সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
ৎসেলানে আর দৈত্যের গল্প

সে অনেক অনেক দিন আগের কথা। যখন দৈত্যরা ঘুরে বেড়াত পৃথিবীতে আর মুরগিরা কথা বলত মানুষের ভাষায়, এ তখনকার গপ্পো। তখন এক গরীব মহিলা তাঁর মেয়ে ৎসেলানেকে নিয়ে ছোট্ট একটা বাড়িতে থাকতেন। যেহেতু ৎসেলানেকে দেখার মতো আর কেউ ছিল না, তাই মাঠে লাঙল দিতে যাওয়ার সময়ে মা তাকে বাড়িতে একা রেখে যেতে বাধ্য হতেন।

বুঝতেই পারছ, ৎসেলানের মা তাঁর মেয়েকে নিরাপদ রাখতে চাইতেন। তাই প্রতিদিন সকালে যখন তিনি বাড়ি থেকে বেরোতেন, তিনি ৎসেলানেকে সাবধান করে দিতেন যাতে সে অন্য কারও ডাকে দরজা না খোলে। প্রত্যেকদিন যখন তিনি বাড়ি ফিরতেন, তখন গান গাইতেন, "ৎসেলানে বাছা আমার, ৎসেলানে সোনা আমার, এসো, এসো দরজা খুলে দাও!"

মায়ের গলার আওয়াজ শুনে ছোট্ট ৎসেলানে গান গেয়ে উত্তর দিত, "মা মা, তোমার গলা শুনতে পাচ্ছি/ এইতো আমি দরজা খুলতে যাচ্ছি!" দরজা খুলেই আগে ছুটে গিয়ে সে মায়ের কোলে উঠে পড়ত।

একদিন একটা ভয়ংকর লোভী দৈত্য এদের দুজনের গান শুনতে পেল। আল্হাদে জিভ দিতে ঠোঁট চাটতে চাটতে ভাবল, "এই বাচ্চাটার আওয়াজ শুনে তো বেশ সুস্বাদু মনে হচ্ছে। একে ধরে খেতে হবে ।"

এর দিনকয়েক পরেই, যেদিন দৈত্যটার খুব খিদে পেয়েছে, সেদিন ৎসেলানে্র বাড়িতে গিয়ে দরজার বাইরে থেকে দৈত্য বলল, "ৎসেলানে বাছা আমার, ৎসেলানে সোনা আমার, এসো, এসো দরজা খুলে দাও!"

ৎসেলানে তা শুনে হাসতে হাসতে বলল, "যাও ভাগো! তোমার গলার আওয়াজ মোটেই আমার মায়ের মতো মিষ্টি নয়!"

এটা শুনে দৈত্য ফিরে গেল বটে, কিন্তু তার খুব রাগ হলো। সে গেল সাংগোমার কাছে সাহায্য চাইতে। সাংগোমা তাকে একটা গনগনে গরম ধাতু দিয়ে বলল, "এটা খেয়ে ফেলো। এটা তোমার গলার আওয়াজ পাল্টে দেবে।"

পরেরদিন যখন দৈত্যটা ৎসেলানের কাছে গিয়ে গান গাইলো, তখন তার গলার আওয়াজ অবিকল ৎসেলানের মায়ের মতো মিষ্টি সুন্দর হয়ে গেছে। এদিকে ৎসেলানেও তো মা ঘরে ফিরেছে ভেবে আনন্দে আটখানা হয়ে দরজা খুলেছে। যেই না দরজা খোলা, অমনি ধাঁই করে তাকে তুলে নিয়ে দৈত্য বস্তায় পুরে ফেলল। তারপর সেই বস্তা কাঁধে ফেলে লম্বা লম্বা পায়ে হাঁটা লাগালো নিজের বাড়ির পথে।

এদিকে দৈত্য তো নিজের কাজে মনে মনে মহাখুশি। তার প্রতিবেশীর বাড়িতে তখন খাওয়াদাওয়ার জমাটি ভোজসভা চলছিল। দৈত্য নিজেকে মনে মনে তারিফ করে ভাবল, "এখানে একটু বিশ্রাম নেওয়া যাক"।

"এই তুম, শরবত লাও!" বাড়ির মালকিনের দিকে তাকিয়ে বাজখাই গলায় হাঁক দিল সে। তারপর বস্তাটা সাবধানে নিজের পাশে রাখল।

মালকিন যখন পাত্রে শরবত ঢালছে, তখন বস্তার মধ্যে থেকে এক বাচ্চার করুণ আওয়াজ শুনতে পেল। মনে মনে ভাবল, "নিশ্চয়ই ওই বস্তার মধ্যে কেউ আছে, আমার তাকে সাহায্য করা উচিত"।

দৈত্যের দিকে ফিরে সে বলল, "যাও! নদী থেকে এক বালতি জল এনে দাও দেখি বাপু, তার বদলে আমি তোমাকে এক বালতি শরবত খাওয়াবো।"

"বেশ বেশ!" বলে দৈত্য জল ভরতে বেরিয়ে পড়ল। কিন্তু বুদ্ধু দৈত্য এ কথা তো জানে না যে বালতির নীচে ফুটো আছে! তাই সে যতই জল ভরে, বালতি কিছুতেই ভর্তি হয় না।

আর সেই ভোজবাড়িতে ততক্ষণে মালকিন আর তার স্বামী বস্তা থেকে ৎসেলানেকে বের করে বস্তার ভিতরে যত রাজ্যের সাপ, ব্যাঙ, বিছে, টিকটিকি, বোলতা, ঝিঁঝিঁ ভরে দিয়েছে। ৎসেলানেকে তারা রেখেছে লুকিয়ে।

অনেকক্ষণ পরে দৈত্য ফিরে এল খুব অল্প একটু জল নিয়ে। এসেই বালতি ছুঁড়ে ফেলে দিল, মালকিনের দিকে রেগে রেগে তাকালো, শরবতের পাত্রটা আর বস্তাটা নিয়ে গজগজ করতে করতে বেরিয়ে গেল তাদের বাড়ি থেকে।

ৎসেলানে আর দৈত্যের গল্প

নিজের বাড়িতে পৌঁছে বস্তাটা বাড়ির বাইরে ফেলে সে গটগট করে ঢুকে পড়ল ঘরে। তারপর ছেলেকে বলল, " যা গিয়ে বস্তাটা ভেতরে নিয়ে আয়!" যখন দৈত্যের ছেলে বস্তা তুলতে গেল, একটা বোলতা বেরিয়ে এসে তার নাকে কামড়ে দিল। "ভ্যাঁ" করে কান্না জুড়ে দিয়ে সে চলে গেল ঘরের ভিতরে।

এদিকে দৈত্যের মেজাজ গেছে সপ্তমে চড়ে। " আমার বস্তা কোথায়? আন ওটা! " খুব জোরে হাঁক দিল সে। সঙ্গে সঙ্গে তার বউ দৌড়ে বস্তা আনতে গেল। তখন বস্তা থেকে একটা সাপ বেরিয়ে এসে তার বউকে কামড়ে দিল। তার বউও "ও মা গো, মরে গেলুম গো!" বলে কাঁদতে কাঁদতে সেখান থেকে পালিয়ে গেল।

তখন দৈত্যের আর সহ্য হল না। "বেরো তোরা! অকম্মার ধাড়ি সব একেকটা!" বলে গজগজ করতে করতে বস্তাটা নিয়ে এসে একটা ঘরে ঢুকলো, তারপর দরজায় খিল তুলে দিল। "দেখছি আমি" বলে যেই না সে বস্তা খুলেছে, অমনি গোটা দুনিয়ার পোকা-মাকড়, সাপ, ব্যাঙ, বিছে এসে তাকে কামড়ে দিল। সে দরজার দিকে দৌড়ালো, কিন্তু সেটাও তো আটকানো। কোনোরকমে দরজা খুলেই সে সামনে এক নদীতে ঝাঁপ দিল। সেখানে সে নদীর পাঁকে আটকে গেল, এবং ক্রমশ একটা গাছে রূপান্তরিত হল।

এখনো যদি নদীর ধারে কোনো দুটো গুঁড়িওয়ালা গাছ দেখতে পাও, জানবে সেই দৈত্য এখনো ওখানে আছে। আর ৎসেলানে? সে আবার নিশ্চিন্তে তার মায়ের কাছে বাড়ি ফিরে গেছিল।

(আফ্রিকার লোককথা)


ছবিঃ ঈশিতা ছেত্রী

ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র। লেখালিখি এবং পড়াশোনার মধ্যেই থাকতে ভালোবাসেন।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা