সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
মিউ মিউ

"জয়েন ইওর হ্যান্ডস চিলড্রেন, নাও ক্লোজ ইওর আইজ অ্যান্ড স্টার্ট ইউর প্রেয়ার"... মিউ মিউ। কুচোগুলো প্রেয়ার শুরু করার মুহূর্তেই হটাৎ কোত্থেকে অস্ফুট দুটো মিউ মিউ শোনা গেল। পুরো ক্লাস চুপ। এমনিতেই সারা ক্লাসে মোটে পনেরোটা বাচ্চা। পুরো জুনিয়র স্কুল মিলিয়ে হয়ত একশোটা বাচ্চা হবে সাকুল্যে। প্রায় দীর্ঘ দুবছর পরে আজ স্কুল খুলেছে। কিন্তু অভিভাবকেরা সকলে এখনো ভরসা করে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে পারছেন না। অতিমারীর প্রকোপ আগের চেয়ে অনেক কম হলেও পুরোপুরি এখনো নির্মূল হয়নি। তাই বাবা মায়েরা অনেকেই কিছুটা সন্দিহান। আবার প্রেয়ার শুরু হতে যাবে এমন সময় আবার মিউ মিউ আওয়াজ। এবার যেন আরেকটু জোরে। আওয়াজটা ঘরের ভেতর থেকেই আসছে। কিন্তু ক্লাসরুমের মধ্যে বেড়াল আসবে কোত্থেকে? প্রেয়ারটা কোনমতে শেষ করে ম্যাম ফ্লোর অ্যাটেনডেন্টদের একজনকে ডেকে পাঠালেন।

আঁতিপাতি করে সারা ক্লাসরুম খুঁজে অবশেষে স্মার্ট বোর্ডের সি পি ইউ ইউনিটের তলা থেকে তিনটে কচি বেড়াল ছানা বেরলো। বেচারাদের এখনো চোখ ফোটেনি। ওদের মা নিশ্চয়ই খাবার সংগ্রহ করতে বেরিয়েছিল, ভাবতে পারেনি হটাৎ এত মানুষ এসে পড়বে। এতদিন ধরে বন্ধ স্কুল বাড়িতে ওরা দিব্যি সংসার পেতেছিল। এত লোকজনের মধ্যে বেচারি মা হয়ত সাহস করে বাচ্চাদের কাছে আসতে পারছে না। অ্যাটেনডেন্টরা বাচ্চাগুলোকে ঘেঁটি ধরে নিয়ে যাওয়ার উপক্রম করতেই আরণ্যক, দেবদ্বীপ, সুবান, জয়ী, অমৃতা, ঐশী সকলে "নো ম্যাম" বলে প্রায় কেঁদে উঠল। সত্যি তো, ওইটুকু বাচ্চাগুলোকে অন্য কোথাও ছেড়ে দিয়ে এলে ওদের মা কী করে ওদের খুঁজে পাবে? আর মাকে ছাড়া অতটুকু বাচ্চাগুলো তো মরেই যাবে। ক্লাস টিচারেরও মনে হল, ঠিকই তো। তিনি তৎক্ষণাৎ ওদের বারণ করে বললেন "আপনারা যান, আমি দেখছি কী করা যায়।" কাকুরা চলে যেতেই বাচ্চাদের মুখে একরাশ হাসি। ক্লাস টিচারের চোখের কোণে জল চলে এল। একে তো এতদিন পরে বাচ্চাগুলোকে দেখছেন তারপর বেড়াল ছানাদের প্রতি ওদের মায়া মমতা দেখে তাঁর মন ভরে এল।

দুবছর পর স্কুল খুলেছে। এতদিন পরে টিচার আর বন্ধুদের দেখে বাচ্চারা দারুণ খুশি। কত কথা জমে আছে ওদের মনে, কতকিছু বলার আছে, আজ কী আর পড়াশুনো হয়? ম্যামেরও সত্যি কথা আজ একটুও পড়াবার মুড নেই। তাঁরও ইচ্ছা করছে আজ বাচ্চাদের সাথে গল্প করি। বেড়াল ছানাগুলোর নিশ্চয়ই খিদে পেয়েছে, তাই মিউ মিউ করে কাঁদছে। কিন্তু দুধ কোথায় পাওয়া যায়? স্কুলের ক্যান্টিনও তো বন্ধ। শুধুমাত্র চা টুকু পাওয়া যাচ্ছে। ম্যাম বেরিয়ে গিয়ে প্রিন্সিপাল আর অন্যান্যদের সঙ্গে কথা বলে এলেন। একটু পরে দেখা গেল একজন অ্যাটেনডেন্ট দিদি একটা বাটি করে দুধ নিয়ে এলেন। বাচ্চারা হৈ হৈ করে এগিয়ে আসতেই টিচার কড়া গলায় বললেন "নো চিলড্রেন, ইউ উইল নট কাম আউট অফ ইউর প্লেসেস।" বাচ্চাগুলোর তো এখনো চোখই ফোটেনি, ওরা নিজেরা খাবে কী করে? খানিকক্ষণ পরে একটা ড্রপার জোগাড় করে এনে ওই দিদি বাচ্চাগুলোকে খাওয়ালেন। আহা রে, বেচারারা কতক্ষণ না খেয়ে ছিল কে জানে! ক্লাসের বাচ্চারা আনন্দে হাততালি দিয়ে উঠতেই ক্লাস টিচার সঙ্গে সঙ্গে ইশারায় বারণ করে বোঝালেন যে ওরা ভয় পেয়ে যাবে।

স্কুল আওয়ার্স এখন অনেক কম। তাই গল্প গুজব করে আর বেড়াল ছানাদের নিয়েই দিনটা প্রায় কেটে গেল। বাচ্চাদের মধ্যে বেড়াল ছানাদের দেখভাল করা নিয়ে অনেক আলোচনাও হল। কে কী দায়িত্ব নেবে, বাড়ি থেকে কে কী আনতে পারবে সেসব ঠিক হয়ে গেল। বিরাট একটা দায়িত্ব পেয়ে ওরা দারুণ খুশি আর উত্তেজিত দুইই। পরদিন দেবদ্বীপ বাড়ি থেকে বড়সড় একটা বাক্স নিয়ে এসেছে। আরণ্যক এনেছে তুলো। সেই তুলো বাক্সের মধ্যে বিছিয়ে ওদের নরম বিছানা তৈরি করা হবে। জয়ী আবার মায়ের স্টক থেকে ডেটল আর ছুঁচ বিহীন কতগুলো ইনজেকশনের সিরিঞ্জ এনেছে। যদি ওদের খাওয়াতে লাগে। অমৃতা আর ঐশী মিলে তিনটে সুন্দর বো বানিয়ে এনেছে ওদের গলায় বেঁধে দেবে বলে। কিন্তু কোথায় ওরা? সি পি ইউর ক্যাবিনেটের তলা তো ফাঁকা। বাচ্চাপার্টি হতাশ। ম্যাম বললেন ওদের মা নিশ্চয়ই ওদের অন্য কোথাও সরিয়ে নিয়ে গেছে। কুচোগুলোর চোখ প্রায় ছলছলে। ওদের করুণ মুখ দেখে ক্লাস টিচারের খুব মায়া হচ্ছিল। তিনি তখন বোঝালেন "তোমরা যে আগেরদিন ওদের অত যত্ন নিয়েছো ওরা নিশ্চয়ই ওদের ভাষায় ওদের মাকে সব বলেছে। ওদের মাও শুনে নিশ্চয়ই খুব খুশি হয়েছে। ওরা চলে গেছে ভেবে কষ্ট না পেয়ে আমাদের বরং খুশি হওয়া উচিত যে ওরা ওদের মায়ের কাছে আছে। তোমরা কী তোমাদের মায়েদের ছেড়ে থাকতে পারো বলো?" সবাই প্রায় সমস্বরে বলল "নো ম্যাম"। "তাহলে চলো লেটস অল বি হ্যাপি ফর দেম।"

পেশায় শিক্ষিকা। বসবাস কলকাতায়। বই পড়তে, লিখতে, ছবি আঁকতে এবং বেড়াতে ভালবাসেন।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা