সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
চাঁদের বুড়ির চরকা চিঠি ১৪২২/১৭ - আজ সরস্বতী পুজো

আজ সরস্বতী পুজো। আজ কোন পড়াশোনা নেই। স্কুলের বই খাতা ধরা তো পুরোপুরি বারণ। তবে ইচ্ছামতী পড়া চলবে। ইচ্ছামতী তো আর পড়ার বই নয়, ইচ্ছামতী তোমার বন্ধু। আর ছুটির দিনে বন্ধুর সাথে যদি একটু গপ্পো-সপ্পোই না হল, তাহলে আর ছুটি পেয়ে লাভটা কি বল?

আমি যখন ইচ্ছামতীর মত ছোট ছিলাম, তখন মনে মনে পুরোপুরি বিশ্বাস করতাম, সরস্বতী পুজোর দিন কোন কিছু পড়লেই মনে হয় মা সরস্বতী বেজায় রাগ করবেন। ভয়ের চোটে খবরের কাগজের দিকে পর্যন্ত তাকাতাম না। আর সরস্বতী পুজোর আগে তো কুল খাওয়া কিছুতেই চলবে না। তাহলেও মা সরস্বতী ভীষণ রুষ্ট হবেন। তুমি কি বিশ্বাস কর এরকম কথা ? ইচ্ছামতী তো আমার কথায় কানই দিল না। দিব্যি দু'পা দুলিয়ে দুলিয়ে পাকা টোপাকুল খাচ্ছে ! বলছে এইসব বাজে নিয়ম মোটেও মা সরস্বতী কাউকে কোনদিন বলে দেন নি। এ সবই মানুষের বানানো নিয়ম। অন্য মানুষের বানানো সব নিয়ম কানুন , ভাবনা-চিন্তা না করে চুপচাপ মেনে নিতে নেই। দরকার পড়লে, যুক্তি দিয়ে , বুদ্ধি খাটিয়ে প্রশ্ন করতে হবে। উত্তর যদি যুক্তি-বুদ্ধি দিয়ে বুঝে ঠিকঠাক না লাগে, তাহলে আরো প্রশ্ন করতে হবে, আরো উত্তর খুঁজতে হবে। ততক্ষণ, যতক্ষণ না তোমার মনের সব কৌতূহল মেটে।

নাহঃ, ইচ্ছামতীকে যতই ছোট বলি ( মোটে সাত বছরের একটু বেশি বয়স), কিন্তু দেখছি সে আসলে বেশ বড় হয়ে গেছে। কিরকম ভাবনা চিন্তা করে কথা বলছে। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তো সরস্বতী ঠাকুরের কাছে কি প্রার্থনা করবে তুমি? সে উত্তর দিল, লিখতে আর পড়তে জানলেই 'শিক্ষিত' হওয়া যায় না; নিজের বিচার-বুদ্ধি দিয়ে ঠিক আর ভুলের মধ্যে ফারাক করতে পারে যারা, তারাই আসল 'শিক্ষিত' মানুষ। আমি চাইব আমার প্রত্যেকটা বন্ধু যেন সঠিক অর্থে 'শিক্ষিত' হয়ে ওঠে।

বলতে গেলে, ইচ্ছামতী একেবারে আমার মনের কথাই বলেছে। আমিও চাই, ইচ্ছামতীর সব বন্ধুরা সঠিক অর্থে 'শিক্ষিত মানুষ' হয়ে উঠুক; শুধুমাত্র পড়ার বইয়ের দু-মলাটের মধ্যে লেখা যত কথা মুখস্থ করে আওড়াতে পারা তোতাপাখি যেন না হয়। আর আমি জানি, জ্ঞানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী সরস্বতীও সেটাই চান।

আজ বাংলা মাঘ মাসের শেষ দিন। ইংরেজি ফেব্রুয়ারি মাসের প্রায় মাঝামাঝি। হিসেবমত শীত চলে গিয়ে বসন্তকাল আসার সময়। আমাদের পাড়ায় শীত প্রায় চলেই গেল। গরম সোয়েটার -চাদর আবার বাক্সবন্দী করার সময় এসেছে। কিন্তু তোমার পাড়ায় কি অবস্থা? ইচ্ছামতীর কোন কোন বন্ধু জানাচ্ছে, তাদের পাড়ায় নাকি বেজায় বরফ পড়ছে। আমাদের তো দিনের বেলা বেশ গরম লাগছে, এদিকে মাঝেমধ্যেই উল্টো-পাল্টা ঠাণ্ডা হাওয়াও দিচ্ছে। এই রকম উল্টোপাল্টা বয়ে চলা দুষ্টু হাওয়ার থেকে একটু সাবধানে থাকতে হবে কিন্তু। সুযোগ পেলেই সর্দি-কাশি-জ্বরে তোমাকে কাৎ করে দিতে পারে। ব্যাস, তখন থাক ঘরবন্দী হয়ে কিছুদিন।

এতক্ষণে তুমি হয়ত ভাবছ, চাঁদের বুড়ি আজ একখানা বেশ লম্বা চিঠি লিখছে দেখছি ! বলি, ব্যাপারখানা কি? সত্যি কথা, অনেকদিন পরে আজ তোমাকে বড় চিঠি লিখছি। গত পুজোর পর থেকে মনে মনে ইচ্ছে থাকলেও, খুব নিয়ম করে নতুন নতুন গল্প-কবিতা বা অন্যান্য লেখালেখির যোগান দিতে পারিনি। তার দায় পুরোটাই এই চাঁদের বুড়ির।

একবার তার চশমা হারায়;
একবার তার চরকা বিকল;
কখনো বা জট বেঁধে যায়-
সাতরঙা সব সুতো;
সত্যি কথা বলছি তোমায়,
নানান গন্ডগোলের পাকে,
অনিচ্ছেতেও হয় যে দেরি-
ভেবনা নেহাত ছুতো ।।

এরকমটা যে আর হবেনা, তেমন কথা দিতে পারছি না বাপু। তবে অবশ্যই চেষ্টা করব, প্রতি মাসে নিয়ম করে বিভিন্ন বিভাগে নতুন নতুন লেখা প্রকাশ করতে। গল্প- কবিতা- রূপকথা ছাড়াও, ইচ্ছামতী বিভিন্ন তথ্যমূলক বিভাগগুলির জন্য চাই অনেক অনেক লেখা। তুমি যদি মনে কর, তুমি ইচ্ছামতীর যেকোন তথ্যনির্ভর বিভাগে লেখা দিতে পার, তাহলে আমাকে অবশ্যই মেইল কর।

চাঁদের বুড়ির চরকা চিঠি ১৪২২/১৭ - আজ সরস্বতী পুজো

ছুটির আমেজ আর শীতশেষের রোদ্দুরের সাথে ইচ্ছামতী আর আমার তরফ থেকে তোমার জন্য রইল একমুঠো কুল আর কয়েকখানা পলাশ ফুল।

ভাল থেক।

চাঁদের বুড়ির চরকা

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা