সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

সন্তু, রন্তু ও অন্তু এখন ক্লাস সেভেনে পড়ছে। গত বছর ওই ছেলেধরা গুণ্ডাটাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য থানার ইন-চার্য নিবারণ দত্ত ওদের সাহসের খুব প্রশংসা করে সরকার থেকে পাঁচ হাজার টাকার বিশেষ পুরস্কারের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন – সেই টাকা দিয়ে ওদের বাড়ি থেকে তিনটে সাইকেল কিনে দিয়েছে। এখন ওরা সাইকেল নিয়ে বাই বাই করে চার দিকে ঘুরে বেড়ায়। ওদের বাড়ি থেকে পৈ পৈ করে বারণ করে দিয়েছে ওই পড়ো বাড়ির দিকে যেন একেবারেই না যায় – সাপের ভয়ে ওরাও অবশ্য ওই বাড়ির আশে পাশে ঘেঁসে না। গরমের ছুটির অলস দুপুরে ওরা ঝিলের ধারে বসে ব্যাঙ বাজি খেলতে খেলতে গল্প করছিলো হঠাৎ নজরে এলো ওই পড়ো বাড়ির কাছে ঝিলের জলে কী একটা বড় ধরনের প্রাণী জলের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

ভালো করে দেখে রন্তু চেঁচিয়ে উঠলো,
‘আরে, আরে, এটা তো ওই সাপটা – ব্যাটা মাছ, ব্যাঙ এ সব খেতে জলে নেমেছে। এদিকে ঘুরলেই তো চিত্তির। বাপরে, গত বছর যা দেখেছি - ’
বলেই রন্তু ভয়ে একটু শিউরে উঠলো – গত বছর ওটার মুখোমুখি হওয়ার সেই দৃশ্য ওর মনে এখনো জ্বল জ্বল করছে। ওর কথা শুনে অন্তুর গায়েও কাঁটা দিলো,
‘ওই দানবের একেবারে ফনার সামনে – আমি জীবনেও ভুলবো না, বাপরে।’

সন্তু সাপটাকে আগে দেখে নি তাই দূর থেকে জলের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘এখান থেকে তো মনে হচ্ছে ফুট দশেক লম্বা হবে আর বেশ মোটা সোটা – তোরা অবশ্য একেবারে সামনে থেকে দেখেছিলি – ভগবানের দোহাই, তোরা খুব বেঁচে গিয়েছিস। আমার জন্য তোরা যমের দরজা থেকে ফিরে এসেছিস। ওই লোকটার উপর আমার এখনও ভীষণ রাগ আছে – আমার নাকের সামনে একটা রুমাল একটু নাড়তে আমি যেন কেমন হয়ে গিয়ে – ওর হাত ধরে পবাতে চলে এলাম। বেশ খানিকটা পর বুঝতে পারলাম ব্যাটা আমাকে আটকে বাড়িতে মুক্তিপণ আদায় করার ধান্দায় আছে। যাকগে, সব কিছু ভালোয় ভালোয় হয়ে গিয়েছে না হলে হয়তো আমরা তিন জনই এই পৃথিবীতে থাকতাম না।’

রন্তু ও অন্তু ওর কথা চুপ করে শুনছিলো হঠাৎ অন্তু লাফিয়ে উঠলো,
‘দ্যাখ, দ্যাখ, ঝিলের পাড় দিয়ে আর একটা সাপ মনে হচ্ছে এদিকে আসছে – এটা আবার কোথা থেকে এলো? একটা তো জলে – তবে এটা কি ওটার সঙ্গী?’
বলতেই সন্তু ও রন্তু তাকিয়ে দেখে ওই রকম চেহারার আর একটা সাপ শ খানেক ফুট দূরে ঝিলের পাড় দিয়ে খুব দ্রুত এদিকে আসছে – দেখেই সন্তু বললো,
‘গতিক সুবিধার নয় রে – ওটা নিশ্চয়ই দূর থেকে আমাদের দেখতে পেয়েছে তাই তাড়া করে আসছে। যে ভাবে আসছে তাতে মনে হয় দৌড়ে ওর সাথে পাত্তা পাওয়া যাবে না - তাড়াতাড়ি সাইকেলে উঠে পালাই না হলে আর রক্ষে নেই।’

ওরা দৌড়ে গাছ তলায় রাখা সাইকেলে উঠবার সময় দেখে সাপটা ঠিক বুঝতে পেরেছে তাই ঝিলের পাড় ছেড়ে মাঠে নেমে এসেছে – ওদের থেকে পঞ্চাশ / ষাট ফুট দূরেই হবে। এখন ওরা বুঝতে পারলো সাপটা এঁকে বেঁকে কী জোরে চলেছে। আর কোন দিকে না তাকিয়ে প্রাণের ভয়ে সাইকেলের প্যাডেল গায়ের জোরে ঘুরিয়ে তিনজন দৌড়ালো বাড়ির দিকে – যতবারই পেছনে তাকায় দেখে সাপটা ওদের তাড়া করেই চলেছে। মিনিট দশেক পর প্রায় আধ মাইলের উপর তাড়া করে তবেই সাপটা ফিরে গেলো আর ওরাও মাঠের শেষে সাইকেল থেকে নেমে দেখলো সাপটা ধীরে ধীরে পবার দিকে ফিরে যাচ্ছে। তিন জনই দর দর করে ঘামছে - রন্তু কপালের ঘাম মুছে বললো,
‘বাপরে বাপ, কী তাড়াটাই করলো – একে বারে দম ছুটিয়ে দিয়েছে। সাপ যে এত জোরে চলে এই প্রথম দেখলাম। মনে হয় ও ব্যাটারও দম ফুরিয়েছে না হলে কী হতো খোদা জানে – আমরা সাইকেল নিয়ে কোথায় ঘুরতাম বল্‌?’

ওরা ফিরে রন্তুদের রোয়াকে এসে বসলো – তিন জনই একেবারে চুপ - সাপের এভাবে তাড়া খাওয়ার ভয়টা এখনও পুরো কাটিয়ে উঠতে পারে নি। বেশ খানিক ক্ষণ পর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সন্তু ধীরে ধীরে মুখ খুললো,
‘আগের বার তার মানে ওখানে এই দুটো সাপই ছিলো – একটা পেছনের জঙ্গল থেকে বেরোয় নি - ওটা বেরোলে কী হতো ভাবতেও ভয়ে গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। নাঃ, এদের একটা ব্যবস্থা করতে হবে না হলে আমাদের এত সুন্দর গল্প করার জায়গায় আর যাওয়া যাবে না তাছাড়া ওই খেজুরের রস তোলার বন্ধুদের যে কোন সময় মহা বিপদ হতে পারে। কি করা যায় বলতো?’

রন্তু একটু সময় ভেবে বললো,
‘ওই দুটোকে যেভাবে হোক ধরতে হবে কারণ এরা তো সাধারণ সাপ নয় আর যেখানে সেখানে পাওয়াও যায় না তাই মেরে ফেলাটা ঠিক উচিত হবে না। আচ্ছা, কোলকাতার চিড়িয়াখানাতে খবর দিলে ওরা এসে ধরতে পারবে না?’

অন্তু একটু হাসলো,
‘ওখানে খবর দেওয়াটা মানে কোলকাতাতে যেতে হবে তাও আমাদের কথায় কতোটা পাত্তা দেবে কে জানে। আচ্ছা, একবার ওই গ্রামে খবর নিলে হয় না কোন ভালো সাপুড়ে ওখানে আছে কিনা যে এত বড় আর হিংস্র এই সাপ দুটোকে ধরতে পারে? মাঝে মাঝেই তো ওদিক থেকে সাপুড়ে আসে এখানে সাপের খেলা দেখাতে।’

তখন ঠিক হলো আরো দু এক দিন দেখা যাক কোন সাপুড়ে এদিকে আসে কিনা – তারপর না হয় সাইকেল নিয়ে সাবধানে ওই গ্রামে যাবে সাপুড়ের খোঁজে।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা