সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
মোসাম্বি লেবুর খোসা থেকে নির্গত তরলটির রহস্য উন্মোচন

যদি প্রশ্ন করি মোসাম্বি লেবু তোমরা কি খাও ?

উত্তরে কম বেশি সকলেই বলবে হ্যাঁ ,মা তো রোজ কেটে দেয় আর খেতেও খুব ভালো লাগে।

বেশ ,তাহলে সবাই যখন মোসাম্বি লেবু খাও ,তাহলে তোমাদের কে আর একটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছি। লেবুর খোসাকে কোনোদিন চিপে দেখেছো হাতে ?

উত্তরে অধিকাংশই বলবে ,আমরা জানি তো কারণ লেবু খাওয়ার সময় দেখেছি যে ওই খোসাটা কামড়ালে বা খোসা থেকে তরলটা জিভে লাগলে কেমন তেতো তেতো লাগে আর তাছাড়াও আমরা খোসা চিপে ওই তরলটাকে চোখের ওপরে দিয়ে খেলি এবং চোখে পড়লে খুব জ্বালা করে।

কিন্তু ,এবার যদি বলি জানো কি ওটা আসলে কী?

এবার হয়তো অনেকেই বলবে না ,এই উত্তরটা তো আমাদের জানা নেই।

সত্যি বলতে , আমরাও ছোটবেলায় এগুলো নিয়ে খেলতাম কিন্তু তখন অবধি আমরা জানতাম না যে এগুলো আসলে কী। তাহলে ,যদি তোমরা নাও জেনে থাকো কোনো অসুবিধা নেই। আজকে তোমাদের সামনে আমরা এই বিষয় নিয়েই কিছু তথ্য উপস্থাপন করছি। একটি খুব সহজ পরীক্ষা করে আমরা দেখবো বিষয়টিকে। যাদের মন একটি বেশি উৎসুক তারা হয়তো প্রশ্ন করেছো ঐটা কী, কিন্তু উত্তর জানা হয়নি তারাও আজ জেনে নাও।

বেশ তাহলে চলো এবার আমরা দেখি।

যারা ভেবেছো এটা লেবুর রস ,তাদের ধারণা একটু ভুল হচ্ছে। তাহলে এই তরলটা কী?

তেল ,হ্যাঁ ঠিকই বলছি, এটা তেল। কিন্তু এই তেল উদ্বায়ী (ভোলাটাইল )। এইটা হলো লেবুর খোসায় থাকা তেল। মোসাম্বি লেবু হলো হেস্পেরেডিয়াম জাতীয় ফল এবং এই ফলগুলির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট হলো এদের খোসাতে অনেক ছোট ছোট উদ্বায়ী তৈল গ্রন্থি থাকে। এদের খোসা ফ্লাভোনয়েডগুলির উৎস ,পেকটিন জাতীয় জৈব যৌগে সমৃদ্ধ।

আচ্ছা আচ্ছা ,বুঝলাম যে এইটা তেল কিন্তু প্রমাণ কী যে এইটা তেল ?

সেটাও দেখানো যায় ,কারণ প্রমাণ ছাড়া তো কিছুই বিশ্বাসযোগ্য নয়। তবে এই প্রমাণ করার জন্য আমাদেরকে একটি ছোট পরীক্ষা করতে হবে। পরীক্ষাটি করার জন্য দরকার কেবল একটি বাটি, নারকেল তেল আর জল ।

মোসাম্বি লেবুর খোসা থেকে নির্গত তরলটির রহস্য উন্মোচন

আমাদের করণীয় - আমরা যদি জলে নারকেলের তেল ফেলি তাহলে দেখবো জলের ওপরে ভাসছে । একইভাবে আমরা যদি ওই মোসাম্বি লেবুর খোসা থেকে নির্গত তরলটিকে জলে ফেলবো। আমরা কী দেখব জানো?

পর্যবেক্ষন -আমরা দেখবো যে মোসাম্বি লেবুর খোসা থেকে নির্গত তরলটিও জলের ওপরে ভাসছে নারকেল তেলের মতোই। তাহলে কী প্রমাণ হচ্ছে ?

প্রমাণ- পরীক্ষাটা প্রমাণ করে যে, তরলটি হলো তেল সেইজন্য জলে মিশছে না ,ঠিক যেমন নারকেল তেলের বা সরষের তেলের ক্ষেত্রে ঘটে। এবার আমাদের মনে প্রশ্ন হচ্ছে কেন জল তেলে মেশে না ?

ব্যাখ্যা - তেল জলে মেশে না কারণ তেলের অণুগুলো 'নন-পোলার' ও জলের অণুগুলো 'পোলার' । ঠিক বুঝা গেলো না তাইতো ? দাঁড়াও, আমরা খুব সহজভাবে তোমাদেরকে বিষয়টি বুঝানোর চেষ্টা করছি। ধরো, তুমি কাউকে খুব ভয় করো ,তাহলে কি তোমার সেই মানুষটির কাছে যেতে ভালো লাগবে বা মিশতে ইচ্ছে করবে ? করবে না তো স্বাভাবিক ভাবেই ,ঠিক এমনটাই হয় জল আর তেলের ক্ষেত্রে। তেল জলকে ভয় পায় , তার জন্য মিশতে চায় না। এই কারণেই তেলকে বলা হয় হাইড্রোফোবিক ('হাইড্রো' মানে জল 'ফোবিয়া' মানে ভয় )অর্থাৎ জল থেকে ভয়। সেইজন্য দেখবে জলের ওপরে তেল ফেললে তেল জলের সাথে মিশে যায় না বরং জলের ওপরে ভেসে থাকে। এই ধর্মটা নিশ্চয় সব তেলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে,সেইজন্য আমরা নারকেল তেলের সাথে পরীক্ষাটা করে দেখলাম যে নারকেল তেল আর মোসাম্বি লেবুর খোসা থেকে নির্গত তরল একই ধর্ম অর্থাৎ তেলের ধর্ম প্রদর্শন করছে মানে তরলটি তেল।

মোসাম্বি লেবুর খোসা থেকে নির্গত তরলটির রহস্য উন্মোচন

তরলটি যে লেবুর রস নয় সেটার প্রমাণ আমরা স্বাদ থেকেই পেয়ে থাকি। কারণ তরলটা জিভে দিলে তেতো লাগে। কিন্তু আরো ভালোভাবে প্রমাণ করার জন্য আরেকটি জিনিস করে দেখতে পারি যেটি প্রমাণ করে তরলটি লেবুর রস নয় ,তেল। কী করবো দেখে নিইঃ

দুটি কাগজের নিয়ে একটি কাগজে যদি আমরা মোসাম্বি লেবুর খোসা থেকে তরটিকে নিষ্কাশন করে (হাতের সাহায্যে চাপ প্রয়োগ করে )ফেলি তো দেখবো কাগজটি হলুদ হয়ে গেছে কিন্তু লেবুর রস যে কাগজটিতে ফেলবো দেখবো সেই কাগজটি খুব হালকা হলুদ হবে (প্রায় হলুদ বর্ণ নেই বললেই চলে ),দেখে মনে হবে যেন জল পড়েছে কাগজটিতে যেটি প্রমাণ করে লেবুর রস আর খোসা থেকে নির্গত তরলটি ভিন্ন।

তাহলে আমাদের জানা হলো পরীক্ষার মাধ্যমে যে লেবুর খোসা থেকে নির্গত এই তরল হলো উদ্বায়ী তেল(essential oil)

এবার আমরা জেনে নিই মোসাম্বি লেবু সম্পর্কে কিছু তথ্য ও এই তেলের ব্যাবহার -

মোসাম্বি লেবু (Citrus limetta risso) সাধরণত sweet lemon হিসাবে পরিচিত এবং এটি এশিয়ার একটি স্থানীয় উদ্ভিদ। ফলটি সাধারণত খাওয়া হয় তাজা বা রস হিসাবে যা ভিটামিন সি এর গুরুত্বপূর্ণ উৎস এবং তাৎক্ষণিক শক্তি প্রদান করে। আমরা বেশিভাগ সবাই তাজা খেয়ে থাকি। হেসপেরিডিয়াম জাতীয় ফল হবার দরুন এদের খোসাতে অনেক ছোট ছোট উদ্বায়ী তৈল গ্রন্থি থাকে। এদের খোসা ফ্লাভোনয়েডগুলির উৎস ,পেকটিন জাতীয় জৈব যৌগে সমৃদ্ধ। এই তেল খাবার, পানীয এবং ওষুধজাতীয় পণ্যগুলির স্বাদ তৈরিতে এবং সুগন্ধি, প্রসাধনী প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়েছে এবং এখনো হয়ে আসছে । এই তেল অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল (অর্থাৎ মাইক্রোবদের বিরুদ্ধে কার্যকরী )অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট (মানে বিভিন্ন মুক্ত মূলক দ্বারা আমাদের দেহের কোষের যে ক্ষতিসাধন হয় সেটিকে প্রতিহত করে ) ,অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি (অর্থাৎ প্রদাহ বা ইনফ্লামম্যাশন কমাতে সাহায্য ) হিসেবে কাজ করে। যেমন ধরো হাতের কোথাও মশা কামড়েছে ,তাহলে কী হয়? জায়গাটা ফুলে যায় আর চুলকায় তাইতো ? এটিকে বলা হয়ে থাকে প্রদাহ বা ইনফ্লামম্যাশন। লেবুর খোসা থেকে প্রাপ্ত তেল এই ফোলা আর চুলকানি কমাতে সাহায্য করে কিন্তু অবশ্যই সেটাকে বিশুদ্ধ হতে হবে। হাতে করে নিষ্কাশন করে লাগালে হবে না।এই বিষয়গুলো পরবর্তীতে আরো বিস্তারিত ভাবে জানবে।এখন খালি জেনে রাখো যে এই তেল খুব উপকারী যার জন্য বিভিন্ন ওষুধে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সাধারণত পরীক্ষাগারে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার দ্বারা খোসা থেকে তেল নিষ্কাশন করা হয়। হাতে করে লেবুর খোসাকে চাপ দিলে দেখব যে খোসাগুলো থেকে এই যে তেল নির্গত হচ্ছে,এটা সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ নয় কারণ হাতে থাকা বিভিন্ন পদার্থ মিশে যেতে পারে সেকারণেই পরীক্ষাগারে নিষ্কাশন করা হয় বিশেষ পদ্ধতিতে ।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা