পাঁচমারির ভোজ
তিন ধরিয়ায় তিনটে ঘোড়ায়
গাইছে খেয়াল রোজ
সেই না শুনে পাঁচমারিতে
ভালুক লাগায় ভোজ।
সেই ভোজেতে আসতে গিয়ে
ভাঙলো হাতির ঠ্যাং
শেয়াল গুলো বাজায় ঢোলক
ড্যাং ড্যাঙা ড্যাং ড্যাং।
তারপরেতে জেব্রা এল
সঙ্গে এলো হায়না
নেকড়ে চিতার সঙ্গ নিল
লাল পন্ডা চায়নার।
সিংহ এল হরিণ এল
এলো বাঘ আর বাঁদর
গন্ডার আর জিরাফ এল
ঝুলিয়ে গলায় চাদর।
খাবার মেনু কি ছিলো ভাই
নেই যে রে কাজ শুনে
পান্তা ভাতে পেঁয়াজ নেবু
তিনটে নঙ্কা গুনে।
তাই নাকি সব গপ্ গপাগপ্
পেটটি পুড়ে খেয়ে
ঠ্যাঙের উপর ঠ্যাংটি তুলে
পড়ল সবাই শুয়ে।
মোরগা মটন কোপ্তা কাবাব
নিদেন মাছের ঝোল
কিচ্ছুটি নেই খাবার পাতে
চাউমিন এগরোল।
মিথ্যে কথা নয়গো এসব
নয় বানানো গল্পো
আসল কথা শুনলে বুঝো
একটুও নয় কল্পো।
ওরা যে ভাই সবাই গরীব
পায়না খেতে মোটে
তাই গপাগপ্ পুড়লো মুখে
যখন যেমন জোটে।
শুভ্রজিত চক্রবর্তী
বালী, হাওড়া
- বিস্তারিত
- ক্যাটfগরি: ছড়া-কবিতা
বাড়ির মধ্যে বাঘ
বাঘের ছানা টিমোথিকে আমার দাদু একবার দেহরার কাছে তরাই এর জঙ্গলে শিকার করতে গিয়ে খুঁজে পেয়েছিলেন।
আমার দাদু শিকারি ছিলেন না, কিন্তু যেহেতু তিনি শিবালিকের জঙ্গল অন্য অনেকের থেকে বেশি ভাল চিনতেন, তাই তাঁকে অনুরোধ করা হয়েছিল এক বিশেষ দলের সাথে যেতে - এই দলে দিল্লির অনেক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মানুষ ছিলেন - যাতে তিনি জঙ্গল এর আনাচকানাচ সম্বন্ধে আর বাঘ দেখা গেলে বিটাররা কি করবে, বলে দিতে পারেন।
ক্যাম্পটি ছিল অসাধারন -সাতটা বিশাল বড় তাঁবু [প্রত্যেক শিকারির জন্য একটা], একটা খাবার তাঁবু আর অনেকগুলি কাজের লোকেদের তাঁবু। রাতের খাওয়া খুব ভাল হত, আর দাদু পরে স্বীকার করেছিলেন যে ওইরকম গরম জলের পাত্র, হাত ধোয়ার বাটি আর চর্ব্ব-চোষ্য খাওয়া, জঙ্গলের ভেতর তাঁবুর মধ্যে খুব একটা দেখা যায়না! কিন্তু ভাইসরয়ের আমলে এইরকমই সব ব্যাপার-স্যাপার ছিল...সঙ্গে ছিল পনেরোটা হাতি, তার মধ্যে চারটে হাওদাওয়ালা, শিকারিদের বসার জন্য, আর বাকিগুলি ছিল শিকারে অংশ নেওয়ার জন্য বিশেষভাবে শিক্ষাপ্রাপ্ত।
শিকারিরা বাঘ তো দেখতেই পেলনা, অন্য কিছুও মারল না, যদিও তারা অনেক হরিণ, ময়ূর আর বুনো শুয়োর দেখেছিল। তারা প্রায় বাঘ দেখার আশা ছেড়েই দিয়েছিল, আর শেয়ালগুলির দিকে তাক করতে বসেছিল, এমন সময় দাদু, অন্যদের থেকে একটু দূরে জঙ্গলের পথে ঘুরতে ঘুরতে, দেখতে পেলেন প্রায় আঠেরো ইঞ্চি লম্বা একটা বাঘের ছানা , একটা বটগাছের ঘন ঝুরির মধ্যে লুকিয়ে আছে। দাদু ছানাটাকে কোলে তুলে নিলেন, আর শিকার-যাত্রা শেষ হওয়ার পর সাথে করে বাড়ি নিয়ে এলেন। সেইবার ওই দলের মধ্যে দাদুই একমাত্র কোন একটা শিকার নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন।
প্রথমদিকে বাঘের ছানা টিমোথিকে, যার নামকরন করেছিলেন আমার দিদিমা, খালি দুধ খাওয়ানো হত, যেটা ফিডিং বোতলে করে ওকে খাওয়াত আমাদের রাঁধুনি মাহমুদ। কিন্তু দুধ ওর পেটের পক্ষে খুব ভারি হয়ে গেল, তাই তখন ওকে কাঁচা খাসির মাংস আর কড লিভার তেল খাওয়ানো হত, আর পরের দিকে দেওয়া হত আরো লোভনীয় ঘুঘু আর খরগোশের মাংস।
টিমোথির দুইজন সঙ্গী জুটল - টোটো নামের বাঁদর-যে কিনা মাঝে মাঝেই সাহস ভরে ওর লেজ ধরে টানতো আর টিমোথি রেগে গেলেই পর্দার ওপর চড়ে বসতো। অন্যজন ছিল একটা মংগ্রেল কুকুরছানা, যাকে দাদু রাস্তায় পেয়েছিলেন।
প্রথমদিকে টিমোথি কুকুরছানাটাকে খুব ভয় পেতো, আর ও কাছাকাছি এলেই এক লাফ দিয়ে পেছিয়ে যেত। নিজের বড় বড় সামনের পা দুটো দিয়ে কুকুরছানাটাকে ভয় দেখাতো, তারপর নিজেই ভয় পেয়ে যতদূর সম্ভব সরে যেত। শেষের দিকে অবশ্য কুকুরছানাটা ওর পিঠের ওপর চড়ে আরাম করত!
ওর সঙ্গে যারা খেলতে আসত, তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়াটা ছিল টিমোথির প্রিয় খেলা, আর তাই, যখন আমি দাদুর সাথে থাকতে এলাম, আমি হয়ে পড়লাম ওর প্রিয়পাত্র। ঝকঝকে দুইচোখ ভরা দুষ্টুমি নিয়ে, শরীরটাকে গুঁড়ি মেরে, ও ধীরে ধীরে আমার দিকে এগিয়ে আসতো, তারপর আমার পায়ের ওপর হটাত ঝাঁপিয়ে পড়তো, আর পিঠের ওপর গড়াগড়ি দিয়ে ফূর্তিতে পা ছুঁড়তো, আর ভান করতো যেন আমার গোড়ালি কামড়ে দেবে।
এই সময়ে ওর চেহারা প্রায় একটা বড় রিট্রিভার কুকুরের মত হয়ে গিয়েছিল, আর আমি যখন ওকে নিয়ে হাঁটতে বেরোতাম, রাস্তার লোকজন আর কাছে ঘেঁষতো না। ও যখন চেন টেনে এগিয়ে যেতো, আমার বেশ অসুবিধাই হতো ওর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে। বাড়িতে ওর সব থেকে পছন্দের জায়গা ছিল বসার ঘরটা, সেখানে ও আরাম করে লম্বা সোফাটার ওপর গা এলিয়ে রাজকীয় ভঙ্গীতে শুয়ে থাকতো, আর ওকে কেউ সরাতে এলেই তার দিকে তাকিয়ে ফোঁসফোঁস করতো।
টিমোথি খুব পরিচ্ছন্ন ছিলো, বেড়ালের মত পা দিয়ে ঘষে ঘষে নিজের মুখ পরিষ্কার করতো। রাতে ও রাঁধুনির ঘরে ঘুমোতো, আর সকালে ছাড়া পেলে খুবই খুশি হত।
"এর মাঝে কোন একদিন" দিদিমা দৈববানীর মত ঘোষণা করতেন, "আমরা দেখবো টিমোথি মাহমুদের খাটে উঠে বসে আছে, আর ওই রাঁধুনিটার জুতো আর জামা ছাড়া আর কিছু দেখতে পাওয়া যাবে না।"
অবশ্যই সেরকম কিছু হয়নি, কিন্তু টিমোথি যখন প্রায় মাস ছয়েকের, তখন ওর মধ্যে একটা পরিবর্তন এলো। ওর ধীরে ধীরে মেজাজ পাল্টাতে লাগলো। আমার সাথে বেড়াতে বেরিয়ে ও চেষ্টা করতো আমাকে এড়িয়ে গিয়ে কোন বেড়াল বা কারোর পোষা পিকিনিজের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে। মাঝে মাঝে রাতে আমরা মুরগির ঘর থেকে ভয়ার্ত চিতকার শুনতাম, আর পরের দিন সকালে দেখা যেত সারা বারান্দা জুড়ে পড়ে আছে পাখির পালক। টিমোথিকে আরো বেশি করে বেঁধে রাখা হতো। অবশেষে যখন ও বাড়ির মধ্যে মাহমুদের ওপর হিংস্রভাবে যখন তখন ঝাঁপিয়ে পড়তে লাগলো, তখন দাদু ঠিক করলেন এইবার ওকে কোনো চিড়িয়াখানায় পাঠানোর সময় হয়েছে ।
সবথেকে কাছাকাছি চিড়িয়াখানা ছিল লখনউতে, দুশো মাইল দূরে। নিজের আর টিমোথির জন্য একটা প্রথম শ্রেণীর কামরা বুক করে - ওদের সাথে আর কেউ এক কামরায় যেতোও না - দাদু টিমোথিকে লখনউ নিয়ে গেলেন , যেখানে চিড়িয়াখানার কর্তৃপক্ষ এতো স্বাস্থ্যবান এবং ভদ্র একটা বাঘ পেয়ে খুবই খুশি হলেন।
এর প্রায় ছয় মাস পরে, যখন আমার দাদু আর দিদিমা লখনউ গেলেন আত্মীয়দের সাথে দেখা করতে, তখন দাদু একদিন সময় করে চিড়িয়াখানা গেলেন টিমোথিকে দেখতে। আমি তখন ওনার সঙ্গে ছিলাম না, কিন্তু গল্পটা শুনেছিলাম দাদু দেহরা তে ফিরে আসার পর।
চিড়িয়াখানায় পৌঁছে দাদু সোজা চলে গেলেন টিমোথিকে যেই খাঁচায় রাখা হয়েছিল, তার সামনে। খাঁচার ভেতরে এক কোনায় বসে আছে,আরো বড় হয়ে গেছে, সেই বাঘ, গায়ে তার ডোরা ডোরা দাগ।
"কিরে টিমোথি!" বলে দাদু সোজা গিয়ে চড়লেন রেলিং এর ওপর, আর খাঁচার গরাদের ভিতর দিয়ে তাঁর হাত বাড়িয়ে দিলেন।
বাঘটা খাঁচার গরাদের কাছে এগিয়ে এলো, আর দাদুকে তার মাথায় দুই হাত রাখতে দিলো। দাদু ওর কপালে হাত বুলিয়ে দিলেন, কানে সুড়সুড়ি দিলেন, আর যখনই ও গরগর করল, চটাস করে ওর মুখে মারলেন, ঠিক যেমন ভাবে আগে ওকে শান্ত করতেন।
ও দাদুর হাত চাটলো আর যখন পাশের খাঁচার থেকে একটা চিতা ওর দিকে তাকিয়ে গর্জন করলো, তখন এক লাফে ছিটকে দূরে সরে গেলো। দাদু চিতাটাকে "শুহ-হ-হ" করে তাড়িয়ে দিলেন, অমনি বাঘটা ফেরত এসে ওঁর হাত চাটতে শুরু করলো; কিন্তু মাঝে মাঝেই চিতাবাঘটা খাঁচার এদিকে ছুটে এলেই, বাঘবাবাজি আবার কোনায় দৌড় লাগাচ্ছিলো।
এই পুনর্মিলন দেখার জন্য বেশ কিছু লোক জমে গেলো আর একজন কীপার ভিড় ঠেলে এগিয়ে এসে দাদুকে জিজ্ঞাসা করলো উনি কি করছেন।
"আমি টিমোথির সাথে কথা বলছি," দাদু বল্লেন।"ছয়মাস আগে আমি যখন ওকে চিড়িয়াখানায় দিয়ে গেলাম তুমি তখন ছিলে না?"
"আমি এখানে খুব বেশিদিন আসিনি," অবাক গলায় বললো কীপারটি।"আপনি কথা বলুন। আমি তো ওকে কোনদিন ছুঁতেই পারিনি, ওর সবসময় মেজাজ গরম থাকে।"
"তোমরা ওকে অন্য কোথাও রাখছোনা কেনো?" দাদু বললেন।" ওই চিতাটা ওকে ভয় দেখায়। আমি গিয়ে সুপারিন্টেণ্ডেণ্ট এর সাথে কথা বলছি।"
দাদু সুপার কে খুঁজতে গেলেন, গিয়ে শুনলেন তিনি সেদিন তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে গেছেন; কি আর করা, তাই দাদু চিড়িয়াখানার এদিক ওদিক খানিক্ষণ ঘুরে বেড়ালেন, তারপর টিমোথির খাঁচার কাছে ফিরে এলেন ওকে বিদায় জানাতে। তখন সন্ধ্যে ঘনিয়ে এসেছে।
প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে টিমোথির গায়ে হাত বোলানো আর চাঁটি মারার পর তিনি লক্ষ করলেন অন্য একজন কীপার তাঁর দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে। দাদু চিনতে পারলেন এই লোকটি টিমোথিকে নিয়ে আসার সময়ে চিড়িয়াখানায় ছিল।
"তুমি আমাকে চিনেছ," দাদু বললেন।"তুমিই নাহয় কেনো টিমোথিকে এই পাজি চিতাটার থেকে দূরে অন্য কোন খাঁচায় রাখো না?"
"কিন্তু -স্যর - "কীপারটি থেমে থেমে বললো," এটা আপনার বাঘ নয়।"
"আমি জানি, আমি জানি," দাদু একটু অভিমানভরে বললেন। "আমি জানি ও এখন আর আমার নয়। কিন্তু তুমি আমার দুই -একটা কথা শুনতেই পারো।"
"আপনার বাঘটাকে আমার খুব ভালো করে মনে আছে", বললো কীপার। "ও দুইমাস আগে মারা গেছে।"
"মারা গেছে!!" দাদু চমকে উঠলেন।
"হ্যাঁ, স্যর, নিউমোনিয়া হয়েছিল। এই বাঘটাকে মোটে গতমাসে পাহাড় থেকে ধরা হয়েছে, আর এটা খুবই ভয়ানক।"
দাদু ভেবে পেলেন না কি বলবেন। বাঘটা তখনও তাঁর হাত চাটছে, ক্রমশঃ আরো আয়েশ করে। দাদু অনেক্ষণ ধরে, যেন প্রায় এক যুগ ধরে নিজের হাতটাকে টেনে বাইরে নিয়ে এলেন।
বাঘটার মুখের কাছে নিজের মুখটা নিয়ে গিয়ে দাদু কোনমতে বল্লেন,"গুডনাইট টিমোথি," তারপর কীপারটির দিকে একবার কটমট করে তাকিয়ে, তাড়াতাড়ি চিড়িয়াখানা থেকে বেরিয়ে চলে গেলেন।
রাস্কিন বন্ড
মূল গল্প- আ টাইগার ইন দ্য হাউস
ভাষ্যান্তর- মহাশ্বেতা রায়
- বিস্তারিত
- ক্যাটfগরি: গল্প-স্বল্প
আঁকিবুকি
সম্পূর্ণা ঘোষ, ৮ বছর, লন্ডন, যুক্তরাষ্ট্র
- বিস্তারিত
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
দুই বেড়ালের গপ্পো
তুমি কি গারফিল্ডকে চেনো? কিম্বা হিথক্লিফকে? ধরে নিলাম চেনো। হয়তো ভালোও বাসো মনে মনে। আমিও খুব ভালোবাসি ওদের। ওদের সব কিছু দৌরাত্মি ধরা পড়ে কমিকসে। আর সেইসব কান্ড আমরা সবাই খুব তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করি টক-মিষ্টি আচার খাবার মতো করে। তাই না? জানো তো গারফিল্ডের নাম গিনেস বুকেও পাওয়া যায়। পৃথিবীর হেন কাগজ নেই যেখানে নাকি গারফিল্ডকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। শুনে তো নিশ্চই গারফিল্ডের ল্যাজ মোটা হচ্ছে। তা একটু হোক...ওয়ার্ল্ডে পপুলার বলে কথা। খবরের কাগজে জনপ্রিয়তা লাভের পর গারফিল্ডকে আমরা দেখতে পেলাম টেলিভশনের পর্দায়। সেই সিরিজও তো খুব জনপ্রিয়তা পেলো। ভাবছো হিথক্লিফকে নিয়ে বলছি না কেনো? আরে বাপু দাঁড়াও...একটু সবু্র করো দেখি। বলবো তো তার কথাও। দেখছো না গারফিল্ড কেমন মিটমিট করে তাকিয়ে আছে। আগে তার আবদার মেটাই।
গারফিল্ড
গারফিল্ডের আগে জিম পোকামাকড়দের নিয়ে কমিক স্ট্রিপ আঁকতেন এবং লিখতেন। কিন্তু সেই কমিকস খুব একটা জনপ্রিয় হয়নি আর তেমন প্রশংসাও পায়নি। মনে মনে একটু কষ্ট পাচ্ছিলেন জিম। তখন একদিন এক সম্পাদকের সাথে দেখা হল জিমের তিনি তাঁকে বললেন, "জিম, তুমি আঁকতে ভালোই পারো...গল্পটাও ভালোই বলো...এবার তোমার এমন কিছু নিয়ে কাজ করা উচিত যা পাঠকেরা সহজেই বুঝতে পারবে।" সম্পাদকের পরামর্শ অনুযায়ী সৃষ্টি হলো গারফিল্ডের জীবন বৃত্তান্ত। সবচেয়ে মজার তথ্য হল এই যে গারফিল্ডের নাম থেকে শুরু করে তার চরিত্রের খুঁটিনাটি জিম তৈরী করলেন তাঁর দাদু এ গারফিল্ড ডেভিসের অনুকরণে। আসলে জিমের দাদু বড়ই বদমেজাজি আর অলস। শুরুর দিকে গল্প গুলোতে লেম্যান বলে একটি চরিত্রকে দেখতে পাওয়া যেতো। কারণ ডেভিস ভেবেছিলেন আরবাকলের তো একটা কথা বলার লোকের দরকার। কিন্তু পরে তিনি ভেবে দেখলেন এর জন্য গারফিল্ডই যথেষ্ট। আর সেই থেকে গল্পে একটা নতুন মাত্রা যোগ হয়। মানুষ আর বেড়ালের কথোপকথন আর তার সাথে নানান মজার কান্ড কারখানা। গল্প থেকে লেম্যান চলে গেলেও আরবাকলের বাড়িতে থেকে যায় তার পোষা কুকুর ওডি । গারফিল্ড আবার মাঝে মাঝে টিভি দেখে। শুধু তাই নয় জন যা খাবার আনে গারফিল্ড সব খেয়ে ফেলে। সে এমন লোভী আর পেটুক বেড়াল যাকে ইঁদুরেরা পর্যন্ত খাবারের লোভ দেখিয়ে সারা বাড়ি দাপিয়ে বেড়ায়। গারফিল্ডকে সারাদিন ঘুমোতে দেখে জন নিজের মোবাইল চার্জার দিয়ে তাকে চার্জ করতে চায়!! কিন্তু তাতেও কিছু হয় না পেটুক আলসেমিতে ভরা গারফিল্ডের। সে শুয়েই চোখ মিট মিট করে। দেখো এখানেও কেমন মিটমিট করে তাকিয়ে আছে। কুঁড়ের বাদশা নামে আজও গারফিল্ড জগত বিখ্যাত।
ওরে বাবা ওদিকে তো আবার হিথক্লিফ ডাকতে শুরু করেছে বেজায়। চলো তো দেখি কি বলছে? আচ্ছা বুঝেছি তার গোঁসা হয়েছে। বলছি বাবা...বলছি তোমার কথা। ইচ্ছামতীর বন্ধু একটু মন দিয়ে শোনো হিথক্লিফের কথা। কারণ না শুনলে যা পাড়া বেড়ানো স্বভাব তার, কোনদিন তোমার বাড়ি চলে যাবে।
হিথক্লিফ
হিথক্লিফকে গারফিল্ডের দাদা বলতে পারো। কারণ হিথক্লিফ গারফিল্ডের থেকে পাঁচ বছরের বড়। আসল কথাটা হলো জর্জ গেটলি হিথক্লিফের গল্প শুরু করেন ১৯৭৩ সালে। জর্জ গেটলি ছোটবেলা থেকেই দেখতেন তাঁর চারপাশে ছড়িয়ে আছে নানান কমিকসের বই আর চরিত্রেরা। আর থাকবে নাই বা কেনো তাঁর বাবা আর দাদা তো এই সব নিয়েই চর্চা করতেন। জর্জের দাদা জন একজন নাম করা কার্টুনিস্ট। দাদা এবং বাবার দেখাদেখি জর্জেরও ঝোঁক গেলো আঁকাআঁকির দিকে। ক্যুইনস ভিলেজ ছেড়ে চলে এলেন নিউইয়র্ক শহরে। ভর্তি হলেন বিখ্যাত কলেজ প্র্যাট ইন্সটিটিউটে। পাশ করার পর এক বিজ্ঞাপনের অফিসে কাজ করতে শুরু করেন। কিন্তু কিছুতেই জর্জের মন বসছিলো না। ইচ্ছে হতো দাদার মতো কাজ করতে। ১৯৫৭ সালে জর্জের প্রথম কমিকস বই প্রকাশিত হয়। কিন্তু তুমি মনে মনে হয়তো ভাবছো এই এতো সবের মধ্যে বেড়াল কই? আরে আছে, হিথক্লিফকে দেখতে প্রায় গারফিল্ডের মতো। কিন্তু দেখতে এক হলে হবে কি দুজনের মধ্যে রয়েছে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। আগেই বলেছি গারফিল্ডের মতো অলস বেড়াল আর দুটি নেই। আর হিথক্লিফ? সে হলো পাড়া বেড়ানো...মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি ভরা এক বেড়াল। পাড়ার কুকুররাও তার ভয়ে তটস্থ। মাছওয়ালা কিম্বা দুধওয়ালার দুরবস্থার কথা না বলাই ভালো।
হিথক্লিফ বাড়ির পোষা বেড়াল। সেই বাড়ির দিদিমা তাকে খুব ভালোবাসে। আর এই হিথক্লিফকে নিয়ে টেলিভিশন সিরিজ শুরু হয় ১৯৮০ সালে। মনে রাখার মতো কথা হলো যে কমিক স্ট্রিপে হিথক্লিফ কোনো কথা বলতো না। টেলিভিশনের পর্দায় সে কিন্তু কথা বললো। বিখ্যাত কমেডিয়ান অভিনেতা মেল ব্লাঁ [Mel Blanc] হিথক্লিফের কন্ঠে অভিনয় করতেন। ১৯৮৪ সালে আবার শুরু হয় হিথক্লিফের টেলিভিশন সিরিজ। এই সময় থেকে হিথক্লিফের গল্পের সাথে জুড়ে দেওয়া হয় ক্যাটিল্যাক ক্যাটস [Catillac Cats] নামের এক মজাদার সিরিজ। এই সিরিজে দেখতে পাওয়া যায় নানা রকমের বেড়ালদের যারা সাধারণত পাড়া চষে বেড়ায়। এরা সবাই থাকে হিথক্লিফের পাড়াতে। রিফ-র্যাফ হলো দলের নেতা বেড়াল। ক্লিও এক সুন্দরী বেড়াল আর রিফ-র্যাফএর বান্ধবী।
এতো গেলো কমিক স্ট্রিপের বেড়ালদের গল্প। তোমার বাড়িতে বেড়াল আছে নাকি? কিম্বা তোমার বন্ধুর বাড়িতে? নিশ্চই তাদের অনেক মজার গল্প আছে। সব লিখে পাঠাও ইচ্ছামতীকে...আর ও হ্যাঁ বলতে তো ভুলেই যাচ্ছি ছবি পাঠিও তার সঙ্গে। মনে থাকবে তো? আমার এক বন্ধুর বাড়িতে পনেরোটা বেড়াল আর দু-তিনটে কুকুর আছে। বুঝতেই পারছো কেমন সব রকমারি গল্প। সে সব না হয় অন্য কোনোদিন বলবো। ভালো থেকো তুমি।
লেখা ও ছবি
পূর্বাশা
নিউ আলিপুর, কলকাতা
- বিস্তারিত
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
রান্না ঘরে গোলমাল
চলো আবার যাই রান্না ঘরে। দেখি সুলুক সন্ধান করে কিছু পাওয়া যায় কিনা। তোমাকে তো যেতেই হচ্ছে। মা ডাকছেন দুধ খেতে।
আরে ওকি? মা 'গেলো গেলো' বলে চিতকার করছেন কেনো? চলতো দেখি। ও, দুধ উথলে পড়ে গেছে আর তাতে গ্যাসও নিভে গেছে।এর পর মা যেটা করলেন সেটা বড়ই গোলমেলে একটা কাজ। গরম দুধটা তাড়াতাড়িতে একটা কাচের গ্লাসে ঢেলে ফেললেন। ব্যস সঙ্গে সঙ্গে চড়াত করে একটা শব্দ,গ্লাস ফেটে চৌচির।
কি গেরোরে বাবা!!
তবে এর পর মা যেটা করলেন সেটা কিন্তু একদম সঠিক কাজ। অন্য একটা গ্লাসে দুধ ঢালার আগে একটা চামচ রাখলেন তাতে। এবার কিন্তু গরম দুধ ঢাললেও গ্লাসটা ফাটলো না।
তিন তিনটা কান্ড হল পর পর। কি মনে হচ্ছে, কি কারন থাকতে পারে এর পেছনে ? দেখা যাক এক এক করে।
দুধটা উথলে উঠে পড়ে গেল কেনো ?অথচ জল টগবগ করে ফোটালেও উথলে ওঠেনা বা পড়ে যায় না। দুধ আর জল ফোটে এক রকম করেই, তবে সামান্য একটু তফাত আছে এক জায়গায়। দুধে ফ্যাট বা 'স্নেহপদার্থ' আছে , জলে নেই। দুধ যখন গরম করা হয় তখন নিচের অংশ গরম হলেও ওপরের স্তরটা কিন্তু তুলনায় কিছুটা ঠান্ডা থাকে। আর যার জন্য ওপরের ফ্যাটটা জমে গিয়ে অপেক্ষাকৃত শক্ত একটা সর পড়ে। সরটা দুধটাকে সম্পূর্ণ ঢেকে ফেলে। তুমি কি সর খেতে ভালোবাসো? আমি তো খুব ভালোবাসি। কি বললে? একদম পছন্দ নয়? তাহলে আর কি করা যাবে...একবার খেয়ে দেখতে পারো চিনি দিয়ে।
যাকগে, যা বলছিলাম - নীচে দুধের বুদ বুদ গুলি ওপরের দিকে উঠে বেরিয়ে যেতে চায় কিন্তু সরের ঢাকনাতে আটকা পড়ে যায়। তখন সবগুলো বুদ বুদ মিলে একত্রে নিচ থেকে ঠেলা মারে। সরটা ঠেলা খেয়ে ক্রমশঃ ওপরের দিকে ওঠে আর দুধ শেষ পর্যন্ত পাত্রের কানা উপচে বাইরে পড়ে যায়।
একটা চামচ দিয়ে যদি ওপরের সরটা ভেঙে দেওয়া যায় তাহলে কিন্তু দুধটা পড়বে না। সেই জন্যই গরম করার সময় চামচ দিয়ে দুধকে অনবরত নাড়া হয়।
তা তো হলো । কিন্তু কাচের গ্লাসটা ফাটলো কেন বলতো ?
তোমরা কি জান যে সব জিনিষকেই গরম করলে লম্বায় চওড়ায় আয়তনে বেড়ে যায়? কাচের গ্লাসে গরম দুধ বা জল ঢাললে তার ভেতরের তলটা আয়তনে বেড়ে যায়। অথচ কাচ ভেদ করে তাপ গ্লাসের বাইরের স্তর পর্যন্ত দ্রুত পৌছতে পারে না। কাচ তাপের কুপরিবাহি কিনা । তাই বাইরের দিকটা বাড়তে পারে না। ভেতরটা বাড়লো অথচ বাইরেটা যেমনকার তেমনি রয়ে গেলো। সে জন্য দুই স্তরে কাচের প্রসারনের তফাতের কারনে চাপের তারতম্য হলো। আর সেটা হতেই কাচের গ্লাসে চড়াত করে চিড় ধরে গেলো !
মা একটা চামচ গ্লাসের মধ্যে দিয়ে যে কাজটা করলেন সেটা একেবারে সঠিক। এতে কি হল বলতো ? ধাতব চামচ তাপের সুপরিবাহী হওয়ায় গরম দুধের তাপটা তাড়াতাড়ি শুষে নিলো। আর তার কিছুটা বাইরে পাঠিয়ে দিলো। ফলে দুধের তাপ যতটা থাকলে কাচের গ্লাস ফেটে যেত ততটা আর থাকছে না। তাই গ্লাসটাও আর ফাটল না।
কুপরিবাহি কথাটার মানেটা কি জান ? একটু বুঝিয়ে বলি । যে সব পদার্থের মধ্য দিয়ে তাপ চলাচল করতে পারে না সেগুলি কুপরিবাহি। যেমন,কাচ কাঠ কাগজ - এই সব আর কি। আর যারা তাপকে বহন করে বা বয়ে এক জায়গা থেকে আর এক যায়গায় নিয়ে যেতে পারে তারা হল সুপরিবাহি। যেমন, কোন ধাতব পদার্থ। স্টিলের চামচ একটা ধাতব পদার্থ। এটা তাপকে সহজেই অন্যত্র চালান করে দিতে পারে।
চাপের তারতম্য কথাটার মানেটাও তো বলে দিলে ভালো হয়,তাই না ?কাচের গ্লাসের ভেতরটা বেড়ে গিয়ে বড় হতে চাইছে অথচ বাইরেটা যেমনকার তেমনি রইল। একটা টানা- পোড়েনের মতো ব্যাপার হল না ? এটাই চাপের তারতম্য।
মোটা কাচের গ্লাসগুলোই সাধারনত ফেটে যায়। কেননা গ্লাসের দেওয়াল পাতলা হলে কাচ কুপরিবাহী হলেও ভেতরের তাপ একটু তাড়াতাড়ি বাইরে যেতে পারে। ফলে প্রসারনটা মোটামুটি সমান হয়। গ্লাসও ফাটে না।
সন্তোষ কুমার রায়
রূপনারায়ণপুর, বর্ধমান
- বিস্তারিত
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত