আঁকিবুকি
মালিকা দত্ত, নয় বছর, সাউথ পয়েন্ট স্কুল, কলকাতা
সৃজনী ঘোষ, আট বছর, বি ডি মেমোরিয়াল স্কুল
- বিস্তারিত
- লিখেছেন সৃজন বিভাগ
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
নারায়ণ দি গ্রেট
ফ্যান্টম, ম্যানড্রেক, স্পাইডারম্যান এদের সবাইকে তো তুমি চেনো। আচ্ছা , একটা প্রশ্ন করি, তুমি কি এমন এক সুপার হিরোর নাম বলতে পারো যে বাংলায় কথা বলে, আর নানারকম বীরত্বের কান্ড ঘটায়...অন্যান্য গুরুগম্ভীর সুপার হিরোরা এই বাঙালি সুপার হিরোর কাছেও আসে না ! হ্যাঁ হ্যাঁ, তোমার অনুমান একেবারে ঠিক ! সে আর কেউ নয় - বাঁটুল দি গ্রেট!! এইয়া চওড়া ছাতি তার; গুলি-গোলা-বোমা-রকেট, কিছুই তাকে কাবু করতে পারে না। উলটে বাঁটুল ই চোর ডাকাত গুন্ডা বদ্মাশদের ধরে পুলিশকে সাহায্য করে। তার পরনে সব সময় একটা স্যান্ডো গেঞ্জি আর কালো হাফ-প্যান্ট। বাঁটুলের গল্প তো তুমি বইতেই পেয়ে যাবে, আর এখন তো অনলাইনেও পড়তে পারো। আমার কাছে শোনার থেকে বরং তুমি আরো নিজেই পড়ে ফেলো না...আরো বেশি মজা পাবে। বাঁটুল গি গ্রেট এর অনেকগুলি সংকলন আছে। যেকোন একটা হাতে নিয় দেখতে পাবে বড় বড় রংচঙে হরফে লেখা আছে বাঁটুল দি গ্রেট এর নাম, তার ঠিক তলায় আছে আরেকজনের নাম। তিনিই তো বাঁটুলের ছবি এঁকেছেন আর তাকে নিয়ে লিখেছেন নানা গল্প। আজ আমরা গল্প করবো তাঁকে নিয়ে - তিনি নারায়ণ দেবনাথ।
ছোটবেলা থেকেই ছোট্ট নারায়ণের ছিলো আঁকার ঝোঁক। পারিবারিক ব্যবসা ছিলো সোনার গয়নার দোকান। কিশোর নারায়ণ মাঝে মাঝেই সেখানে গিয়ে নানারকম নক্সা দেখতো। ভালো ছবি পেলেই সে দেখে দেখে এঁকে ফেলতো। তার এই আঁকার ঝোঁক বাড়ির লোকেদের চোখ এড়ায়নি। ষোলো-সতেরো বছর বয়সে প্রথম তাকে আঁকার স্কুলে ভর্তি করা হয়। দুই তিন বছর পর সেই স্কুলটি ইন্ডিয়ান আর্ট কলেজের সাথে এক হয়ে যায়। নারায়ণ ও মন দিয়ে আঁকতে থাকে ল্যান্ডস্কেপ আর ফিগারস।
কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাদ সাধলো। কলেজের শেষ পরীক্ষা আর দেওয়া হলো না। তাই সার্টিফিকেট ও পাওয়া গেলো না। এমনিতেই তখনকার দিনে সবার ধারণা ছিলো যে ছেলে আর্ট কলেজে পড়ে তার ভবিষ্যৎ অন্ধকার। কিন্তু একটুও দমে না গিয়ে এবার নারায়ণ কাজ খুঁজতে থাকলো । সেই সময় আঁকিয়েদের আর কে কাজ দেবে, কার্টুনও কেউ আঁকতো না। শৈল চক্রবর্তী, প্রতুল চন্দ্র লাহিড়ীদের মতো প্রতিভাবান কার্টুনিস্টদের তেমন ভাবে কেউ চিনতো না বা উৎসাহ দিতো না। যাইহোক, নারায়ণ দেবনাথের হাতেখড়ি হয় বিজ্ঞাপনের স্লাইড-শো দিয়ে। এগুলো দেখানো হতো সিনেমা হলে বিরতির সময়। এছাড়াও বাণাটে হতো নানারকম জিনিষের লেবেল। এই সব করতে করতেই সে পৌঁছে যায় দেব সাহিত্য কুটিরের অফিসে।
সেখানে তাকে ছোট খাটো ছবি আঁকার কাজ দেওয়া হতো। আর নারায়ণের ও তো বহুদিনের ইচ্ছা ছিলো দেব সাহিত্য কুটিরের সাথে কাজ করার। তখন বাংলা ভাষার নিজস্ব কমিক্স বলতে মোটে একটি- শেয়াল পন্ডিত। প্রতুল চন্দ্র লাহিড়ীর আঁকা এই কমিক স্ট্রীপটি বেরোতো যুগান্তর দৈনিক পত্রিকায়। বিদেশি কমিক্সের রমরমাই বেশি। কিন্তু শেয়াল পন্ডিতকে সবাই পছন্দ করতো। দেব সাহিত্য কুটির থেকে নারায়ণ দেবনাথকে বলা হলো যদি হাঁদা-ভোঁদা নাম দিয়ে কিছু করা যায় -শুরু হলো সাদা-কালোতে আঁকা দুটো ডানপিটে ছেলের গল্প। রোগা হাঁদা আর মোটাসোটা ভোঁদার নানারকমের দুষ্টুমির গল্প পড়ে ছোটরা তো আনন্দ পেলোই, বড়রাও হাসতে হাসতে মাত!
তাই সাদা-কালো কমিক্সের পর রংচঙে কমিক্সের ভাবনা-চিন্তা শুরু হয়ে গেলো। একদিন হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি ফেরার পথে তাঁর মাথায় এসে যায় অদ্ভূত এক নাম - বাঁটুল দি গ্রেট! আর নামটা মনে হওয়ার সাথে সাথেই বাঁটুলের ছবিও মনে মনে তৈরি করে ফেললেন। ব্যস, এসে গেলো এক বাঙালী সুপার হিরো। কিন্তু প্রথম দিকে তেমন সাড়া শব্দ পাওয়া গেলো না। এমন সময়ে শুরু হলো বাংলাদেশের যুদ্ধ। সবাই যুদ্ধের নানান আলোচনায় মত্ত। দেব সাহিত্য কুটিরের নির্দেশে, নারায়ণ তখন বাঁটুল কে হাজির করলেন কামান, গুলি-গোলা, প্লেন এইসব নিয়ে। যুদ্ধের এইসব সরঞ্জাম বাঁটুলের কিছুই করতে পারেনা। সে একাই একশো। আর তার সাথে ছিলো বাচ্চু আর বিচ্ছু নামের দুটো অসম্ভব দুরন্ত ছেলের ভয়ানক দুষ্টুমি। তারা বাঁটুলের সাথেই থাকে। এইবার কিন্তু সবার মধ্যে সারা ফেলে দিলো বাঁটুল।
এরপর নারায়ণ দেবনাথের যোগাযোগ হয় কিশোরভারতী পত্রিকার সাথে। ব্ল্যাক ডায়মন্ড ও ইন্দ্রজিৎ নামে এক বিখ্যাত রহস্য-রোমাঞ্চ সিরিজের ছবি আঁকেন তিনি। এরপর পত্রিকার সম্পাদক দীণেশ চন্দ্র রায় তাঁকে নতুন কমিক্ স্ট্রিপ তৈরি করার কথা বলেন। নারায়ণ তৈরি করলেন পটলচাঁদ দ্য ম্যাজিশিয়ান। সে ম্যাজিক কে কাজে লাগিয়ে চোর ডাকাত ধরে। কিন্তু দীনেশবাবু আসলে হাঁদা-ভোঁদার মতো কিছু একটা চাইছিলেন। নন্টে-ফন্টের উদ্ভব এইভাবেই। এরা দুই বন্ধু থাকে স্কুল বোর্ডিংএ। এদের হস্টেল জীবনের নানা ঘটনা নিয়ে চলতে থাকলো এই কমিক্সগুলি। এই গল্পগুলির আরেক প্রধান চরিত্র হলো কেল্টুদা, যে কিনা বোর্ডিংএ নন্টে-ফন্টের সঙ্গে থাকে। কেল্টুদা সবসময় নন্টে-ফন্টেকে বোকা বানানোর অথবা বিপদে ফেলার চেষ্টা করে, কিন্তু উলটে শেষ পর্যন্ত নিজেই ফাঁদে পড়ে। আর আছেন হস্টেলের সুপারিন্টেন্ডেণ্ট। বিশাল মোটা এই চরিত্রটির সঙ্গে হাঁদা-ভোঁদার পিসেমশাইএর চেহারার খুব মিল।
এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই, বাংলা কমিক্সের নাম বলতে গেলে প্রথমেই নারায়ণ দেবনাথের কথা বলতে হবে। তাঁর মতে, কমিক স্ট্রিপ বা কার্টুন তৈরি করতে গেলে, আঁকা এবং লেখার ক্ষমতা ছাড়াও দরকার উপস্থিত বুদ্ধির আর সঠিক কৌতুকবোধের। আজ তাঁর বয়স হয়েছে, কিন্তু কাজ করা থামেনি। তাই বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা, নন্টে-ফন্টে দের নতুন নতুন কান্ড-কারখানার ছক তৈরিতে তিনি আজও সমান ব্যস্ত। তাই তো তিনি নারায়ণ দ্য গ্রেট!!
লেখাঃ
পূর্বাশা
নিউ আলিপুর, কলকাতা
পূর্বাশা
নিউ আলিপুর, কলকাতা
ছবিঃ
- বিস্তারিত
- লিখেছেন পূর্বাশা
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
হাসি কান্নার জাদুকর
পর্ব পাঁচ
সিনেমা গ্রিফিথের পরে দেখতে দেখতে বড় হয়ে উঠলো। আমেরিকার হাটে-বাজারে লোকালয়ে তার দাপট দেখা দিলো। আর সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলো সিনেমা তৈরির ব্যাপারটাকে একটু একটু করে একটা নিয়মের মধ্যে এনে ফেলা। এর জন্য তৈরি হয়েছিলো স্টুডিও ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় কাজকর্ম হতো প্রায় অফিসের মতো। প্রতিটি স্টুডিও তে থাকতো মাইনে করা অভিনেতা-অভিনেত্রি, পরিচালক এবং অন্যান্য কলাকুশলী। সবাই নিয়ম করে সকাল থেকে সন্ধ্যা স্টুডিও তে কাজ করতো।
যাঁরা এই কাজটা করছিলেন তাঁরা একই সঙ্গে বুঝতে পারছিলেন যে হাসি ঠাট্টা রঙ্গতামাশা মানুষের বেঁচে থাকার, বিশেষ করে তলার দিকে মানুষের জীবনধারার রসদ। হাসি আর মজা দিয়েই মানুষ নিজের জীবনের সব দুঃখ ভুলে থাকে। তাই আমরা ক্রমশঃ দেখতে পেলাম যে কারখানার মতো কতগুলি নিয়মকানুনের মধ্যে থেকেই নির্বাক যুগে গড়ে উঠলো নির্বাক কৌতুক বা কমেডি ছবির (silent comedy) একটি ধারা।
এই ধারার শুরু হয়েছিলো ম্যাক সেনেট নামের এক ছবি নির্মাতার হাত ধরে।সেনেটের ছবিগুলি ছিলো এক রিল বা দুই রিলের কমেডি। এগুলিকে বলা হয় স্ল্যাপস্টিক কমেডি। এই কমেডিতে গল্প খুব একটা জরুরি ছিলো না। এই ছবিগুলি তৈরি হতো খানিক সার্কাস, খানিক ভানুমতীর খেলা, খানিক মূকাভিনয় আর একটু ভাঁড়ামি নিয়ে। এইসব মিলে মিশে সেযুগের মার্কিন দেশের খানিকটা এলোমেলো চেহারা চোখে এনে দিতো হাসির ফোয়ারা। এই ম্যাক সেনেট ই প্রযোজনা করেছিলেন চ্যাপলিনের প্রথম ছবি। শুধু তাই নয়, চ্যাপলিন ছাড়াও বাস্টার কীটন, হ্যারি ল্যাংডন - এইসব বিখ্যাত কৌতুক অভিনেতাদের জন্য তিনিই খুলে দিয়েছিলেন সাফল্যের দরজা।
ম্যাক সেনেট
নির্বাক মার্কিন যুগের সবচেয়ে বড় প্রতিভা হলেন চার্লি চ্যাপলিন, সেই ছোট্ট ভাঁড় যিনি হাসি দিয়ে সসাগরা পৃথিবীকে শাসণ করেন। কি করেছিলেন চ্যাপলিন? - দ্য কিড, গোল্ড রাশ, মডার্ন টাইমস, লাইমলাইট বা দ্য গ্রেট ডিক্টেটর - সব ছবিতেই তিনি আমাদের দেখিয়েছিলেন সাধারণ মানুষের ইচ্ছাপূরণের স্বপ্ন, অন্ধকার রাস্তার কোন থেকে উঠে এসে রাজপুত্তুর হয়ে ওঠার গল্প। তাঁর বিখ্যাত 'ভবঘুরে' বা Little Tramp সাজে চ্যাপলিন ছিলেন পৃথিবীর অগনিত দুর্বল, গরিব, নিপীড়িত মানুষের প্রতিনিধি।
চার্লি চ্যাপলিন
তাঁর 'ভবঘুরে' সাজকে ভালোবেসে ফেলেছিলো সবাই। ঢোলা পাৎলুন, চাপা কোট, দু পায়ে দুই মাপের জুতো, মাথায় ডার্বি টুপি, হাতে বেতের ছড়ি আর সেই বিখ্যাত টুথব্রাশ গোঁফ নিয়ে সেই ভবঘুরে হারিয়ে দিতে পারতো সমস্ত শাসকদের -তা সে পুলিশই হোক, বড়লোকই হোক, বা হোক রাষ্ট্রনায়ক। সত্যি বলতে কি, উপন্যাসে চার্লস ডিকেন্স যে কাজটা করেছেন, সিনেমায় চার্লি চ্যাপলিন সেই কাজটাই করেন।
দ্য কিড ছবিতে চ্যাপলিন ও শিশুশিল্পী
সে যুগের আমেরিকায় টাকার ঝনৎকারের মধ্যে যে কান্না লুকিয়ে ছিলো, আলোর পেছনে যে অন্ধকার, সেই কান্না, সেই অন্ধকারের গল্প বলার সময় চ্যাপলিন কিন্তু বড় বড় কথা বলেন না, বরং হাসেন এবং হাসান। এবং হাসতে হাসতেই কঠোর সমালোচনা করেন সমাজের অন্যায় ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। যেমন দ্য গ্রেট ডিক্টেটর ছবিতে তিনি বলেন - "যদি একটি মানুষকে মারো, তবে তুমি খুনি। যদি লক্ষ লক্ষ মানুষকে মারো তবে তুমি বীর। সংখ্যাই পবিত্র করে।" এই কথা শোনার পর এই যুদ্ধ আর রক্তে ভরা পৃথিবীতে আমরা সবাই সিনেমাকে অন্য ভাবে দেখি।
অবশ্য চ্যাপলিন একলা ছিলেন না, তাঁর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পথ হেঁটেছেন বাস্টার কীটন - সেযুগের আরেকজন প্রতিভাবান অভিনেতা এবং চলচ্চিত্রকার। তিনি আমাদের দেখিয়েছিলেন কত ভালো করে ইতিহাসকে দেখানো যায়, শরীরের ভাষা দিয়ে কি করে কথা বলা যায়। তাঁর 'আওয়ার হসপিটালিটি' এবং 'দ্য জেনরল' খুব লঘুস্বরে মার্কিন ইতিহাসের হিংসা ও রক্তপাতের দিকে মন্তব্য করে। কীটনের ছবিতেও হাসির পেছনে লুকিয়ে থাকে চাপা হাহাকার।
বাস্টার কীটন
এছাড়াও যদি আমরা আর কারোর নাম করি তাহলে হ্যারল্ড লয়েড এর কথা বলতে হবে, যিনি সিনেমায় নিজের দৈহিক বিপদের সম্ভাবনা দেখিয়ে হলের মধ্যে হাসির বন্যা বইয়ে দিতে পারতেন। এছাড়া ছিলেন ফ্যাটি আরবাকল্ , যিনি চ্যাপলিন, কীটন প্রমুখের সমসাময়িক ছিলেন।
হ্যারল্ড লয়েড
ফ্যাটি আরবাকল্
আর ছিলেন মার্ক্স ব্রাদার্স -চিকো, হারপো আর গ্রুচো - এই তিন ভাইয়ের কৌতুক ছবিগুলিকে প্রথম একশোটা নির্বাক কমেডি ছবির মধ্যে গন্য করা হয়।
মার্ক্স ব্রাদার্স
তবে সব ছোটরাই বোধ হয় সব থেকে খুশি হবে, যদি লরেল আর হার্ডির কথা বলা হয়। লরেল ও চ্যাপলিনের মতোই ভ্রাম্যমাণ নাটকের দলের সঙ্গে আমেরিকায় এসেছিলেন; আর হার্ডি ছিলেন জর্জিয়ার লোক। পরে তাঁরা জুটি বাঁধেন। দুজনে মিলে একসঙ্গে ১০৬ টি ছবিতে কাজ করেন। রোগা লরেল আর মোটা হার্ডি হয়ে ওঠেন এক জনপ্রিয় জুটি। বলা যেতে পারে, লরেল-হার্ডি হয়ে ওঠেন চলচ্চিত্রের হর্ষবর্ধন-গোবর্ধন।
লরেল আর হার্ডি
সিনেমাকে যদি সাধারণ মানুষের শিল্প বলি, যদি বলি সিনেমা সমাজের আয়না, তাহলে আমেরিকান নির্বাক কমেডি যুগের গুরুত্ব এই যে এই যুগে হাসি, ঠাট্টা,রঙ্গ, কৌতুকের মধ্যে দিয়ে সিনেমা সত্যি করে হয়ে উঠলো সাধারণ মাণুষের জীবনযুদ্ধের কথা বলার মাধ্যম। আমাদের পৃথিবীতে ভালোভাবে বেঁচে থাকার অধিকার কতটা জরুরি, হোঁচট খেলে কতটা ব্যথা লাগে, কেমন করে মুছিয়ে দিতে হয় অসহায় মানুষের চোখের জল, এ কি আমরা চার্লি চ্যাপলিনের ছবি না দেখলে জানতে পারতাম?
- বিস্তারিত
হীরের আংটি
মহালয়ার দিন ভোরবেলা, যখন আকাশবানীর "মহিষাসুরমর্দিনী" প্রায় শেষ হওয়ার মুখে, তখন মায়ের ডাকে বিছানা ছেড়ে উঠতে বাধ্য হল হাবুল। এই ক'টা দিন হাবুলের খুব মজা। বাড়িতে দুর্গাপুজো হবে, নাটমন্দিরে ঠাকুর গড়া হচ্ছে।
ঠাকুর গড়া হচ্ছে
বাবা আর কাকু সক্কালবেলায় বেরিয়ে গেলেন ঠাকুরের সাজ-সজ্জা কিনতে। ঢাকিরাও এসে গেলো ঢ্যাম কুর কুর বাজনা বাজাতে বাজাতে। হাবুলের অনেক কাজ- দাদু দায়িত্ব দিয়েছেন নাটমন্দির সাজাতে। ওদিকে আবার সবাইকে অবাক করে দিয়ে সপ্তমীর বদলে মহালয়ার সকালেই আমেরিকা থেকে হাজির মেজোকাকু, কাকী আর তিন্নি। এইরকম জমজমাট অবস্থার মধ্যে বাড়িতে এসে উপস্থিত হল এক নতুন অতিথি। সুন্দর, হাসিখুশি, সুবেশ এই মানুষটি, যার নাম কিনা গন্ধর্বকুমার, যে কিনা কোন এক দূর দেশের রাজপুত্র, তাকে বেশ পছন্দ হয়ে গেলো হাবুলের। হবে না? কি দারুণ ঢাক বাজাতে পারে, কি অনায়াসে সব রঙিন কাগজ কেটে এক মুহূর্তে হাবুলকে নাটমন্দির সাজানোর জন্য পাখি, রথ বানিয়ে দিলো! আবার ঘোড়ায়ও চড়তে পারে, এমনকি ম্যাজিক ও জানে! কিছুক্ষণের মধ্যেই তো গন্ধর্বকুমার হয়ে গেলো হাবুলের গেনুদা।
গেনুদা আর হাবুল
তিন্নি আর হাবুল
এদিকে গন্ধর্বকুমারের আসার খবর পেয়েই দাদু খুব গম্ভীর হয়ে গিয়ে তাকে নিয়ে ঘরের ভেতর খিল দিলেন। কি কথাবার্তা হলো কে জানে! আর ওদিকে আবার ষষ্ঠী চোর আর গুপী স্যাকরা দুজনে মিলে মতলব আঁটছে গন্ধর্বকুমারের হাতের হীরের আঙটিটাকে হাতাবার; ষষ্ঠীর অনেকদিনের শখ একটা ডাকাতের দল খুলবে, ওই আঙটি একবার হাতাতে পারলেই কেল্লা ফতে!
গুপী স্যাকরা আর ষষ্ঠী চোর
ডাকাত দল খোলার ফর্দ
সন্ধ্যাবেলা বেড়িয়ে ফিরে এসে হাবুল আর তিন্নি দেখল নাটমন্দিরে আলো নেভানো। দাদু পুজো বন্ধ করে দিতে বলেছেন!কিন্তু কেন? গন্ধর্বকুমার কে? বাড়ির সবাই এতো গম্ভীর কেনো? রাতের অন্ধকারে দাদুর সঙ্গে কে দেখা করতে এলো?
দাদু আর পাঁচুদা
গল্পের শেষটা জানতে হলে দেখতে হবে চিলড্রেন্স ফিল্ম সোসাইটির প্রযোজনায় শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এর লেখা রহস্যের জমজমাট গল্প নিয়ে ১৯৯২ সালে তৈরি ঋতুপর্ণ ঘোষের ছবি "হীরের আঙটি"। এই ছবির পটভূমিকায় রয়েছে দুর্গাপুজো - বর্ষা শেষের নীল আকাশ, কচি ধানে ভরা সবুজ মাঠ, শাপলা ভরা বিল, নাটমন্দিরে মাটির মূর্তির গায়ে তুলির টান, ঢাকের বাদ্যি... আর ছবির শুরুতে "মহিষাসুরমর্দিনী"র মনভোলানো গানের সুর। সাথে অনবদ্য অভিনয় বসন্ত চৌধুরি, সুমন্ত মুখার্জী, সুনীল মুখার্জী ,জ্ঞ্যানেশ মুখার্জী, দুলাল লাহিড়ী আর অয়ন ব্যানার্জী সহ অন্যান্য আরো শিল্পীদের। আর সন্দীপন মজুমদার (হাবুল), অঞ্চিতা দত্ত (তিন্নি) আর শুভ্রদীপ দে (ঢাকির ছেলে) তো দারুণ অভিনয় করেইছে। পুজোর ছুটির মধ্যে একদিন সময় করে না হয় দেখেই ফেলো এই ছবিটা।
মহাশ্বেতা রায়
পাটুলী, কলকাতা
- বিস্তারিত
কলাবতী রাজকন্যা
সোনার খাটে গা,রূপার খাটে পা রাখিয়া রাজপুরীর মধ্যে, পাঁচ রাণীতে বসিয়া সিঁথিপাটি করিতেছিলেন। এক দাসী আসিয়া খবর দিল, নদীর ঘাটে যে , শুকপঙ্খী নৌকা আসিয়াছে, তাহার রূপার বৈঠা, হীরার হা'ল। নায়ের মধ্যে মেঘ-বরণ চুল কুঁচ-বরণ কন্যা বসিয়া সোনার শুকের সহিত কথা কহিতেছে।
অমনি নদীর ঘাটে পাহারা বসিল; রাণীরা উঠেন-কি-পড়েন, কে আগে কে পাছে; শুকপঙ্খী নায়ে কুঁচ-বরণ কন্যা দেখিতে চলিলেন।
অমনি নদীর ঘাটে পাহারা বসিল; রাণীরা উঠেন-কি-পড়েন, কে আগে কে পাছে; শুকপঙ্খী নায়ে কুঁচ-বরণ কন্যা দেখিতে চলিলেন।
তখন শুকপঙ্খী নায়ে পাল উড়িয়াছে; শুকপঙ্খী তরতর করিয়া ছুটিয়াছে।
রাণীরা বলিলেন-
"কুঁচ - বরণ কন্যা মেঘ-বরণ চুল।
নিয়া যাও কন্যা মোতির ফুল।"
নৌকা হইতে কুঁচ - বরণ কন্যা বলিলেন,-
"মোতির ফুল মোতির ফুল সে বড় দূর,
তোমার পুত্র পাঠাইও কলাবতীর পুর।
হাটের সওদা ঢোল -ডগরে, গাছের পাতে ফল।
তিন বুড়ির রাজ্য ছেড়ে রাঙ্গা নদীর জল।"
বলিতে, বলিতে, শুকপঙ্খী নৌকা অনেক দূর চলিয়া গেল।
রাণীরা সকলে বলিলেন -
"কোন দেশের রাজকন্যা কোন দেশে ঘর?
সোনার চাঁদ ছেলে আমার তো-মার বর।"
"কুঁচ - বরণ কন্যা মেঘ-বরণ চুল।
নিয়া যাও কন্যা মোতির ফুল।"
নৌকা হইতে কুঁচ - বরণ কন্যা বলিলেন,-
"মোতির ফুল মোতির ফুল সে বড় দূর,
তোমার পুত্র পাঠাইও কলাবতীর পুর।
হাটের সওদা ঢোল -ডগরে, গাছের পাতে ফল।
তিন বুড়ির রাজ্য ছেড়ে রাঙ্গা নদীর জল।"
বলিতে, বলিতে, শুকপঙ্খী নৌকা অনেক দূর চলিয়া গেল।
রাণীরা সকলে বলিলেন -
"কোন দেশের রাজকন্যা কোন দেশে ঘর?
সোনার চাঁদ ছেলে আমার তো-মার বর।"
তখন শুকপঙ্খী আরও অনেক দূর চলিয়া গিয়াছে; কুঁচ-বরণ কন্যা উত্তর করিলেন,-
"কলাবতী রাজকন্যা মেঘ-বরণ কেশ,
তোমার পুত্র পাঠাইও কলাবতীর দেশ।
আনতে পারে মোতির ফুল ঢো-ল-ডগর,
সেই পুত্রের বাঁদী হয়ে আসব তোমার ঘর।"
তোমার পুত্র পাঠাইও কলাবতীর দেশ।
আনতে পারে মোতির ফুল ঢো-ল-ডগর,
সেই পুত্রের বাঁদী হয়ে আসব তোমার ঘর।"
শুকপঙ্খী আর দেখা গেল না। রাণীরা অমনি ছেলেদের কাছে খবর পাঠাইলেন। ছেলেরা পক্ষিরাজ ছুটাইয়া বাড়িতে আসিল।
রাজা সকল কথা শুনিয়া ময়ূরপঙ্খী সাজাইতে হুকুম দিলেন। হুকুম দিয়া, রাজা, রাজসভায় দরবার করিতে গেলেন।
রাজা সকল কথা শুনিয়া ময়ূরপঙ্খী সাজাইতে হুকুম দিলেন। হুকুম দিয়া, রাজা, রাজসভায় দরবার করিতে গেলেন।
---------------------------------------------------------------------------------------------
শেষ অবধি কোন রাজপুত্র পেলো কুঁচ-বরণ কন্যা কলাবতীকে? কে নিয়ে এলো মোতির ফুল আর ঢোল-ডগর? যদি জানতে চাও, তাহলে এই ছুটিতে পড়ে ফেলো দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদারের লেখা "ঠাকুরমার ঝুলি"।
ঠাকুরমার ঝুলি
দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার
মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স
৮০ টাকা
(মূল বানান অপরিবর্তিত)
দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার
মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স
৮০ টাকা
(মূল বানান অপরিবর্তিত)
- বিস্তারিত