সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

ফেব্রুয়ারি মাসটা খুব হইহই করে কাটাল ইচ্ছামতী; সঙ্গে চাঁদের বুড়িও তাল মেলাল। এই মাসের শুরুতেই কলকাতা বইমেলাতে গিয়ে ঘুরে ঘুরে আমাদের তো পায়ে ব্যথা হয়ে গেছে। সারি সারি বইয়ের দোকানে মনের মত বই দেখে দেখে আর আশ মেটে না। আমরা দুজনে মিলে কিনেও ফেলেছি অনেকগুলো বই — সরু বই, মোটা বই, হাল্‌কা বই, ভারী বই। তুমি কি বইমেলায় যাও? কেন নিজের পছন্দের বই? লিখে জানাতে পারো ইচ্ছামতীকে, তোমার পছন্দের বইগুলোর কথা।

এবারের বইমেলাতে আমাদের সবথেকে পছন্দ হয়েছে যে বইগুলি, সেগুলি আপাতত সরাসরি কিনতে পাওয়া যাচ্ছে না। মলাটে পটচিত্রের আঙ্গিকে নকশা আঁকা, 'ইতিহাসে হাতেখড়ি' সিরিজে তিনটে বইয়ের নাম 'দেশের ভাষা, 'দেশভাগ', 'দেশের মানুষ'। 'দেশের ভাষা, 'দেশভাগ', 'দেশের মানুষ' লিখেছেন যথাক্রমে দেবারতি বাগচী, অন্বেষা সেনগুপ্ত, তিস্তা দাস। বইগুলির পরিকল্পনা করেছেন ওয়াসিম হেলাল আর ছবি এঁকেছেন পিংলা থানার নয়া গ্রামের পটশিল্পী রঞ্জিত চিত্রকর এবং তাঁর ছেলে সিরাজদ্দৌলা চিত্রকর। ইন্‌স্‌টিটিউট অফ ডেভেলপমেন্টাল স্টাডিজ,কলকাতা থেকে প্রকাশিত এই বইগুলি নির্মাণের জন্য আর্থিক সহায়তা দিয়েছে জার্মানির রোজা লুক্সেমবুর্গ স্টিফটুং।

মেলায় বইগুলির দুটি করে কপি রাখা ছিল। জানা গেল https://rosalux.in এ গিয়ে বিনামূল্যে ডাউনলোড করে নেওয়া যায়। বাড়ি ফিরে ঝটপট ডাউনলোড করেও নিলাম। এই বইগুলি তোমার মত স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের কথা ভেবেই লেখা হয়েছে। দেশভাগ, দেশের ইতিহাস, ভাষার ইতিহাস নিয়ে রোজ আমাদের সামনে হাজির হয় কত তথ্য। তার মধ্যে ঠিকের বদলে বেঠিক তথ্য অনেক বেশি। এই বইগুলিতে সেইসব মিথ্যের জালে ঘেরা, হোয়াটস্যাপে 'ফরোয়ার্ড' হয়ে আসা ভুল তথ্যের মাঝখান থেকে সত্যিটাকে বার করে আনার চেষ্টা করা হয়েছে।

এই বইগুলো দেখার পরে ইচ্ছামতীও দেশভাগ, দেশের ভাষা — এসব নিয়ে ইন্টারনেটে একটু পড়াশোনা শুরু করল। ইচ্ছামতী বেশ বড় হয়ে গেছে, তাই নিজে নিজে গুগ্‌ল্‌ সার্চ করে দেশ বিদেশের ভালোমন্দ খবর পড়ে আজকাল। ইন্টারনেট ব্রাউজ করেই ইচ্ছামতী জানতে পেরেছে ইউক্রেন আর রাশিয়ার যুদ্ধ এক বছর পরেও থামেনি। অন্যদিকে তুরস্ক আর সিরিয়াতে বারেবারে ভূমিকম্পে মানুষের জীবন সংকটে। আবার ভারতের হিমালয়ের কোলে যোশীমঠ শহরটা ধীরে ধীরে মাটিতে বসে যাচ্ছে। মূল কারণ, অতিরিক্ত নগরায়ন। প্রকৃতির নিয়ম এবং বিজ্ঞানীদের হুঁশিয়ারিকে অবজ্ঞা করার ফল ভুগছে এই শহর। এইরকম সব খবর পড়লে ইচ্ছামতীর আর আমার মন খারাপ হয়। তাই আমরা ভালো খবরের খোঁজ করলাম।

ভালো খবরের খোঁজে গিয়ে জানলাম, বাংলাদেশ সরকারের বাংলা ভাষা-প্রযুক্তির গবেষণা ও উন্নয়ন হাব Bangla.gov.bd তৈরি করে ফেলেছে নতুন এক বাংলা স্পেলচেকার। এর মানে হল, কম্পিউটারে বাংলা টাইপ করতে করতে তুমি যদি একটা বানান ভুল লিখে ফেলো, তাহলে এই অ্যাপ্লিকেশন তোমার ভুল বানান বা ব্যকরণের ভুল প্রয়োগকে ধরিয়ে দেবে। এই বাংলা স্পেলচেকারের নাম 'সঠিক' (https://spell.bangla.gov.bd/) । জনপ্রিয় ইংরেজি স্পেলচেকার 'গ্রামারলি'-এর মতই কাজ করবে, বাংলা ভাষার জন্য। সবে পেরিয়ে গেল ২১ ফেব্রুয়ারি — 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস'। এই মাসে 'সঠিক'-এর মত দারুণ প্রয়োজনীয় একটা অ্যাপ্লিকেশনের খোঁজ পাওয়া কিন্তু খুবই ভালো একটা ব্যাপার। আরও একবার, বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের গর্বিত করলেন এই গবেষণায় যুক্ত সমস্ত তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, গবেষক এবং অন্যান্যর কর্মীরা।

ইচ্ছামতীর এই ফেব্রুয়ারির কিস্তিটা ব্রাউজ করলেই বুঝতে পারবে, এবারের কিস্তি একটু আলাদা। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবং বাংলা শিশুসাহিত্যের সুদীর্ঘ ইতিহাসকে মনে রেখে, আমাদের এই মাসের কিস্তিতে রয়েছে প্রিয় সাহিত্যিকদের কলমে এক গুচ্ছ পুরনো লেখা। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, সুকুমার রায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুখলতা রাও, হেমেন্দ্রকুমার রায় আর প্রেমেন্দ্র মিত্রের লেখা গল্প, রূপকথা, নিবন্ধ আর ছড়া রইল তোমার জন্য। মজার কথা এই যে, এবারের একটা বাদের বাকি সমস্ত লেখাগুলির সঙ্গে ব্যবহার করা ছবিগুলি তৈরি হয়েছে ডাল-ই ডিপ লার্নিং মডেল ব্যবহার করে। সোজা ভাষায় বললে, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে লিখে বলে দিয়েছি কেমন ছবি চাই, আর সে কয়েক মূহুর্তে তৈরি করে দিয়েছে পছন্দ হতে পারে এমন কিছু ছবি। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এমন কাজ চোখের পলকে করে ফেলতে পারলে গ্রাফিক শিল্পীদের জন্য সেটা খুব ভালো হবে না। কিন্তু তাঁদের জীবন এই প্রযুক্তি কীভাবে বদলাতে পারে সেটা ভবিষ্যৎ বলবে। আমাদের আনন্দ এইখানে যে, গত চৌদ্দ বছর ধরে, প্রতিদিনের বদলাতে থাকা প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেকে বদলেছে ইচ্ছামতী। কয়েক দশক বা এক শতক আগে বাংলা ভাষায় লেখা গল্প-কবিতার সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সৃষ্টি করা ছবি সাজিয়ে সেই পথেই আরও এক পা এগিয়ে গেল ইচ্ছামতী।

ভালো থেকো। বাংলা বই, বাংলা পত্রিকা নিয়মিত পড়তে থেকো।

১৫ ফাল্গুন ১৪২৯
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা