সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
টিনটিন আর স্যান্টা ক্লজ

তক্কে তক্কে ছিল টিনটিন। ঘুমের ভান করে পড়ে। বুড়ো পেছন ঘুরতেই লাফিয়ে উঠে বুড়োর কাঁধ থেকে ঝুলে পড়ল। "কেন, আমায় বাজে গিফ্ট দিয়েছো? এসব পাজল টাজল তো মা বাবাই কিনে দিতে পারে, তার জন্য তোমায় কী দরকার?" স্যান্টা ক্লজের তখন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাচি অবস্থা। দস্যি ছেলে পিঠের ওপর দুম দুম করে ঘুঁসি মারছে। "ওরে ছাড়, ছাড়। অনেক বয়স হয়েছে আমার, এত অত্যাচার করিস না। বল কী চাই তোর?" তৎক্ষণাৎ জবাব এল "আমার একটা স্মার্ট ফোন চাই"। শুনে স্যান্টা দাদু প্রায় আঁতকে উঠলেন। "নার্সারি ওয়ানের ছেলে তুই, স্মার্ট ফোন নিয়ে তুই কী করবি?" " মা নিজের ফোনটা দিতে চায় না, বড্ড হিংসুটেমি করে। ইউ টিউব দেখতে চাইলেই বলে ডেটা শেষ। সব বাজে কথা। আমি সব বুঝি।" স্যান্টা ক্লজ জীবনে আজ অবধি এমন অবাক হন নি !

নিজেকে কোনোমতে ছাড়িয়ে পালানোর চেষ্টা করতেই টিনটিন এবার সামনে থেকে এসে দাদুর বিশালাকার ভুঁড়িতে খামচে দিল। "ওরে বাবারে" বলে স্যান্টা ক্লজ পেট ধরে বসে পড়লেন। হাত থেকে ঝোলাটাও খসে পড়ে গেল। আর টিনটিনও এই সুযোগে থলিটা ঘেঁটে ঘুঁটে যা যা পছন্দ হল, সব নিয়ে নিল।
"এবার তো ছাড় আমায়। আরও কত বাড়ি যাওয়া বাকি এখন। দেখতে দেখতে এক্ষুণি ভোর হয়ে যাবে, বাচ্চাগুলো সব ঘুম থেকে উঠে পড়বে।"
"উঁহু, আগে প্রমিস করো নর্থ পোল ফেরার আগে আমায় স্মার্ট ফোন দিয়ে যাবে।"
"আচ্ছা আচ্ছা দেখছি।"
"না না দেখছি না, আগে বলো প্রমিস।"
"আচ্ছা প্রমিস।"

স্যান্টা ক্লজ নিজের পোশাক আশাক ঠিক করে যাওয়ার উপক্রম করতেই টিনটিন লাফিয়ে কোলে উঠে পড়ে বলল
"আমিও তোমার সঙ্গে যাব"।
"সে কি, তোর মা বাবা চিন্তা করবে না?"
" না না, কাল তো হলিডে। বাবা মা দেরি করে ঘুম থেকে উঠবে। তার আগেই আমি এসে আবার শুয়ে পড়ব"।
"চল তাহলে। একবার যখন বলেছিস, তখন কি আর না গিয়ে ছাড়বি তুই?"
বেরনোর আগে স্যান্টা দাদুর 'হেল্প' নিয়ে সোয়েটার, টুপি, জুতো, মোজা পড়ে নিল টিনটিন। অন্যের ঘাড় ধরে কাজ করিয়ে নিতে পারদর্শী এই একরত্তি ছেলে। ওদের ছাদে স্যান্টা দাদুর স্লেজটা রাখা ছিল। রুডল্ফকে দেখেই উত্তেজিত হয়ে ওর লাল নাকটা ধরে বেশ করে ঘষে দিল টিনটিন। রুডল্ফের যতই বিরক্ত লাগুক না কেন, বেচারা বিরক্তি প্রকাশ করার সাহস পেল না। টিনটিনকে দেখেই সে বুঝে গেছে এ বড় বিপজ্জনক ছেলে।

গলা ছেড়ে 'জিঙ্গল বেল জিঙ্গল বেল' গাইতে গাইতে শুরু হল টিনটিনের মিডনাইট স্লেজ রাইড। স্যান্টা দাদুর ভুঁড়িতে ঠেস দিয়ে বেশ আরাম। স্লেজ থেকে ঝুঁকে নিচে দেখতে গিয়ে বিশেষ লাভ হল না। সবই প্রায় অন্ধকার। এ তো আর দুর্গাপুজো নয় যে সারা শহর আলোয় ঝলমল করবে। টিনটিনের কল্যাণে এমনিতেই স্যান্টা ক্লজের অনেক দেরি হয়ে গেছে। এখন তাড়াতাড়ি করে উপহারগুলো দিয়ে শেষ করতে পারলে হয়। এই তাড়াহুড়োয় কেউ বাদ পড়ে গেলেই কেলেঙ্কারি। এদিকে টিনটিনের বায়না শুরু হয়েছে "আমায় পার্ক স্ট্রিট নিয়ে চলো, ফ্লুরিজে কেক খাব।" পার্ক ম্যানসনের ছাদে স্লেজ রেখে স্যান্টা দাদু গেল টিনটিনকে নিয়ে ফ্লুরিজে। ফ্লুরিজে তখন ভিড় গিজগিজে। স্যান্টা ক্লজ দেখে বাচ্চারা দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরল, বড়রা এল সেল্ফি তুলতে। টিনটিন তখন নিজের পছন্দমত কেক কিনে পরম তৃপ্তিতে খেতে ব্যস্ত। কেক খেয়ে, পরের বায়না হল "আমায় বেলুন কিনে দাও।" শুধু বেলুন নয়, ভেঁপু, আলো জ্বলা টুপি, শিং সবে কিনে তবে বাবু ক্ষান্ত হলেন। স্যান্টা দাদু তাড়া দিলেন "চল চল এবার তোকে অন্য একটা জায়গায় নিয়ে যাব।"

টিনটিন আর স্যান্টা ক্লজ

এই জায়গাটা একটু অন্যরকম। রংচংহীন, পুরনো দিনের একটা বাড়ি। ভেতরে ঢুকে লম্বা একটা হলঘর। মেঝেতে শতরঞ্জি বিছানো। তার ওপরে সারি সারি ছেলেরা শুয়ে আছে। গায়ে ছেঁড়াখোড়া কম্বল। টিনটিন আগে কখনও এরকম দৃশ্য দেখেনি। ছোট থেকেই বিলাসবহুল জীবনে অভ্যস্ত। "এরা কারা? এরা মেঝেতে শুয়ে আছে কেন? এদের খাট নেই?" টিনটিনের মাথায় হাত বুলিয়ে স্যান্টা ক্লজ বললেন "এরা সব অর্ফ্যান।"
"অর্ফ্যান মানে?"
"অর্ফ্যান মানে যাদের মা, বাবা নেই।"
"মানে যাদের মা বাবা স্টার হয়ে গেছে?"
"হ্যাঁ।"
স্যান্টা দাদু ঝোলা বার করলেন। সেখান থেকে বেরোতে লাগল গিফ্টস। এই গিফ্টগুলো একেবারেই আলাদা।জামাকাপড়, চাদর, কম্বল, শুকনো খাবার দাবার। আর এই সমস্ত উপহারগুলো স্যান্টা দাদু দেওয়ালেন টিনটিনের হাত দিয়ে। শীতে কুঁকড়ে যাওয়া ছোট্ট ছোট্ট শরীরগুলোর ওপর কম্বল চাপা দিতে দিতে টিনটিনের খুব মন খারাপ করে উঠল। ভাবল ও কী সুন্দর বড় বিছানাতে, নরম ব্ল্যাঙকেট গায়ে বাবা মায়ের মাঝখানে শুয়ে ঘুমোয়। আর গরমকালে ঘরে এ সি চলে। গাড়ি চড়ে স্কুলে যায়, ছুটির দিনে বড় বড় হোটেল, রেস্টুরেন্টে পিৎজা, ফ্রায়েড চিকেন, মোমো, যা ইচ্ছা খায়।

এরাও তো ওরই মত ছোট। কিন্তু ওদের মায়েরা ওদের পেছন পেছন খাবার নিয়ে সারা বাড়ি দৌড়ায় না, অসুখ করলে বুকে জড়িয়ে শোয় না, বাবারা অফিস থেকে এসে খেলা করে না। এসব ভেবে ছোট্ট টিনটিনের চোখদুটো জলে ভরে এল। একছুটে গিয়ে স্যান্টা দাদুর ভুঁড়ি জড়িয়ে ধরল " ও দাদু, আমার স্মার্ট ফোন চাই না। তুমি বরং ওদের আরও বেশি বেশি করে গিফ্ট দাও। আমি প্রমিস করছি আমিও আর বাবা মা'র কাছে কিছু বায়না করব না। সব জিনিস জমিয়ে আমার এই নতুন ফ্রেন্ডসদের এনে দেব।" এই বলে "আমি মায়ের কাছে যাব" বলে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল টিনটিন। স্যান্টা ক্লজ তখন টিনটিনকে কোলে নিয়ে পার্ক ম্যানসনের ছাদে উঠলেন। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন "দিস ইজ দা স্পিরিট অফ ক্রিসমাস"...

 

ছবিঃ নভনীল দে

পেশায় শিক্ষিকা। বসবাস কলকাতায়। বই পড়তে, লিখতে, ছবি আঁকতে এবং বেড়াতে ভালবাসেন।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা