সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
বুমবুমের প্রশ্ন

বুমবুম এখন মাঝে মাঝে খুব মুশকিলে পড়ে। বড়দের আচরণে একটু বিরক্ত ও বটে। আসল কথা হল বুমবুম যে আর সেই ছোট্টটি নেই বড়রা তা বুঝেও বোঝেনা। ও বুঝতেই পারে না ওরা ঠিক কী ভাবে ওর ব্যাপারে। যখন ও ঠিক কথা বলে, উচিত কথা বলে তখন বলবে "পাকামি করবে না। বড্ড বেড়েছো আজকাল"। যখন কিছু জানতে চাইবে তখন "তুমি তো বাবা এখন ছোটো। বড় হও তখন জানতে পারবে"।

যেমন ধর, অন্ধকার করে বৃষ্টি হচ্ছে বা খুব গরম কিংবা এমনি এমনিই বুমবুমের বিছানা থেকে উঠতে ইচ্ছে করছে না সকালবেলা, ছোটো ছেলে তো! আর দেখে কে? মাম্মা তো ঝাঁপিয়ে পড়বে বুমবুমের ওপর "বুমবুম ওঠো, এত বড় ছেলে কেউ এত বেলা অবধি ঘুমায়? স্কুলের বাস এসে যাবে....প্রতিদিন তোমায় এক কথা কতদিন বলতে হবে? তুমি কী সেই ছোটটি আছো?" বুমবুম তো বীর বিক্রমে উঠে পড়লো ও জানে কালতুস আর তার মা এখন ব্যালকনির সামনে গাছটায় ওর বাবিনের অপেক্ষায় বসে। কখন বাবিন চা খাওয়ার সময় বিস্কিট দেবে আর ওরা এদিক ওদিক দেখে উড়ে এসে একবার বুমবুমের দিকে চেয়ে ছোঁ মেরে নিয়ে চলে যাবে। তবুও ও তো ব্যালকনির দিকে না গিয়ে লাফিয়ে টুথব্রাশ নিয়ে বেসিনের সামনে, লেট রাইজিং মেকআপ দিতে। কালতুস কা কা করে ডাকছে। বুমবুম তো টাওয়েল এ মুখ মুছতে মুছতে এক ছুটে ওকে একটু দেখা দিয়েই স্কুলের জন্য তড়িঘড়ি রেডি হতে লাগল। যদিও ও তখন কালতুস এর সঙ্গে একটু খুনসুটি করতে চাইছিল। কিন্তু ও তো বড় হয়ে গেছে ও জানে ওর বাসে উঠতে দেরী হলে স্কুল যেতে দেরী হবে তাও যে ও মোটেই পছন্দ করে না।

বুমবুমের আবার সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরী হল। তাই রেডি হতেও দেরী। স্কুল বাস হর্ন দিচ্ছে বার বার। বুমবুমের মাম্মা ব্যাগ কাঁধে আর এক হাতে বুমবুমকে হিড়হিড় করে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছিলেন বাসে তুলতে, প্রায় দৌড়চ্ছিলেনই বলা চলে। তখনই তো মোটা ল্যাজু ওর দিকেই ছুটে আসছিল। কিছু একটা বলার ছিল হয়তো ওর। কিন্তু ওর তো সময় নেই। ও হাত নেড়ে বাসে উঠে পড়েছিল। সেইদিন বিকালে ও যখন গাড়ি থেকে নেমে রেবাপিসির সঙ্গে বাড়ি ফিরছে মোটা ল্যাজু যেন ওর জন্যেই বসে ছিল। ওর পায়ে সে কী মাথা ঘষা। ও ঠিকই বুঝেছে কিছু একটা অনর্থক ঘটেছে। মোটাল্যাজু মিঁউ মিঁউ করে কান্নাও জুড়লো। ও রেবা পিসির হাত ছাড়িয়ে দৌড়ল ফ্ল্যাট বাড়ির পেছনে যেখানে মোটাল্যাজু তার তিন সন্তানকে নিয়ে আস্তানা করেছিল। যা ভেবছিল তাই। একটাও বেড়াল ছানা নেই। কোথায় গেল ছানা গুলো? কেউ নিশ্চয় মেরে তাড়িয়ে দিয়েছে বা কোথাও ছেড়ে দিয়ে এসেছে। দুষ্টু লোকের তো অভাব নেই। এই তো কিছুদিন আগে ওর চোখের সামনে একে একে হারিয়ে গেল কেলটু, ওর বউ লালি তাদের চার সন্তান, ঝুপি, পুপি, টুকী আর জম্পেশ (নামকরণ সব বাবিনের), কালটুর খোঁড়া বাবা আর কাকাবাবু । ওদের বংশ পরিচয় বাবিনের কাছেই জানা। পাড়ার মাঠে ওরা সব উল্টে পাল্টে পড়েছিল। কী যে হল বুমবুম জানে না।

আজও খুব মনখারাপ নিয়ে বুমবুম বাড়ি এল। অভ্যাস মত ব্যালকনির চেয়ারে বসল। এই সময় ও বাড়িতে একা। ওর বাবিন আর মাম্মা'র কর্মস্থল থেকে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা এমনকী রাত ও হয় মাঝে মাঝে। ওমা এ কী কান্ড! সেই গোল ছাতার মত যার মাথা পাতা পাতায় ঢাকা সেই গাছটা গেল কোথায়? যার ভেতর কত ছোটো ছোটো পাখির বাসা ছিল, কত পাখি এমনিই বসে থাকতো। গাছের নীচে কত সময় কত লোক একটু পা ছড়িয়ে বসে পড়তো আর বুমবুম রোজ বিকালে দেখতো সূর্যিঠাকুর কেমন আস্তে আস্তে সারাদিনের ডিউটি দিয়ে বাড়ির দিকে পা বাড়াচ্ছে ,ওর মনে হত ধীরে ধীরে গাছটার পেছন দিয়ে যেন লাল আবীর ছড়িয়ে আস্তে আস্তে মিলিয়ে যেত। সেই গাছটাও ভ্যানিশ!
"রেবাপিসি গাছটা কোথায়?" রেবাপিসি ওর চিৎকারে ছুটে এসেছে। "কেন টবের সব গাছ তো ঠিকই আছে। আমি একটু আগেই জল দিয়েছি।"
" আরে রাস্তার ধারের গাছটা, ওই যে ওখানে ছিল"
"অ তাই বল।" রেবা পিসি নিশ্চিন্ত। তারপর দম নিয়ে বললেন, "ও আজ কেটে ফেলেছে"
"কেটে ফেললো? কারা? কেন" বুমবুম আঁতকে উঠলো। "
"কী জ্বালাতন! তার আমি কী জানি। এত বড় বড় লোকজন আছে কেউ কিছু বললো না মানে নিশ্চয় প্রয়োজন ছিল।"
বুমবুমের বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠলো। বড় হয়ে গেলে কী এত প্রয়োজন হয় লোকের যে তারা যা ইচ্ছে তাই করে। কই সে তো ছোটো সে তো যা ইচ্ছে তাই করতে পারে না।"
রেবাপিসির সে কী হাসি।
"তুমি বড় হও তখন বুঝবে। আমি যাই।"
বললো বটে কিন্তু মনে মনে ভাবল ছেলেটা বড় মায়ময়। আর বুমবুম ভাবল সে ও কি বড় হলে এমন হয়ে যাবে? তাহলে ছোট থাকই ভাল।

বুমবুমের প্রশ্ন

রাতের বেলা ও যখন খেয়ে বেডরুমে ঢুকলো দেখলো বাবিন মন দিয়ে ল্যাপটপে কাজ করছেন। মাম্মা ওকে বিছানায় উঠতে বলে টিভিতে খবরটা চালাল, ঠিক সেই সময় বুমবুম বাবিনের কোল ঘেঁষে বসে জানতে চাইল, "বাবিন পাড়ার লোকজন পাড়ার কুকুর, বেড়াল আর গাছগুলো আ্যডপ্ট করতে পারে না যাতে কালতুদের পরিবার নিয়ে মরতে হয় না, মোটা ল্যাজুর ছানাগুলো, রাস্তার ওই গাছটা ভ্যানিশ না হয়ে যায়। কত লোকের বাড়িতেই তো কত কুকুর পাখি থাকে, চিড়িয়াখানার জন্তুগুলোও তো অনেকে আ্যডপ্ট করে শুধু এই আমাদের চারপাশেরটাই চেয়ে দেখি না কেন?" মাম্মা ঝাঁজিয়ে উঠল "এই দুকামরার ফ্ল্যাটে কোথায় তুলবে শুনি? পারবে ওদের দেখভাল করতে? শুধু খেতে দিলেই হবে?"

"কে বলল মাম্মা আমি ওদের ঘরে আটকে রাখব? আমরা ওদের খেতে দেবো বাকিটা ওরা নিজের মত থাকবে আমরা শুধু খেয়াল রাখবো দুষ্টু লোক যেন ওদের ক্ষতি করতে না পারে।আমরা যদি ওদের আ্যডপ্ট করি ওদের ওপর আমাদের অধিকার থাকবে আমরা ওদের হয়ে লড়াই করবো সবাই মিলে।" বাবিন ল্যাপটপ বন্ধ করে অবাক চোখে তাকান তাঁর ছেলেটার দিকে। সত্যি তো এই ছেলেই তো বায়না করে খাঁচাসুদ্ধ পাখি কিনে ছাদে উঠে উড়িয়ে দিয়েছিল।

বড় বড় সরল দুটো চোখ বাবার দিকে অপলক তাকিয়ে...আর তার মাম্মা গজরাতে থাকে "ছোটমুখে খালি বড় বড় কথা"। বাবা কী বোঝাবেন এই অবোধ শিশুকে? তবে ওর মাম্মার কথার রেশ ধরে এটাই উপলব্ধি করতে পারছেন বড়রা যেমন ছোটদের জ্যাঠামো পছন্দ করেন না ছোটরাও তেমন সহ্য করতে পারে না বড়দের ছোট হওয়া। ল্যাপটপটা বন্ধ করে ছেলের পিঠে হাত দিয়ে মুচকি হেসে বললেন "একদম ঠিক কথা বলেছিস। দেখি কী করা যায়। আজ ঘুমিয়ে পড়।" "প্রমিস?"
"প্রমিস" ওর হাতের ওপর বাবিনের হাত।

কি এখন তোমাদেরও মনে হচ্ছে তো আমাদের বুমবুম টা সত্যি সত্যিই বড় হয়ে গেল !

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা