সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
চাঁদ দেখার উৎসব

পূর্ণিমা রাত্রে আকাশে যখন গোল সোনার থালার মত চাঁদ ওঠে, তখন কী সুন্দরই না লাগে দেখতে! কিন্তু চাঁদের বুকে কালো কালো কতগুলো ছোপ আছে, লক্ষ্য করেছ তো? মানুষ চাঁদের শোভা দেখতে দেখতে ভাবে, যেন একটা ডালপালাওয়ালা বড়সড় গাছ, আর গাছের নিচে বসে আছে একটা লোক। অনেকের আবার মনে হয়, চাঁদের বুকে একটা খরগোশ বসে আছে। কেউ বলেন, না, ওখানে চাঁদের দেবীকে দেখা যাচ্ছে, অমৃত-কলস নিয়ে উনি বসে আছেন, আর কলস থেকে চাঁদের জ্যোৎস্নার সঙ্গে অল্প অল্প করে ঢেলে দিচ্ছেন অমৃত, পৃথিবীর মানুষের জন্য, যাতে করে আমরা সুস্থ থাকি, ভাল থাকি। শরত কালের পূর্ণিমায় চাঁদ সবচেয়ে বড় আর উজ্জ্বল। তাই অর্ধেক পৃথিবীতে, এশিয়ার দেশগুলোতে শারদীয়া পূর্ণিমা রাত্রে লোকে উৎসবে মাতে। চাঁদের মত গোল গোল কেক বানিয়ে খায়, তার নাম 'মুন-কেক' আর পরিবারের সবাই একসঙ্গে মিলে আনন্দ করে খাওয়াদাওয়া করে, চাঁদের দিকে চেয়ে পরিবারের সুখসমৃদ্ধির প্রার্থনা জানায়, হাসি-গল্পে রাত কাটিয়ে দেয়।

কিন্তু দেশ-বিদেশে বিজ্ঞানের চর্চার ফলে মানুষ যখন প্রাকৃতিক অনেক ঘটনার ব্যাখ্যা খুঁজে পেল, তখন সে জানতে পারল যে, আসলে চাঁদের বুকে ঐসমস্ত ছোপগুলো বিরাট বড় বড় সব গর্ত। চাঁদের তো নিজের কোন আলো নেই, সূর্যের আলোই চাঁদের বুকে প্রতিফলিত হয়, কিন্তু সেই গভীর গর্তগুলোতে আলো ঢুকতে পারে না, তাই অমন কালো কালো ছোপের মত দেখায় আর সেসব আকার মানুষের কল্পনায় গাছ, মানুষ, খরগোশের রূপ ধরে।
চাঁদের রহস্য জেনে ফেললেও চাঁদকে কেন্দ্র করে যে উৎসব, মানুষে মানুষে মেলামেশা, আনন্দ সেসব কেউ আর বাতিল করতে পারল না। উৎসবগুলো তারা ভালবেসে রেখে দিল আর ছেলেপুলেদের কাছে বাড়ির ঠাকুমা দিদিমারা সেইসব পুরনো বিশ্বাসের গল্প বলে সেই গল্পগুলোকে বাঁচিয়ে রাখল। সেগুলোই এখন বিশ্বের নানা জাতির পৌরাণিক ও রূপকথার কাহিনীতে ঠাঁই পেয়েছে। শুনবে নাকি তেমন কিছু গল্প? গল্পগুলো শুনতে মন্দ নয় আর তার মাঝে লুকিয়ে আছে নানা ভাল কথা, যা আমাদের কাজে আসে। এমনই এক গল্প গরীব কাঠুরে চু কোই-এর কাহিনী।

চাঁদ দেখার উৎসব

অনেক অনেক কাল আগে, এক গ্রামে চু কোই নামে এক গরীব কাঠুরে বাস করত। তিন কূলে তার কেউ নেই। গ্রামের এক প্রান্তে ছোট্ট এক বাঁশের কুটিরে সে থাকে। রোজ সকাল সকাল জামা-জুতো পরে একটি কুঠার নিয়ে সে বনের পথ ধরে। সঙ্গে থাকে একটি বাঁশের লাঠি। কিছু কাঠ কেটে পুঁটলি বেঁধে ঝুলিয়ে নেয় ঐ বাঁশের লাঠির আগায় আর লাঠিটা কাঁধে বয়ে নিয়ে হাজির হয় গ্রামের হাটে। সেখানে কাঠকুটো বেচে সামান্য যা পয়সা পায়, তাই দিয়ে চাল-আটা-আনাজ কিছু কিছু কিনে বাড়ি ফেরে। নিজেই রেঁধে বেড়ে দুটি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে, আবার পরদিন সকালে বনের পথ ধরে। এইভাবেই কষ্টেসৃষ্টে চলছিল তার দিন।

একদিন বনে গিয়ে কাটার উপযুক্ত কাঠ পেল না চু কোই। জঙ্গলে কাঠ কাটারও কিছু নিয়ম আছে। যে কোনও গাছ কেটে নেওয়া যায় না, পাহারাদার জানতে পারলে শাস্তি হবে। সামনে উৎসবের মরসুম। চু কোই-এর ভারি মন খারাপ হল। সারাদিন বনে ঘুরে ঘুরে তার তেষ্টাও পেয়েছে। জলের সন্ধানে সে একটু গভীর বনের দিকে হাঁটা দিল। কিছুক্ষণ পরে দূর থেকে কুলকুল করে ঝর্ণার শব্দ কানে আসতেই বুঝতে পারল, কাছেই মিষ্টি জলের উৎস আছে। সেদিকে এগিয়ে গিয়ে একটা ভারি সুন্দর দৃশ্য দেখে সে দাঁড়িয়ে পড়ল। দেখে কী, একটু দূরে ঝিরঝির করে বয়ে চলেছে একটি ঝর্ণা, তার পাশে একটি বাঁকাচোরা প্রাচীন বটগাছ। সেই গাছেরই গুঁড়ির নিচে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে তিনটে ছোট্ট ছোট্ট বাঘের ছানা। ছানাদের এখনও চোখ ফোটেনি। বাঘিনী মা হয়তো কাছেই কোথাও গেছে খাবার আনতে। চু কোই-এর মনে একটা দুর্দম আশা জেগে ওঠে। ভাবে, একটা বাঘের ছানাকে যদি ধরে নিয়ে শহরে যারা জন্তুজানোয়ার নিয়ে খেলা দেখায়, তাদের কাছে বেচে দেওয়া যায়, তাহলে ভালই পয়সা পাওয়া যাবে। তার জুতোজোড়া ছিঁড়ে গেছে, একজোড়া ভাল জুতো কেনা যাবে। শীত আসছে। ঘরের উপর নতুন ছাউনিও দিতে হবে। এইসমস্ত ভেবে চু কোই সাহস সঞ্চয় করে পা টিপে টিপে কাছে গেল। এদিক ওদিক ভাল করে দেখে নিয়ে টপ করে তুলে নিল একটা বাঘের ছানা আর চালান করে দিল তার কাঁধের পুঁটলিতে। যেই না পিছন ফিরে দু-পা গেছে, বিকট হুঙ্কারে তার আত্মারাম খাঁচাছাড়া হওয়ার জোগার। বাঘিনী মা এদিকেই ছুটে আসছে! ওদিকে পুঁটলির ভিতর বাঘের ছানাটা হ্যাঁচোড়প্যাঁচোড় করছে। কোনরকমে দৌড়ে চু কোই উঠে পড়ল সামনের একটা গাছে আর অসাবধানে পুঁটলি থেকে বাঘের ছানাটা পড়ে গেল মাটিতে। অনেকটা উঁচু থেকে পড়ল ছানাটা। খুব জোর ব্যথা পেয়েছে আর ঘ্যা ঘ্যা করে কান্নাও জুড়েছে। চু কোই ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলেছিল। একটুখানি চোখ খুলে দেখে, ছানাটার মাথা ফেটে রক্ত পড়ছে। মা বাঘিনী চটপট সেই বাঁকাচোরা বটগাছের কয়েকটা পাতা চিবিয়ে থেতো করে রাখল তার ছানার মাথার কাটা জায়গার উপরে। চু কোই অবাক হয়ে দেখল যে, সঙ্গে সঙ্গে রক্ত বন্ধ হয়ে গেল আর ছানাটা দিব্যি হাত-পা নেড়ে খেলতে লাগল। একটু পরে বাঘিনী তার ছানাপোনা নিয়ে সেই জায়গা থেকে চলে গেল। আরও খানিকক্ষণ পরে, চারদিক দেখেশুনে আস্তে আস্তে গাছের উপর থেকে নামল চু কোই। ধীরে ধীরে গেল বটগাছের কাছে। কটি পাতা ছিঁড়ে গন্ধ শুঁকল। নাহ, আলাদা কোন বৈশিষ্ট্য তো টের পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু একটু আগে সে যা দেখেছে, তাতে মনে হচ্ছে যে, গাছটার একটা ভেষজ গুণ আছে। সে আরও কিছু পাতা ছিঁড়ে নিজের পকেটে রাখল, তারপর ঘরের পথ ধরল।

যেতে যেতে দেখে কী, পথের ধারে মরে পড়ে রয়েছে একটা কুকুর। দেখেই সে চিনতে পারলো, "আরে! এটা তো আমার কয়েকটা ঘর পরেই থাকে চাঙ্গু কাকা, তার ছেলের পোষা কুকুর!" চু কোই-এর কী খেয়াল হল, ও বাঘিনীটাকে যেমন করতে দেখেছে, ঠিক তেমন করে পকেট থেকে কয়েকটা পাতা বের করে অল্প একটু চিবিয়ে থেতো করে কুকুরটার গায়ে ঐ রস বুলিয়ে দিল। কী আশ্চর্য! অমনি ওটা চার-পা ঝাড়া দিয়ে লাফিয়ে উঠেছে! চু কোই চলে আর কুকুরটা চলে ওর সাথে সাথে লেজ নাড়তে নাড়তে। চু কোই আজ কোন কাঠ কাটতে পারেনি, তাই আর হাটের দিকে গেল না। সোজা ঘরে ঢুকে পড়ল। তার আগে কুকুরটাকে পৌঁছে দিয়ে এল তার মালিকের কাছে। মনে মনে ভাবল, বটগাছটার পাতার রসে সত্যিই কোন বিশেষ গুণ আছে। আগামীকাল বনে না গিয়ে শহরের দিকে যাবে ভাবতে ভাবতে সে ঘুমিয়ে পড়ল।

শীতের মরসুম মানেই ছুটির মেজাজ। উৎসবের আমেজ। কিন্তু শহরটা যেম কেমন মনমরা হয়ে রয়েছে। ছেলেপিলেরা ছোটাছুটি করে খেলছে না। বয়স্কদের মুখ গম্ভীর। হলটা কী? চু কোই একজন বুড়ো লোককে জিজ্ঞাসা করল, "শহর এমন চুপচাপ কেন? কোথাও উৎসবের ব্যস্ততা নেই কেন?" বুড়ো লোকটা দুঃখিত মুখে বলল, "তুমি জানো না? রাজার মেয়ের ভারি অসুখ। কী যে হয়েছে কোনও বৈদ্য রোগ ধরতে পারছে না। আমাদের রাজকুমারী খাওয়াদাওয়া করছে না। দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে। এরকম চলতে থাকলে সে যে মারা যাবে। রাজামশাইয়ের তাই ভারি মনখারাপ। আমাদেরও সেইজন্য উৎসবে মেতে উঠতে ভাল লাগছে না।"

চু কোই ধীরে ধীরে রাজবাড়ির দিকে পা বাড়ায়। পকেটে হাত দিয়ে দেখে নেয়, পাতাগুলো আছে কি না। আসার আগে সে বটগাছের কিছু পাতা পকেটে করে নিয়ে এসেছে। কিন্তু রাজবাড়ির প্রহরীরা চু কোই-এর মলিন জামাকাপড়, ধুলোভরা ছেঁড়া জুতো দেখে তাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিল। সে বারবার অনুনয় করে বলতে লাগল, "আমার কাছে একটি দাওয়াই আছে, রাজার মেয়েকে একটিবার খাইয়ে দেখো, অসুখ ভাল হয়ে যাবে।" অবশেষে একজন প্রহরী রাজার কাছে গিয়ে সব জানাতে তিনি চু কোইকে ভিতরে নিয়ে আসতে আদেশ দিলেন। চু কোই ভয়ে ভয়ে রাজবাড়ির অন্দরে প্রবেশ করল। বিছানায় মরার মত পড়ে আছে রাজকন্যা নুয়েন তিয়েন। রানীমা পাশেই মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। প্রথম দর্শনেই চু কোই নুয়েন তিয়েনকে ভালবেসে ফেলল। এত মিষ্টি একটা মেয়ে, অথচ এমন দশা কী করে হল? সে ধীরে ধীরে পকেট থেকে সেই আশ্চর্য ফলদায়ী পাতা কয়েকটি বের করে হাতে চটকে নিল। তারপর খানিকটা রস রাজকন্যার মুখের ভিতরে পুরে দিল। ধীরে ধীরে চোখ মেলল রাজকন্যা। তার মুখে ফুটে উঠল ঝলমলে আভা। প্রথমেই সে তাকালো চু কোই-এর দিকে। আর তারও প্রথম দর্শনেই চু কোইকে ভাল লেগে গেল। রাজা আর রানী খুব খুশি হলেন। রাজা বললেন, "কত বৈদ্য এসেছে, আমার মেয়ের অসুখ কেউ ভাল করতে পারেনি। একমাত্র তুমি পেরেছ, তাও এত কম সময়ে। যার জীবন দান করেছ তুমি, তার জীবনের উপর তোমারই অধিকার। আমার মেয়ের বিয়ে আমি তোমার সঙ্গেই দেব, সেইসঙ্গে দেব অনেক ধনরত্ন, যাতে তোমরা সুখে থাকতে পার।" চু কোই রাজা ও রানীমাকে প্রণাম জানিয়ে বিয়েতে সম্মতি দিয়ে বলল, "আমি আগে গ্রামে গিয়ে ঘরদোর ঠিকঠাক করে মেরামত করে তারপর এসে নুয়েনকে নিয়ে যাব।" সকলেই বলল, "আচ্ছা, সে তো ভাল কথা।"

চু কোই রাজবাড়ি থেকে বেরিয়ে ভাবল, "ঐ বটগাছের কাছেই বানাবো আমার নতুন বাসা।" রাজার দেওয়া ধনে সে অনেক জিনিস কিনল, লোক লাগিয়ে বনের ধারে ঝর্ণার পাশে সেই বটগাছ সমেত অনেকখানি জায়গা বেড়া দিয়ে ঘিরে তৈরি করল নিজের সুন্দর একখানা বাড়ি। তারপর নুয়েন তিয়েনকে নিয়ে এল আর খুব সুখে দিন কাটাতে লাগলো। মানুষের অসুখবিসুখে সে ঐ গাছের পাতা দিয়ে সাহায্য করে। রাজার দেওয়া ধনসম্পদে সে শহরে একটা ব্যবসা আরম্ভ করেছে। নুয়েন তিয়েনের আবার গাছপালার খুব শখ। সেও মনের আনন্দে অনেক ফুল ও ফলের গাছ লাগিয়ে বাড়িটাকে যেমন সুন্দর করে তুলেছে, তেমনই ঘরোয়া বাগানের ফলমূল খেতেও পাচ্ছে। কিন্তু চু কোই তাকে সাবধান করে দিয়েছে, "দেখো, বটগাছের চারপাশে যে জট পাকানো শিরার মত শিকড়গুলো রয়েছে, সেগুলোতে যেন আঘাত কোরো না। তাহলে গাছটার ক্ষতি হবে। এই গাছ থেকেই আমার ভাগ্য ফিরেছে। অতএব, একে যত্ন করে রাখতে হবে!" নুয়েন তিয়েনও সাবধানে বাগান করে। সে বটগাছের চারপাশের খানিকটা জায়গা ছেড়ে নিজের শখের বাগান করেছে। এক বুড়ো জ্যোতিষী গাছটা দেখেই চিনেছিল। বলেছিল, "এ যে দেবতা গো! এর অমর্যাদা যেন কখনও না হয়। নইলে কিন্তু একে ধরে রাখতে পারবে না। খুব সাবধান! সর্বদা পরিষ্কার জল দেবে এর গোড়ায়, আর শিকড়ে যেন আঘাত না লাগে, এ বিষয়ে যত্ন নেবে!" চু কোই আর নুয়েন তিয়েন দুজনেই গাছটিকে দেবতার মত সেবাযত্ন করে। আর গাছটিও কত মানুষের রোগব্যাধি সারিয়ে তুলেছে, তার সীমাসংখ্যা নেই।

চাঁদ দেখার উৎসব

রোজকার মত চু কোই শহরে গেছে ব্যবসার কাজে। নুয়েন সারাদিনের সব কাজ সেরে বাগানে আসে ফুলগাছগুলোর পরিচর্যায়। প্রত্যেকদিন বিকেলে ও সব গাছে পরিষ্কার জল দেয়, প্রয়োজনে ফুলগাছের গোড়ায় সার দেয়, হলুদ হয়ে যাওয়া পাতা ছেঁটে ফেলে, বাগানের শুকনো ঝরা পাতা ঝাঁট দিয়ে বাগানটিকে ঝকঝকে তকতকে করে রাখে। আজ দেখে, অনেকগুলো বীজ থেকে নতুন অঙ্কুর বেরিয়েছে। সে খুব সাবধানে অঙ্কুরিত চারাগুলো নিয়ে বেছে বেছে বাগানের ফাঁকা জায়গায় লাগাতে শুরু করে। হাওয়া চলাচল করানোর জন্য গাছের গোড়ার মাটি হালকা হাতে কুপিয়ে দেয়। কোদাল চালাতে চালাতে হঠাৎ কোদালের কোপ লাগে বটের একটি শিকড়ে। সঙ্গে সঙ্গে গাছের ভিতর থেকে একটি অস্ফুট শব্দ ওঠে আর সমস্ত গাছ ভীষণ জোরে কাঁপতে থাকে। নুয়েন তিয়েন প্রচণ্ড ঘাবড়ে গিয়ে দেখে যে বটগাছটি তার শিকড়ের মাটি আলগা করে উঠে আসছে মাটির উপরে। নুয়েন একেবারে দিশেহারা বোধ করে। কী যে করবে, কিছু কূলকিনারা পায় না। এই সময় দূর থেকে চু কোইকে ফিরে আসতে দেখে ও ছুটতে ছুটতে গিয়ে তাকে সব কথা বলে। চু কোই একমুহূর্তও দেরী না করে এক ছুটে এসে গাছটাকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে, গাছের গুঁড়িতে মাথা রেখে কাঁদতে কাঁদতে বলে, "নুয়েন ইচ্ছে করে আঘাত করেনি। ভুল হয়ে গিয়েছে। ক্ষমা করে দিন হে বৃক্ষরাজ! আমাদের ছেড়ে যাবেন না!" চু কোই-এর সমস্ত চেষ্টা বিফল হয়, বটগাছ ক্রমশ উপরে উঠতে থাকে। একসময় চু কোই ও নুয়েন তিয়েন দুজনেই বুঝতে পারে যে, গাছটাকে জড়িয়ে ধরে থাকার জন্য চু কোইও বটগাছের সঙ্গে সঙ্গে শূন্যে, আকাশে উঠে গেছে। এখন আর কিছুই করার নেই। নুয়েন নিচে দাঁড়িয়ে কাঁদে আর কাঁদে। তারই একটা ছোট্ট ভুলের জন্য তাকে এমন সাজা পেতে হল। সেই দিব্য ওষধির গাছ সাঁ সাঁ করে আকাশে ভাসতে ভাসতে একেবারে চাঁদে গিয়েই থামে। বেচারা চু কোই আর কী করে? ক্লান্ত হয়ে গাছের নিচে বসে পড়ে। কেঁদে কেঁদে একসময় নুয়েনও ক্লান্ত হয়ে ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। তারপর রোজ এসে আকাশের দিকে চেয়ে থাকে, যদি একবার তার প্রিয় চু কোই-এর দেখা পায়! কিন্তু খুবই ঝাপসা দেখা যায় অতদূরের চাঁদ। পূর্ণিমার দিন চাঁদকে যখন খুব পরিষ্কার দেখা গেল, তখন তার মধ্যে ও খুব আবছা ভাবে চু কোইকে বসে থাকতে দেখল। নুয়েন বুঝতে পারল, যেদিন চাঁদ সবচেয়ে বড় হবে, সবচেয়ে উজ্জ্বল হবে তার আলো, সেদিন সে তার স্বামীকে ভাল করে দেখতে পাবে। সেই দিনটির অপেক্ষায় সে থাকে সারাবছর। তারপর শারদীয়া পূর্ণিমার রাত্রে, চু কোই-এর প্রিয় পিঠে বানিয়ে ও জেগে বসে থাকে, নুয়েন যে তাকে ভোলেনি, এখনও তাকে আগের মতই ভালবাসে, আর তার জন্য খাবার বানিয়ে ও তারই অপেক্ষায় রাত জেগে বসে আছে, এটাই বলবার জন্য নুয়েন তিয়েন চাঁদের দিকে চেয়ে থাকে। সেদিন সে চু কোইকে ভাল ভাবে দেখতে পায়। এক বিরাট ঝাঁকড়া গাছের নিচে উদাস হয়ে বসে আছে সে। আজও ভিয়েতনামের গ্রামে-গঞ্জে মেয়েরা তাদের স্বামীর সঙ্গে আজীবন কাটাবার আশীর্বাদ চেয়ে শারদীয়া পূর্ণিমায় চাঁদের মত গোল মুন-কেক বানায় আর রাত্রে চাঁদের শোভা দেখে।

এই উৎসবটি 'মিড অটম ফেস্টিভাল' নামে পরিচিত; মেইন ল্যান্ড চায়না, হং কং, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, জাপান, কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি পূর্ব ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলিতে চীনা চান্দ্র ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বছরের অষ্টম মাসের ১৫ তম দিনে পালিত হয়। সৌর ক্যালেন্ডার অনুসারে সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি আসে এই দিনটি।

চীন দেশের মানুষ আবার চাঁদের ভিতরে অমৃত-কলস হাতে চাঁদের দেবী চাঙ্গ আ-কে দেখে। বৌদ্ধদের মধ্যে প্রচলিত আছে অতিথি বৎসল এক খরগোশের কথা। চন্দ্রদেবতা খুশি হয়ে যাকে চাঁদে থাকতে দিয়েছেন। সেসব গল্প বলব আরেক দিন।

প্রাণীবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা; শিক্ষিকা হিসেবে কাজ বিভিন্ন স্কুলে। বর্তমানে একমাত্র নেশা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখা। 'উদ্বোধন' (রামকৃষ্ণ মিশনের একমাত্র সাংস্কৃতিক বাংলা মাসিক পত্রিকা) পত্রিকার 'চিরন্তনী' বিভাগের পুরাণ-কাহিনীর নিয়মিত লেখিকা । এছাড়াও রামকৃষ্ণ বেদান্ত মঠের অন্যান্য পত্রিকায় নিয়মিত লেখালিখি করেন এবং বই অনুবাদের সঙ্গে যুক্ত।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা