সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
 মাইক্রোনেশন সীল্যান্ড

পৃথিবীতে এমন একটা দেশ আছে যার জনসংখ্যা আদতে ছিল মাত্র তিন জন। এই দেশটির চারদিকে সমুদ্রের জল। অথচ সমুদ্রের একটা ঢেউও এর উপকূলে এসে আছড়ে পড়েনা। পড়বে কীভাবে? দেশটার তো কোনো উপকূলই নেই। অবাক হচ্ছ? ভাবছ এ আবার হয় নাকি? আমি নিশ্চয়ই তোমাদের কোনো রূপকথার গল্প শোনাচ্ছি। একদমই না। ইংল্যান্ডে বেড়াতে গেলে এই দেশটা দেখে আসতে পার। তবে মনে রেখো পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়া কিন্তু এই স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশে ঢুকতে পারবে না।
 
 জাহাজে আমরা গুটিকয়েক পর্যটক। ইংল্যান্ডের উত্তর সাগরের জল কেটে সেটা তরতর এগিয়ে চলেছে পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম দেশ প্রিন্সিপালিটি অব সিল্যান্ডের দিকে। যদিও সবাই এই দেশটাকে সংক্ষেপে সিল্যান্ড বলে। ধীরে ধীরে ইংল্যান্ডের তটভূমি চোখের আড়ালে চলে গেল। এখন শুধু জল জল আর জল। জাহাজের ডেকে দাঁড়িয়ে দিগন্ত বিস্তৃত নীল জলরাশির দিকে তাকিয়ে কত কথাই না মনে আসছে। যন্ত্রচালিত অত্যাধুনিক জাহাজে চড়ে কত সহজেই না সমুদ্র পাড়ি দিচ্ছি। অথচ একসময় জলে ভাসার জন্য মানুষকে কতই না কসরত করতে হয়েছিল। গাছের গুঁড়ির মাঝখানটা খুঁড়ে বসার জায়গা করে প্রথম যে জলযান তৈরি হয়েছিল তার দিনক্ষণ জানা সম্ভব নয়। তবে নানারকম নিদর্শন, ছবি, রূপকথা ইত্যাদি থেকে জলযানের যে বিবরণ পাওয়া যায় তা থেকে পন্ডিতদের ধারণা জলে ভাসার অভিজ্ঞতা মানুষ আয়ত্ব করেছিল প্রায় আট হাজার বছর আগে। প্রথমদিকে মানুষ যে জলযান তৈরি করেছিল তাকে বলা হয় ভেলা। এরপর ধীরে ধীরে এর উন্নতি ঘটে। আসে ডোঙা, দাঁড় টানা নৌকা, পালতোলা জাহাজ এবং যন্ত্র ও পারমাণবিক শক্তি চালিত আধুনিক জাহাজ।  

 মাইক্রোনেশন সীল্যান্ড
রাজা রয় আর রানী জোয়ান

চিন্তায় ছেদ পড়ল। জাহাজের ক্যাপ্টেন এসে জানালেন আমরা সিল্যান্ডের কাছাকাছি এসে গেছি। আর মিনিট দশেকের মধ্যে  আমরা সেখানে পৌঁছে যাব। আমরা সবাই তখন জাহাজের ডেকে। তাকিয়ে আছি সামনের দিকে। হঠাৎ সমুদ্রের ভিতর থেকে ধীরে ধীরে মাথা তুলে দাঁড়াল পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম দেশ।  এ কেমন দেশ? কোনো গাছ নেই, পশুপাখি নেই। আর থাকবেই বা কী করে? এই দেশটায় তো কোনো মাটিই নেই। পুরোটাই স্টিল দিয়ে তৈরি। দুটো বড়ো বড়ো গোল থামের উপর একটা পাটাতন। তার উপর একটা ঘর। এটাই নাকি একটা দেশ। জাহাজ ততক্ষণে একটা থামের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। থামের গায়ে একটা দরজা। ক্যাপ্টেনের কথায় আমরা একে একে ভিতরে ঢুকলাম।  দুটো থামের প্রত্যেকটার ভিতরে সাতটা করে তলা আছে। সিঁড়ি বেয়ে উপড়ে উঠছি আর অবাক হচ্ছি। সুন্দর করে সাজানো তলাগুলির কোনোটা ডাইনিং হল, কোনোটা কিচেন, কোনোটা বেডরুম, কোনোটা কনফারেন্স রুম ইত্যাদি।  পাটাতনটার উপর রয়েছে একটা সুসজ্জিত ঘর। সেখানে অবশ্য কারও প্রবেশ নিষেধ। কারণ ওটাই এদেশের রাজপ্রাসাদ। এদেশের তিনজন নাগরিকের একজন হলেন রাজা, একজন রানি, আরেকজন রাজপুত্র। রাজপ্রাসাদের মাথায় পত্‌পত্‌ করে উড়ছে সেদেশের পতাকা। ক্ষুদ্রতম এই দেশটির মোট আয়তন ৫৫০ স্কোয়্যার মিটার। একটা টেনিস মাঠের থেকে সামান্য বড়ো।  এখানে ইংরেজি ভাষা প্রচলিত এবং মুদ্রার নাম সিল্যান্ড ডলার। তবে বাইরের কোনো দেশে এই মুদ্রা চলে না।

 মাইক্রোনেশন সীল্যান্ড
বাঁ দিকে সিল্যান্ডের পতাকা, ডান দিনে মুদ্রা

সিল্যান্ড আসলে একটা সমুদ্র দুর্গ, নাম এইচ এম ফোর্ট রুঘশ (HM Fort Roughs)।  এটা তৈরি হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। জার্মান সেনাদের আক্রমণ প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সেনারা ইংল্যান্ডের উপকূল থেকে দশ কিলোমিটার গভীরে এই দুর্গটি তৈরি করেছিল। সেসময় এখানে ১৫০ থেকে ৩০০ সৈন্য থাকার ব্যবস্থা ছিল। থামের ভিতরের বিভিন্ন তলায় মজুত করা হত অস্ত্রশস্ত্র। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে অন্যান্য অসংখ্য দুর্গের সঙ্গে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী এটাকেও পরিত্যক্ত ঘোষণা করে।

 মাইক্রোনেশন সীল্যান্ড
রাজপুত্র মাইকেল

১৯৬৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ নাগরিক মেজর প্যাডি রয় বেটস (Major Paddy Roy Bates) এবং তাঁর পরিবার এই দ্বীপের স্বত্বাধিকারী  হন। তারপর তারা একে একটি স্বাধীন ক্ষুদ্র রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেন। পৃথিবীর কোনও দেশ এখনও সিল্যান্ডকে স্বীকৃতি না দিলেও কেউ তাদের বিরোধিতাও করেনি। মজার কথা হল, মোট জনসংখ্যার তিনজনই বেটস পরিবারের সদস্য এবং যথাক্রমে তারা এই রাজ্যের রাজা, রানি এবং রাজপুত্র।

২০০৬ সালের ২৩ জুন বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে সিল্যান্ডে একবার আগুন লাগে। সেই অগ্নিকাণ্ডে সিল্যান্ডের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। সে সময় রাজা ও রানি রাজপ্রাসাদে ছিলেন। রাজপুত্র বিদেশে থাকায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছিল না। শেষে খবর পেয়ে ইংল্যান্ডের উদ্ধারকারী দল হেলিকপ্টার এসে তাদেরকে উদ্ধার করে ইংল্যান্ডের মূল ভূখণ্ডে নিয়ে যায়। মেরামতির পর ২০০৬ সালের নভেম্বর মাসে রাজা, রাণী ও রাজপুত্র আবার নিজ দেশ সিল্যান্ডে ফিরে যান।

২০১২ সালে রয় বেটস এবং ২০১৬ সালে তাঁর স্ত্রী জোয়ান পরলোকগমন করেন।  বর্তমান রাজা মাইকেল , গত ৫০ বছর ধরে সীল্যান্ড নিয়ে তাঁর বিবিধ অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন 'হোল্ডিং দ্য ফোর্ট'  (Holding The Fort) নামক বইতে।

ছবিঃ
অ্যামিউজিং প্ল্যানেট
প্রিন্সিপ্যালিটি অফ সীল্যান্ডের নিজস্ব ওয়েবসাইট
https://www.sealandgov.org/

বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের সহ সভাপতি কমলবিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় ছোটদের এবং বড় দের জন্য বিজ্ঞান বিষয়ক বহু বই লিখেছেন। বিভিন্ন জনপ্রিয় পত্রপত্রিকা এবং ওয়েব ম্যাগাজিনে তিনি নিয়মিত লেখালিখি করেন।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা