সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
 কান্নাকাটির গল্প

বেশ কিছু বছর আগের কথা, বুঝলে? মস্ত বনের ধারের ছোট্ট এক গাঁয়ে থাকতো কালোপানা রোগা মতো এক ছেলে, নাম তার অম্বর। মাথায় তার ঝাঁকড়া কোঁকড়া চুল, কিন্তু সে চুলে রাজ্যের জট। হবে না? সে ছেলেকে যে কেউ সকালে কোলের কাছে বসিয়ে বলে না, "বস দেখি চুপটি করে, চপচপে করে তেল ঘষে দিই মাথায়। ইশ, চুল তো নয়, পাখির বাসা! দু'তিনটে চড়াই দিব্যি লুকিয়ে থাকতে পারবে ছেলের মাথায়!" কে বলবে? মা নেই যে অম্বরের!

বাবা আছেন, কিন্তু তাঁকে সাতকাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। ভোররাতে উঠে ঘর নিকিয়ে রান্না সেরে বাবা বেরিয়ে পড়েন গঞ্জের দোকানে খাতা লেখার কাজে। বিকেলে ছুটি, তারপর এক বাড়িতে রামায়ণ পড়ার কাজ সেরে সন্ধের পর ঘরে ফেরা। সারাদিন বাড়ির আর সব কাজ অম্বরকেই করতে হয়। বাসন ধোয়া, কাপড় কাচা, বাগান দেখা, সব। কাঁচা হাতে কাপড় কাচার সময় আছড়ানি দিতে পারে না ঠিক করে, মাড়ও দিতে পারে না এখনও। বাপ ছেলে দুজনেরই কাপড়জামা কেমন ন্যাতপেতে ম্যাড়মেড়ে কালচেপানা হয়ে থাকে সবসময়। গাঁয়ের পাঠশালে যেসব ছেলেপুলে যায় তাদের সব কেমন তেল চপচপে মাথা, পাতা কেটে চুল আঁচড়ানো, সাবান কাচা ধপধপে সাদা জামা, দেখে দেখে অম্বরের মনে হিংসে হয়, তারপর ভাবে ওসব হিংসেটিংসে বিষ, মনে আনা ভাল নয়। যার যা নেই, তা নিয়ে দুক্ষু করে লাভ কী বলো? যা আছে, তাই বা কম কী?

রোজ রাতে খাওয়ার পর উঠোনে চাটাই পেতে বাবার সঙ্গে শুয়ে আকাশ দেখে, কোমরে তরোয়াল গোঁজা কালপুরুষ দেখে দিব্যি সময় কেটে যায়। আর খুব ঘুমে যখন চোখ বুজে আসে, বুঝতে পারে এবার ঘরে গিয়ে শুতে হবে, সেইসময় কোনও কোনওদিন যেন মনে হয় আকাশের কোনও একটা তারা থেকে আবছা দুটো হাসিমাখা চোখ ওর দিকে তাকিয়ে আছে। বাবাকে বলেনি কখনও এসব, কাউকেই বলে না অম্বর।

সেই অনেকদিন আগে, যখন মাকে নিয়ে চলে গেল গাঁয়ের লোক, আর ফিরিয়ে এনে দিল না, তারপর যখন অম্বর রোজ খাওয়া-ঘুমের আগে, চান করতে যাওয়ার আগে, সুয্যি ওঠার পরে, সুয্যি ডোবার পরে, ঝড়বাদলের রাতে মাকে খুঁজে কাঁদতো, তখন একদিন ওপাশের বাড়ির হীরালালদাদু আর এপাশের বাড়ির মণিপিসি মিলে ওকে বুঝিয়েছিল। বকেওছিল, বলেছিল, "ব্যাটাছেলেদের কাঁদতে নেই রে পাগলা, দ্যাখ দেখি তোর বাপকে, চোখে জল দেখতে পেয়েছিস কক্ষনো? তুই কেঁদে মরলেও তোর মা ফিরবে না। সে চলে গেছে আকাশের সিঁড়ি বেয়ে, হুই ওইপারে। কিন্তু তোকে তো এবার বাপের পাশে দাঁড়াতে হবে। বাপের যুগ্যি পুত্তুর হতে হবে। মেয়েছেলে নাকি তুই? দিনরাত কেঁদে মরছিস কেন?"

অম্বর বাবার দিকে তাকিয়ে দেখেছিল, সত্যি তো! বাবার চোখ এক্কেবারে শুকনো খটখটে। তার আগে বা পরেও কখনও বাবাকে কাঁদতে দেখেনি ও।

ইস্কুলে বসে কখনও মায়ের কথা মনে পড়ে চোখ দিয়ে ঝরঝর করে জল পড়লে ক্লাসের অন্য ছেলেরা হইহই করে উঠত, "মেয়েদের মতো কাঁদছে দ্যাখ, হ্যাট! চোখ মোছ, চল বল পেটাতে যাই!"

চারপাশে এসব শুনতে শুনতে অম্বরের মনে হতে লাগল কান্না অতি ইয়ে জিনিস, ব্যাপারখানায় অধিকার কেবলমাত্র মেয়েদেরই, ছেলেদের কান্না পেতেই পারে না। ওর হলোও তাই। মায়ের মুখ মনে পড়েও আর কান্না পেতো না। তার বদলে রাতের আকাশে কোনও একটা তারার গায়ে ওই হাসিমাখা চোখদুটোকে দেখতে পেতো ও, মাঝেমধ্যে। সেইসব দিনগুলোয় ভারি আরামে ঘুমোতো অম্বর, জানো? স্বপ্নে সেই কাচা জামা পরা ছেলেরা এসে ওকে বুড়ো আঙুল দেখাতো না, স্বপ্নে মা এসে ওর গায়ে চাদর ঢেকে দিয়ে আবার অন্ধকারে হারিয়ে যেত না, রেবাকাকিমা মেয়েকে খাইয়ে দিচ্ছে দেখে ওরও ইচ্ছে করছে কেউ খাইয়ে দিক, কিন্তু বলতে পারছে না, গলা ব্যথা করছে, এরকম কোনও স্বপ্নও দেখত না অম্বর সেইসব দিনগুলোয়।

এমনভাবেই দিন কাটছিল, অম্বরও বড় হচ্ছিল। কাপড়ে মাড় দিতে শিখছে, ভাতের মাড় গালতে শিখছে, আবার ইস্কুলে জ্যামিতিও শিখছে একটু একটু, এইরকম সময়ে ওদের ছোট্ট গাঁয়ে মহা শোরগোল পড়ে গেল। সিনেমাপার্টির লোক আসছে নাকি, শুটিং হবে কোন সিনেমার। ক'দিন রাস্তাঘাটে, চায়ের ঠেকে, ইস্কুলে দোকানে সর্বত্র ওই সিনেমাপার্টিরই গল্প। ছেলেপুলের পড়াশোনা শিকেয় উঠল, শুটিংপর্ব শেষ না হলে গাঁয়ের কাজকর্ম স্বাভাবিক হবে না বোঝা গেল। অম্বর ততদিনে ইস্কুলের বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে সিনেমার হিরো হিরোইনদের চিনছে, খবরের কাগজ থেকে তাদের ছবি কেটে পুরোনো খাতার পাতায় সেঁটে রাখছে বাবার চোখ এড়িয়ে। বাবার চোখ এড়ানো অবশ্য কঠিন কাজ নয়। সন্ধের পর ফিরে বাবার চোখ ঘুমে ভরে থাকে, কোনওমতে রাতের রান্নাটুকু সেরে তিনি বসে ঝিমোন আর অম্বরের পড়া শেষ হওয়ার অপেক্ষা করেন। তখন অম্বর যদি ভূগোলের খাতায় ম্যাপ আঁকার বদলে পুরোনো খাতায় সিনেমাস্টারদের ছবি সাঁটতে বসে, তাহলেও বাবা বুঝতে পারবেন না।

যা বলছিলাম। সিনেমাপার্টির আসার খবর শুনে আর সব ছেলেপুলের মতো অম্বরেরও বুক ঢিপঢিপ করতে লাগল। কারা আসবে? যাদের সিনেমা গঞ্জের হলে লাগলেই উঁচু ক্লাসের দাদারা দেখতে ছোটে স্কুল পালিয়ে, তাদের কেউ? অম্বর তো নীচু ক্লাস, তায় আবার ওর বাবা গঞ্জের দোকানে কাজ করে, গঞ্জের হলে ওর সিনেমা দেখতে যাওয়ার প্রশ্নই নেই। দাদারা ফিরে হিরোর নতুন ইস্টাইলে চুল আঁচড়ানো নকল করলে অম্বরও বাড়িতে আয়নার সামনে ওই ইস্টাইলই প্র্যাকটিস করে। দাদারা অবশ্য হিরোদের সবকিছুই নকল করে, কাছাকাছি বয়সের মেয়েদের কাউকে রাস্তায় দেখলে নতুন সিনেমাটায় শোনা গানের দু'লাইন গাওয়া বলো, বা হিরোর চুল ঝাঁকানোর কায়দাটা প্র্যাকটিস করে নেওয়া, দাদারা এরকম নানান অ্যাডভেঞ্চার করে থাকে। ওসব অম্বর পারে না। সেই যে ছোটবেলায় ওর ধারণা জন্মেছিল মেয়েরা কেবল কাঁদতে জানে, কাঁদতে কেবল মেয়েরাই পারে, সেই ধারণা ওর সঙ্গেই বড় হচ্ছে। ছিঁচকাঁদুনে একটা দলের প্রতি ওর আলাদা করে কোনও আগ্রহ এখনও পর্যন্ত জন্মায়নি। হ্যাঁ, হিরোইনদের কথা আলাদা, ওদের দেখতে ভাল লাগে। কিন্তু গাঁয়ের আর সব মেয়েদের দেখলেই অম্বরের মনে পড়ে যায়, "মেয়েদের মতো কাঁদছে দ্যাখ, হ্যাট!"

দেখতে দেখতে দিনটা এসে গেল। তখন তো সোশ্যাল মিডিয়ার এত চল হয়নি। নিমেষের মধ্যে দিকে দিকে খবর ছড়িয়ে পড়া আজকের মতো সোজা ছিল না। তাই গাঁয়ের লোক কিছুতেই জানতে পারেনি কোন সিনেমার শুটিং হবে, কারা আসবে। দুপুরের পর শুটিং শুরু হবে ইস্কুলবাড়িতে। অম্বরও বন্ধুদের সঙ্গে শুটিং দেখতে যাবে বলে সকাল থেকে বাড়ির সব কাজ সেরে নিয়েছে। যাওয়ার সময় আবার পাশের বাড়ি থেকে রাঙাদিকে ডেকে নিয়ে যেতে হবে। রাঙাদি হীরাদাদুর মেয়ের মেয়ে, বাবা মা নেই, এখানেই থাকে, ইস্কুলে অম্বরের চেয়ে দু'ক্লাস উঁচুতে পড়ে। দিদির খুব শখ শুটিং দেখার, ওর মামা মামী ছাড়তে চাইছিল না। শেষটায় হীরাদাদু আজ সকালে গঞ্জে যাওয়ার আগে বন্দোবস্ত করে গেছে, রাঙাদি অম্বরের সঙ্গে শুটিং দেখতে যাবে।

সেইমতো তাড়াতাড়ি খেয়েদেয়ে বেরিয়ে অম্বর রাঙাদিদের বাড়ির গেট খুলে ঢুকতেই কানে এল চাপা গলার আওয়াজ। ঝগড়া? সে তো রোজই লেগে থাকে, কিন্তু এমন চাপা গলায় ঝগড়া তো আগে শোনেনি। উঠোনে আরেকটু এগোতেই অম্বরের চোখে পড়ল রাঙাদি ঘরের দরজার মুখে দাঁড়িয়ে আছে একটা দা হাতে নিয়ে, চোখে যেন আগুন জ্বলছে! সামনে গলায় গামছা জড়ানো একটা লোক দাঁড়িয়ে, লোকটার একহাতের প্যাকেটে ফুলটুল দেখা যাচ্ছে, আরেক হাতে একটা কালো ব্যাগ। রাঙাদির পেছনে মুখে আঁচল চাপা দিয়ে দাঁড়িয়ে প্রীতিকাকিমা, রাঙাদির মামী হয়। কাকু বাড়িতে আছে কি?

"আর এক পা এগোলে এই দায়ের কোপ তোর গলায় পড়বে। এক পাও এগোবি না শয়তান!"

লোকটার চোখে চোখ রেখে চিৎকার করে উঠোনে নামল রাঙাদি, হাতে উঁচু করে ধরা আছে দা-টা। অম্বরের গলা শুকিয়ে গেছে ভয়ে, চেঁচাতেও পারছে না। সেই অবস্থাতেও মনে হল, রাঙাদি তো মেয়ে, কই, ও তো এখন কাঁদছে না! ওকে সামনে দেখতে পেয়েই চমকে উঠল রাঙাদি, দৌড়ে এসে ওর হাতে এক টান দিয়ে বলল, "অম্বর, দৌড়ো। সময় নেই, আমায় পালাতে হবে!" দিদির চোখে তখনও আগুন ঝরছে। সন্ধিপুজোর সময় মা দুর্গাকে এরকমই দেখতে লাগে কি? কেন তবে ওরা ভুল বোঝাতো অম্বরকে? কেন বলতো, "মেয়েদের মতো কাঁদছে দ্যাখ, হ্যাট!"

 কান্নাকাটির গল্প

রাঙাদির হাত ধরে প্রাণপণে দৌড়তে থাকে অম্বর। কেন দৌড়োচ্ছে, কোথায় যাচ্ছে, কিচ্ছু জানে না, শুধু বুঝছে ওই লোকটা খুব খারাপ কিছু করতে এসেছিল, রাঙাদিকে তাই হাতে দা তুলে নিতে হয়েছে, আর তাই রাঙাদির চোখ দিয়ে আগুন ঝরছে। লোকটা এবার বোধহয় দলবল নিয়ে আসবে, তার আগে ওদের পালাতে হবে। সিনেমায় এরকম হয়, অম্বর জানে। সত্যিও যে এমন হয়, সেটা আজ জানলো।

একসময় ওরা এসে পৌঁছোলো ইস্কুলবাড়ির মাঠে, সেখানে শুটিং শুরু হয়েছে তখন। রাঙাদি ওর হাত ধরে দৌড়ে ঢুকে পড়ল সেখানে, একজন ঘোমটা দেওয়া কে যেন একটা চেয়ারে বসে ছিল, তার পায়ের কাছে বসে পড়ে ডুকরে উঠল, "মা, বাঁচাও আমায়, ওরা আসছে, আমায় নিয়ে যাবে, আমায় বেচে দেবে ওরা, টাকা এনেছে লোকটা, সিঁদুরও, আজ দাদু গঞ্জে যাবে জানতো ওরা, তাই আজই আসতে বলেছিল, আমায় ওরা ছাড়বে না, বাঁচাও মা গো!"

শুটিং থেমে গেছে এসব হুজ্জোতিতে। সিনেমাপার্টির লোকজন তো কিছুই বুঝছে না। রাঙাদি ফোঁপাতে ফোঁপাতে নাক টানতে টানতে যা বলল সেসব শুনে বোঝা গেল, হীরাদাদুর ছেলে-ছেলের বউ তাদের মা-বাপমরা ভাগ্নী রাঙাকে কোনও এক মেয়ে পাচারকারী দলের কাছে বিক্রি করে দেওয়ার ছক কষেছিল। তাদের দলের লোক আজ এসেছে টাকা নিয়ে, সিঁদুর পরিয়ে বিয়ের ছল করে মেয়েটাকে ধরে নিয়ে যাবে বলে। রাঙা বেশ বুদ্ধি ধরে, ইস্কুলে প্রথম দশজনের মধ্যে থাকে, সে তার মামা মামীর ছক ধরে ফেলেছিল। শেষ সময়ে হাতের কাছে দা পেয়ে সেটাকেই বাগিয়ে ধরে সবাইকে ভয় দেখিয়ে বাড়ি থেকে পালাতে পেরেছে।

"দ্যাখো দেখি মেয়ের বুকের পাটা! সাহস আছে বলতে হবে! পড়ে পড়ে না কেঁদে ফোঁস করে উঠল বলেই তো আজ মেয়েটা বাঁচল! গাঁয়ের মধ্যে ই কী কাণ্ড গো! তলে তলে মেয়েধরার দলের সাথে সাঁট! ছ্যাঃ!"
"অম্বরের সাহসটাও বল! ওইটুকু ছেলে, বিপদের মধ্যে থেকে মেয়েটার হাত ধরে ঠিক পালিয়ে আসতে পেরেছে তো!"

এমনই সব কথা ভেসে বেড়াচ্ছে মাঠে সবার মুখে মুখে। শুটিং পার্টির চেয়েও লোকের বেশি নজর আজ অম্বর আর রাঙার দিকে। গাঁয়ের মধ্যে এমন কিছু রোজ রোজ ঘটে না যে!

রাঙাদি ততক্ষণে একটু ধাতস্থ হয়েছে। ওই ঘোমটা দেওয়া সিনেমাস্টার তাকে কোলের কাছে বসিয়ে আগলে রেখেছেন। রাঙাদি তাঁর হাতদুটো ধরে বলল, "আমি কিন্তু আপনার সঙ্গে যাব। এখানে থাকলে ওরা আবার আমায় বেচে দেবে। রোজ রোজ বাঁচার ক্ষমতা আমার নেই মা!"

"শান্ত হও মেয়ে, আগে ঠাণ্ডা হও। পুলিশে ডায়রি লেখাতে হবে, তাদের সামনে তোমার দাদুকে ডেকে তাঁর অনুমতি নিয়ে কাগজে সই করে তবে আমি তোমায় নিয়ে যেতে পারব। তোমার বাপ-মা নেই না?"

"থাকলে কি আজ ওরা আমায় বেচে দিত বলো?" বলতে বলতে রাঙাদি আর নিজেকে সামলাতে পারে না, হাউহাউ করে কাঁদতে থাকে। অম্বর অবাক হয়ে দেখতে থাকে, একটু আগেই যে মেয়ের চোখ দিয়ে আগুন ঝরছিল, দা হাতে অসুরবধের চেষ্টায় নেমেছিল যে, এখন সে কেমন ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়ে কাঁদছে। কই, একবারও তো ওকে ছিঁচকাঁদুনে মনে হচ্ছে না!

কান্না ব্যাপারটার প্রতি ওর ধারণাটা আস্তে আস্তে বদলাতে থাকে, সেইসঙ্গে অম্বর বুঝতে পারে কান্না বড্ড ছোঁয়াচে। রাঙাদির কান্নার ছোঁয়াচ লেগে ওরও চোখ উপচে গাল বেয়ে নামছে কান্নার ধারা, অনেক অনেক দিন পর ওর ভেতরের জমানো বরফ কান্না হয়ে গলে বাইরে আসছে, ধুয়েমুছে হাল্কা হচ্ছে ভেতরটা।

ভার নেমে গেলে অম্বর ঠিক করে, আজ থেকে সন্ধেবেলা ও বাবার পাশে পড়তে বসবে, পড়া হয়ে গেলে রোজ সারাদিনের গল্প বাবাকে বলবে, বাবার কাছে শুনবে। আর রাতে যদি কোনও তারার মাঝে হাসিমাখা চোখদুটো দেখতে পায়, তাহলে চিৎকার করে একবার 'মা' বলে ডেকে হাউহাউ করে কাঁদবে! শুধু আজ নয়, এরপর থেকে যবে যখন কান্না পাবে তখনই কেঁদে মনের মধ্যেকার ব্যথাকে উগরে দেবে। কান্না মানেই যে ছিঁচকাঁদুনে মেয়েলিপনা নয়, যারা কাঁদে, তারা যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহসও রাখে, সেকথা তো আজ অম্বর জেনেই ফেলেছে। তবে আর কাঁদতে লজ্জা কী!

ভূতপূর্ব ইঞ্জিনিয়ার, বর্তমানে সাংসারিক কাজের মাঝে সু্যোগ পেলেই পড়া আর লেখার আনন্দে মাতার চেষ্টায় থাকেন। সেই গোত্রের মানুষ, যারা আর কিছু না পেলে ঠোঙ্গায় ছাপা খবরও মন দিয়ে পড়েন। সারাদিনের অনেকটা সময় কাটে মেয়ে কুটুনের সঙ্গে; তার কীর্তিকলাপ মাঝেমধ্যে লিখতে চেষ্টা করেন;বর্তমানে ধানবাদের বাসিন্দা।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা