সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
  দ্য ক্যান্ডি বম্বার

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে 'পটসড্যাম কনফারেন্স' এ জার্মানির নিঃস্বর্ত আত্মসমর্পনের পর, বিজয়ী 'এলাইড ফোর্সেস'  বা মিত্র শক্তি জার্মানি দেশটিকে নিজেদের মধ্যে ৪টি 'অকুপেশনাল জোন' এ ভাগ করে নেন। গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দখল করেন জার্মানির পশ্চিম ভাগ আর সোভিয়েত ইউনিয়নের দখলে আসে জার্মানির পূর্ব ভাগ। একইভাবে বার্লিন শহরটিকেও ভাগ করা হয়।  যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি হিসেবে গ্রেট ব্রিটেন আর ফ্রান্সের শক্তি তখন অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর সোভিয়েত ইউনিয়ন, এই দুই নতুন 'সুপার পাওয়ারের' মধ্যে শুরু হল শক্তির লড়াই। এদিকে জার্মানির দুই ভাগের শাসন কর্তাদের পদ্ধতি ছিল দুরকম। একদিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন পশ্চিমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে, আর 'মার্শাল প্ল্যান' অনুযায়ী জার্মান ভারী শিল্পে বিনিয়োগ করে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা করার চেষ্টা করছে, অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন তখন ওদিকে কমিউনিজম প্রতিষ্টা করতে ব্যস্ত। জার্মানি যাতে আবার একটি যুদ্ধ করার মত শক্তিশালী হয়ে উঠতে না পারে, তাই কোনোরকম শিল্প গঠনের চেষ্টা করেনি। ক্রমশ জার্মানির দুই ভাগের পার্থক্য প্রকট হতে লাগল। পশ্চিম জার্মানি খুব অল্প সময়েই অর্থনৈতিক ভাবে দারুন সফল হয়ে উঠল, পূর্ব জার্মানি তখন ততটাই পিছিয়ে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে শিক্ষা দিতে ১৯৪৮ এর জুন মাসে সোভিয়েত ইউনিয়ন পশ্চিম আর পূর্ব জার্মানির মধ্যে সমস্ত সড়ক যোগাযোগ বন্ধ করে দিল। পশ্চিম জার্মানির প্রশাসকরা সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে এমন কোনোভাবে চুক্তিবদ্ধ ছিল না যে সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের অংশের ওপর দিয়ে সড়ক পথে যাতায়াত করতে দিতে বাধ্য। তবে হ্যাঁ, আকাশ পথে এরকম একটা চুক্তি ছিল বৈকি। অতএব আগামী ১১ মাস ধরে ব্রিটেন আর ফ্রান্সের সাহায্যে আকাশপথে প্লেনে করে পশ্চিম বার্লিনে খাদ্য, বস্ত্র, কয়লা ও অন্যান্য প্রয়জনীয় জিনিসের রসদ পাঠাতে লাগল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই 'বার্লিন এয়ার লিফ্ট' বা 'অপারেশন ভিটেলস' এরই এক মার্কিন পাইলট ছিলেন 'গেল হ্যালভার্সন' (Gail 'Hal' Halvorsen )।

লেফটেনেন্ট গেলের কাজ ছিল সি ৫৪ কার্গো প্লেনে করে ক্ষুধার্ত পশ্চিম বার্লিনে রেশন 'এয়ার ড্রপ' করা। ছবি তোলার শখ ছিল গেলের। একদিন জুলাই মাসের কোনো ছুটির দিনে তিনি বার্লিনের আশেপাশে ঘুরতে যান। টেম্পেলহফ এয়ার বেসে (বার্লিন এয়ার লিফটের মূল বেস) ছবি তুলছেন, এমন সময় তিনি লক্ষ্য করেন কাঁটা তারের বেড়ার ওপারে জনা তিরিশেক বাচ্চা দাঁড়িয়ে আছে। বাচ্চাগুলোর সাথে কথা বলতে গেলে ওরা গেলকে বলে "আঙ্কল, যখন আবহাওয়া খারাপ থাকবে, তোমরা প্লেন নিয়ে আসতে পারবে না, আমাদের নিয়ে চিন্তা কোরো না, আমার অল্প খাবারেই চালিয়ে দেব। কিন্তু একবার যদি আমরা স্বাধীনতা হারাই, তাহলে হয়ত কোনোদিন আর তা ফিরে পাব না।" ছোট শিশুদের মুখে এই কথা শুনে গেল অভিভূত হয়ে যান গেল। পকেট হাতড়ে দেখেন মোটে ২ ক্যান্ডি পড়ে আছে। তিনি তাইই দিলেন ওদের। ওরা ভাগাভাগি করে খেল। যারা পেল না তারা মোড়কের গন্ধ শুঁকল। তাই দেখে গেলের চোখে জল এল। উনি কথা দিলেন পরেরদিন সকলের জন্য ক্যান্ডি নিয়ে আসবেন। সেইদিন রাতে গেল, ওনার কো-পাইলট আর ইঞ্জিনিয়ার তিনজনে মিলে নিজেদের রেশনের ক্যান্ডি জমা করলেন। ওপর থেকে ফেলা ক্যান্ডির ওজনে যাতে শিশুরা আহত না হয়, তাই রুমাল দিয়ে ৩ প্যারাশুট বানিয়ে তার সাথে ক্যান্ডিগুলো বেঁধে দিলেন। কোনো ওপরওয়ালাকে না জানিয়েই এভাবে পরের ৩ সপ্তাহ, সপ্তাহে একদিন করে ওনারা এই কাজটি করে যেতে লাগলেন। প্রতি সপ্তাহে টেম্পলহফ এয়ার বেসের জালের ওপারে বাচ্চাদের ভিড় বাড়তে লাগল।

  দ্য ক্যান্ডি বম্বার

কথাটি এয়ার লিফ্ট কমান্ডার উইলিয়াম টানারের কানে যেতে উনি এটিকে এক পুরো দস্তুর অপারেশনের আকার দিয়ে দিলেন। 'অপারেশন ভিটেলস'এর অনুকরণে নাম দিলেন 'অপারেশন লিটল ভিটেলস'। এই অপারেশন চলেছিল ১৯৪৮ এর ২২শে সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৪৯এর ১৩ই মে পর্যন্ত। প্রথমে গেলের বন্ধুরা, তারপর পুরো স্কোয়াড্রন এই কাজে এগিয়ে আসে। খবরটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়তে সে দেশের শিশুরা এবং ক্যান্ডি প্রস্তুতকারকরা ঝুড়ি ঝুড়ি ক্যান্ডি পাঠাতে থাকেন। এই বিশাল সংখ্যক ক্যান্ডি প্যারাশুটে বাধার কাজে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন মেরি সি কনোরস নামে ম্যাসাচুসেটসের এক কলেজ পড়ুয়া। তিনি 'ন্যাশনাল কনফেকশনার্স এসোসিয়েশনের' সাথে মিলে এই কাজ করতে লাগলেন। ১৯৪৯ এর জানুয়ারি মাসে গেল দেশে ফিরে গেলে, এই অপারেশনের নেতৃত্বের দায়িত্ব নেন গেলের এক বন্ধু ক্যাপটেন লরেন্স ক্যাসকি। 'অপারেশন লিটল ভিটেলস'এ মোট ২৩ টন ক্যান্ডি ফেলা হয়েছিল ২৫০, ০০০ প্যারাশুটে করে। বাচ্চারা আদর করে গেলের নাম দিয়েছিল 'ক্যান্ডি বম্বার', 'আঙ্কল উইগ্লি উইংস', 'দা চকোলেট ফ্লায়ার'। এই কাজের জন্য জাতীয় নায়ক হয়ে ওঠেন লেফটেনেন্ট গেল হ্যালভার্সন। প্রচুর পুরস্কার এবং সন্মান পান তিনি তার এই কাজের জন্য। তবে তার সবচেয়ে বড় পুরস্কার বাচ্চাদের আদরের ডাক 'দ্য ক্যান্ডি বম্বার'।

'দ্য ক্যান্ডি বম্বার' কে নিয়ে ইউটিউবে একাধিক তথ্যচিত্র দেখতে পাওয়া যাবে। তার থেকে বেছে একটির লিঙ্ক নিচে দেওয়া রইল।

 

ছবিঃউইগ্‌লি উইংস দ্য ক্যান্ডি বম্বার ওয়েবসাইট

পেশায় শিক্ষিকা। বসবাস কলকাতায়। বই পড়তে, লিখতে, ছবি আঁকতে এবং বেড়াতে ভালবাসেন।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা