ট্যাঙ্গেল্ড্
অনেক অনেক দিন আগে, এক ফোঁটা সূর্যের আলো এসে পড়েছিল পৃথিবীর বুকে। সেই আলো থেকে জন্মালো এক জাদু গাছ। সেই গাছে ফুটল এক সূর্যের মত সোনালি ফুল। সেই ফুলের ছিল এক আশ্চর্য ক্ষমতা। সময়ের কাঁটাকে ঘুরিয়ে দিতে পারত সেই ফুল - যে কোন পুরানো জিনিষ তার ছোঁয়ায় হয়ে উঠত নতুন, যে কোন ক্ষত সেরে যেতে পারত এক নিমেষে, মৃত্যুর মুখ থেকে প্রাণ ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পারার ক্ষমতা ছিল সেই ফুলের।
কিন্তু, সেই ফুলটাকে আর কেউ খুঁজে পাওয়ার আগেই, সেটা মাদার গথেল নামে এক দুষ্টু বুড়ির চোখে পড়ে গেল । বুড়ি সেই গাছটাকে একটা চুপড়ি দিয়ে চাপা দিয়ে রাখল। তার চামড়া যখন কুঁচকে বিবর্ন হয়ে যেত, চোখের দৃষ্টি হয়ে যেত ধূসর, কালো চুল হয়ে যেত শনের নুড়ির মত, সে তখন চুপিচুপি সেই ফুলের কাছে এসে গাইত এক ছোট্ট গান। গান শুনে ফুলের থেকে বেরোত সূর্যকিরণের মত জ্যোতি, সেই জ্যোতির স্পর্শে গথেলের কুঁচকানো চামড়া হয়ে যেত মসৃণ, চোখের দৃষ্টি হত উজ্জ্বল, সাদা চুল হয়ে যেত কালো। এক ধাক্কায় গথেলের বয়স কমে অর্ধেক হয়ে যেত। এইভাবে বছরের পর বছর ধরে, মাদার গথেল নিজের বয়স কমিয়ে রেখে রেখে বেঁচে থাকার আনন্দ উপভোগ করছিল।
সেই দেশে রাজত্ব করতেন এক খুব ভাল রাজা আর তাঁর ভালমানুষ রানী। রানী যখন সন্তানসম্ভবা, তখন তিনি খুব অসুস্থ হয়ে পড়লেন। বাঁচার আর কোন আশা রইল না। সৈন্য সামন্তরা ছড়িয়ে পড়ল দেশের আনাচে কানাচে, খুঁজে বার করতে চাইল রানীকে সুস্থ করে তোলার কোন না কোন উপায়। আর তারা একদিন খুঁজে পেল সেই সোনালি ফুল। সেই গাছ তুলে নিয়ে এল তারা। আর সেই ফুল ভেজানো জল খেয়ে সুস্থ হলে রানী। জন্ম দিলেন সূর্যের সোনালি কিরণের মত সোনালি চুলের এক ফুটফুটে রাজকন্যার। রাজা আর রানী নতুন রাজকন্যার জন্মদিন উপলক্ষ্যে ওড়ালেন রঙিন ফানুস। সারা দেশ আনন্দে মেতে উঠল।
কিন্তু এই আনন্দ বেশিদিন সইল না। এক রাতে, আবার বয়স বেড়ে যাওয়া মাদার গথেল রাজপ্রাসাদে ঢুকল। সে রাজকন্যার সামনে গিয়ে ফিস ফিস করে গাইল সেই গান - আর রাজকন্যার চুল থেকে ঠিকরে পড়ল সোনালি দ্যুতি। সেই দেখে গথেল রাজকন্যার চুল একটুখানি কেটে নিল। কিন্তু যাঃ - কাটা মাত্র সেই চুল রঙ পালটে হয়ে গেল খয়েরি ! তার আর কোন যাদুশক্তি রইল না। মাদার গথেল বুঝতে পারল, এক টুকরো চুলের গোছা দিয়ে তার কাজ হবে না। তাই সে রাজকন্যাকে চুরি করে নিয়ে পালিয়ে গেল। রাজ্যের থেকে অনেক দূরে, গভীর জঙ্গলের মধ্যে, একটা অনেক উঁচু গম্বুজের মধ্যে সে তাকে লুকিয়ে রাখল। সে লুকানো গম্বুজের ভেতরে থেকে বড় হতে থাকল রাজকন্যা -নাম তার রাপুনজেল্ । তার একমাত্র সঙ্গী পাস্কাল নামের এক গিরগিটি।
আরে, এত অবধি পড়ে তুমি নিশ্চয় বলবে - এত তো রাপুনজেল্ এর গল্প, এটাতো আমি জানি। হ্যাঁ , এটা আমাদের সেই খুব চেনা গল্পটাই, কিন্তু একটু অন্য রকম ভাবে বলা হয়েছে। পুরোনো রাপুনজেলের গল্পে এক রাজপুত্র আসে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার জন্য; কিন্তু এই গল্পে - রাপুনজেলের দেখা হয় এক দুঃসাহসী চোরের সাথে।
সেই চোরের সাহায্য নিয়ে রাপুনজেল গম্বুজ থেকে বেরিয়ে দেখতে যায় প্রতিবছর তার জন্মদিনে দূর আকাশে ভেসে ওঠা রঙিন ফানুসগুলিকে। পথে আসে নানারকমের বিপদ।
কিন্ত চোর ইউজিন আর রাজপ্রাসাদের ঘোড়া ম্যাক্সিমাসের সাহায্যে রাপুনজেল সব বিপদ কাটিয়ে বেরিয়ে আসে। আর সে খুঁজে পায় তার আসল বাবা মাকেও।
এই ছবির নাম 'ট্যাঙ্গেল্ড্' । রাপুনজেলের এই গল্পটিকে নতুন ভাবে আমাদের কাছে নিয়ে এসেছেন ওয়ল্ট ডিজনি পিকচার্স। ওয়ল্ট ডিজনি অ্যানিমেশন স্টুডিওর এটা পঞ্চাশতম অ্যানিমেটেড ছবি।
তাহলে আর কি? সময় নষ্ট না করে যোগাড় করে ফেল এই ছবির একটা ডিভিডি। আর গরমের ছুটিতে দুপুরবেলায় রাপুনজেল আর তার সোনালি চুলের সাথে তুমিও হারিয়ে যাও রূপকথার দুনিয়ায়।
মহাশ্বেতা রায়
কলকাতা
- বিস্তারিত
- লিখেছেন মহাশ্বেতা রায়
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
সিনেমা জগতের নতুন অভিজ্ঞতা
(গত সংখ্যার পর)
বাংলা ছবির দুনিয়ায় 'উদয়ের পথে' এক অত্যন্ত দামি মলাটবদল এই কারণে যে, এই ছবিতে প্রথম বড়লোক মিল/ কারখানা মালিকের মেয়ের সঙ্গে অতি সাধারণ শ্রমিক নেতার ভালবাসার গল্প দেখান হল। এই প্রথম, আমরা পর্দায় অন্তত ধনী-গরিবের পার্থক্য তুলে দিলাম। আজ পর্যন্ত যেকোন জনিপ্রয় ছবিতে এই একই কথা বলা হয় - যে ভালবাসায় টাকার দাম থাকেনা।
উদয়ের পথে
এই ধারণার মডেল ছবি এই 'উদয়ের পথে'। তাছাড়া ছবিতে এসে গেছিল বাইরের শ্রমিক অশান্তি; ছবিতে দেখা গেল ট্রেড ইউনিয়নের অফিস ঘরে কার্ল মার্ক্স এ ছবি ঝুলছে। চলচ্চিত্র আর শুধু স্বপ্নের উপাখ্যান রইল না, তার মধ্যে অল্প অল্প করে দেখা দিতে লাগল বাস্তব।
এর পরে আমাদের নাম করতে হবে বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী উদয়শঙ্কর পরিচালিত 'কল্পনা' ছবিটির। যদিও ছবিটির ভাষা হিন্দি, কিন্তু ছবিটি কলকাতায় তৈরি হয়েছিল আর উদয় শঙ্করের ম্যাজিক ছোঁয়ায় নাচ সেখানে নিজেই গল্প বলতে পেরেছে। যাঁরা নিরীক্ষামুলক ছবির কথা ভাবেন, তাঁদের কাছে এ এক মস্ত কৃতিত্ব।
উদয়শঙ্করের কল্পনা
আর , এর পরেই, ১৯৫১ সালে এল 'ছিন্নমূল' । এই প্রথম, জীবন প্রায় দলিলের মত উঠে এল ছবিঘরে। উদ্বাস্তু জীবনের অভিশাপ ও কান্নার বিবরণ দেওয়ার সময়ে পরিচালক নিমাই ঘোষ কোন রকম আপোস রফা করেন নি। মাত্র ১০,০০০ ফুটের এই ছবিটি আজ পর্যন্ত শহুরে উদ্বাস্তুর দুর্দশার সবচেয়ে প্রামাণ্য বর্ণনা। এই ছবির অভিনেতারা চলচ্চিত্রের পেশাদার অভিনেতা ছিলেন না। তাঁরা অনেকেই নাটকের কর্মী। তাঁদের অভিনয় দক্ষতা ছিল অবাক হয়ে যাওয়ার মত। এই ছবির ক্যামেরার কারিকুরী তো মুগ্ধ করে দেয়। এজন্যই বিখ্যাত সোভিয়েত পরিচালক পুদভকিন নিজে সে যুগের রুশ পত্রিকা প্রাভ্দায় ছিন্নমূলের একটি উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। নিমাই ঘোষের বাজেট ছিল অত্যন্ত কম, এত কম যে তাঁকে প্রায় প্রতিটি প্রথম শট্কেই ওকে শট্ বলে মেনে নিতে হয়েছে। রিটেক করার সুযোগ পান নি। তবুও অপরিসীম নিষ্ঠায় তিনি আমাদের সিনেমার ভাষায় জীবনের প্রত্যক্ষ ছাপ এঁকে দিলেন ।
ইতিমধ্যে আরো কয়েকটি ঘটনা ঘটল যা আমাদের ছায়াছবিকে সাবালক করে দিল ৫০ দশকের গোড়াতেই । প্রথমেই বলতে হবে পৃথিবীর দুই দিকপাল পরিচালক ফ্রান্সের রেঁনোয়া ও রুশদেশের পুদভকিনের কলকাতা সফরের কথা। এতদিন অবধি আমরা ছবি বলতে বুঝতাম আমেরিকার হলিউড ঘরানার ছবি। আর নয়ত এই সব ছবিকে নকল করে তৈরি করা বাংলা বা হিন্দি ছবি। এই দুজন বড় পরিচালক আমাদের তরুণ চলচ্চিত্রকর্মী ও বুদ্ধিজীবীদের জানালেন যে ছবি অন্যরকম ভাবেও করা যায়। কিভাবে আমাদের আশেপাশের ঘটে চলা সত্যিকারের ঘটনাগুলিকে ব্যবহার করে ছবি নানাধরনের গল্প বলতে পারে, সে খবর আমরা জানলাম এই দুই স্রষ্টার সঙ্গে কথা বলে, তাঁদের সাক্ষাতকার পড়ে। সিনেমা মানেই যে শুধু হলিউড নত, আলাদা ভাবেও গল্প বলতে পারে, সেটা জানা কম কথা নয়।
জঁ রেঁনোয়া আর সেভোলোদ পুদভকিন
তরুণ চলচ্চিত্র উতসাহী ঋত্বিক ঘটক আর সত্যজিত রায় এই দুজনের কাছ থেকে নানা রকমের অভজ্ঞতা সঞ্চয় করেন। আর নের পরেই হয় সব থেকে বড় এক অভিজ্ঞতা - ১৯৫২ সালে স্বাধীন ভারতে প্রথম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উতসব। সেকথা বলব এর পরের বার।
সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়
অধ্যাপক
চলচ্চিত্র বিদ্যা বিভাগ
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়
ছবিঃ
ইন্টারনেট
- বিস্তারিত
- লিখেছেন সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
শিল্পের ইউরোপ- পর্ব ৩
১ - প্যারিসের মাটিতে নামবার আগে আকাশ থেকে যে দুটো মনুষ্য নির্মিত ইমারত চোখে পড়বে তার মধ্যে প্রথম হল স্বনামধন্য আইফেল টাওয়ার । দ্বিতীয় হল "লা ইনভালিডস"-এর সুবিশাল সোনালী গম্বুজ ।
২ - লা ইনভালিডস তৈরী হয় ১৬৭৯ সালে বৃদ্ধ বৃদ্ধা এবং আহত সৈনিকদের হাসপাতাল হিসেবে । পরবর্তীকালে এই খানেই স্থান পায়ে নেপোলিয়ান বোনাপার্ট-এর সমাধি । রোমের সেন্ট পিটার'স ব্যাসিলিকা-র অনুকরণে তৈরী, "এগ্লিসে ডু ডোমে" নামেও পরিচিত এই কীর্তিস্তম্ভ ফরাসী baroque শিল্পের এক অনন্য উদাহরণ ।
৩ - মেরি ম্যাগডালীন-এর স্মৃতিতে বানানো এই চার্চ-এ বছরের ৫২ সপ্তাহের রূপক হিসেবে রয়েছে ৫২ টি স্তম্ভ ।
৪ - প্যারিস-এর ল্যুভর্ মিউসিয়ামের তলায়ে রয়েছে এই বিখ্যাত কাঁচের উল্টো পিরামিড যা এসে মিলছে এক ছোট্ট সোজা পিরামিড-এর মুখোমুখি । ড্যান ব্রাউন-এর উপন্যাস 'দা ভিঞ্চি কোড' -এ আমরা "ব্লেড অ্যান্ড চ্যালিস” নামে পরিচিত এই শিল্পকীর্তির উল্লেখ পাই আর তিনি কল্পনা করেছেন যে এই ছোট্ট পিরামিড টা আসলে মাটির নিচে আরেকটি পিরামিড-এর শিখরাংশ এবং এই নীচের পিরামিড এর ভেতরে আছে যীশু খ্রিষ্টের স্ত্রী মেরি ম্যাগডালীনের আসল সমাধি ।
৫ – ওবেলিস্ক ডে লাক্সার । ৩৩০০ বছর আগে এই ওবেলিস্ক মিশরে লাক্সার মন্দিরের প্রবেশ দ্বারে শোভিত ছিল । মিশরের রাজা ফ্রান্স কে উপহার দেন ৫৫৫ ফিট উঁচু এই সুবিশাল ওবেলিস্ক । ভাবতেই অবাক লাগে, তখনকার যুগে কি করে নিয়ে আসা হয়েছিল এই সুউচ্চ প্রস্তর নির্মিত স্তম্ভ, এত দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে ।
৬ – লুসার্নের “লায়ন মনুমেন্ট” । ১৭৯২ সালের ফরাসী বিপ্লবের সময় ৭০০ সুইস গার্ডের স্মারক হিসেবে বেরথেল থরওয়াল্ডসেন এই মুর্তি নির্মান করেন পাথর কেটে এক পাহাড়ের গায়ে । এই ৭০০ জন বীর সৈনীকরা জানতেন না যে যাদের বাঁচাবার জন্যে তারা লড়াই করছেন, সেই রাজা ষোড়শ লুই , মেরি অ্যান্টয়নেট ও তাদের সন্তানদের নিয়ে ততক্ষণে পলায়ন করেছেন তাদেরকে না জানিয়েই । এই পিঠে ছুরি মারার মতন কাজের তীব্র নিন্দা করেন এবং তারই উপমা হিসেবে শিল্পীর এই দুখী সিংহের পিঠে একটা ভাঙ্গা বর্শা গেঁথে দেন ।
৭ – ইউরোপের সব থেকে সুন্দর "স্কোয়ার" হল ব্রাসেল্সের "গ্র্যান্ড প্লেস" । অসাধারণ এই শহরের আধুনিকতার বেড়া টপকে এখানে এলে মনে হবে সপ্তদশ শতাব্দীতে চলে এসেছি । অপুর্ব সুন্দর সুপ্রাচীন ক্যাথিড্রাল গুলোর গায়ে গায়ে অমুল্য সব শীল্পের নিদর্শন রয়েছে যা আমরা আগামী দুটো ছবিতেও দেখতে পাব ।
৮ ও ৯ – ব্রাসেল্সের ক্যাথিড্রালের গায়ে শীল্পকীর্তি।
১০ – “ম্যানেকিন পিস” নামক এই শিশুর প্রস্রাবরত মুর্তি ব্রাসেল্সের চিহ্ণ হয়ে গেছে । ১৩৮৮ সালে এই মুর্তি নির্মান করা হয় । এই মুর্তির একটি ইতিহাস হল, যখন জার্মান সেনারা বেলজিয়ামে এসে ত্রাসের সৃষ্টি করে, সব লোকেদের ওপর জুলুম চালায়ে, তখন এক ছোট্ট বালক এক বারান্দা থেকে সেই সেনাদের মাথায়ে প্রস্রাব করে । এটা তখনকার বেলজিয়ামের দুঃসাহসিকতার এক চিহ্ন হিসেবে দেখে অনেক মানুষ । তাই আজও সবাই এক নামে চেনে এই ম্যানেকিন পিস-কে।
১১ – এভেরার্ড টে সের্ক্লায়েস-এর শায়িত মুর্তি । এই মুর্তি তামার তৈরী । ব্রাসেল্সের মানুষেরা বিশ্বাস করেন যে এই মুর্তিকে ছুঁলে তা সৌভাগ্য নিয়ে আসে । তাই এখানে যেই আসে সেই ছুঁয়ে দেখে এই মুর্তি, পায়ের ধারের সারমেয়টিকে, এবং পরীর মুখটি । বাকি নির্মান পুরো তামার হলেও, মানুষের নিত্য স্পর্শ করা অংশগুলি তাই চকচকেই থেকে গেছে।
লেখা ও ছবিঃ
ঋতম ব্যানার্জি
কলকাতা
- বিস্তারিত
- লিখেছেন ঋতম ব্যানার্জি
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
স্বাধীনতার গল্পঃপর্ব ৩
কি বন্ধু কেমন আছ? খুব রঙ খেলেছ তো দোলে? ১৪১৮ সনের নববর্ষ কেমন কাটালে বলো? এ প্রসঙ্গে একটা কথা বলে রাখি তোমায় – নববর্ষ কিন্তু ইংরেজী New Year এর মতই গুরুত্বপূর্ণ, হয়তো খানিকটা বেশিই, কারণ আমরা আসলে বাঙ্গালী তো! যতই ইংরেজী মিডিয়াম স্কুলে পড় না কেন, নিজের ভাষা, মাতৃভাষা কে কোনদিন অবজ্ঞা কোরো না কিন্তু। তুমি কি জান, UNESCO নামে একটা বিশ্বসংস্থা বাংলা ভাষা কে ‘the sweetest language of all the languages in the world’ (বিশ্বের সমস্ত ভাষার মধ্যে সবথেকে মিষ্টি ভাষা) বলে গত বছর ঘোষণা করেছে! যে কোনো ভাষা বেঁচে থাকে তার ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে। শুনলে অবাক হবে যে সারা পৃথিবী তে প্রায় হাজার পাঁচেক ভাষা আছে। আগামী দশ বছরের মধ্যে প্রায় দু’হাজারের বেশি ভাষা শুধু ব্যবহারের অভাবে অবলুপ্ত হয়ে যাবে। মনে রেখো যে আমাদের দেশের মণীষীরা ইংরেজী তে দড় ছিলেন বটে, কিন্তু কোন অবস্থাতেই, বাংলা ভাষা, মাতৃভাষা কে অবজ্ঞা করে নয়। মাইকেল মধুসূদন দত্ত-র কথা তো তুমি জানই। ঈংরেজি ভাষার মোহে অন্ধ হয়ে খ্রীষ্টধর্ম গ্রহণ করলেন। চৌকস ছিলেন ইংরেজীতে। বহু ইংরেজ লেখকও তাঁর কাছে ম্লান। কিন্তু মাতৃভাষা নয় বলে যথেষ্ট মর্যাদা পেলেন না। নিজের ভুল বুঝতে পেরে লেখা শুরু করলেন মাতৃভাষা বাংলায়।তারপর তাঁকে আর আটকানো যায় নি।
যাই হোক, তুমি কিন্তু কখনই নিজের মাতৃভাষাকে অবজ্ঞা কোরো না। কেউ হাসাহাসি করলে তাদেরকে বোঝাবে তুমি যে সারা পৃথিবীতে পাঁচ হাজার ভাষার মধ্যে বাংলা কিন্তু মাত্র ছ’ নম্বরে, আর ইংরেজি কিন্তু তিন এ, প্রথমে নয়।ইংরেজি কিন্তু একটা বিশ্বব্যাপি ব্যবহৃত ভাষা বা Global Language হয়েও তিন নম্বরে আর বাংলা সেখানে একটা স্থানীয় ভাষা বা Local Language হওয়া সত্বেও মাত্র ছয় নম্বরে রয়েছে। বাঙ্গালী হিসেবে গর্ব হচ্ছে না তোমার? আমার ত’ হচ্ছে!
ঠিক এই রকম গর্ব আমার হয় বাংলার নবাব সিরাজদ্দৌলার কথা ভাবলে। আওরঙ্গজেব তো ১৭০৭ সালে দেহ রাখলেন। মুঘাল সাম্রাজ্যের বাঁধন ভেঙ্গে পড়ল। ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি অন্যান্য ইউরোপীয় বণিকদের সাথে হাত মিলিয়ে ভারতের নান প্রান্তে চুটিয়ে ব্যবসা করছে আর বাধা এলেই নানান ষড়যন্ত্র করে দখল নিচ্ছে সামন্ত রাজাদের। সৈন্য-সামন্ত, অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে ছোটখাটো যুদ্ধও চালিয়েই যাচ্ছে।
তোমাকে তো আগেই বলেছি যে ইংরেজদের ঘাঁটি ছিল কলকাতায়। বাংলার নবাব তখন সিরাজদ্দৌলা। তিনি আবার ইংরেজ বণিকদের ঔদ্ধত্য আর স্বেচ্ছাচারিতা একদম পছন্দ করতেন না। ১৭৫৬ সালে ইংরেজদের শায়েস্তা করার জন্য সিরাজ বিশাল বাহিনী নিয়ে কলকাতা আক্রমণ করেন আর নিমেষে তার দখল নেন।
নবাব সিরাজদ্দৌলা
ইংরেজ বণিকদের সে দিনই শেষ দিন ছিল যদি না মীরজাফর থাকতেন।সিরাজের প্রধান সেনাপতি মিরজাফরই সেদিন ইংরেজ প্রধাণ সেনাপতি লর্ড ক্লাইভ ও তাঁর অনুচরদের নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে দেন।শুরু হয় এক নতুন ষড়যন্ত্রের ইতিহাস। লর্ড ক্লাইভ বোধ হয় নিজেও জানতেন না যে আগামী এক বছরের ষড়যন্ত্র সারা ভারতের ইতিহাস কে দু’শ বছরের জন্য বদলে দিতে চলেছে।
লর্ড ক্লাইভ
১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধ – ভাবলে গায়ে কাঁটা দেয় আমার। একটা আম বাগানে সামান্য একটা যুদ্ধ, যার নিয়তি নিয়ে কোনো প্রশ্নই ওঠে না। ইংরেজ সেনাপতি লর্ড ক্লাইভ-এর অধীনে মাত্র হাজার তিনেক সৈন্য, যাদের মধ্যে আবার মাত্র আটশ’ জন হল ইউরোপীয়। আর লর্ড ক্লাইভ-এর সহযোগী এডমির্যাল ওয়াটসন। সিরাজের সৈন্য সে তুলনায় বিশালঃ শুধু ঘোড়সওয়ারই ছিল আঠারো হাজার, ছিল পঞ্চাশ হাজার পদাতিক। নবাব সিরাজের হারের কোন কারণই নেই; তিনি অতি বড় দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেন নি যে এই যুদ্ধ তিনি হারতে পারেন।
কিন্তু সিরাজই হারবেন। ষড়যন্ত্র যে সে রকমই।ষড়যন্ত্রের প্রধাণ উদ্যোক্তা, সিরাজের প্রধান সেনাপতি মীরজাফর নিজের দলে টেনেছেন জগত শেঠ আর উমীচাঁদ নামে প্রবল প্রতাপশালী দুই শ্রেষ্ঠী কে। ইংরেজ বণিকরা আমাদের দেশের লোকের লোভকে ব্যবহার করে যে যুগান্তকারী পরাধীনতার ইতিহাসের ভূমিকা সুনিশ্চিত করেছিল, তা পৃথিবীর ইতিহাসেও বিরল। তাই তো পলাশীর যুদ্ধের এত গুরুত্ব। এই যুদ্ধের ফলাফল বলতে গেলে আমার গলা বুজে আসে। পলাশীর আমবাগানে হয়েছিল এই যুদ্ধ। এখন সেখানে বেড়াতে গেলে পাবে শুধু একটা আমগাছ আর চাষের ক্ষেত। তার মাঝখানে অনেক খুঁজলে কোনোমতে একটা স্মৃতিফলক পাবে। ব্যাস।
পলাশীর যুদ্ধক্ষেত্রে ক্লাইভ এবং মীরজাফর
কি হল তার পর?
সেটা বরং পরের সংখ্যায় বলব।ভাল থেকো কিন্তু।
আর্য চ্যাটার্জি
কলকাতা
ছবিঃ
ইন্টারনেট
- বিস্তারিত
- লিখেছেন আর্য চ্যাটার্জি
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
দিনেওয়ান আর গুম্বলগাবন
দিনেওয়ান , বা এমু পাখি, সবথেকে বড় পাখি ছিল বলে, অন্য সব পাখিরা তাকে রাজা বলে মান্য করত। গুম্বলগাবন , বা বাস্টার্ড পাখিরা, দিনেওয়ান দের হিংসা করত। বিশেষতঃ গুম্বলগাবন মা, দিনেওয়ান মাকে খুব হিংসা করত। দিনেওয়ানেরা খুব জোরে দৌড়াতে পারত, আর অনেক উঁচুতে উড়তে পারত। এইসব দেখে তার আরো হিংসা হত। আর যখন দিনেওয়ান মা, অনেক উঁচু আর দূর থেকে উড়ে এসে তার সামনে নেমে ডানা ঝাপটাত আর গলা ফুলিয়ে খুশিতে ডাক দিত, তখন গুম্বলগাবন মায়ের বিরক্তির শেষ থাকত না।
গুম্বলগাবন মা সবসময়ে বসে বসে ভাবত সে কিরকম ভাবে দিনেওয়ানের আধিপত্য শেষ করতে পারবে। অনেক ভেবে সে ঠিক করল সে যদি দিনেওয়ানের ডানাদুটিকে নষ্ট করে দিতে পারে আর তার ওড়ার ক্ষমতা শেষ করে দিতে পারে, তাহলে দিনেওয়ানের আধিপত্যও শেষ হবে। কিন্তু সে ভেবে পাচ্ছিল না এই কাজটা কি ভাবে করা যাবে। সে জানত দিনেওয়ানের সঙ্গে মুখোমুখি লড়াই করতে যাওয়ার চেষ্টা করা মূর্খামি, কারণ বিরাট বড় দিনেওয়ানের সামনে কোন গুম্বলগাবন টিঁকতেই পারবে না। তাকে কোন একটা চালাকির করে কাজটা করতে হবে।
একদিন, যখন গুম্বলগাবন মা দূর থেকে দেখতে পেল দিনেওয়ান মা তার দিকে এগিয়ে আসছে, সে পা মুড়ে বসে এমনভাবে তার ডানাদুটিকে গুটিয়ে নিল যেন তার কোন ডানাই নেই। দিনেওয়ান এসে তার সঙ্গে গল্পগাছা শুরু করল। খানিক পরে গুম্বলগাবন বলল ঃ তুমি কেন আমার মত ডানাবিহীন হয়ে যাও না? সব পাখিরাই উড়তে পারে। দিনেওয়ানকে যদি পাখিদের রাজা হতে হয়, তাহলে তার ডানা ছাড়াই সব কাজ করতে পারা উচিত। যখন সব পাখিরা দেখবে আমি ডানা ছাড়াই সব কাজ করতে পারছি, ওরা তখন ভাববে আমিই সবথেকে চালাক, আর ওরা তখন একজন গুম্বলগাবনকে রাজা বানিয়ে দেবে।"
"কিন্তু তোমার তো ডানা আছে," বলল দিনেওয়ান।
"না, আমার কোন ডানা নেই।" বলল গুম্বলগাবন। আর সত্যিই তার ডানাগুলি এত ভালভাবে লুকানো ছিল, যে মনে হচ্ছিল তার কথাগুলি সব সত্যি। দিনেওয়ান একটু পরে চলে গেল, আর অনেক সময় ধরে ভাবতে লাগল। তারপরে সে তার সংগী, দিনেওয়ান বাবার সাথে কথা বলল। সব শুনে দিনেওয়ান বাবাও খুব চিন্তিত হয়ে পড়ল। তারপরে তারা ঠিক করল, তারা কখনই একজন গুম্বলগাবনকে রাজা হতে দেবে না, তার জন্য যদি নিজেদের ডান খোয়াতে হয়, তাও ভাল।
শেষে তারা ঠিক করল, ডানাগুলিকে বিসর্জন দেবে। দিনেওয়ান মা তার সঙ্গীকে বলল একটা পাথরের অস্ত্র দিয়ে তার ডানাদুটিকে কেটে ফেলতে। তারপরে সে তার সঙ্গীর ডানাদুটিকে কেটে ফেলল। ডানা কাটা হয়ে গেলেই দিনেওয়ান মা আর সময় নষ্ট না করে গুম্বলগাবনের কাছে চলে গেল তারা কি করেছে জানাতে। সে ছুটে গেল সেই সমতলে, যেখানে গুম্বলগাবনের সাথে তার দেখা হয়েছিল । গুম্বলগাবন তখনও সেখানে পা মুড়ে বসে ছিল, তাকে দেখে দিনেওয়ান মা বললঃ দেখ, আমিও তোমার মত করেছি। আমার এখন কোন ডানা নেই। সেগুলি কাটা হয়ে গেছে।"
"হা!হা!হা!" হেসে উঠল গুম্বলগাবন, আর তড়াক্ করে লাফিয়ে উঠে আনন্দে নাচতে লাগল, কারণ তার দুষ্টবুদ্ধি সফল হয়েছে। নাচতে নাচতে সে তার ডানাদুটিকে ছড়িয়ে দিল, সেগুলিকে ঝাপটাল, আর বললঃ "এইবার, এইবার তোমাকে বাগে পেয়েছি। আমার ডানাদুটোতো ঠিকই আছে। তোমরা দিনেওয়ানেরা, কি বোকা, যা শোনো, তাই বিশ্বাস কর ! তোমরা আবার রাজা হতে চাও! হা! হা! হা! " এই ভাবে উপহাস করে, গুম্বলগাবন নিজের ডানাদুটিকে দিনেওয়ানের নাকের সামনে ঝাপটিয়ে দিল। দিনেওয়ান তাকে বিশ্বাসঘাতকতার জন্য শাস্তি দিতে এগিয়ে এল, কিন্তু গুম্বলগাবন উড়ে পালিয়ে গেল, আর দিনেওয়ান - হায়! ডানাবিহীন দিনেওয়ান আর তার পিছু নিয়ে উড়তে পারল না।
নিজের ভুল বুঝতে পেরে, দিনেওয়ান মা ফিরে গেল, আর ভাবতে লাগল কিভাবে এর প্রতিশোধ নেবে। কিভাবে? সে আর তার সঙ্গী বেশ কিছুদিন ভেবেও কোন উপায় খুঁজে পেল না। কিন্তু তারপরে, দিনেওয়ান মায়ের মাথায় একটা বুদ্ধি এল, আর সে সঙ্গে সঙ্গে সেই কাজ করার জন্য বেরিয়ে পড়ল। সে দু'টি বাদে, তার বাকি সব সন্তানদের একটা বড় কাঁটাঝোপের আড়ালে লুকিয়ে রাখল। তারপরে সে সেই সমভূমিতে নেমে গেল, সাথে তার দুটি ছানা। গিরিখাতের ওপর থেকে নামতে নামতে সে দেখতে পেল, গুম্বলগাবন তার বারোটা ছানাকে খাওয়াচ্ছে।
সেখানে পৌঁছে, গুম্বলগাবনের সাথে এটা ওটা হাবিজাবি কথা বলে, দিনেওয়ান মা তাকে বলল ," তুমি আমাকে নকল করে শুধুমাত্র দুটি সন্তান রাখ না কেন? বারোটা ছানাকে খাওয়ানো কি সোজা কথা ! এতগুলো বলেই , তোমার ছানারা কোনদন দিনেওয়ানদের মত বড় হয়ে উঠবে না। যে খাবারে দুটো বড় পাখি তৈরি হতে পারে, বারোটা পাখির তো তাতে খিদেই মিটবে না ।" গুম্বলগাবন মা কিছু বলল না, কিন্তু মনে মনে ভাবল, এটা ঠিক কথা হতেও পারে। এটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই যে দিনেওয়ান ছানারা গুম্বলগাবন ছানাদের থেকে অনেক বড় আকারের হয়। মনের মধ্যে অশান্তি নিয়ে গুম্বলগাবন মা হেঁটে চলল, আর ভাবতে থাকল, সত্যিই কি তার সন্তানেরা সংখ্যায় বেশি বলে আকারে দিনেওয়ানদের থেকে অনেক ছোট? দারুণ ব্যাপার হবে, সে ভাবল, যদি তার সন্তানেরাও দিনেওয়ানদের মত বড় বড় হয়। কিন্তু তার মনে পড়ল, সে মা দিনেওয়ানের সাথে কি চালাকি করেছিল, আর তার সন্দেহ হল- এবার হয়ত মা দিনেওয়ান তাকে বোকা বানাতে চাইছে। দিনেওয়ানেরা যেখানে ঘুরে ঘুরে খাচ্ছিল, সেইদিকে ফিরে তাকাল সে , আর সে দেখতে পেল দিনেওয়ানের ছানাদুটি তার ছানাদের থেকে কতটা বড়, আর অমনি তার মন আবার প্রবল হিংসায় ভরে গেল। সে ঠিক করল সে কিছুতেই হেরে যাবে না। দরকার পড়লে সে দুটি বাদে তার বাকি সব ছানাদের মেরে ফেলবে। সে বলল, "দিনেওয়ানেরা কিছুতেই সমভূমির রাজা হতে পারবে না। তাদেরকে সরিয়ে দেবে গুম্বলগাবনেরা। তারা দিনেওয়ানদের মত বড় হবে, আর তাদের ডানাও থাকবে আর তারা উড়তে পারবে, যা এখন দিনেওয়ানেরা পারেনা। "
গুম্বলগাবন মা সোজা গিয়ে দু'টি বাদে তার বাকি সব সন্তানদের মেরে ফেলল। তারপরে সে চলল সেই জায়গায় যেখানে দিনেওয়ানেরা খাচ্ছিল। দিনেওয়ান মা যখন তাকে আসতে দেখল, সাথে মাত্র দুটি ছানা নিয়ে, তখন সে হেঁকে বলল ঃ "তোমার বাকি ছানাগুলি কোথায়?"
গুম্বলগাবন মা উত্তর দিল, "আমি তাদেরকে মেরে ফেলেছি, আর মাত্র দুটিকে বাঁচিয়ে রেখেছি। ওরা এখন প্রচুর খেতে পাবে, আর খুব তাড়াতাড়ি তোমার ছানাদের মত বড় হয়ে যাবে।"
"তুমি কি নিষ্ঠুর মা, তুমি নিজের সন্তানদের মেরে ফেললে! তুমি কি লোভী ! কেন, আমারো তো বারোটা সন্তান আছে, আর আমি তাদের সবার জন্য খাবার খুঁজে আনি। আমি কোন কারণেই তাদের একজনকেও মারব না, তাতে যদি আমার ডানা ফিরে আসে, তাহলেও না। এখানে সবার জন্য যথেষ্ট খাবার আছে। দেখ এই বেরি গাছটা কেমন আমার বিরাট পরিবারের সবার জন্য ফলে ভরে আছে। দেখ কেমন করে গঙ্গাফড়িংগুলি লাফিয়ে লাফিয়ে আসছে, যাতে আমরা ওদেরকে ধরে খেতে পারি আর সবল হতে পারি।"
"কিন্তু তোমার তো মোটে দুটি সন্তান !"
" আমার বারোটা সন্তান আছে। আমি গিয়ে তাদেরকে নিয়ে আসছি।" এই বলে দিনেওয়ান মা সেই কাঁটাঝোপের দিকে দৌড়ে গেল যেখানে সে তার দশটি সন্তানকে লুকিয়ে রেখেছিল। একটু পরেই তাকে দেখা গেল ফিরে আসতে। তার গলা সামনের দিকে বাড়িয়ে, তার মাথা গর্বে উঁচু করে, তার ল্যাজের পালকগুলি নাড়াতে নাড়াতে সে দৌড়ে আসছিল, আর অদ্ভূত আনন্দের একটা গান গাইছিল। তার পেছনে পেছনে আসছিল ছোট্ট নরম সাদা কালো পালকে ঢাকা তার সন্তানেরা, নিজেদের মধ্যে কলকল করতে করতে। যখন দিনেওয়ান মা গুম্বলগাবন মায়ের কাছে পৌঁছাল, তখন সে খুব শান্ত গলায় বলল, "এখন তুমি দেখতে পাচ্ছ আমার কথা সত্যি ছিল, আমার বারোটা সন্তান আছে, যেমন আমি বলেছিলাম। তুমি আমার সন্তানদের দিকে তাকিয়ে নিজের মেরে ফেলা সন্তানগুলির কথা ভাবতে পার। আর এখন আমি তোমার বংশধরদের ভবিষ্যত তোমাকে বলব । তুমি মিথ্যে কথা বলে, চালাকি করে দিনেওয়ানদের ডানা হারাতে বাধ্য করেছ, আর এখন থেকে, যতদিন অবধি দিনেওয়ানেরা তাদের ডানা ফিরে পাবে না, ততদিন অবধি গুম্বলগাবনেরা শুধুমাত্র দুটো করে ডিম পাড়বে, আর তাদের মাত্র দুটো করেই ছানা হবে। আমাদের যুদ্ধের এখানেই সমাপ্তি। তোমার কাছে রইল তোমার ডানা, আর আমার কাছে আমার সন্তানেরা।"
আর সেই সময় থেকেই, দিনেওয়ান, বা এমু পাখির কোন ডানা নেই, আর গুম্বলগাবন , বা বাস্টার্ড পাখিরা, এক ঋতুতে মাত্র দুটো করে ডিম পাড়ে।
অস্ট্রেলিয়ার উপকথা
ভাষান্তরঃ
মহাশ্বেতা রায়
কলকাতা
ছবিঃ
ইন্টারনেট
- বিস্তারিত
- লিখেছেন মহাশ্বেতা রায়
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত