মজার পাতা
বলো তো দেখি কী—
১. বকা ঝকা হবে সারা, পেট কাটা গেলে,
শুধুই হবে তো বলা, শেষ চলে গেলে।।
২. প্রথমার্দ্ধে রাজনের, আছে দেহ পদহীন
আদি অন্তে তবু রাগ, চারে মিষ্টান্ন মহান।।
৩. তিন অক্ষরে সুমিষ্টান্ন, শেষে গুপ্ত দেশ,
সন্দেহের শেষ নেই, আগেতে বিশেষ।।
৪. সম্পদদায়িনী তিনে, মধ্যহীনে ফল,
অন্তহীনে হয় কম, নাম দেখি বল।।
৫. সাধ যখন ওঠে জেগে, মতীর মনেতে,
চারিবর্ণে সুবিখ্যাত, চেনে জনে জনে।
উত্তরমালাঃ
১. বলাকা
২. রাজভোগ
৩. সন্দেশ
৪. কমলা
৫. ইচ্ছামতী
অধ্যাপক ( ডঃ ) জি.সি. ভট্টাচার্য্য,
বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়,
বারাণসী, উত্তর প্রদেশ।
- বিস্তারিত
- লিখেছেন জি সি ভট্টাচার্য্য
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
প্রথম পাতাঃ শরত সংখ্যা ২০১১
এই সময়টা বেশ অন্যরকম। বছরের অন্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি ঝকঝকে নীল আকাশ। সেই আকাশে ভেসে যাচ্ছে সাদা সাদা তুলোর মত মেঘ। কখনও বা আকাশ হটাত ঢেকে যাচ্ছে জল ভরা ধূসররঙা নাছোড় মেঘে। এক-দুই পশলা বৃষ্টি ঝুপঝুপ করে এসে ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে গাছপালা, পথ ঘাট। সে মেঘ সরে গেলে নীল আকাশে ঝলকাচ্ছে সোনালি রোদ্দুর। এ রোদ অনেক নরম, অনেক মায়াময়। নীল-সোনালি- সাদা-সবুজ মিলিয়ে যে ছবি আঁকছেন প্রকৃতি মা, সেই ছবি দেখেই মন আনন্দে থই থই করে উঠছে। সে ছবি যেন ডেকে ডেকে বলছে- এসেছে ছুটির সময়, এসেছে উতসবের সময়, এসেছে আনন্দ করার সময়। এসেছে শরত।
হ্যাঁ, এসেছে শরত। এসেছে বাঙালির সবথেকে বড় উতসব শারদীয়া দুর্গাপুজো। দুর্গাপুজোর পেছনে পেছনেই আসছে লক্ষ্মীপুজো, দীপাবলী ও কালীপুজো, ভাইফোঁটা...তার ও পরে শীতের মুখে আছে নবান্ন। কিন্তু এই শরতে উতসব কি শুধু বাঙালিদের বা বাংলাদেশেই? একদমই না। এই তো কিছুদিন আগে হয়ে গেল মারাঠিদের সবথেকে বড় উতসব গণপতির পুজো; কেরালায় হয়ে গেল শস্যকাটার উতসব ওনাম। মুসলিম ধর্মের মানুষদের আনন্দের উতসব ঈদ পালিত হল তার পাশাপাশি। আর আমাদের দুর্গাপুজোর সাথে সাথেই অনুষ্ঠিত হবে উত্তর ভারতীয়দের নবরাত্রি; দীপাবলীর রাতে আলোর উতসব পালিত হবে প্রায় সারা দেশ জুড়ে। পাশাপাশি এই সময়েই অসমে পালিত হবে ধান চারা রোপণ উতসব- কাটি বিহু। ওদিকে পশ্চিমের দেশগুলিতে আর কিছুদিনের মধ্যেই পালিত হবে হ্যালোউইন আর থ্যাঙ্কস্গিভিং।
পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের মানুষেরা সবাই সারা গ্রীষ্ম, বর্ষা খাটাখাটনি করে, ফসল ফলিয়ে, শরতে সেই ফসল সঞ্চয় করে প্রস্তুতি নিচ্ছে শীত আসার, উতসব আনন্দ করে বিদায় জানাচ্ছে গ্রীষ্মকে, আরাধনা করছে প্রকৃতির অফুরন্ত দানের। দক্ষিণ গোলার্ধ সবে শীত ছেড়ে গ্রীষ্মে পা দিচ্ছে। সেখানে এখন বসন্ত। শীতের অবসানে, গ্রীষ্মের আগমনে সেখানে জীবন নতুনের আনন্দে ভরপুর। সেখানে পালিত হচ্ছে বসন্তের উতসব।
তাই এই উতসবের মরসুমে, ইচ্ছামতী সেজে এল নতুনভাবে - তোমার জন্য নতুন প্রচ্ছদকাহিনী নিয়ে। শরত সংখ্যা ২০১১ থেকে ইচ্ছামতী শুরু করছে নতুন বিভাগ -প্রচ্ছদকাহিনী। আর আমাদের প্রথম প্রচ্ছদকাহিনী - অবশ্যই- 'উতসব'। বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের নানারকমের উতসব পালন নিয়ে থাকছে বেশ কয়েকটি লেখা। রয়েছে দুর্গাপুজো, ঈদ, থ্যাঙ্কস্গিভিং আর হ্যালোউইন নিয়ে নানারকম তথ্যে ভরপুর সব লেখা। লেখাগুলি পড়তে পড়তে দেখবে, কিরকমভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষদের একই সময়ে পালিত হওয়া উতসবগুলি অনেক ক্ষেত্রে একইরকম ভাবনা থেকে শুরু হয়। তাই আমাদের ভূত চতুর্দশীর সাথে কোথায় যেন মিল খুঁজে পাই হ্যালোউইনের, আর নবান্ন উতসবের সাথে মিলে যায় থ্যাঙ্কস্গিভিং উতসব পালনের ভাবনা।
প্রচ্ছদকাহিনী ছাড়াও রয়েছে অনেক গল্প, অনেক ছড়া আর অন্যান্য নিয়মিত বিভাগগুলি । এই পুজোর ছুটিতে , ঠাকুর দেখার ফাঁকে ফাঁকে অবশ্যই পড়ে ফেল নতুন ইচ্ছামতী শরত সংখ্যা ২০১১।
তোমার এবং তোমার পরিবারের পুজো খুব ভাল কাটুক।
চাঁদের বুড়ি
২৭শে সেপ্টেম্বর, ২০১১
৯ই আশ্বিন, ১৪১৮
মহালয়া
- বিস্তারিত
- লিখেছেন চাঁদের বুড়ি
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
ঈশ্বরের বাসভূমি গাঢ়োয়াল
সেই ভোর চারটের সময়ে জোর করেই ঘুম থেকে উঠে পড়েছি। ট্রেন নাকি সাড়ে চারটের সময়ে গন্তব্যে পৌঁছে যাবে। জানলার বাইরে তখন ঘুটঘুটে অন্ধকার। ট্রেন থামল। এ.সি. কামরার এই এক ঝামেলা। দরজা খুলে না দেখলে অন্ধকারে কোথায় দাঁড়াল ট্রেন সে বোঝার উপায় নেই জানলার কালো কাঁচের মধ্যে দিয়ে। তবে দেখলাম, দরজা খুলেও বোঝার উপায় নেই সে ট্রেন কোথায় দাঁড়িয়েছে। বাইরেও ঘুটঘুটে অন্ধকার। সেই কলকাতা থেকে টানা চলছে তো, হাঁপিয়ে গেছে বেচারা। মাঝে মাঝেই নিজের খেয়ালে থেমে যাচ্ছে।
ধুঁকতে ধুঁকতে শেষমেষ পৌনে সাতটার সময় হরিদ্বারে এসে ট্রেন বলল, " দয়া করে নামুন এবার!"
স্টেশনে গাড়ি দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করার কথা। দেখলাম সেই কথামত সাদা অ্যাম্বাসাডর থেকে নেমে এসে এক বয়স্ক মানুষ বল্লেন,"আইয়ে সাব..." তাঁর বয়স প্রায় সত্তরের কাছাকাছি বলে মনে হল। বলেই ফেললাম, "আপ চালায়েঙ্গে গাড়ি?" ভদ্রলোক ঠিক এমনভাবে হাসলেন, মনে হল এরকম প্রশ্ন তিনি অনেকদিন অনেকের কাছেই শুনেছেন। বললেন, "জী হাঁ, 'ম্যায়' হি চালাউঙ্গা!"
হরিদ্বারে গঙ্গা আরতি
হরিদ্বারে থাকার পরিকল্পনা নেই, তবে গাঢ়োয়ালে যেখানেই যাও, অনেক সময় লাগে গাড়িতেই, শুধু মুসৌরি ছাড়া। আমার গন্তব্য চোপতা- সুদূর চোপতা। আট থেকে নয় ঘন্টার রাস্তা। তাই একটু 'ফ্রেশ' না হয়ে বেরোনোর প্রশ্নই নেই। একটা হোটেলে উঠতে গেলাম।হরিদ্বারে আবার একা কোন হোটেলে ঠাঁই দিতে লোকে নারাজ। এখন নাকি অনেক কড়াকড়ি, 'ফ্যামিলি' ছাড়া অনুমতি নেই। আমি একা যাত্রী, রাস্তার মধ্যে 'ফ্যামিলি' কোথা থেকে যোগাড় করি? যা হোক করে রাজি করিয়ে একটা ঘর পেলাম। সেখানে এক ঘন্টায় সব কিছু সেরে দুটো ব্রেড টোস্ট মুখে পুরে সেই বয়স্ক ড্রাইভারের সাদা অ্যাম্বাসাডরে চেপে যাত্রা শুরু।
ইতিমধ্যে এত বৃষ্টি হয়েছে যে হরিদ্বারের রাস্তায় দেখি জল থইথই। সে যাই হোক, বৃষ্টির পরে তখন ঝকঝকে রোদ, নীল আকাশ। যেন গাড়ির কাঁচে অনেক জল পড়েছিল, একবার ওয়াইপার চালিয়ে এক্কেবারে পরিষ্কার। গঙ্গার ব্রিজে উঠেই মনটা ভাল হয়ে গেল। মিঠে আলোয় হরিদ্বারকে আরো পবিত্র মনে হচ্ছে। ব্রিজ পেরিয়েই গাড়ি সাইড করে দাঁড়িয়ে গেল। গাড়ির ড্রাইভার বেরোলেন, আমার জানালার সামনে দাঁড়িয়ে বললেন, " ম্যায় পয়ষট সাল কা আদমি হুঁ, আপকো অগর ভরোসা হ্যায় তো চলিয়ে।" আমি বুঝতে পারছি না ঠাট্টা করছেন, নাকি সত্যিই বলছেন! আমার মনের ভাব বুঝতে পেরে উনি বললেন, " আপনে স্টেশন মে ওয়সা সওয়াল কীয়ে----" আমি বুঝলাম উনি কথাটায় বোধহয় একটু চটেছেন বা দুঃখ পেয়েছেন। বুঝিয়ে বললাম যাতে উনি কিছু মনে না করেন; আমি এমনিই জিজ্ঞেস করেছিলাম।
ব্যাস! তারপর বাকি তিনদিন আমি শুধু এটাই ভেবে চললাম যে আমি কেন বলতে গেলাম এমন একটা কথা! না, না, অনুশোচনা নয়, বাকি তিনদিন ড্রাইভার চামেলিজি এমন গাড়ি চালালেন, জেট বিমান হার মেনে যায়। ভয়ে কাঁটা হয়ে বসে থাকতে হত মাঝে মাঝে। বললে হয়ত পাঁচ মিনিট আস্তে চালালেন, তারপরে আবার মিগ বিমান! পাহাড়ি রাস্তার আঁকবাঁক যেন আমেরিকান হাইওয়ে!
দেবপ্রয়াগ
একে একে পেরিয়ে চললাম ঋষিকেশ, ব্যাসি, দেবপ্রয়াগ, শ্রীনগর, রুদ্রপ্রয়াগ। দেবপ্রয়াগের পর থেকে যেমন গঙ্গাকে ছেড়ে অলকানন্দার পাশ ধরেছিলাম, রুদ্রপ্রয়াগের পর থেকে মন্দাকিনী সঙ্গী হল। আমার আজ অবধি দেখা সবথেকে সুন্দর নদী এই মন্দাকিনী।
মন্দাকিনী
তার পাশে অপূর্ব ধাপ চাষের দৃশ্য দেখতে দেখতে এগিয়ে চলা। অগস্ত্যমুণি, সিয়ালসোর, চন্দ্রপুরী পেরোতে বেলা গড়িয়ে বিকেল। একটা জায়গায় মন্দাকিনীর ওপর একটা ব্রিজ নজর পড়ল। ব্রিজ পেরিয়ে ওপাড়ে কেদারনাথের রাস্তা। আর আমরা ব্রিজ না পেরিয়ে পাহাড় বেয়ে চড়তে শুরু করলাম উখিমঠের রাস্তায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই উখিমঠের ছোট্ট জনবসতি। সেখান থেকেই শুনছি কানাঘুষো----আর পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যেই চাক্ষুষ দেখলাম আমার স্বপ্নভঙ্গ ! বিরাট এক ধ্বসে সমস্ত রাস্তা বন্ধ। কলকাতা থেকে প্রায় দু'হাজার কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে এসেছি, আর পঁচিশ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিলেই চোপতা, আর সেখান থেকে পায়ে হেঁটে তিন কিলোমিটার দূরে তুঙ্গনাথ। ভারতের তথা সমস্ত বিশ্বের সর্বোচ্চ শৈবতীর্থ। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য, রাস্তা বন্ধ! অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম সেই পড়ে থাকা পাথরের স্তূপের দিকে। বুঝলাম, ভগবান বোধহয় কালেভদ্রেই "তথাস্তু" বলেন। আমার অসহায় অবস্থা দেখে আশেপাশের গ্রামের কয়েকটা বাচ্চা ছেলে জড়ো হয়ে গেল। তাদের মধ্যে দুজন আমাকে গাঢ়োয়ালি ভাষায় শোনাল তাদের লোকগীতি। বিদায়ী বেলায়, বিশাল হিমালয়ের মধ্যে আমি কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে গেলাম অন্য এক জগতে।
ঈশ্বরের বাসভূমি গাঢ়োয়াল
মনে মনে বললাম, হয়ত এই গান শোনবার সৌভাগ্য আমার অন্য কোথাও হত না। এও এক অদ্ভূত প্রাপ্তি। শুধু প্রকৃতি নয়, তার মধ্যে লুকিয়ে থাকা এই অচেনা অজানা মানুষদের সারল্যও টেনে আনবে আমাকে এই হিমালয়ে, বার বার।
উখিমঠের চারপাশে ধাপচাষ
চামেলিজি কোত্থেকে দু' কাপ চা নিয়ে এলেন। সেই চায়ে চুমুক মেরে ফিরে চললাম খানিক দূরেই ফেলে আসা উখিমঠে। এই ছোট্ট জনপদে সেপ্টেম্বরের অবেলায়ে আমিই একলা ট্যুরিস্ট। একটা নতুন তৈরি ছিমছাম হোটেল পছন্দ হল। একটা ঘর বেছে নিয়ে মালপত্র নামালাম গাড়ি থেকে। তখনও দিন ফুরায়নি, শুনলাম মন্দিরে সন্ধ্যারতি শুরু হবে। ট্রাইপডে ভিডিও ক্যামেরা লাগানোই ছিল। গলায় স্টিল ক্যামেরা ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়লাম মন্দিরের উদ্দেশ্যে।
কেদারনাথের মন্দির দেওয়ালির পর যখন বন্ধ হয়ে যায়, তখন এই উখিমঠের মন্দিরেই নামিয়ে আনা হয় তাঁর বিগ্রহ। আবার অক্ষয় তৃতীয়ার ঠিক আগে ধুমধাম করে যাত্রা হয় সেই বিগ্রহের, উখিমঠ থেকে কেদারনাথ মন্দিরের পথে। উখিমঠ যেন সেই শান্তির জায়গা যেখানে শীতের বরফ বিছানো দিনে স্বয়ং কেদারনাথও মোক্ষ অনুভব করেন।
আরতি শুরু হয়ে গেছে। ছবি তোলার সমস্ত সরঞ্জাম নিয়ে, পরণে থ্রি- কোয়ার্টার প্যান্ট আর গায়ে একটা ফোটোগ্রাফার'স জ্যাকেট চাপিয়ে চলেছি। কয়েকটা ছোট ছেলে দেখলাম বলাবলি করছে । "ইয়ে শায়দ হমারে দেশ কে নহি হ্যায়!" আমি ঘাড় ঘুরিয়ে হেসে মনোজ কুমারের মত তাদের বললাম, "ম্যায় ভি তুমহারে তরহা এক হিন্দুস্থানি হুঁ।" পরে এই ফিল্মি ডায়ালগের কথা মনে করে নিজেরই হাসি পেল।
মন্দিরে পৌঁছে দেখি সেখানে মন্থর গতিতে ঢাক বাজছে, ঘন্টা বাজছে আর ক্যাসেট বাজিয়ে মন্ত্র পড়া চলছে মাইকে। কিন্তু সন্ধিক্ষণে সেই উখিমঠের মন্দিরে এসে, এখনও মনে হয় কত যুগ পেছনে চলে এসেছি কোনও এক সুদূর অতীতে। কলকাতার রাস্তা-ঘাট, যানজট, হুল্লোড়, সব মিথ্যে মনে হয়। এখানেই চিরকাল থেকে যেতে ইচ্ছা করে। ভাবি, কি হবে যদি আমি আর না ফিরি?
উখিমঠের মন্দির
পকেটে হটাৎ ফোন বেজে ওঠে।
"হ্যালো, মা! আমি এখন উখিমঠের মন্দিরে। আরতি হচ্ছে। তোমরা থাকলে কি ভাল হত!"
লেখা ও ছবিঃ
ঋতম ব্যানার্জি
কলকাতা
- বিস্তারিত
- লিখেছেন ঋতম ব্যানার্জি
- ক্যাটfগরি: দেশে-বিদেশে
পাখি উড়ে গেল কবে
ছোটবেলায় একটা প্রশ্ন খুব শুনতাম।
-একটা গাছে তিনটা পাখি বসেছিল। এমন সময় একটা শব্দ হল। দুটো উড়ে গেল। কটা রইল?
-কেন? একটা রইল।
-হয়নি হয়নি ফেল। রইল তিনটেই?
- কেমন করে?
প্রশ্নকর্তা মুচকি মুচকি হাসত। বলতো, আরে তিনটে উড়ে চলে গেল। আমি গালে হাত দিয়ে ভাবতাম কি হল ব্যাপারটা। ভাবতে ভাবতে একদিন দেখলাম একাই বসে আছি। যত পাখি ছিল গাছে সবই উড়ে গেছে। কোথায় গেল ওরা? যে গাছে ওরা বাসা বাঁধতো, সেসব কোথায়? সব গাছই প্রায় কেটে ফেলা হচ্ছে। শুনেছি জলের অভাবে পাখিদের বড় কষ্ট হচ্ছে। প্রচন্ড গরমে শুকিয়ে আসছে পাখিদের খাবার জলের উৎস। গরমের দিনে একটা পাত্রে জল বাড়ির বাইরে রেখে দেখো তো কত পাখি আসে?
আজকে ঠিক করেছি কিছু পাখির ছবি দেখাবো। ব্যাপার হচ্ছে যে এরা সবই কিন্তু আমাদের প্রতিবেশী অর্থাৎ খোদ বাংলার পাখি। এক সময় হয়তো ওদের দেখা যেত ঝাঁকে ঝাঁকে, এখন ওদের দেখা পাওয়া নেহাতই দুর্লভ। দেখবো, শুধু ছবি দেখে তুমিই বা কজনকে চিনতে পারো?
প্রথমে একটু সহজ পাখি দিয়েই শুরু করা যাক। ওদের কিচির মিচির মিচির দিনভর লেগেই থাকে। খুব দুরন্ত, এরকম এক জুটির ছবি তোলা ভারি মুশকিল।
মাছরাঙা সবাই চেনে। কিন্তু বইয়ের পাতার বাইরে দেখেছো কি? মাছরাঙা এসে বসবে কোথায়? পুকুরও তো কমে আসছে।
এর নাম পানকৌড়ি। কিছুটা জলের তলার মাথা ডুবিয়ে খাবার খুঁজেই দেয় ছুট। ইংরাজীতে বলে Cormorant, এদের তিনটি প্রজাতির দেখা মেলে। বাংলায় অবশ্য সবই পানকৌড়ি।
ছাতারে বা Jungle Babbler, অভিমানী কিনা। তাই কিছুতেই ক্যামেরার দিক মুখ ফিরে তাকাবেন না - তুলতে হলে লেজের ছবিই তোলো। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে ছাতারের বৈশিষ্টই হচ্ছে কিনা এদের লেজ। কাজেই একটা ভালো ছবি তুলেছি, কি বলো?
চিনতে পারছো? বুলবুলি বা Red vented Bulbul. ঠিক ঠাক চোখ রাখলে হয়তো নারকোলগাছের পাতায় দেখা পেতে পারো।
Asian Pied Sterling এরা কিন্তু একধরনের শালিখ। একটু খেয়াল রাখলে এরা নজরে পড়বে সর্বত্রই।
White Wagtail বা সাদা খঞ্জন। এনার সাথে দেখা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে।
এই দুটিই Black Drongo বা ফিঙে - এক্কেবারে ল্যাজঝোলা পাখি যাকে বলে। ফিঙের আরো বেশ কিছু প্রজাতি দেখতে পাওয়া যায়।
Common Sandpiper বা কাদাখোঁচা। খুবই ছোট্ট পাখি। সৌভাগ্যক্রমে দেখা দিয়েছেন।
কাঠঠোকরার কথা শুনেছি আমরা সব্বাই। কিন্তু কতবার দেখেছি? আমার সঙ্গে তো এনার দেখা অনেকদিন পরে।
White Breasted Waterhen বা ডাহুক। এদের ডাক বড়ই কর্কশ। তবে কিনা আমি যখন দেখি তখন ইনি শান্ত হয়ে কিছু মাছ খুঁজছিলেন আর কি।
Pond Heron বা কোঁচ বক। শিকারের লক্ষ্যে সতর্ক। তবে শিকার একা করলেও এরা বিশ্রাম করে দল বেঁধেই।
ইনি কে বলো দেখি? সম্প্রতি আমাদের বাড়ির বারান্দায় এসে বাসা বেঁধেছেন। আমাদের যাতায়াতের শব্দে ভয়ডর নেই, দিব্যি আছেন। জানি না কতদিন থাকবেন। তবে মনে মনে বলি - কোথাও যেও না ভাই, এখানেই থেকো।
লেখা ও ছবিঃ
অভ্র পাল
কলকাতা
- বিস্তারিত
- লিখেছেন অভ্র পাল
- ক্যাটfগরি: জানা-অজানা
সাবধান ! চোরাবালি!
হলিউড বা বলিউডের অনেক সিনেমাতেই দেখানো হয় যে ভুল করে কেউ চোরাবালিতে ফেঁসে গিয়ে মরে গেলো । কিন্তু এই সব ঘটনার পিছনে কতটুকু সত্য আর কতটুকুই বা মিথ্যে ?
১৯৬৪ সালে দুই বন্ধু, জ্যাক আর ফ্রেড, দুজনেই কলেজের ছাত্র, দক্ষিন ফ্লোরিডার অকীচবী হ্রদের চারপাশের জলা জমির মধ্যে পরাশ্রয়ী উদ্ভিদ খুঁজছিলো । হঠাৎ জ্যাক এর পা নরম বালিতে ঢুকে গেলো । সে তার বন্ধুকে সতর্ক করতে বললো যে সে যেন আগে না আসে । কিন্তু সে নিজে ধীরে ধীরে সেই চোরাবালির মধ্যে ডুবে যেতে থাকলো । তার বন্ধু ফ্রেড তাকে বাঁচাবার চেষ্টা করলো, কিন্তু, সবই বৃথা গেলো । জ্যাক কিচ্ছুক্ষণের মধ্যেই চোরাবালির ভেতরে লীন হয়ে গেলো । এটি একটি সত্য ঘটনা ।
তুমি বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা কিন্তু চোরাবালির মধ্যে ফেঁসে গিয়ে আজ পর্যন্ত শুধু মানুষই নয়, জন্তু জানোয়ার, কার, ট্রাক, এমনকি একবার তো একটি আস্ত রেলের বগি পর্যন্ত গায়েব হয়ে গিয়েছে ।
চোরাবালি কী এবং কতটা বিপদ্জনক ? এতে কিভাবে কোনো জিনিস বা মানুষ/জন্তু ফেঁসে যায় আর তারপর ডুবে যায় ?
অধিকাংশ চোরাবালি সাধারনত মারাত্মক নয় । কিন্তু এটি প্রকৃতির একটি অদ্ভুত বিস্ময় । এই অদ্ভুত জিনিসটাকে ভালোভাবে বোঝা দরকার ।
বালি এবং প্রবাহমান জল
সাধারনত যখন বালি, কাদা বা নুড়ি ভূগর্ভস্থ জলের প্রবাহের সান্নিধ্যে আসে, সেই বালি বা নুড়ির দানাগুলোর মধ্যে যে ঘর্ষণ শক্তি থাকে তা কম হয়ে যায়, আর সেই বালি বা মাটি, ভার সহ্য করতে পারে না । এই ধরনের ব্যাপার আমরা সমুদ্র সৈকতে দেখতে পাই । সমুদ্র ধারের বালিতে যদি তুমি দাড়িয়ে থাকো, তাহলে খানিক্ষণ পরে দেখবে যে ধীরে ধীরে তোমার পা বালির ভেতর বসে যাচ্ছে । এটাও এক ধরনের ছোটখাটো চোরাবালি । তবে এই ধরনের চোরাবালির গভীরতা মাত্র কয়েক ইঞ্চি হয় । তাই শুধু আমাদের পায়ের পাতা ডোবে ।
চোরাবালি কিভাবে হয়
অনেকটা এই জিনিসই চোরাবালিতে হয় । কিন্তু এক্ষেত্রে মাটি বা বালির ভার সহ্য করার ক্ষমতাটা একদম কমে যায় । প্রবাহমান জলের কারণে বালি বা মাটির দানাগুলোর মধ্যে ঘর্ষণ একদম কমে যায় । পুরো জায়গাটা বেশ গভীর স্তর পর্যন্ত একরকম তরল অবস্থায় চলে যায় । এই ধরনের চোরাবালির গভীরতা যদি কয়েক মিটার বা বেশি হয় তাহলে তা বিপজ্জনক । এই ধরনের চোরাবালিতে ফেঁসে গেলে, বেরিয়ে আ্সা খুব মুশকিল । হাত পা বালিতে আটকে যেতে পারে । নিজে থেকে বেরিয়ে আসাটা প্রায় অসম্ভব হয়ে যায় । পুরোপুরি ডুবে যেতে পারে । অনেক সময় এই ধরনের চোরাবালির গভীরতা বেশি না হলে মানুষ পুরো ডুবে না গিয়ে অর্ধেক ডুবে আটকে যেতে পারে । এই ধরনের পরিস্থিতিও কিন্তু কম বিপজ্জনক নয় । পুরো না ডুবলেও, ঠান্ডা বা ক্ষুধাজণিত কারণে মৃত্যু হতে পারে । চোরাবালিতে আটকে গিয়ে বেরোতে না পেরে জংলি জানোয়ার দ্বারা আক্রান্ত হয়ে অনেক লোকের মৃত্যু ঘটেছে ।
তাই যেসব জায়গায় চোরাবালি থাকার সম্ভাবনা আছে, এই সব জায়গায় একা একা বেড়াতে যাওয়া উচিত নয় । যেসব জায়গায় জল বেশি, সেই সব জায়গায় চোরাবালি থাকার সম্ভাবনাও বেশি । যেমন ধর জলা, নদী, খাঁড়ি, সমুদ্রতীর এবং জলাভূমি, এসব জায়গায় চোরাবালি থাকার সম্ভাবনা বেশি । যেসব জায়গায় ভূগর্ভস্থ জলের প্রবাহ থাকে, সেখানে চোরাবালি থাকতেই পারে ।
তুমি কি জানো, মরুভূমিতে কখনো চোরাবালি থাকে না । মরুভূমিতে অনেক বালি, কিন্তু জল নেই যে । আর জল ছাড়া চোরাবালি হবে কি করে । তাই না ?
তবে চোরাবালি আমাদের ভুবিদ্যায় অনেক কাজে লেগেছে । কেমন ভাবে বলত ? আসলে প্রাগৈতিহাসিক সময় থেকেই পৃথিবীতে চোরাবালি আছে । সেই সময়কার যেসব জীব জন্তুরা চোরাবালিতে আটকে মারা গেছিলো তাদের অবশেষ মাটিতে থেকে ফসিলে পরিণত হয়েছে ।
তোমরা কি “জুরাসিক পার্ক” সিনেমাটি দেখেছ ? তাতে যেসব ডাইনোসরদের দেখানো হয়েছে, তাদের ব্যাপারে আমরা জানলাম কিকরে বলত ?
এই সব ডাইনোসর বা অন্যান্য জন্তু জানোয়ারদের কথা আমরা জানতে পেরেছি ওদের ফসিল/জীবাশ্ম থেকে । আর এই সব জীবাশ্ম আমরা পেয়েছি সেই সময়কার পাথর থেকে । আসলে চোরাবালিতে আটকে গিয়ে এইসব জীব-জন্তু মাটির তলায় তলিয়ে যায় । মাটির ভেতরে আটকে যাবার দরুন, তাদের অবশেষ আবহাওয়ার ক্ষতি বা অন্য জানোয়ারের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে যায় । এই চোরাবালি কয়েক লক্ষ্য বছর পরে ধীরে ধীরে পাথরে পরিণত হয় । আজ আমরা যখন সেইসব পাথর খুঁড়ে ফসিল বার করি, ডাইনোসরদের কথা জানতে পারি ।
চোরাবালিতে এইভাবেই আটকে যায় মানুষ
চোরাবালি কোথায় আছে সেটা জানতে পারা খুব মুশকিল । অনেক সময় হয় কি, চোরাবালির ওপর শুকনো পাতা, ডালপালা পড়ে ঢেকে রাখে । অনেক সময় চোরাবালির ওপর একটা শুকনো বালির স্তর পরে যায়, যাতে বোঝা যায় না যে তার তলায় চোরাবালি আছে । চোরাবালি অনেক সময় জলের তলাতেও হতে পারে । নদী পার হবার সময় চোরাবালিতে আটকে গিয়ে মৃত্যু হতে পারে ।
যদি তুমি চোরাবালিতে আটকে যাও, তাহলে কি হবে?
চোরাবালিতে আটকে গেলে, প্রথমত একদম প্যানিক করবে না । প্যানিক করে হাত পা বেশি নড়ালে আরো বেশি আটকে পরার সম্ভাবনা থাকে । একটি কথা মনে রেখো, চোরাবালির কিন্তু জলের চেয়ে অনেক বেশি ঘন । তাই চোরাবালিতে ভেসে থাকা বেশি সহজ । যদি তোমার পিঠে বা সঙ্গে কোনো ভারী বস্তু থাকে, যেমন ধর একটা ব্যাকপ্যাক, তাহলে তা ছেড়ে দেওয়া উচিত । কারণ এই ভারী বস্তুটি তোমাকে আরো বেশি দ্রুত নীচে টেনে ফেলতে পারে । বেশিরভাগ চোরাবালির গভীরতা কম হয় । খানিকটা ডোবার পরে হয়তো তোমার পা তলায় আটকে যেতে পারে । যদি তা না হয়, মানে যদি চোরাবালি খুব গভীর হয় তাহলে পুরোপুরি ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে । সেক্ষেত্রে যেমন তুমি জলে সাঁতার কাট, ঠিক সেই ভাবে, নিজের শরীরটাকে যতটা সম্ভব অনুভূমিক করে ফেলতে হবে । তারপরত খুব ধীরে ধীরে সাঁতরে চোরাবালির বাইরে আসার চেষ্টা করতে হবে ।
একবার, আমেরিকার USGS এর একজন বৈজ্ঞানিক কলোরাডো নদীর তীরে চোরাবালিতে ফেঁসে গেছিলেন । তিনি তখন কোনরকমে নিজের পা ওপর দিকে নিয়ে এসে, শরীরটাকে অনুভূমিক করে, আস্তে আস্তে সাঁতরে, চোরাবালির বাইরে আসতে পেরেছিলেন । মাত্র দশ ফিট সাঁতরাতে তাঁর আট ঘন্টা সময় লেগেছিলো । কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই বৈজ্ঞানিক বেঁচে যান ।
ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য্যি
উলানবাতার, মঙ্গোলিয়া
ছবিঃ
বিভিন্ন ওয়েবসাইট
- বিস্তারিত
- লিখেছেন ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য্যি
- ক্যাটfগরি: জানা-অজানা