স্টুডিও ব্যবস্থা
স্টুডিও নামটির মধ্যেই কেমন একটা মিশ্র পদ্ধতির ইঙ্গিত আছে। তার খানিকটা শিল্পকলার, খানিকটা শিল্পোদ্যোগের। চিত্রশিল্পীরা স্টুডিওতে ছবি আঁকতেন; কিন্তু সিনেমার স্টুডিও অনেকটা সাবান, কলম, জুতো তৈরি করার মত ব্র্যান্ডনেম তৈরি করতে শুরু করে। যেমন লোকে বলতো অমুক স্টুডিওর ছবি...সত্যজিত রায় নিজেও বলেছেন যে তাঁর কৈশোরে তিনি কলম্বিয়ার ছবির থেকে প্যারামাউন্ট এর ছবি কিভাবে আলাদা হয়, সেটা জানতে খুব কৌতুহলী ছিলেন।
পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই এইরকম স্টুডিও ব্যবস্থা ছিল- যেমন ইতালিতে চিনেচিত্তা, জার্মানীতে উফা, বা আমাদের কলকাতায় নিউ থিয়েটার্স।
জার্মানির উফার লোগো, ইতালির চিনেচিত্তার প্রবেশপথ
এই স্টুডিওগুলির মধ্যে সবচেয়ে বড় ছিল মেট্রো- গোল্ডউইন-মেয়ার, যাকে এম-জি-এম নামে আমরা সবাই চিনি। এদের এমনকি কলকাতা শহরেও নিজস্ব ছবিঘর ছিল -মেট্রো নামে। এখন তার হাতবদল হয়েছে কিন্তু এসপ্ল্যানেডের মেট্রোকে আমরা সবাই চিনি, তাই না? এরা এতদূর দক্ষ ছিল যে তিরিশ দশকের মাঝামাঝি একটা পূর্ন দৈর্ঘ্যের ছবি বানাতে এদের লাগত মাত্র এক সপ্তাহ। সে যুগের হলিউডের বড় বড় পরিচালক ও অভিনেতা -অভিনেত্রীরা সবাই ছিল এদের কাছে দায়বদ্ধ। এরাই বিখ্যাত 'হলিউড রীতি'র ধারক ও বাহক ছিলেন। যেমন High Key Lighting - যাতে দৃশ্যগুলি উজ্জ্বল হত যা দেখতে দর্শকদের ভালো লাগতো।
যদি এমজিএম হয় মার্কিন স্টুডিও ব্যবস্থার সবচেয়ে মার্কিনি ছাপ, তবে প্যারামাউন্ট স্টুডিও উল্টোদিক থেকে সবচেয়ে ইউরোপীয়। এখানে যাঁরা কাজ করতেন তাঁরা অনেকেই জার্মানি থেকে এসেছিলেন। ফলে তাঁদের ছবি অনেক অন্যরকম হত- তাতে অনেক সময়ে থাকতো অন্ধকার আর রহস্যের আভাস।
প্যারামাউন্ট বলতেই আমাদের প্রথমেই মনে পড়ে সিসিল বি ডিমিল এর জাঁকজমকপূর্ণ ছবিগুলি। তার সাথেই মনে পড়ে লুবিত্জ এর ছবিগুলির কথা।
এমজিএম এর ছবিগুলি যদি মধ্যবিত্ত সমাজের গল্প শোনাতো, প্যারামাউন্ট যদি হয় একটু অন্য রকম ভাবনা চিন্তা করা দর্শকদের জন্য, তাহলে ওয়ার্নার ব্রাদার্স ছিল মোটামুটিভাবে সমাজের খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য। সেইজন্য এদের ছবিগুলিতে এইসব সাধারন মানুষদের মধ্যে জনপ্রিয় গানবাজনা এবং মেলোড্রামা থাকতো।
আমরা কলম্বিয়া এবং টোয়েণ্টিয়েথ সেঞ্চুরি ফক্স এর নামও করতে পারি; দ্বিতীয় স্টুডিওর সবথেকে নামকরা পরিচালক ছিলেন জন ফোর্ড। তিনি তৈরি করতেন ওয়েস্টার্ন ছবি।
এই স্টুডিও সাম্রাজ্যগুলির মধ্যে সবথেকে ছোট ছিল আর কে ও নামে একটি প্রতিষ্ঠান।
আমেরিকার বিভিন্ন বড় -ছোট স্টুডিও গুলির লোগো
এইসব খুব বড় বড় স্টুডিওগুলির পাশাপাশি কাজ করতো অনেক ছোটখাটো স্টুডিও। যেমন ছিল ইউনাইটেড আর্টিস্টস্। এরাই প্রথম ড্রাকুলা, মাম্মি সিরিজ ইত্যাদি গা-ছমছমে রোমহর্ষক ছবিগুলি তৈরি করে। এছাড়া এই ইউনাইটেড আর্টিস্টস্ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে থেকেই ছবি তৈরি এবং প্রচার করেছিলেন চ্যাপলিন, গ্রিফিথ, মেরি পিকফোর্ড এবং ডগলাস ফেয়ারব্যাঙ্কস্ এর মত পরিচালক ও অভিনেতারা।
ওপরের সারি -আলফ্রেড হিচকক, জন ফোর্ড; নীচের সারি- মেরি পিকফোর্ড, সিসিল বি ডিমিল
নিউ থিয়েটার্স ও প্রভাত স্টুডিওর লোগো
নাম জানা তো অনেক হল।এবার বরং জানা যাক সিনেমার সংসারে এইসব স্টুডিওদের অবদান কি ছিল। প্রথম এবং প্রধান অবদান ছিল শৃঙ্খলাপরায়নতা। পরিচালক, অভিনেতা-অভিনেত্রী এবং কলাকুশলীরা, সবাই নিয়ম মেনে নিজের নিজের কাজ করতো। একটা নিয়ম মেনে পরিচালনা পদ্ধতি শুরু করার জন্যই ধীরে ধীরে হাওয়ার্ড হকস্, জন ফোর্ড , আলফ্রেড হিচকক এর মত পরিচালকরা তৈরি হন।
আমাদের দেশেও, স্টুডিও না থাকলে , সত্যজিত রায়ের আগের যুগের যারা বড় পরিচালক, যেমন দেবকীকুমার বসু, প্রমথেশ বড়ুয়া, বা বিমল রায় তৈরি হতেন না।
বাঁদিকে- দেবকীকুমার বসু; ডানদিকে প্রমথেশ বড়ুয়া ও বিমল রায়
সময়ের সাথে এই স্টুডিও ব্যবস্থা একদিন ভেঙ্গে গেল, কিন্তু সেই গল্প হবে পরের সঙ্খ্যায়।
সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়
অধ্যাপক, চলচ্চিত্রবিদ্যা বিভাগ,
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়
ছবি
উইকিপিডিয়া
মুভিওয়ালা
- বিস্তারিত
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
দুপায়ের ঘোড়া
আমি অন্তত দেখিনি।
চোখের সামনে একটা দুপায়ের ঘোড়া টাঙ্গা টেনে নিয়ে যাচ্ছে এমন ছবি আমাদের মনে হয় কারো সংগ্রহে নেই।পাড়া পড়শিদের সাথে কিম্বা বন্ধু মহলে তুমি যদি এইসব নিয়ে কথা বলো তাহলে বন্ধুরা ভাববে তুমি টাইমপাস করছো...ইয়ার্কির একটা জায়গা থাকে। কিন্তু আমি যদি তোমাকে নীচের ছবিটার দিকে তাকাতে বলি...একটু ভালো করে দেখোতো ছবিটা...
একটা ছেলের মুখে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে লাগাম। তার মুখ যন্ত্রনায়...কষ্টে...লাল হয়ে উঠেছে। ঠিক তার পরের ছবিটা দেখো...মন দিয়ে দেখো কিন্তু...
একপাল ঘোড়ার মধ্যে সে পিঠে একজন সওয়ারী নিয়ে দৌড়ে নেমেছে। একটা মানুষ আস্তে আস্তে ঘোড়ায় পরিণত হচ্ছে। জন্তুতে রূপান্তরিত হচ্ছে মানুষ।
যে ছবি গুলো দেখলাম সেগুলো একটা ফিল্মের। তার নাম 'Two-Legged Horse' বা 'দুপায়ের ঘোড়া' ।২০০৮ সালে এই ছবিটি তৈরি করেছেন ইরানের চিত্রপরিচালক সামীরা মাখমালবাফ। সামীরার নাম শুনেছ কি? সামীরা হলেন পৃথিবীর সবথেকে কমবয়সী চিত্রপরিচালকদের একজন।১৯৮০ সালে তাঁর জন্ম। তিনি খুব ছোটবেলা থেকে ফিল্ম নিয়ে পড়াশোনা করেন। আজ পর্যন্ত তিনি মোটে পাঁচটি ছবি ও তথচিত্র বানিয়েছেন - সেগুলি সবগুলিই কিন্তু নানাকরম আন্তর্জাতিক পুরষ্কারে সম্মানিত হয়েছে।
একদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর সামীরা তার বাবার কাছ থেকে একটা চিত্রনাট্য পান। বাবা বিখ্যাত পরিচালক মহসিন মাখমালবাফ সারা রাত ধরে এই চিত্রনাট্য লিখেছেন। সামীরা নিঃশ্বাস বন্ধ করে একবারে পড়ে ফেলেন লেখাটা। কিন্তু এটা লিখেছেন তাঁর বাবা? এত কষ্ট...এত যন্ত্রণা...এত দুঃখ এই ছোট্ট ছোট্ট ছেলেমেয়ে গুলোর।
মন দিলেন।নিরন্তর পরিশ্রমের পর আমরা তাঁর কাছ থেকে উপহার পেলাম 'টু লেগড হর্স'।
আফগানিস্তানের এক গন্ড গ্রাম। যেখানে সভ্যতার আঁচটুকু লাগেনি সেইরকম গ্রামে এই গল্পের সূত্রপাত। যুদ্ধ...দাঙ্গা...অভ্যন্তরীণ কলহে দীর্ণ একটা দেশের এক অসহায় অঞ্চলের ছোট্ট ছেলে মেয়েদের কথা আমাদের সামনে বলতে বসলেন সামীরা।কী দেখলো সামীরার ক্যামেরা? দেখলো পরিতক্ত্য বাঙ্কারের মধ্যে থাকে অগণিত বাচ্চা। যাদের মা বাবা কেউ নেই...যারা সবাই বিগত যুদ্ধে মারা গেছেন।যে সব বাচ্চারা রোজ দুবেলা দুমুঠো খেতে পায় না। তাদের সামনে এক অবস্থাপন্ন বৃদ্ধ আফগান এসে একটা প্রস্তাব রাখেন। একটা সুস্থ সবল ছেলে চাই। কাজ আছে। কাজ করতে পারলে দৈনিক এক ডলার। সবাই পরীক্ষার জন্য হাজির হয়। একটা ছেলেকে তার মধ্যে থেকে পছন্দ করেন বৃদ্ধ। যে তাঁর ছেলেকে পিঠে চাপিয়ে নিয়ে যাবে স্কুলে...বাজারে...খেলার মাঠে। সর্বক্ষণের সঙ্গী হবে সে।কিন্তু যে ছেলেটাকে বাছা হয় সেও তো শারিরীক নানা অক্ষমতার শিকার। যে পিঠে নিলো আর যে পিঠে উঠলো তারা যেন একই মেরুর বাসিন্দা হয়ে দুজন কত দূরের। একজনের কেউ নেই আর এক জনের বাবা আছে...বোন আছে...অর্থ আছে কিন্তু তার পা দুটো নেই...মা নেই...এইসব হারিয়েছে সে যুদ্ধে।
তারা দুজনে কখোনো বন্ধু আবার কখোনো মনিব-ভৃত্য।
কিন্তু এই সম্পর্ক খুব একটা বেশি দিন মধুর থাকে না। মনিবের নানা রকম খেয়ালী উদ্ভট খেলায় শরিক হতে হয় দুপায়ের ঘোড়াটকে। মনিব শুধু নয় তার বন্ধুদেরও চড়াতে হয় পিঠে।সবাই তো সত্যিকারের ঘোড়ার পিঠে চড়ে...কিন্তু মানুষ ঘোড়া। চড়েছে কেউ? সে এবার ভাড়া খাটায় তার ঘোড়াকে। আর সেই ছেলেটা যার ছবি তুমি দেখেছো প্রথমে...লাগাম মুখে দিয়ে সে আস্তে আস্তে যন্ত্রণায়...ঘেন্নায়...কষ্টে... কুঁকড়ে যেতে থাকে। তার এই কষ্টের নীরব দর্শক থাকে এক ছোট্ট মেয়ে। যে গ্রামের রাস্তায় ভিক্ষে করে। যার কথা আমরা একটুও জানতে পারি না, যে কোনো কথা বলে না। শুধু হাত বাড়িয়ে থাকে ভিক্ষার। আর চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে ফোঁটা ফোঁটা কান্না।
যারা ইস্কুলে যায় আমরা তাদের কথা জানতে পারি। যাদের ছোট্টবেলাটা ধ্বংস করে দিয়েছে বড় বড় মানুষদের যুদ্ধ, যাদের বাবা-মা হারিয়ে গেছে, বাড়ি ঘর ভেঙ্গে গেছে, যারা স্কুলে যায় না, খাওয়ার জন্য যাদের ছোট্টবেলা থেকে কাজ করতে হয়, তাদের কথা আমরা কজন জানতে পারি বা মনে রাখি?
শেষ পর্যন্ত ছেলেটার চাকরী থাকে না। কোনো একদিন প্রবল এক শীতের সকালে পরিতক্ত্য বাঙ্কার থেকে বেরিয়ে সে দেখে আকাশ দিয়ে উড়ে যাচ্ছে পরিযায়ী পাখিরা।
তারা যাচ্ছে শীতের দেশ ছেড়ে উষ্ণতার দেশে।
মাখমালবাফ
- বিস্তারিত
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
কখন কি হয়
'এই লোককে নিয়ে এলি তুই বাসন মাজতে?'
ভুনি পিসি দুই কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে কড়া গলায় বলেন, 'বিশ্ব ভুবনে আর লোক খুঁজে পেলিনা খোকনা? এই পুঁয়ে-পাওয়া হাড়গিলে পিলেপেটা কোটর-চক্ষু চামচিকেটা, তোদের গুষ্টির বাসন মাজবে? বিদেয় কর, এখুনি বিদেয় কর।'
'খোকনা' মানে অবশ্য কোন শিশু নয়।
ভুনি পিসির ভাইপো হলেও, তিনি তাঁর নিজের ভাইপোদের 'জ্যাঠামশাই'।তাছাড়া তিনি তাঁর জামাইয়ের শ্বশুর, ছেলেমেয়েদের পূজনীয় পিতা এবং মস্ত বড় অফিসটার একেবারে হেড বড়োবাবু।যেখানে তাঁর নাম হচ্ছে পি. বি. চৌধুরী।
অর্থাৎ কিনা প্রভাতভূষণ চৌধুরী!
ভদ্দরলোকের বুদ্ধি -সুদ্ধি ভালোই ছিল, কিন্তু এবারে যে কি দুর্মতি ধরলো, পুজোর ছুটিতে গুষ্টিশুদ্ধ সকললে নিয়ে বেড়াটে এলেন জামতাড়ায়!
আর সক্কলের গার্জেন হিসেবে সঙ্গে নিয়ে এলেন ভুনিপিসিকে।
ভুনিপিসি ভুনিখিচুড়ি রাঁধেন বলেই যে তাঁর এই নামকরণ তা নয়, নামকরণের সময় তিনি বোধহয় খিচুড়ি-টিচুড়ি রাঁধতে তেমন শেখেনও নি, আসলে 'ভুবনমোহিনী'র অপভ্রংশ হচ্চে গিয়ে 'ভুনি'।
সে যাক্- প্রথমটা এসেই ভুনি পিসির ভুনি খিচুড়ি, আর বাড়িওয়ালার বাগানের মালির হাতের মুরগি, এই দুটোর যোগফলে বড়ো আনন্দেই কেটেছিল সবাইয়ের। মানে পি. বি. চৌধুরী বা প্রভাতভূষণের ছেলেমেয়ে, বৌ, শালী,জামাই, বেয়াই, ভাই, ভাই-বৌ, ভাইপো, ভাইঝি, ভাগ্নে, ভাগ্নী, ইত্যাদি প্রভৃতি সবাইয়ের।
কিন্তু মুশকিল হল- কলকাতা থেকে যে চাকর নিয়ে আসা হয়েছিল, সে হটাত একা রাতে উঠোনের নিমগাছে ভূত দেখে, সেই যে আঁ-আঁ-আঁ শব্দে হাঁ করে চেঁচাল, সে হাঁ বুজল একেবারে কলকাতায় গিয়ে। তারপর সেই জীবনরতনের দেখাদেখি বাড়ির ছোটো ছেলেরাও কিছুদিন 'ভূত' দেখতে শুরু করেছিল, কিন্তু ভুনি পিসি বকুনির চোটে তাদের ভূত ছাড়িয়ে ছাড়লেন।
ভুনি পিসি এই বৃহত সংসারের যাবতীয় ব্যাপারই ম্যানেজ করে ফেলেছেন, কিন্তু মুশকিল বাধল ওই চাকরের ব্যাপারটায়।
জামতাড়ায় যে বাসন মাজার লোকের এত অভাব, তা কে জানত?
সত্যিই কি নিমগাছে ভূত ছিল? আর নতুন কাজের লোক কি পাওয়া গেল? ভুনি পিসি কিভাবে এই সমস্যার মুশকিল আসান করলেন? যদি জানতে চাও, তাহলে পড়ে ফেল আশাপূর্না দেবীর গল্প সংকলন 'পঞ্চাশটি কিশোর গল্প'।
পঞ্চাশটি কিশোর গল্প
আশাপূর্ণা দেবী
নির্মল বুক এজেন্সি
মূল্য-আশি টাকা
- বিস্তারিত
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
আশাপূর্ণা দেবী
বা হিটুর দুঃখের গল্প, যেখানে বড়রা কিছুতেই তার মনের কথা বুঝতে পারে না, বড়রা দোষ করলেও বকুনি খেতে হয় ছোট্ট হিটুকেই...
কিম্বা গোবিন্দ আর ভুনিপিসির গল্প? সেই যে 'পুঁয়েখাওয়া হাড়গিলে পিলেপেটা' গোবিন্দ, যাকে কিনা দেখতে পেয়েই ভুনি পিসি দূর দূর করে তাড়িয়ে দিচ্ছিলেন ! কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই ভুনিপিসিই কিনা হয়ে গেলেন গোবিন্দর ঠাকুমা!!
কি? এখন কি মনে হচ্ছে আশাপূর্ণা দেবীর গল্পগুলি পড়তে হবে? এইরকম কয়েকশো মজার, হাসির, ভূতের, রহস্যের, রূপকথার, ছোটদের মনের কথার গল্প তিনি লিখেছেন ছোটদের জন্য। ছোটদের পাশাপাশি তিনি বড়দের জন্যও সমান ভাবে লিখে গেছেন। কিন্তু তিনি নিজেই বলেছিলেন যে তিনি ছোটদের জন্য লিখতেই বেশি ভালোবাসেন। আর সেই লেখাগুলি যখন সুন্দর মলাটে বাঁধানো বই হয়ে ছেপে বেরোয়, তখন তিনি আরো খুশি হন।
এই ফাঁকে আশাপূর্ণা দেবীর ছোটবেলা সম্পর্কে একটা ছোট্ট কথা জানিয়ে রাখি। আশাপূর্ণার জন্ম হয়েছিল উত্তর কলকাতার এক যৌথ পরিবারে। সেই পরিবারে মেয়েদের স্কুলে যাওয়া বা পড়াশোনার পাট ছিল না। ছোট্ট আশাপূর্ণা কিভাবে অক্ষর চিনেছিলেন জানো? তাঁর দাদাদের এবং ভাইদের পড়া শুনে শুনে। কিন্তু তাঁর মায়ের খুব বই পড়ার উতসাহ ছিল। তাঁর উতসাহেই আশাপূর্ণা এবং তাঁর বোনেরা বই পড়তে শুরু করেন। আর খুব অল্প বয়স থেকেই আশাপূর্ণা লিখতেও শুরু করেন । বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদানের জন্য তিনি বহু পুরষ্কার এবং সম্মান পেয়েছেন। তার মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ন হল জ্ঞ্যানপীঠ পুরষ্কার।
প্রায় সত্তর বছর ধরে ছোট এবং বড়দের জন্য নিয়মিত লিখে গেছেন আশাপূর্ণা দেবী। তাঁর গল্প-উপন্যাস পড়ে আনন্দ পেয়েছে পরের পর প্রজন্ম। এখন তুমি আশাপূর্ণা দেবীর লেখা ছোটদের জন্য গল্পগুলিকে পড়, আর বড় হলে পড়ে নিও তাঁর লেখা বড়দের গল্পগুলিও।
মহাশ্বেতা রায়
পাটুলি, কলকাতা
- বিস্তারিত
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
আমার ছোট্টবেলাঃপর্ব ৬
আমার ছোট বেলার কথা শুরু করি এবার কি বল ? শরতে যেমন দুর্গা পূজো , পরের ঋতু হেমন্তে তেমনি রয়েছে কালীপূজো । এ বছর অবশ্য শরতেই হয়ে গেল পঞ্জিকার নির্দেশে ।
আর কায়দা করে ধোঁয়া ছাড়ছি। কারও বারণ করার আর আমার তা শোনবার মত
কিছু নেই। পুজো কিনা!
চমতকার এক উপায় বের করেছিলেন । কবিতার প্রতিটি লাইনের প্রতিটি শব্দের প্রথম বা প্রথম দুটো অক্ষর পর পর লিখে নিয়ে শুধু সেটা মুখস্থ করতেন। সেটা জানা
থাকলেই সমস্ত লাইনটা লিখে ফেলা যেত।
' পদে পদে ছোট ছোট নিষেধের ডোরে
বেঁধে বেঁধে রেখ নাকো ভাল ছেলে করে।'
ছোটমামা মুখস্থ করতেন এইভাবে--
' প প ছো ছো নিষে ডো
বে বে রে না ভা ছে কো ।'
কেমন বল, মজার না ?
রঙে । কেমন করে বলতে পারবে ?
বোঁটাগুলো গরম জলে ফোটালে জলটা রঙিন হয়ে যেত। তাতে নতুন কাপড় ডুবিয়ে রোদে শুকিয়ে নিলেই হয়ে যেত বাসন্তী রঙের ধুতি। পুজোর দিনে সেই কাপড় পরে যেতাম অঞ্জলি দিতে। তুমি এই ভাবে অঞ্জলি দিয়েছ কখনো ? রঙিন কাপড় পাবে কোথায় তাই ভাবছ ? মা'কে বলেই দেখ না একবার ।
মনে পড়লে পরে জানানো যাবে, না কি বল !
*সংযোজনঃ এখন প্রায় সব চাবির মুখই নিরেট হয় । কিন্তু আগে অনেক চাবির মুখ ফাঁপা হত। চাবির পেছনে যে রিং থাকে অর্থাৎ যেখানে চেপে ধরে চাবি ঘোরান হয় সেখানে লম্বা সরু একটা কঞ্চি ঢুকিয়ে শক্ত করে বাধাঁ হত। এর নাম কামানের হাতল । এবার চাবির ফাঁপা মুখে দেশলাই কাঠির মাথা থেকে বারুদ ছাড়িয়ে নিয়ে, ঐ বারুদটা ভরে দেওয়া হত। এর
পর চাবির মুখের মাপে একটা পেরেক নিয়ে বারুদের ওপর চেপে বসিয়ে হাতল ধরে দেওয়ালে জোরে ঠুকে দিলেই ফটাস করে ফাটত চাবি কামান। পেরেকটা যাতে পড়ে না যায় সেজন্য সুতো দিয়ে সেটা হাতলে বাঁধা থাকত।
- বিস্তারিত
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত