সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
একটা ছোট্ট ছেলে ছিল। তার নাম আমি জানি না। হয়তো কেউই জানে না। কিন্তু তাকে আমি চিনি। তাকে আমি দেখেছি ঢাকার মুক্তি যুদ্ধের মিউজিয়ামে। সে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। এক দৃষ্টিতে। সে তার সাহসী মুষ্টিবদ্ধ হাত মাথার ওপর তুলে ধরেছিল। তার গলার শিরা ফুলে উঠছিল কারণ সে চিৎকার করে কিছু বলতে চাইছিল। হাঁটছিল সে। পরনের হাফপ্যান্টটা এতোটাই বড় যে তার হাঁটুর কাছে এসে লতপত করছিল ঠিক পতাকার মতো। তার থেকে বেশ কিছুটা দূরে তাকেই অনুসরণ করছিল একদল মানুষ। আসলে একটা বড় মিছিলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো ছোট্ট সেই ছেলেটি। একটা বড় রাস্তা ধরে। কী বলছিলো সে? কী স্লোগান দিচ্ছিলো সেদিন? সে বলছিল, “বাংলা ভাষার রাষ্ট্র চাই।”

মাত্র কয়েক কদম এগোনোর পরে পাক সেনাবাহিনীর গুলি এসে লেগেছিল তার সেই ছোট্ট বুকে। রাস্তার ওপর লুটিয়ে পড়েছিল সে। আর তার রক্তমাখা স্লোগান গুলো পলাশ হয়ে ফুটে উঠেছিল কোনো এক একুশে ফেব্রুয়ারী র সকালে। তার অনেক দিন পরে সত্যি সত্যি পৃথিবীতে একটা ভাষাকে কেন্দ্র করে একটা রাষ্ট্র জন্ম নিল। স্বাধীন বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়ালো সেই ছোট্ট ছেলেটার মতো। মাতৃভাষাকে ভালবেসে সেদিন যাঁরা জীবন দিয়েছিলেন তাঁদের জন্য গড়া হল শহীদ মিনার। আর সেই ছোট্ট ছেলেটি মিউজিয়ামের দেওয়াল জুড়ে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রইলো এক ফটো ফ্রেমের মধ্যে।

কি মন খারাপ হয়ে গেলো? আমারও মন খারাপ। আমিও তোমার মতো শরতের সকালে নীল আকাশে মেঘেদের ছানা দেখতে দেখতে যখন এই কথা গুলো লিখছি তখন কিন্তু একটুও ভুলে যাচ্ছি না আজ ইচ্ছামতীর জন্মদিন। ঠিক পাঁচ বছর আগে তোমাদের চাঁদের বুড়ির সাথে আমিও ইচ্ছামতীতে ভেলা ভাসিয়েছিলাম। যারা জন্মদিন কেক, মোমবাতি হইচই করে পালন করে তাদের থেকে একটু দূরে থাকি আমি। আমার কাছে জন্মদিন মানে হল আবার নতুন করে কিছু জানার, কিছু বোঝার সন্ধিক্ষণ। যে পথটা অনেক দিন ধরে হাঁটলাম। যে পথের ধারে অনেক মানুষের সাথে বন্ধুত্ত্ব হল তাদের একবার নয় অনেকবার করে ফিরে দেখা। আর তুমি যেমন তোমার মাটির ভাঁড়ে পয়সা জমাও ঠিক তেমনি ভালো ভালো জিনিস গুলো মনের মধ্যে অনেক দিনের জন্য জমিয়ে রাখা। ইচ্ছামতীও এই পাঁচবছর ধরে অনেক কিছু নিজের পাতায় জমিয়ে রেখেছে। অনেক বন্ধু পেয়েছে। আজ তার বন্ধু শুধু ভারতে নয় গোটা বিশ্বে ছড়ানো। সেইসব বন্ধুরা চাঁদের বুড়িকে চিঠি পাঠিয়েছে। আর চাঁদের বুড়ি মহা আনন্দে সব আমাকে পড়তে দিয়েছে। আমি পড়েছি আর সেই ছোট্ট ছেলেটার কথা ভেবেছি যে একদিন একটা মিছিলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো একটা বড় রাস্তা ধরে। সে চাইছিল তার মাতৃভাষায় কথা বলতে, মাতৃভাষায় লিখতে।

নিজের কথা নিজের ভাষায় লিখবো বলে ইচ্ছামতী একদিন গুটিগুটি পায়ে চলতে শুরু করেছিল। তার স্বপ্ন সফল। তাকে এখোনো অনেকটা পথ হাঁটতে হবে। কিন্তু সেই পথের সঙ্গী হতে হবে তোমাদের। এবার তোমাদের আরো বেশি করে লিখতে হবে। পড়তে হবে। আর যারা নিজের মাতৃভাষা একটুও পড়তে, লিখতে বা বুঝতে পারে না তাদের বলতে হবে নিজের ভাষাকে না জানলে নিজেকে জানা যায় না। তাই নিজেকে জানতে হলে, নিজের দেশকে জানতে হলে অন্য অনেক ভাষা শেখার আগে মাতৃভাষা শিখতে হবে। জানবে নিজের ভাষাকে ভালোবাসা মানে নিজের মাকে ভালোবাসা। নিজের দেশকে শ্রদ্ধা করা।

ভালো থেকো সবাই। শুভেচ্ছা রইলো।

চলচ্চিত্রবিদ্যা বিষয়ে অধ্যাপনা, তথ্যচিত্র নির্মাণ, ফিল্ম ও টেলিভিশন ধারাবাহিকের চিত্রনাট্যরচনা, এবং ফাঁকে ফাঁকে পেলে নিজের ব্লগে নানা স্বাদের লেখালিখি - বিবিধ ধারার ব্যস্ততার মধ্যে চাঁদের বুড়ির সাথে ইচ্ছামতীর প্রথম পায়ে হাঁটার দিনগুলিতে হাত ধরেছিলেন কল্লোল । এখনো সময় পেলে মাঝেমধ্যেই ইচ্ছামতীর জন্য কলম ধরেন হুগলী, উত্তরপাড়া নিবাসী কল্লোল।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা