সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

দিন দুয়েক পর এক দুপুরে রন্তুদের রোওয়াকে বসে ওরা লুডো খেলছিলো হঠাৎ বড় রাস্তার দিক থেকে সাপুড়ের বিনের আওয়াজ ভেসে আসতেই অন্তু লাফিয়ে উঠলো,
‘ওই তো সাপুড়ের বাঁশির আওয়াজ – চল্‌, চল্‌, ওকে জিজ্ঞেস করা যাক সাপ দুটোকে ধরতে পারবে কি না?’

ওরা দৌড়ে বড় রাস্তায় এসে দেখে একটা বছর বাইশের ছেলে কাঁধের বাঁকের দুদিকে গোটা তিনেক করে সাপের ছোট ছোট ঢাকনা দেওয়া ঝুড়ি ঝুলিয়ে বিনটা বাজাতে বাজাতে চলেছে। সন্তু ওকে ডাকলো,
‘ও সাপুড়ে ভাই, একটু শোন।’
ছেলেটা ওদের কাছে এলে রন্তু জিজ্ঞেস করলো,
‘তুমি সাপ ধরতে পারো?’
ছেলেটা হাসলো,
‘সাপ ধরা আর সাপ খেলানোই তো আমাদের কাজ। এক একটা সাপ ধরার জন্য কিন্তু পাঁচ টাকা করে লাগবে। তা সাপটা কোথায় লুকিয়ে আছে?’
অন্তু গম্ভীর গলায় বললো,
‘এটা কিন্তু আজে বাজে সাপ নয় একেবারে কাল কেউটে – যেমন লম্বা তেমনি স্বাস্থ্যবান চেহারা।’
এবার ছেলেটার ভুরু একটু কুঁচকে গেলো,
‘তোমরা কোথায় একে দেখেছো? কতটা লম্বা?’
অন্তু উত্তর দেবার আগেই সন্তু বললো,
‘একটা পুরাতন বাড়িতে – ওখানে কেউ থাকে না। আর লম্বাতে প্রায় দশ ফুট খানেক তো হবেই – কী বলিস অন্তু?’
অন্তু ও রন্তু মাথা নাড়লো,
‘ফণাটাই মাটি থেকে প্রায় ফুট দুয়েক উঁচুতে উঠেছিলো। তবে সাপ কিন্তু দুটো।’

শুনে ছেলেটা চিন্তিত মুখে বললো,
‘না ভাই – এত বড় সাপ তো আমি ধরতে পারবো না – একটা ছোবল খেলেই চোখ উল্টে যাবে। বরং আমার গুরুজীকে খবর দেবো – উনিই পারবেন এই সাপ ধরতে। ঠিক আছে, দু এক দিনের মধ্যেই গুরুজীকে নিয়ে আসবো সাপ দুটো ধরার জন্য।’

দু দিন পর দুপুরে ওরা রোয়াকে এসে বসার প্রায় সাথে সাথেই আবার সাপুড়ের বিনের আওয়াজ ভেসে এলো বড় রাস্তা থেকে। ওরা দৌড়ে বড় রাস্তায় এসে দেখে ওদের পাড়ার মোড়ে ছেলেটা বিন বাজাচ্ছে - সাথে একটা বুড়ো মত মুখে কাঁচা পাকা দাড়িওয়ালা আর মাথায় মস্তো বড় পাগড়ি বাঁধা লোক দাঁড়িয়ে - ওর হাতে একটা ফুট ছয়েক লম্বা লাঠি যার মাথাতে মোটা লোহার তার দিয়ে ইংরেজী ‘Y’ এর মত লাগানো। ছেলেটার কাঁধের বাঁকে আজ সাপের ঝুড়ির বদলে তিনটে বড় বেতের ঝুড়ি আর গোটা তিনেক মোটা চটের বস্তা। ওর হাতেও বাঁকানো লোহার হুক লাগানো লম্বা একটা লাঠি। সন্তুদের দেখে ছেলেটা গুরুজীকে বললো,
‘গুরুজী, এরাই সেই কাল কেউটের কথা বলছিলো।’

ওদের দেখে গুরুজীর ভুরু কুঁচকে গেলো – বাচ্চাগুলো সাপের আষাঢ়ে গল্প বলে নি তো? কী দেখতে কী দেখেছে? তাই একটু টেরচা সুরে বললো,
‘তোমরা কী ভাবে দেখলে? কোথায়? গায়ের রং কী?’

রন্তু জবাব দিলো,
‘আমি আর অন্তু একটার প্রায় মুখোমুখি হয়েছিলাম – আমাদের প্রায় বুকের সমান ফণা তুলেছিলো আর আমাদের হাতের দুই বিঘতের মত চওড়া সেই ফণা, কালো রঙের আর পিঠে কেমন ক্রসের মতো দাগ – দেখেই আমরা তো একেবারে স্ট্যাচু হয়ে গিয়েছিলাম। কয়েক দিন আগে অন্যটা আমাদের তিন জনকে তাড়া করেছিলো – ভাগ্যিস সাইকেল নিয়ে পালিয়েছিলাম না হলে দৌড়ে পাত্তা পেতাম না – তাও প্রায় আধ মাইলের উপর আমাদের তাড়া করে এসেছে।’

বুড়ো দাড়িতে হাত বোলাতে বোলাতে বললো,
‘তার মানে কাল কেউটে না হয়ে যায় না। খোদার অনেক দোয়া তোমরা জানে বেঁচে গিয়েছো। একটু নড়লেই ওটা ছোবল দিতো আর ওর বিষে হাতি পর্যন্ত উল্টে যায় – মানুষ তো কোন ছার। এত বড় সাপ ধরা খুব বিপজ্জনক কাজ তাও আবার জোড়া সাপ – তোমরা যেও না – ভীষণ বিপদ হতে পারে।’

সন্তু জোর দিয়ে বললো,
‘আমরা দূর থেকেই না হয় দেখবো – তবে আমাদের যেতেই হবে।’

ওর কথার জোর শুনে বুড়ো সাপুড়ে আস্তে করে বললো,
‘ঠিক আছে দাদাবাবুরা চলো তাহলে।’

সন্তুরা সাইকেল ঠেলতে ঠেলতে সাপুড়েদের সাথে হেঁটেই চললো ঝিলের ধারের ‘পবার’ দিকে। হাঁটতে হাঁটতে গুরুজী ছেলেটাকে বললো,
‘এরা সাধারণতঃ জোড়াতেই থাকে – ওখানে ওদের বাচ্চা কাচ্চারাও থাকতে পারে। তবে এক সাথে দুটো বেরিয়ে এলে ওদের সামলানো ভীষণ মুস্কিল হবে – প্রচণ্ড বিপদ হতে পারে আর সেটাই আমাকে চিন্তায় ফেলেছে। তোকে খুব সাবধানে আমার সাথে তাল দিয়ে কাজ করতে হবে – আমার কথার একদম নড়চড় করবি না।’

তারপর অন্তুদের দিকে ফিরে বললো,
‘এই রকম বড় কাল কেউটে থাকলে আশে পাশে অন্য কোন সাপ, ইঁদুর, ছুঁচো, ইত্যাদি কিছুই থাকবে না কারণ কাল কেউটে সব খেয়ে নেয়। এরা ১৭ / ১৮ ফুট অবধি লম্বা হতে পারে আর সাধারণতঃ খুব নিরিবিলি জায়গাতেই থাকে আর বাঁচেও অনেক দিন – প্রায় উনিশ কুড়ি বছর। লোক দেখলে এমনিতে আক্রমণ করে না তবে এরা রগচটা ধরনের আর রেগে গেলে ভীষণ সাংঘাতিক আর হিংস্র হয়ে ওঠে – এমন তাড়া করবে যে দৌড়ে ওদের কাছে পাত্তা পাবে না। মনে হয় তোমরা ঝিলের ধারে লাফালাফি করছিলে বলেই হয়তো রেগে ওভাবে তাড়া করেছিলো – সাইকেল ছিলো বলে তিন জনেই বেঁচে গিয়েছো। জন্তু জানোয়ার বা মানুষের হাঁটাতে মাটিতে যে কাঁপুনি হয় সেটা থেকেই ওরা বুঝতে পারে কোথায় আর কতটা দূরে। এদের চোখের দৃষ্টিও ভীষণ তীক্ষ্ণ – অনেক দূর অবধি দেখতে পায়। সেই জন্যই বলছি তোমরা দাদাভাইরা দূরে থাকবে। কী হতে কি হয় বলা তো যায় না।’

সন্তু জিজ্ঞেস করলো,
‘আচ্ছা গুরুজী, এই সব সাপ ধরে তোমরা কী করো? মেরে ফেলো না কি?’

গুরুজী লম্বা জিভ কেটে বললো,
‘ও কথা বলো না দাদাভাই – গুণাহ হবে। এরাই তো আমাদের জীবন – আমাদের পেটের ভাত দিচ্ছে। বড় শহরে সাপের বিষ কেনার অফিস আছে – মাঝে মাঝে পুষ্যিদের নিয়ে ওখানে বিষ বিক্রি করে আসি। ঐ বিষ থেকে ওরা সাপের কামড়ের ওষুধ বানায়। বিষাক্ত সাপও বিক্রি করি ওদের কাছে আর সাধারণ সাপ হলে জঙ্গলে নিয়ে ছেড়ে দেই। এত বড় কাল কেউটের ওরা ভালোই দাম দেবে – তারপর হয়তো চিড়িয়াখানায় রেখে দেবে কারণ এদের তো চট করে পাওয়া যায় না।’

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা