সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
চালাক শেয়াল আর মোহরের গল্প

এক ছিল শেয়াল। গ্রামের শেষে নদীর ধারে তার গর্ত। সেই গর্তে শেয়াল বেশ আনন্দেই দিন কাটায়। সন্ধ্যে হলে গর্ত থেকে বের হয়ে নদীর ঠান্ডা হাওয়ায় ঘুরে বেড়ায় আর মনের আনন্দে হুক্কা-হুয়া করে গান গায়। তারপর রাত বাড়লে চলে আসে গ্রামে। গ্রামের কোন বাড়িতে হাঁস পাওয়া যায় আর কোন বাড়িতে মুরগি পাওয়া যায় তা শেয়ালের মুখস্ত। কোন বাড়ির হাঁস-খোঁয়াড়ের দরজা কত পলকা আর কোন বাড়ির গোয়াল ঘরে যেতে ক-টা গলি পড়বে তাও তার নখদর্পণে। শেয়ালের যেদিন মুরগি খেতে ইচ্ছে যায় সেদিন সে মুরগি খায়। যেদিন হাঁস খেতে ইচ্ছে যায় সেদিন হাঁস মাংস দিয়েই ভোজটা সেরে নেয়। কোন কোনদিন ছাগল ছানাও তার খাবার রুটিনে থাকে। তবে একদিন ভর-পেট খেয়ে সে টানা দু-দিন কিছুই খায় না। আর এসময়টা ভুলেও আর গ্রামের পথে মাড়ায় না। শুধু রাত হলে নদীর ঠান্ডা হাওয়ায় বেশ মজা করে গান ধরে –

"‍হাঁস-মুরগি-ছাগল ছানার ঘাড় মটকে খাই,
নদীর ধারে ঠান্ডা হাওয়ায় কতই মজা পাই।
হুক্কা-হুয়া, হুক্কা-হুয়া, হুক্কা-হুয়া, হুক ---
রাত-বিরেতে ঘরে ঢুকে চুরি করাই সুখ।
হুক্কা-হুয়া-হুক।"

তবে এখন শেয়ালটার লোভ খুব বেড়ে গেছে। রোজ রোজ জ্যান্ত হাঁস-মুরগি না খেলে তার চলে না। আজ এর বাড়িতে ঢুকে হাঁসের খোঁয়াড় থেকে হাঁস নিয়ে পালাল তো কাল ওর বাড়ির গোয়াল থেকে ভেড়া চুরি করে নিয়ে পালাল। গ্রামের লোকজন একেবারে পাগল হবার জোগাড়। কিছুতেই তারা শেয়ালটাকে ধরতে পারেনা। ধরবে কী করে, শেয়ালটা যে বেজায় ধূর্ত। পা টিপে টিপে মাঝ রাতে সে গ্রামে হানা দেয়। তারপর এমনভাবে হাঁস-মুরগির টুঁটি চেপে ধরে য়ে বেচারারা চিৎকার করার সুযোগটাও পায় না।

গ্রামের মোড়ল একদিন সকালে উঠেই বিচার করতে বসল। "যেমন করে হোক শেয়ালটাকে ধরতে হবে। তারপর ব্যাটাকে মজা দেখিয়ে ছাড়বো।"

মোড়ল মশাই ঘোষণা করল "আজ রাত্রে আমরা কেউ ঘুমাবো না। তা বলে চিৎকার চেঁচামেচি করলেও চলবে না। সবাই লাঠি হাতে ঘরের দরজার কাছে ঘাপটি মেরে বসে থাকবো। দেখি আজ সে কীভাবে নিস্তার পায়।" সেইমতো আজ গ্রামের সবাই জেগে রয়েছে। রাগে তাদের চোখ লাল হয়ে উঠেছে। যে করেই হোক ধূর্ত শেয়ালটার ঠ্যাং খোঁড়া করে দিতে হবে। তবে শান্তি।

এদিকে শেয়ালটা তো আর এতসব ব্যাপার জানে না। সে অন্যদিনের মতই গভীর রাত্রে চুপিসাড়ে তার গর্ত থেকে বের হয়ে গ্রামের দিকে পা বাড়াল। জিভ দিয়ে তার জল গড়াচ্ছে। কখন একটা তাজা মুরগির ঠ্যাং জিবিয়ে খাবে। আগের দিন যে পাড়ায় ঢুকেছিল আজ কিন্তু ওদিকে গেল না। আজ অন্য পাড়ায় ঢুকতে হবে। গ্রামের একমাত্র বামুনঠাকুরের বাড়ির পিছন দিকে একটা কচু বন আছে। সেই কচু বনের ভেতর দিয়ে শেয়াল চলল ঘোষেদের বাড়িতে।

চৌকাঠের ছোট্ট ফাঁক গলে ঢুকেও পড়ল সে কিন্তু ঢুকেই ঘোর বিপদ। ঘোষেদের পো লাঠি হাতে সশরীরে দণ্ডায়মান। শেয়ালকে দেখতে পেয়েই হাতের লাঠিটা জোরে ছুড়ে মারল। সেটা এসে লাগল শেয়ালের লেজে। লেজটা ঝন্ ঝন্ করে উঠল। শেয়াল এমন দৌড় মারল যে ঘোষেদের পো তেমন কায়দা করতে পারল না। কিন্তু এমন চিৎকার জুড়ে দিল তাতে গ্রামের লোক যে যেখানে ছিল সবাই লাঠি হাতে এসে পুরো জায়গাটা ঘিরে ফেলল। বামুনঠাকুরের কচুবন জুড়ে লোকজন গিজ্ গিজ্ করতে লাগল। পাজি শেয়াল গেল কোথায় ?

কচু বনের পাশেই বামুনঠাকুরের ঘর। তার বাড়িতে হাঁসও নেই, মুরগিও নেই। সেই কারণে তার রাত জাগবার দরকারও নেই। ধূর্ত শেয়াল কচুবনে লুকোনোর জায়গা না পেয়ে এসে ঢুকল বামুনঠাকুরের খাটের নীচে। লোকজনের চি‌ৎকারে আগেই তার ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল। এবার সে শেয়ালকে খাটের নীচে ঢুকতে দেখে উঠে বসল।

ধূর্ত শেয়াল বামুনঠাকুরকে দেখেই বলল, "ঠাকুরমশাই আমি তো আপনার কোন ক্ষতি করিনি। তাই বলছিলাম যদি আমাকে বাঁচান তাহলে আমি আপনাকে এক কলসি মোহর দেব।" গরিব বামুনঠাকুর বলল, "এক কলসি মোহর ? বলিস কী রে। পারি কোথায় ?"

শেয়াল বলল, "নদীর ধারে কী জানি কে কবে পুঁতে রেখেছিল। আমি আমার গর্তে এনে রেখে দিয়েছি। মোহরে আমার কী কাজ? ওগুলো কাল সকালেই সব আমি আপনাকে দিয়ে দেব। শুধু আমাকে একটা চাদর ঢাকা দিয়ে খাটের নীচে লুকিয়ে রাখুন, না হলে লোকজন আমাকে পিটিয়ে মেরে ফেলবে।" বামুনঠাকুর ভাবল, "এটা কি ঠিক হবে? এতে গ্রামবাসীদের ঠকানো হবে না ?"আবার এও ভাবলেন, "শেয়ালটা তো তার কোন ক্ষতি করেনি। করবেই বা কী করে গরিব বামুনের ঘরে হাঁস-মুরগি কিছু আছে?"

বামুনঠাকুর এক কলসি মোহরের লোভে পড়ে গেল এবং সে ধূর্ত শেয়ালের প্রস্তাবে রাজীও হয়ে গেল। তাই তাড়াতাড়ি নিজের গায়ের চাদরটা খুলে শেয়ালটাকে ঢেকে খাটের নীচে ঢুকিয়ে দিল।

লাঠি হাতে লোকজন কচু বন তছনছ করে দিল। তারপর বাঁশবন, পুটুস বন সব খুঁজে দেখল। কয়েকজন বামুন ঠাকুরের ঘরেও উঁকি মেরে গেল। রাগে তাদের নাকের পাটা ফুলে ফুলে উঠছে। সারারাত জেগে চোখ ভাটার মত জ্বলছে। একবার শেয়ালটাকে ধরতে পারলেই হল। তার ভবলীলা সাঙ্গ করে দেবে।

অন্যদিনের মতো আজও বামুনঠাকুর নদীতে স্নান করতে চলল। কচু বনের পাশ দিয়ে চুপচাপ হেঁটে যাচ্ছে সে। আর তার চাদরের ভেতর বসে রয়েছে ধূর্ত শেয়াল। বামুনঠাকুর ভাবছে, আর কিছুক্ষন পরেই সে বড়লোক হয়ে যাবে। এক কলসি মোহর কম কি?

শেয়াল দেখল সে বিপদমুক্ত। নদীর কাছাকাছি এসে পড়েছে। সামনেই তার গর্ত। গর্তের কাছে এসে শেয়াল বলল, "এই তো এসে গেছি। আমায় এবার ছেড়ে দিয়ে মাটিতে আপনার চাদরটা পেতে দিন। আমি গর্তে গিয়ে মোহরগুলো এনে চাদরে ঢেলে দিই।"

চালাক শেয়াল আর মোহরের গল্প

বামুনঠাকুর সেইমতো শেয়ালকে চাদরের ভেতর থকে বের করল। না কেউ দেখতে পায়নি। শেয়াল বলল, "এখন তো ভোর হয়ে এসেছে, তাই লোকজনও এসে পড়তে পারে। আপনি এদিকে পিছন ফিরে গ্রামের দিকে তাকিয়ে দাঁড়ান। কেউ যেন মোহরগুলো দেখে না ফেলে।"

বামুনঠাকুর তাই করল। সে চাদরটা মাটিতে বিছিয়ে একদিকে সরে দাঁড়াল।

ধূর্ত শেয়াল এবার বামুনঠাকুরের চাদরে প্রাতঃকৃত্য সেরে বেশ করে নোংরা করে দিল। তারপর সুড়ুৎ করে গর্তে ঢুকে গেল। মোহরের কলসি তার থাকলে তবে তো চাদরে ঢালবে। সে তো ঠাকুরমশাইকে বোকা বানিয়েছে।

এদিকে অনেকক্ষন হয়ে গেল। চাদরে মোহর ঢালার কোন শব্দ না পেয়ে বামুনঠাকুর পেতে রাখা চাদরের সামনে এসে দেখে ধূর্ত শেয়াল চাদর নোংরা করে দিয়েছে। একটু আগেই সে এক কলসি মোহরের স্বপ্নে বিভোর হয়েছিল। মোহরের লোভেই সে শেয়ালের কাছে বোকা বনে গেল।

তার ঢের শিক্ষা হয়েছে। আর নয়। এরপর শেয়ালকে কোনদিন বাগে পেলে সে মজা দেখিয়ে দেবে। এই ভাবতে ভাবতে নোংরা চাদর নদীতে ধুয়ে, স্নান সেরে বামুনঠাকুর গ্রামে ফিরে এল।

( মানভূমের প্রচলিত লোককথা )

পুরুলিয়ার বাসিন্দা তরুণ কুমার সরখেল জেলার প্রশাসনিক বিভাগে কাজ করেন। পাশাপাশি ছোটদের জন্য নিয়মিত লেখালিখি করেন, এবং ছোটদের জন্য একটি মুদ্রিত পত্রিকা সম্পাদনা করেন।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা