিজে ছিলেন বিপ্লবী । তাই হয়তো তাদের রক্তেই ভাসতো বিপ্লবের স্বর। হঠাৎ একদিন বাড়ির দরজায় কড়া নাড়ল একটি লোক। তার মুখটি ম্লান। নৃত্য ও তার মাকে দেখে চোখের অশ্রু ও আর বাধা পেল না ।“তোমার বাবা আর নেই নৃত্য, সে আর নেই । পুলিশের গুলিতে সে মারা পড়েছে । আমাদের আপিসে আমরা পরামর্শ করছিলাম হঠাৎ দরজা ভেঙে ঢুকলে পুলিশ। বিশ্বাসঘাতকতা করেছে আমাদের টিমের একজন। পুলিশ ঢুকে বন্দুক দিয়ে চালাল গুলি। আমাদের মধ্যে অনেকেই আহত কিন্তু সব থেকে গুরুতর ভাবে আঘাত পেয়েছিল তোমার বাবা। হাসপাতালে যাওয়ার আগেই তার মৃত্যু ঘটে”। এ কথা বলে লোকটি হাঁটু গেড়ে বসে পড়লেন। এখনো সেদিন মনে আছে নৃত্যর। সেই দুঃখ এবং ক্রোধ মিশ্রিত অনুভূতি আর সেই প্রতিজ্ঞা। নিষ্ঠূর ব্রিটিশ সাম্রাজ্য নষ্ট করে দেবে সে আর তার মাতৃভূমি কে স্বাধীন করে তুলবে মুক্তি দেবে দেশবাসীদের তারপর মনে পড়ে গেল সেদিনকার কথা। যেদিনের কাজের জন্য আজ তার এই দশা। তিন মাস আগেকার কথা। নৃত্য তখন পঁচিশ বছরের যুবক। কিন্তু তার ছোট্ট জীবনে বহুবার জেলে কেটেছে সে এবং তার এবং তার বিপ্লবী বন্ধুরা। ব্রিটিশ এর কাছে অপরাধী হিসেবে পরিচয় পেয়েছে। বহুলোকের প্রাণে জন্মভূমির প্রতি প্রেম জাগিয়ে তুলেছে। ছদ্মবেশ ধারণ করে ঘুরেছে কত জয়গায়, লাখনৌ দিল্লি আগ্রা কিন্তু যে ঘটনার জন্য মৃত্যুদণ্ড পেল সে সেটি ঘটল কলকাতায়। ব্রিটিশ গভর্নর কে খুন করার আয়োজন হল। বন্দুক থাকবে নৃত্যর হাতে । তখন বাজে বিকেল ছটা। শোনা গেল একটি আর্তনাদ। সেই চিৎকার শুনে অফিসের লোক এবং পথিকেরা ছুটে এল সেখানে। নৃত্যরও পালান হল না।সে ধরা পড়ল।ব্রিটিশ গভর্নর যেই অফিস থেকে বেরোলে তখনই গুলি চালাল নৃত্য।

সেই ব্রিটিশ গভর্নর কে বাঁচানো যায়নি এবং তার মৃত্যুর কারণে নৃত্য পেল মৃত্যুদণ্ড। আজ তার ফাঁসির দিন। আজ সে হবে মুক্ত। পাখির খাঁচা খুলে দিলে যেমন ডানা মেলে, তারপর দূরে কোথাও উড়ে যায়, নীল আকাশের বুকে, তেমনি সেও আজ খুলে দেবে জীবনের দরজা। মৃত্যু ই পূরণ করবে তার শেষ আশা, মুক্তি।

ঢং ঢং ঢং ঢং ভোর চারটে বেজে গেছে। ঘরের দরজা খোলা হল। নৃত্য সেন, নৃত্য হাসলো। সময় এসে গেছে, এবার তার পালা, পাবে যে মুক্তি।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা