সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
সদানন্দ ব্যাঙের গল্প

বিষাই সাপের খুব মন খারাপ। তার বৌ শান্তমণিকে কিছুতেই খুশি করা যায় না। সে ঘরের এক কোণে সেই যে সেঁধিয়ে গেলো আর বেরোতে চায় না। আসলে সে বড়ই অলস। নড়েচড়ে ব্যাঙ ধরে খেতে চায়না। গর্তের মধ্যে থেকে মাথাটা বের করে বলে -

"বর্ষাকালে মেঘ গুড়গুড় ,
গ্রীষ্মে রোদের তেজ ,
শীত পড়লেই হাড় কনকন
জমেই যাবে লেজ।"

কালাচ কবিরাজ বিধান দিলেন ফুর্তিবাজ ব্যাঙের মাংস খেলে তবেই শান্তমণি তার সমস্ত শক্তি, ফুর্তি ফিরে পাবে।
বনের মধ্যে একমাত্র ফুর্তিবাজ ব্যাঙ ছিল সদানন্দ। রাত নেই দিন নেই গাল গলা ফুলিয়ে সারাক্ষণ গান গাইতো আর নাচ করতো। সে বলতো ,

"ব্যাঙ ব্যাঙাচি , মজায় বাঁচি
ঠ্যাং দুলিয়ে তা ধিন তাক
অসুখ জ্বালা দুঃখ বালাই
সর্দি হাঁচি তফাৎ যাক "

এই বলে সে সারাক্ষণ আনন্দে থাকতো। তার কথা তাই বনের সবাই জানতো।
সকাল সকাল বিষাই সাপ তার বাড়ির সামনে গিয়ে হাজির।
-"ও সদানন্দ বাড়ি আছো নাকি?"
সদানন্দ দেরী করে ঘুম থেকে উঠেছিল সেদিন। ঘুম জড়ানো চোখে গর্তের জানলা খুলেই তার আক্কেল গুড়ুম।
-"কী হলো বিষাই দা ?"
-"আর বোলোনা গিন্নীর খুব অসুখ করেছে। শরীরে মনে একটুও ফুর্তি নেই। কবিরাজ বিধান দিয়েছেন তোমার মতো ফুর্তিবাজ ব্যাঙ-কে দেখলেই গিন্নী একেবারে চাঙ্গা হয়ে যাবে।"
-"বলো কী ?" বিষাই একটু ঢোঁক গিলে বললো
"তবে আমার তো সব ফুর্তি শেষ গো বিষাই দা। মনে কোনো আনন্দ নেই। গত বর্ষায় আমার বিয়ে হয়েছে তা আমার বৌ-এমন ঝগড়া করে। এক মুহূর্তও তিষ্ঠোতে দেয় না।

"কোমর বেঁধে ফুলিয়ে গাল
রেগে ভাঙেন গাছের ডাল
একটু খানি আড়াল হলেই
দুইখানি চোখ করেন লাল "

বিষাই মনে খুব দুঃখ পায় । তারপর ভেবে বলে তা তো হবেই , তা তো হবেই নতুন নতুন বিয়ে তো। আমি বরং কিছুদিন পরে আসবো।
এমনি করে দু এক বছর কাটে।
বিষাই সাপ আবার আসে।
-"কী হে ভাই সদানন্দ। কীরকম ফুর্তিতে রয়েছো দেখি।"
-"আর কোথায় ফুর্তি গো বিষাই দা। এই যে বারো খানা ছানা পোনা তাদের ইস্কুল, পড়াশোনা। হাড় মাস জ্বালিয়ে খেয়ে নিলো।

"জুলপি টেনে কাঁদতে বসে
এক্ষুনি চায় কুলপি তার
ডিগবাজি দেয় মাথার ওপর
ধরতে গেলেই পগার পার
মুখটা করে পাঁচের মতো
যেই খেতে দাও শ্যাওলা ঝোল
পড়ার সময় ঘুমিয়ে পড়ে
অন্য সময় শুধুই গোল”

-"তা তো হবেই, তা তো হবেই। তবু তোমার ফুর্তিবাজ ব্যাঙ তো জঙ্গলে আর কোথাও নেই। আমি পরে আবার আসবো হ্যাঁ।" বলে বিষাই চলে যায়।
আবার কয়েক বছর পর বিষাই উঁকি দেয় -"কী হে সদানন্দ আর কতদিনে তোমার ফুর্তি ফিরবে ?"

-"কী আর বলি বিষাই দা
বারো ছেলে গেলো বারো সমুদ্র পার
বহুদিন কোনো খবর পাই না তার
সেই থেকে মনে চিন্তা যে ভারী
ভেবে ভেবে তাই বেড়ে গেলো দাড়ি
ফুর্তিতে থাকা কী করে যাবে গো আর "

সদানন্দ ব্যাঙের গল্প

এমনি করে একদিন সাপ আর সাপের বৌ বুড়ো হলো। তখন তারা আর চলতে পারে না। নড়াচড়া করে ব্যাঙ ধরে খেতে পারে না।
তখন ব্যাঙ ব্যাঙের বৌ আর ব্যাঙের বারো ছেলে যারা ওই গর্তের মধ্যে লুকিয়ে ছিল তারা বেরিয়ে সাপের বাসার চারদিকে ফুর্তিতে নাচ করতে লাগলো।

"ব্যাঙ-ব্যাঙাচি , মজায় বাঁচি
ঠ্যাং দুলিয়ে তা ধিন তাক
সাপের মাসি , সাপের পিসি
সাপের খুড়ো তফাৎ যাক। "

দ্বৈতা হাজরা গোস্বামী বর্তমানে বেঙ্গালুরর বাসিন্দা। গবেষণা করছেন বৈদিক সাহিত্য নিয়ে। ভালোবাসেন কবিতা ও ছোটগল্প লিখতে , ছবি আঁকতে, যে কোনো সৃষ্টিশীল কাজে ডুবে থাকতে, আর ছোটদের সঙ্গে সময় কাটাতে।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা