সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

ক্যুইজের প্রশ্ন। 'সেভেন সিস্টার্স অফ ইন্ডিয়া' বা 'ল্যান্ড অফ সেভেন সিস্টার্স ' কাদের বলে জানো? অসম, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, অরুণাচল আর ত্রিপুরা। এই হল ভারতের 'সাত ভাই চম্পা'। এই সব রাজ্যগুলোরই অবস্থান ভারতের পূর্বদিকে। আবার ভারত স্বাধীন হওয়ার পর 'পূর্বাচল' ছিল একটা প্রকল্পিত রাজ্যের নাম। প্রাথমিকভাবে অসমের কিছু পাহাড়ি ও সমতল জেলা, কিছু সীমান্ত অঞ্চল এবং দুই দেশীয় রাজ্য মণিপুর ও ত্রিপুরার বাঙালি ভাষাভাষী অঞ্চল নিয়ে গঠিত হওয়ার কথা ছিল এই পূর্বাচল প্রদেশের। ১৯৪৮ আর ১৯৫৪ সালে পরপর দুবার এই রাজ্য গঠনের প্রস্তাব পেশ করা হয়। দুবারই সেটা নাকচ হওয়ার পর আর পূর্বাচল নিয়ে ভবিষ্যতে কোনো কথা ওঠেনি।

'পূর্বাচল' আর 'সেভেন সিস্টার্স ' নিয়ে এসব বলে নিলাম তার কারণ যে বই নিয়ে আজ গপ্পো হবে, সেই বইয়ের নাম 'পূর্বাচলের রূপকথা'। যদিও লেখিকা বীণা মিশ্র 'পূর্বাচল' বলতে এখানে প্রস্তাবিত রাজ্যের কথা নয়, বরং বাঙালি-প্রধান 'ত্রিপুরা' বাদে 'সেভেন সিষ্টার্স'-এর অন্য রাজ্যগুলোয় যে রূপকথা প্রচলিত আছে, তার কথা বলেছেন, তবু জেনে রাখা ভালো আসলে 'পূর্বাচল' কী।

বইটায় মোট তেরোটা গল্প আছে। অসমের অসমিয়া, কাছাড়ি ও মিকিরদের, মেঘালয়ের খাসি ও গারোদের, নাগাল্যান্ডের নাগাদের, মণিপুরের মণিপুরিদের, অরুণাচলের আকা, তাগিন, আদি, মিসমি ও সিংফৌদের ও মিজোরামের মিজোদের মধ্যে প্রচলিত রূপকথার গল্প আছে এখানে। গল্পগুলোর বেশিরভাগের মধ্যেই প্রকৃতি একাত্ম হয়ে আছে। যেমন প্রথম গল্প 'তুইসং নদীর জন্মকথা' তে জানতে পারবে মিজোরামের লুসাই পাহাড়ের ধার ধরে তিরতির করে বয়ে চলা নদীটার জন্ম হল কীভাবে? আবার মেঘালয়ের খাসিরা অজগর সাপকে বলেন 'থলেন'। একটা থলেন থেকে গোটা অঞ্চলে কীভাবে প্রচুর থলেন জন্ম নিল সে গল্প আছে 'থলেন' গল্পে। জানতে ইচ্ছা হয়, হাতি দাঁড়িয়ে কেন ঘুমায় বা প্রজাপতির পাখায় এত নক্সা কেন, কেনই বা সকালে মোরগ ডাকলেই সূর্য তাড়াতাড়ি উঠে আসে — সেসব গপ্পোও আছে এই বইতে।

তুমি রূপকথার গল্পের পোকা হলে নিশ্চয়ই এতদিনে নজরে পড়েছে যে রূপকথার গল্প পড়তে গিয়ে দেখবে কিছু না কিছু গল্প তোমার আগে পড়া গল্পের আদলে তৈরী। একটা উদাহরণ দিই। এই যেমন ধরো জোসেফ জ্যাকবের ইংরেজিতে অনুবাদ করা 'জ্যাক এন্ড দ্য বিনস্টক' গল্পে এক মজাদার ছড়ার উল্লেখ আছে-
"Fee-fi-fo-fum,
I smell the blood of an Englishman,
Be he alive, or be he dead
I'll grind his bones to make my bread."

কি? চেনা চেনা ঠেকছে না? বাংলার ঠাকুরমার ঝুলিতে রাক্ষসরা যেমন "হাঁউ মাঁউ খাঁউ মানুষের গন্ধ পাঁউ" বলে, অনেকটা তেমনই তো? আসলে পণ্ডিতরা ভেবে বের করেছেন যে রূপকথার গল্পগুলোয় মিথিম (Mytheme) বলে একটা বিষয় থাকে, যা গল্পের চরিত্র, কাজ বা বিষয়বস্তু নিয়ন্ত্রণ করে। দুটো গল্পের মিথিম এক হলে গল্পের কাঠামোটা সেক্ষেত্রে এক হয়ে যায়। তাই তুমি উরুগুয়ের কোনো রূপকথার সাথে হঠাৎই মিল পেয়ে যেতে পারো জাপানি কোনো রূপকথার, নরওয়ের কোনো দুঃখী রাজকন্যা এসে হাজির হতেই পারে ঠাকুরমার ঝুলির কোনো রূপকথায়। তেমনি এ বইতেও দু একটা গল্প তোমার পরিচিত লাগতেই পারে। এই যেমন ধরো, তুমি যদি ইচ্ছামতীর নিয়মিত পাঠিকা/পাঠক হও তাহলে তো এই বইয়ে অন্তত একটা গল্প পাবেই পাবে যে রকমের একটা গল্প ইচ্ছামতীর পাতায় আগে প্রকাশিত হয়েছে অন্যদেশের রূপকথা হিসেবে। বইটা কিনে চটপট পড়ে ফেলো, আর দেখো দেখি বের করতে পারো কিনা! পেলে লিখে জানিও কিন্তু ইচ্ছামতীর দপ্তরে।

বইটির ভূমিকা লিখেছেন বিখ্যাত ছড়াকার, প্রাবন্ধিক ও ওড়িষার প্রথম সিভিল সারভেন্ট অন্নদাশঙ্কর রায়। উনি আবার ভূমিকায় লিখেছেন যে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর লেখা 'টুনটুনির বই'য়ের এক গল্পের সাথে এ বইয়ের একটা গল্পের তিনি মিল পেয়েছেন। বোঝো!

বইটা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৩৮০ বঙ্গাব্দ অর্থাৎ ১৯৭৩ সালে অন্য প্রকাশনা থেকে। সেসময় বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল এ বইটি। তারপর দীর্ঘকাল অমুদ্রিত থাকার পর বর্তমান প্রকাশক শিশু সাহিত্য সংসদ আবার এই বইটি নতুন সজ্জায় প্রকাশ করেন। বীণা মিশ্রের লেখা 'অসমের রূপকথা' বলে আরো একটি সুন্দর বই আছে এই একই প্রকাশনা থেকে। বইটা পছন্দ হলে পরে সেটাও পড়ে ফেলতে পারো।

পূর্বাচলের রূপকথা
লিখেছেনঃ বীণা মিশ্র
প্রচ্ছদঃ অলয় ঘোষাল
অলংকরণঃ হেমন্ত মিশ্র
প্রকাশকঃ শিশু সাহিত্য সংসদ
মূল্যঃ ৬০/- ( ২০১২ সালের সংস্করন অনুযায়ী)

ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র। লেখালিখি এবং পড়াশোনার মধ্যেই থাকতে ভালোবাসেন।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা