স্বাধীনতার গল্পঃ পর্ব ৭
কি কেমন আছ তুমি? দোলের রঙ শুকোতে না শুকোতেই দেখছো তো কেমন কালবৈশাখী-র আনাগোনা!বেশ লাগছে কিন্তু বল!বাজ পড়লে ভয় পাও নাকি? কোন্ টাকে ভয় আলো না শব্দ কে?তুমি নিশ্চয়ই জান যে বাজ যদি না পড়ত তাহলে বিদ্যুত শক্তি বা electricity কোনোদিন আবিষ্কারই হোতো না।সে গল্প তোমাকে আমি পরে বলব।তবে এখন এস, তুমি আমি সব্বাই মিলে জোরহাত করে কালবৈশাখী-কে বলি আমের মুকুলগুলোকে খসিয়ে দিয় না গো!!!! সারাবছর এই রসালের আশাতেই তো ঋতুচক্র গুনে চলি, তাই না!লক্ষ্য করেছ কি না জানি না, বাজার ছেয়েছে তরমুজ-এ। আর গত কয়েক বছর ধরে বিশাল বিশাল, সবুজ ডোরা কাটা কাটা তরমুজ আসছে বাজারে, সেই ঘন কালচে সবুজ রঙের তরমুজের বদলে।কি পাতলা তার খোসা আর মিষ্টি ও বটে। তুমি নিশ্চয়ই ভাবছ যে আমি খুব লোভী!মানুষ তো খাওয়ার জন্যই বাঁচে আর ফল খাওয়া খুব জরুরী। আমাদের শরীরে গরমকালে সবসময় জলের প্রয়োজন হয়। তাই প্রকৃতিদেবী এই সময় এমন সব ফল ফলান যা সব রসে টইটুম্বু্র।সেই রসে থাকে জল, অতি প্রয়োজনীয় কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা আর নানান রকমের জরুরী লবণ ও পাচক অম্ল।আমি বলি কি, সফট ড্রিঙ্ক না খেয়ে খানিকটা ফল বা ফলের রস খেয়ে দেখ না। ঠান্ডা ফলের রস খেতে খারাপ লাগবে না ।
না বাবা আর বাজে বকে তোমার সময় নষ্ট করব না! আসল গল্পে ফিরিঃ
তোমাকে বোধ হয় আআর আলাদা করে বলে দিতে হবে না যে সারা ভারতবর্ষে ইংরেজদের বিরূদ্ধে আন্দোলনে বাংলার একটা আলাদা ভূমিকা সবসময়েই ছিল।একদম শুরু থেকেই দেখা যায় বিশেষতঃ বাংলার কৃষকেরা প্রতি পদক্ষেপেই ইংরেজ শাসন ব্যবস্থার বিরূদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করে স্বাধীনতা সংগ্রাম কে উজ্জীবিত করেছে।
১৭৮৩ সাল। ইংরেজদের তাঁবেদার দেবী সিংহের অত্যাচারে উত্তর বাংলায় জনজীবন অতিষ্ট হয়ে ওঠে।রংপুরে ছিল তার একচেটিয়া আধিপত্য।সন্ন্যাসী-বিদ্রোহ দমনে ইংরেজ কুঠিয়ালরা তার সাহায্য গ্রহণ করেছিল।কিন্তু মজনু শাহের হাতে পরাজিত হয়ে সে সারণের মেলা থেকে পালিয়ে আসে।খাজনা আদায়ের সময় দেবী সিংহের সন্ত্রাস আর নিষ্ঠুরতার জুড়ি ছিল না।রংপুরে হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সমস্ত কৃষকরা তার বিরূদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে।ইংরেজ শাসকরা সেই বিদ্রোহ দমনের জন্য প্রচুর সৈন্য নিয়োগ করে।এই বিদ্রোহের নায়ক ছিলেন দরজি নারায়ন, কেনা সরকার, নুরুলউদ্দিন অ ইস্রায়েল খান। ইংরেজ বাহিনী্র সঙ্গে বিদ্রোহী কৃষকদের সংঘর্ষ দীর্ঘদিন ধরে চলে।রংপুর থেকে এই বিদ্রোহ দিনাজপুর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। রংপুরে দেবী সিংহের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।শেষ পর্যন্ত সে ইংরেজদের সহযোগীতায় কৃষকদের দমন করতে সমর্থ হয়। এই সময়ে অগুন্তি কৃষক কে ধরে ধরে ইংরেজ-রা ফাঁসী দেয়।
বাংলার কৃষকদের জীবনে ঘটে যায় এক বিশাল পরিবর্তন। ইংরেজরা এমন আইন বাঁধে যে বাংলার কৃষক তার জমি ও জীবিকা হারায়। ইংরেজরা ধূর্ত ছিল। তারা কোন সময়েই সরাসরি নিজের হাত কালিমালিপ্ত করতে চায় নি; অত্যন্ত চাতুর্যের সঙ্গে ব্যবহার করেছে আমাদের-ই দেশবাসীদের। তাই ঔপনিবেশিক স্বার্থ বজায় রেখে তারা সামন্ততান্ত্রিক প্রথার মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করে। ১৭৯৩ সালে পাকাপাকি হয় বাংলার কৃষকদের দুর্ভোগের ললাটলিখনঃ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত।
১৭৯৩ সালে বাংলার গভর্নর লর্ড কর্নওয়ালিশ ভূমিব্যবস্থা বিন্যাসের উদ্দেশ্যে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ঘোষণা করেন।উত্তরাধিকার সূত্রে জমিদার শ্রেনি সৃষ্টি করে বাংলার কৃষকদের জমির ওপর স্বত্ব চিরতরে লোপ করে দেওয়া হয়। বৃটিশ ঔপনিবেশিকদের আগ্রাসী অপশাসন ও বাণিজ্যের নামে দুর্ণীতি ও জুলুমবাজী, মুঘল আমলের চেয়ে দ্বিগুণ তিনগুণ খাজনা আদায় বাংলার কৃষিব্যবস্থাকে তছনছ করে দেয়।বাংলার কৃষকরা ইংরেজদের ধূর্ততার মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে ভূমিহীন হয়।
কৃষকবিদ্রোহ যে রংপুরের পর আরও ব্যাপক আকার নেয়, সেই গল্প তোমাকে পরের সংখ্যায় বলব।
আর্য চ্যাটার্জি
কলকাতা
ছবিঃইন্টারনেট
- বিস্তারিত
- লিখেছেন আর্য চ্যাটার্জি
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
দুই ব্যাঙের গল্প
অনেকদিন আগে জাপানে দুটো ব্যাং থাকত - একজন বাস করত সমুদ্রের তীরে ওসাকা শহরের কাছে একটা গর্তে, আর আরেকজন থাকত কিয়োটো শহরের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলা একটা ছোট্ট পরিষ্কার জলের নালার মধ্যে।তারা একে অপরের থেকে এত দূরে থাকত, যে তারা কোনদিন একে অপরের কথা শোনেইনি। কিন্তু মজার ব্যাপার এই যে, তারা দুইজনে একই সময়ে ভাবল যে দুনিয়াটা একটু ঘুরে দেখা উচিত; আর তাই কিয়োটোর ব্যাং ভাবল ওসাকা বেড়াতে যাবে, আর ওসাকার ব্যাং ঠিক করল, কিয়োটোতে গিয়ে সম্রাটের প্রাসাদ দেখে আসবে।
তাই বসন্তের এক সুন্দর সকালে, তারা দুজনেই কিয়োটো থেকে ওসাকা যাওয়ার পথ ধরে যাত্রা শুরু করল - একজন এক দিক থেকে আর অন্যজন অন্য দিক থেকে। তারা দুজনেই বেড়াতে যাওয়ার সম্পর্কে খুব কিছু জানত না, তাই তাদের ধারণা ছিল না যাত্রাটা কত কষ্টকর হবে; আর দুই শহরের মাঝামাঝি জায়গায় একটা পর্বত ছিল যেটাকে ডিঙিয়ে অন্যদিকে যেতে হবে। তারা দুজনে অনেক কষ্টে প্রচুর লাফ দিয়ে দিয়ে সেই পর্বতের মাথায় উঠল, আর উঠে সামনে আরেকজন ব্যাং কে দেখে দুজনেই খুব অবাক হয়ে গেল।
তারা খানিক্ষণ একে অপরের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে রইল, তারপর একে অপরের সঙ্গে কথা বলা শুরু করল, আর দুজনেই একে অপরকে জানাল তারা বাড়ি থেকে এত দূরে কি করছে। তারা যখন জানল যে তাদের দুজনেরই উদ্দেশ্য এক - নিজের দেশকে আরেকটু জানা - আর যেহেতু তাদের সেরকম কোন তাড়া ছিল না- তাই তারা একটা ঠাণ্ডা, স্যাঁতসেঁতে জায়গা খুঁজে নিয়ে হাত পা ছড়িয়ে বসল, আর ঠিক করল ওরা নিজেদের যাত্রা আবার শুরু করার আগে ভালভাবে বিশ্রাম নিয়ে নেবে।
"আমরা যদি আরেকটু বড় হতাম, " বলল ওসাকার ব্যাঙ, "তাহলে আমরা এখান থেকেই দুটো শহরকে দেখতে পেতাম, আর বুঝতে পারতাম সত্যিই সেগুলি দেখে আসার মত শহর কিনা।"
"ওহ, এটা তো খুব সহজ ব্যাপার," বলল কিয়োটোর ব্যাঙ," আমাদের দুজনকে, একে অপরকে ধরে রেখে নিজেদের পেছনের পায়ের ওপরে ভর দিয়ে দাঁড়াতে হবে, আর তাহলেই আমরা যে শহরটাতে যাচ্ছি সেটাকে দেখতে পাব।"
এই কথা শুনে বেদম খুশি হয় ওসাকার ব্যাঙ লাফ দিয়ে উঠল। কিয়োটোর ব্যাঙও উঠে দাঁড়াল। তার বন্ধু তার কাঁধে সামনের পা দুটো রাখল। সেইভাবে তারা দাঁড়াল, পেছনের পা যতটা সম্ভব টান টান করে, আর সামনের পা দিয়ে একে অপরকে শক্ত করে ধরে রেখে, যাতে তারা পড়ে না যায়। কিয়োটোর ব্যাঙ নিজের নাকটাকে ওসাকার দিকে ঘোরাল, আর ওসাকার ব্যাঙ ঘোরাল কিয়োটোর দিকে। কিন্তু বোকা দুটো ভুলে গেল যে যখন ওরা উঠে দাঁড়িয়েছে, তখন ওদের বিরাট বিরাট চোখ দুটো তাদের মাথার পেছনের দিকে পড়ে গেছে। তার ফলে, যদিও ওদের নাক দুটো সেইদিকেই আছে যেদিকে ওরা যেতে চায়, ওদের চোখ দুটো কিন্তু সেইদিকেই তাকিয়ে রয়েছে যেদিক থেকে ওরা এসেছে।
" হা ভগবান!" ওসাকার ব্যাঙ চেঁচিয়ে বলল, " কিয়োটো তো একদম ওসাকার মত দেখতে। এইটা দেখার জন্য আর এত দূর যাওয়ার কোন মানে হয়না। আমি বাপু বাড়ি যাব!"
"আমি যদি জানতাম ওসাকা একেবারে কিয়োটোর হুবহু নকল, তাহলে আমি এতটা পথ হেঁটে আসতাম না।" কিয়োটোর ব্যাঙ হতাশ হয়ে বলল, আর বলতে বলতে সে তার বন্ধুর কাঁধ থেকে সামনের পা দুটো সরাতেই, দুজনেই ধপাস্ করে ঘাসের ওপর পড়ে গেল। তারপর দুজনে দুজনকে বিদায় জানিয়ে , তারা বাড়ি ফরে চলল, আর জীবনের শেষ দিন অবধি তারা বিশ্বাস করত যে ওসাকা আর কিয়োটো একদম একে অপরের মত দেখতে দুটো শহর, যদিও আদপে মোটেও তা নয়।
জাপানি উপকথা
অনুবাদঃ
মহাশ্বেতা রায়
কলকাতা
- বিস্তারিত
- লিখেছেন মহাশ্বেতা রায়
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
ভারতের লোককথা
ভারতের বাইশটি ভাষার অনেক যুগ ধরে মুখে মুখে চলে আসা লোককথার ঝুলি থেকে নির্বাচিত এবং অনুদিত এক গুচ্ছ গল্প নিয়ে বই- "ভারতের লোককথা"। এই বইয়ের সংকলন ও সম্পাদনা করেছেন এ.কে. রামানুজন , আর গল্পগুলি অনুবাদ করেছেন মহাশ্বেতা দেবী।বাংলা, মরাঠি, তামিল, তেলুগু, কাশ্মিরী, সিন্ধী, উর্দু, কন্নড়, সাঁওতালি, ওরিয়া, পাঞ্জাবী, অহমিয়া, গুজরাতি, এবং আরো বিভিন্ন ভাষার থেকে গল্প নিয়ে এই সংকলন তৈরি হয়েছে। বাংলা ভাষা থেকে বাছা হয়েছে সুখু-দুখু, টিয়ার নাম হিরামন, গোপাল্ভাঁড়ের গল্প ।
এই সংগ্রহটি প্রকাশ করেছে ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট, আর দাম মাত্র ৭৫ টাকা।
- বিস্তারিত
- লিখেছেন বইপোকা
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
সমুদ্রের জন নোনতা কেন
অনেক, অনেক দিন আগে, দুই ভাই ছিল, তাদের মধ্যে একজন ধনী আর অন্যজন গরিব। ক্রিসমাসের আগের সন্ধ্যাবেলায়, গরিব ভাইয়ের বাড়িতে খাওয়ার জন্য একটা দানাও ছিল না; তখন সে তার ভাইয়ের বাড়ি গেল, আর ক্রিসমাসের জন্য কিছু খাবার চাইল। তার ভাই এর আগেও তাকে বহুবার নানারকম জিনিষ দিতে বাধ্য হয়েছে, আর এইবারেও সে মোটেও নিজে থেকে কিছু দিতে চাইছিল না।
"আমি যা বলব, তুমি যদি সেটা কর, তাহলে তোমাকে একটা গোটা শুয়োরের মাংস দেব," বলল ধনী ভাই। গরিব ভাই তক্ষুণি কথা দিল।
"ঠিক আছে, এই নাও মাংস, কিন্তু এখন তোমাকে সোজা যেতে হবে মৃতদের প্রাসাদে, " এই বলে ধনী ভাই মাংসের খন্ডটা গরিব ভাইয়ের দিকে ছুঁড়ে দিল।
"ঠিক আছে, আমি যে কথা দিয়েছি সে কথা রাখব।" বলল গরিব ভাই। এই বলে সে মাংসের খন্ডটা নিয়ে যাত্রা শুরু করল। সারা দিন ভর সে চলতেই লাগল, আর যখন রাত নেমে এল, সে একটা জায়গায় এসে উপস্থিত হল যেখানে আলো খুব উজ্জ্বল ছিল।
"আমার মনে হয় এইটাই সেই জায়গা, " সে ভাবল।
সেই বাড়িটার কাছে একজন লম্বা সাদা দাড়িওয়ালা বুড়ো মানুষ কাঠ কাটছিল।
"শুভ সন্ধ্যা, " বুড়োর কাছে গিয়ে বলল সে।
"তোমাকেও শুভ সন্ধ্যা জানাই। তুমি এই রাতের বেলা কোথায় চলেছ?" বুড়ো জিজ্ঞাসা করল।
"আমি মৃতদের প্রাসাদের খোঁজে চলেছি, মনে তো হয় ঠিক পথেই চলেছি।" গরিব লোকটা বলল।
"ওহ! হ্যাঁ, তুমি ঠিক পথেই এসেছ, কারণ এই হল সেই প্রাসাদ," বলল বুড়ো । " তুমি যখন ভেতরে যাবে ওরা সবাই তোমার মাংস খন্ডটা কিনতে চাইবে, কারণ ওরা খুব একটা মাংস খেতে পায় না; কিন্তু তুমি ওদের কাছে এর বদলে দরজার পেছনে রাখা যাঁতাকলটা চাইবে। যখন তুমি বেরিয়ে আসবে, আমি তোমাকে দেখিয়ে দেব যাঁতাকলটাকে কি করে থামাতে হয়। ওটা সব কাজের জন্যেই প্রয়োজনীয়।
তখন মাংস খন্ডা হাতে সেই গরিব লোকটা বুড়োকে তার উপদেশের জন্য অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে, দরজার কড়া নাড়ল।
যখন সে ভেতরে ঢুকল, বুড়ো যা বলেছিল ঠিক তাই হল ঃ ভেতরের সমস্ত লোক, সরু-মোটা-লম্বা-বেঁটে, পালে পালে তার দিকে এগিয়ে এল, আর প্রত্যেকেই মাংসের টুকড়োটা পাওয়ার জন্য তার সাথে দরাদরি শুরু করে দিল।
"এটা তো আমার আর আমার বউয়ের ক্রিসমাসের সন্ধ্যাবেলায় খাওয়ার কথা, কিন্তু, যেহেতু তোমাদের এটা পছন্দ হয়ে গেছে, তাহলে আমাকে তো এটা তোমাদেরকে দিয়েই যেতে হবে, বলল লোকটা। "কিন্তু, যদি আমি এটাকে বিক্রি করি, আমাকে তাহলে ওই দরজার পেছনে রাখা যাঁতাকলটা দিতে হবে।"
প্রথমে তারা তার কথা শুনল না, আর তার সাথে খুব দরাদরি করতে লাগল, কিন্তু লোকটা নিজের সিদ্ধান্তে অটল রইল। তখন সেই লোকগুলি তাকে যাঁতাকলটা দিতে বাধ্য হল। সেটাকে নিয়ে সে যখন বাইরে এল, সে সেই বুড়ো কাঠুরেকে জিজ্জেস করল যাঁতাকলটা কিভাবে থামাতে হয়। যখন সে উপায়টা শিখে নিল, সে বুড়োকে ধন্যবাদ জানিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ির পথে হাঁটা দিল, কিন্তু বাড়ি পৌঁছাতে অনেক রাত হয়ে গেল।
"এতক্ষণ তুমি ছিলে কোথায়?" তার বউ তাকে জিজ্ঞেস করল। " আমি এখানে তোমার অপেক্ষায় ঘন্টার পর ঘন্টা বসে আছি, আর বাড়িতে আগুণ জ্বালানোর মত দুটো কাঠ পর্যন্ত নেই।"
"ওহ! আমি আগে আসতে পারিনি। আমার একটা দরকারি কাজ ছিল, আর অনেক দূরে যেতে হয়েছিল। কিন্তু তুমি এখন খালি দেখ!" এই বলে লোকটা যাঁতাকলটাকে টেবিলের ওপর বসাল, তারপরে সেটাকে প্রথমে বলল আগুণ দিতে, তারপরে টেবিলের ঢাকনা, তারপরে মাংস, আর সুরা, আর আরো ভাল ভাল খাবার যা ক্রিসমাসের আগের সন্ধ্যাবেলায় খাওয়া হয়। যাঁতাকল ধুরে যেতে থাকল আর যা চাওয়া হল সব কিছু দিয়ে যেতে থাকল। "হা ভগবান!" এইসব দেখেশুনে তার বউ বলল; সে তার স্বামীর কাছ থেকে জানতে চাইল সে কোথা থেকে যাঁতাটা পেয়েছে, কিন্তু তার স্বামী তাকে কিছুই বলল না।
"আমি কোথায় পেয়েছি সেটা নিয়ে ভাবতে হবে না; তুমি দেখতেই পাচ্ছ এটা একটা খুব ভাল জিনিষ, আর এটা কখনো খারাপ হবে না। " এই বলে সে সমস্ত রকমের ভাল ভাল খাবার বের করতে লাগল আর অনেক খাবার জমিয়ে ফেলল, আর তিন দিনের দিন নিজের সব বন্ধুকে নেমন্তন্ন খেতে ডাকল।
ওদিকে তার ধনী ভাই যখন দেখতে পেল তার বাড়িতে ভোজ সভা বসেছে, তখন এত ভাল ভাল জিনিষ দেখে সে খুব অবাক হল আর রেগেও গেল। "তিন দিন আগে ও এত গরিব ছিল যে আমার কাছে একটু খাবার চাইতে এসেছিল, কিন্তু এ কি দেখছি! ও এখন এত বড় একটা ভোজসভার আয়োজন করেছে ঠিক যেন এক রাজার মত। তাই সে তার ভাইকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল, " কোথা থেকে এত সম্পদ পেলে, আমাকে এক্ষুণি বল।"
"দরজার পেছন থেকে, " বলল তার ভাই, কারণ সে কিছুতেই তার ধনী ভাইকে আসল কথাটা বলতে চাইছিল না। কিন্তু পরে সন্ধ্যার দিকে, যখন সে একটু বেশি সুরা পান করে ফেলেছে, তখন সে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না।সে যাঁতাকলটার কথা বলে ফেলল। "এইটাই আমাকে আমার সব সম্পদ এনে দিয়েছে," সে বলল, আর এই বলে সে
যাঁতা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নানারকমের জিনিষ বের করতে লাগল। তার ধনী ভাই যখন সেটা দেখল, সে তখন যাঁতাকলটা নিতে চাইল। অনেক করে বুঝিয়ে সুঝিয়ে সে তার ভাইকে রাজি করালো যাঁতাকলটা দিয়ে দেওয়ার জন্য। ঠিক হল, তার বদলে সে ভাইকে দেবে তিন হাজার টাকা , আর যতদিন না ধান কাটা হচ্ছে, ততদিন গরিব ভাই নিজের কাছে যাঁতাকলটা রাখতে পারবে, কারণ, গরিব ভাই ভাবল- "আমি যদি ধান কাটা শেষ হওয়া অবধি এটাকে রাখতে পারি, তাহলে ততদিনে আমি এত খাবার সঞ্চয় করে ফেলতে পারব, যা অনেক অনেক বছর ধরে জমিয়ে রাখা যাবে।" বোঝাই যাচ্ছে সেই ক'দিনে যাঁতাটা একদমই বেকার পড়ে রইল না। ধান কাটা শেষ হলে ধনী ভাই গিয়ে সেটাকে নিয়ে এল, কিন্তু তার ভাই তাকে শিখিয়ে দিল না কিভাবে যাঁতাটাকে থামাতে হয়। ধনী ভাই সন্ধ্যেবেলা যাঁতাকলটাকে নিয়ে বাড়ি ফিরল, আর পরের দিন সকালে উঠে নিজের বউকে বলল , " যাও, মাঠে গিয়ে খড়-শোকানোর তদারকি কর; আজকে বাড়ির সব কাজ আমি করব।"
তারপরে, যখন দুপুরে খাওয়ার সময় হল, সে যাঁতাকলটাকে রান্নাঘরের টেবিলের ওপর রেখে বলল " তাড়াতাড়ি আর ভাল করে মাংস আর পায়েস তৈরি কর।"
তখন যাঁতাকল মাংস আর পায়েস তৈরি করতে শুরু করল, আর প্রথমে সব থালা আর বাটি ভরে গেল, তারপরে সেগুলি রান্নাঘরের মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ল। ধনী ভাই যাঁতাকলটাকে নানারকম ভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে থামানোর চেষ্টা করল, কিন্তু যতরকমভাবেই চেষ্টা করুক না কেন, যাঁতাকলটা চলতেই থাকল, আর খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ঘরে এত পায়েস হয়ে গেল যে লোকটা তাতে প্রায় ডুবেই যায় আর কি! তখন সে তাড়াতাড়ি বসার ঘরের দরজা খুলে দিল, কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই ঘরটাও খাবারে ভরে গেল। লোকটা কোনমতে সেই পায়েসের স্রোত ডিঙিয়ে বাড়ির দরজা খুলতে পারল। সে দরজা খুলেই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসে দৌড়াতে লাগল, আর তার পেছন পেছন মাংস আর পায়েসের স্রোত এগিয়ে আসতে থাকল আর মাঠে-ঘাটে ছড়িয়ে পড়তে লাগল।
ওদিকে তার বউ, মাঠে খড় শোকানোর তদারকি করতে করতে, ভাবছিল দুপুরের খাবার কখন আসবে। সে তার আশেপাশের মজুরদের ডেকে বলল, "কত্তামশাই আমাদের এখনো বাড়িতে ডাকেন নি , কিন্তু আমার মনে হয় আমাদের যাওয়া উচিত। হতে পারে উনি ঠিক ভাবে রান্না করতে পারছেন না, আর আমার উচিত ওনাকে গিয়ে সাহায্য করা।"
এই ভেবে তারা বাড়িত দিকে হাঁটা দিল। কিন্তু যখন তারা খানিকটা মাত্র পথ গেছে, তারা দেখতে পেল সেই মাংস আর পায়েসের ধারা, একে অপরের সঙ্গে মিশে ধেয়ে আসছে, আর তার সামনে ছুটে আসছে তাদের কর্তামশাই। "সাবধান, সাবধান, পালাও , পালাও। দেখ যেন পায়েসে ডুবে যেও না।" বলতে বলতে সে ছুটে চলল আর গিয়ে থামল তার ভাইয়ের বাড়ির সামনে। সে ভাইকে কাকুতি-মিনতি করে বলল যাঁতাকলটা ফেরত নিয়ে নিতে আর সেটাকে থামাতে, কারণ সে বললঃ"ওটা যদি আর এক ঘন্টা চলে তাহলে সারাটা গ্রাম মাংস আর পায়েসে ডুবে যাবে।" কিন্তু তার ভাই বলল, আগে তিন হাজার টাকা দাও, তারপরে ওটাকে ফেরত নেব। তখন সেই ধনী ভাই বাধ্য হল তাকে টাকা দিতে। এখন গরিব ভাইয়ের কাছে টাকাও এল, আর যাঁতাকলটাও ফিরে এল। তাই খুব অল্পদিনের মধ্যেই সে তার ধনী ভাইয়ের বাড়ির থেকেও সুন্দর একটা খামারবাড়িতে থাকতে লাগল, আর যাঁতাকল থেকে সে এত টাকা পেল, যে সে সারাটা বাড়িকে সোনার পাতে মুড়ে ফেলল।তার খামারবাড়িটা ছিল সমুদ্রের কাছাকাছি, তাই সমুদ্রের অনেক দূর থেকেও সেটাকে ঝকঝক করতে দেখা যেত। সেই পথ দিয়ে যারা যেত, তারা সবাই একবার করে সেই সোনার খামারবাড়ি দেখতে যেত, আর সবাই সেই অবাক করা যাঁতাকলটাকে দেখতে চাইত। তার খবর দূর দূরান্তে ছড়িয়ে পড়েছিল, আর এমন কেউ ছিল না যে কিনা তার কথা না জানত।
এর বেশ অনেক , অনেক দিন পরে, এক সওদাগর সেই যাঁতাকলটাকে দেখতে এল। সে জানতে চাইল যাঁতাটা নুন বানাতে পারে কিনা। তার মালিক বলল, "হ্যাঁ, এটা নুন বানাতে পারে।"সেই শুনে সওদাগর ঠিক করল, যতই দাম লাগুক, সে এই যাঁতাকলটাকে কিনে নিয়ে যাবে। তাকে আর নুনের ব্যবসা করার জন্য বিপদশঙ্কুল সমুদ্রে ঘুরে ঘুরে বেড়াতে হবে না। প্রথমে যাঁতাকলের মালিক কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না, কিন্তু সওদাগর প্রচুর অনুরোধ-উপরোধ করে, অনেক অনেক টাকা দিয়ে সেটাকে কিনে নিল। একবার যাঁতাকলটাকে হাটে পেয়েই সওদাগর সেখান থেকে তাড়াতাড়ি চলে এল, কারণ তার ভয় হচ্ছিল যে যাঁতাকলের আসল মালিকের যদি মত পরিবর্তন হয়, তাহলে সেটা হাতছাড়া হয়ে যাবে। তড়িঘড়ি চলে আসার সময়ে, সে জেনে নিতে ভুলে গেল কিভাবে যাঁতাটাকে থামাতে হয়। সে যত দ্রুত সম্ভব এসে নিজের জাহাজে উঠে পড়ল।
সমুদ্রে খানিক দূর যাওয়ার পরে, সে যাঁতাকলটাকে বলল, "তাড়াতাড়ি করে খুব ভাল নুন বানাও।" তখন যাঁতাকলটা নুন বানাতে শুরু করল, তার ভেতর থেকে ফোয়ারার মত নুন বেরোতে শুরু করল। যখন জাহাজটা নুনে ভরে গেল, তখ সওদাগর সেটাকে থামাতে চেষ্টা করল, কিন্তু কোনভাবেই যাঁতাকলটাকে থামাতে পারল না। যাঁতাটা নুন বানিয়েই চলল, জাহাজের ওপর নুনের পাহাড় ক্রমশঃ উঁচু হতে থাকল, আর শেষ অবধি জাহাজটা নুনের ভারে ডুবে গেল।
সেই যাঁতাকলটা সেই থেকে সমুদ্রের নিচে পড়ে আছে, আর এখনো , সারাদিন ধরে নুন বানিয়ে চলেছে; আর সেই কারণেই সমুদ্রের জল নোনতা।
অ্যান্ড্র্যু লাং এর রূপকথা।
অনুবাদঃ
মহাশ্বেতা রায়।
কলকাতা
- বিস্তারিত
- লিখেছেন মহাশ্বেতা রায়
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
Elephantটা Funটা
জানো আমি কোথায় গেছিলাম? সেটা একটা Zoo এর আগে কখনো যাই নি ভীষন মজার জায়গা। কত animals ছিল সেখানে নানা দেশের নানান পশু আর পাখি।
আমার সব থেকে ভালো লাগলো বিশাল Elephant কে। ওর একটা এই-য়া লম্বা Trunk আছে ও সেটা মাথায় তুলে আমায় 'Welcome' করলো আমি যে ওকে দেখতে গেছি এত দূর থেকে!
আর তেমনি লম্বা হলো Giraffe ও ওর লম্বা গলা বাড়িয়ে দিল আর আমি ওকে হাতে করে সবুজ গাছের পাতা খাইয়ে দিলাম। ওর এত ভালো লাগলো ও আরো খাবে বলে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। ওর চোখগুলো কি সুন্দর!
আর আমি কি দেখেছি জানো? সারি সারি Flamingo ওরা খুব সুন্দর দেখতে এক রকমের পাখি। ওরা যেখানে যায় সবাই একসাথে যায়, এক ভাবে দাঁড়ায় আর এক সাথে আবার উড়ে যায়।
তারপর আর একটু ওদিকে গিয়ে দেখি একটা lake আর সেখানে একটা গাছের ডাল জড়িয়ে অনেকগুলো Turtle একসাথে রোদ্দুর পিঠে দিয়ে শুয়েছিল।
এই Zoo তে গিয়ে আমার এত ভালো লেগেছে তারপর বাড়ি ফিরেও কয়েকদিন আমি শুধু Elephant, Giraffe, Baboon ওদের কথাই ভেবেছি। আমি আবার যেতে চাই সেখানে।
আমি animals ভীষন ভালবাসি। আমি Zoo তে গিয়ে একটুও চিৎকার করি নি আর সেখানে কোনো খাবার বা কাগজ ফেলি নি। আমি সেখানে একটা মজার জিনিস দেখেছি যা আমি আগে কখনো দেখিনি। সেটা হলো কলা-র ফুল। আমি রোজ Banana খাই সেটা তো একটা ফল কিন্তু কোনদিন তার ফুল দেখি নি। এই Zoo তে অনেক কলা গাছ, বাঁশ গাছ এইসব ছিল সেখানে কলা গাছে আমি কলা-র ফুল দেখেছি, বাবা বলেছে তাকে "মোচা" বলে।
তোমরাও কি এরকম আমার মত Zoo দেখেছ? আমি ওখান থেকে ফিরে আসার আগে একটা বড় Palm Tree কে একটা big hug করেছি আর বলেছি "আবার আসব" আর বাড়ি ফিরে বন্ধুদের সবাইকে বলব ওখানে যেতে। তোমরাও যেও কিন্তু॥
গল্প বলেছেঃ
অহনা মুখার্জী, ৪ বছর
অক্সফোর্ড, মিসিসিপি, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র
লিখতে সাহায্য করেছেন অহনার মা।
Zoo টা ছিল : Audubon Zoo, New Orleans, State of Louisiana, USA
তুমিও কি অহনার মত আমাদের সাথে গল্প করতে চাও? বলতে চাও তোমার মনে যা খুশি আসে , লিখতে চাও ছড়া? তাহলে চটপট লিখে, নিজের ছবিসহ পাঠিয়ে দাও আমাদের কাছে, এই ঠিকানায়:
- বিস্তারিত
- লিখেছেন সৃজন বিভাগ
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত