শারদ শুভেচ্ছা
হিমেল হাওয়ার আলতো ছোঁয়ায় দুললো কাশের বন
সকালবেলায় শিউলিফুলের গন্ধে উতল মন ।
সূর্যিমামা ছোট্ট উঁকি দিলেন মেঘের ফাঁকে
ঢ্যামকুড়াকুড় বাজায় ঢাকি, কেউ কি ঘরে থাকে ?
মা দুগগা আসছে - সবাই মাতলো মনের সুখে
আনন্দেরই ঝিলিক জাগে শিশিরকণার বুকে ।
ইস্কুলেতে পড়লো ছুটি, বই - খাতা - পেন - ঝোলা
চারটি দিনের জন্যে সবই থাকবে শিকেয় তোলা ।
থাকুক সবাই এই কটা দিন দু:খ - বিষাদ ভুলে
জানাই শারদ শুভেচ্ছা মোর ইচ্ছামতীর কূলে ।।
- বিস্তারিত
- লিখেছেন জ্যোতির্ময় দালাল
- ক্যাটfগরি: ছড়া-কবিতা
মিষ্টি মেয়ে দুষ্টু মেয়ে
ঐ মেয়েটা মিষ্টি মেয়ে
দুষ্টু মেয়েও বটে
কখন চোখে বিষ্টি নামে
কখনো রোদ ঠোঁটে ।
ঐ যে দ্যাখো আপন মনে
করছে বসে খেলা
পড়তে বসেও এতটুকু
নেই যে অবহেলা ;
কখনো বা অঙ্ক কষে
কখনো বা ছবি
এখন বসে আঁকছে দ্যাখো
ডুবন্ত এক রবি ।
ভাইয়ের সাথে ঝক্কি যত
শতেক অভিযোগ
সব ভালো তার এটাই শুধু
একমাত্র রোগ ।
জামাল ভড়
বারাসাত, উত্তর চব্বিশ পরগনা
- বিস্তারিত
- লিখেছেন জামাল ভড়
- ক্যাটfগরি: ছড়া-কবিতা
পক্ষীরাজ
উড়ে উড়ে চললি কোথায়
ওরে আমার পক্ষীরাজ?
বেশ তো ছিলি ঘরের মাঝে
নীল আকাশে তোর কি কাজ?
বেশ তো ছিলি খেলনা হয়ে
পুতুলগুলোর সাথে,
যখন খুশি তখন তোকে
নিতাম তুলে হাতে
গায়ে দিতাম নীল কাপড়ে
চুমকি জরির রঙ্গীন কাজ;
পুতুলগুলো কাঁদছে ভীষণ
আয় না ফিরে পক্ষীরাজ
মেঘের ঢেউ এ খেলা করে
বিকেল হলেই আসবি ফিরে
পুতুল গুলোর বিয়ে দেব
আনন্দে তুই করবি নাচ।
দ্বৈতা গোস্বামী
ব্যাঙ্গালোর, কর্ণাটক
- বিস্তারিত
- লিখেছেন দ্বৈতা হাজরা গোস্বামী
- ক্যাটfগরি: ছড়া-কবিতা
কচি-কাঁচার প্রতি
তোমরা হাসো দেখেই প্রাণে এক চিলতে হাসি।
তোমরা আছো, তাই তো আজও বাঁচতে ভালোবাসি।
তোমরা কাঁদো বলেই তবু হঠাৎ জেগে উঠি –
গোলকধাঁধার জাল সরিয়ে সূর্য ছুঁতে ছুটি।
নতুন মুকুল, খুশির খবর ছড়িয়ে কলরোলে
বাড়িয়ে মুঠি দাঁড়াও উঠে বিশ্বমায়ের কোলে।
পড়ুক চোখে এই পৃথিবীর বিচিত্র বর্ণালী –
সুনীল সাগর, সবুজ মাটি, দিগন্ত স্বর্ণালী।
বইতে থাকুক স্নিগ্ধ বাতাস, দরজা-জানলা হাট।
দৌড়ে চলার পথ ছুঁয়ে যাক তেপান্তরের মাঠ।
ঘুচিয়ে কালো অন্তরে দাও নতুন দিনের স্বাদ –
ভোরের কলি, এই আমাদের ছোট্ট আশীর্বাদ।
অনিরুদ্ধ সেন
থানে, মহারাষ্ট্র
- বিস্তারিত
- লিখেছেন অনিরুদ্ধ সেন
- ক্যাটfগরি: ছড়া-কবিতা
ছুটি আর ছুটির মন
আজ সকাল থেকেই ছুটির মনটা তাধাই নাধাই আগাডুম্ বাগাডুম্ তিড়িং বিড়িং করছে। পড়ায় মন নেই। অবাধ্য মন কেবলই ছুটে যাচ্ছে বই থেকে। মা বাবা পিন্টুকাকুর বাড়ি গেছেন। পিন্টুকাকুর বাড়ি বাবা, মা প্রায়ঃশই যান। পিন্টুকাকু বাবার কেমন যেন দূরসম্পর্কের ভাই হন। মা যাবার সময় বলে গেছেন সব হোমওয়ার্ক শেষ করে রাখতে। হোমওয়ার্ক করা তো দূরের কথা। ছুটির মাথায় লাল, নীল, হলুদ, সবুজ নানারঙের ঢেউ। ঢেউগুলো কখনো থেমে থাকছে না। বিভিন্ন আকার অবয়ব নিচ্ছে ক্রমাগত। কখনো ত্রিভূজ, কখনো বর্গক্ষেত্র, কখনো আয়তক্ষেত্র, কখনো বা সম্পূর্ণ একটা রঙবাহারের বৃত্ত। তারই মধ্যে একটা অস্পষ্ট মুখ চিন্তাটাকে ভেঙেচুরে দিচ্ছে। ছুটির খুব কান্না পাচ্ছে। কেন এমন হয়?
সকাল থেকেই মনের কোন তল পাচ্ছে না সে। ঘুম থেকে উঠেই বাইরেটা দেখে ছুটির মনটা খুশীতে ভরে উঠেছিল। বৃষ্টিধোয়া সতেজ সবুজ দিনে আকাশ জুড়ে রামধনু দেখে ছুটির মনে আনন্দের বুদ্ বুদ্। কাল সারারাত্তির বৃষ্টি হয়েছে। এখন মেঘ কেটে পরিষ্কার আকাশে নানারঙের খেলা। রোদ ঝলমলে দিন হলেই ছুটির মন ভালো হয়ে যায়। মনের মধ্যে রিন্ রিন্ ঝিন্ ঝিন্ করে। ইস্কুলে যেতে মনখারাপ হয় না। আজ অবশ্য ছুটির ইস্কুল নেই। গতকাল থেকে গরমের ছুটি পড়েছে। এমনিতে ছুটি ইস্কুলে যেতে ভালোবাসে না। সে পড়াশোনায় খারাপ না। কিন্তু ইস্কুল তার একদম ভালো লাগে না। চারদেয়ালের মধ্যে ছুটির দম বন্ধ লাগে। কিন্তু আজ দিনটা অন্যরকম। ইস্কুল নেই। তার ওপরে চনমনে রোদ। ঘুম থেকে উঠেই ছুটির ভালোলাগায় মনটা ভরে উঠেছিলো।
এমনি সময়েই চোখে পড়লো মেয়েটাকে। ছুটিরই বয়সী। জামাকাপড় ময়লা। কাদা ভর্তি পা নিয়ে মুখ কালো করে বসে আছে। মুখটা খুব করুণ। ছুটির মনটা খারাপ হয়ে গেল। এমন দিনে কেউ মনে দুঃখ নিয়ে বসে থাকতে পারে? রোদ্দুর আর নানাবাহারের রঙের খেলা। তবুও মনে দুঃখ? কিসের কষ্ট ওর?
আর তারপর থেকেই মনটা ছুটির ছুটে গেছে। কারোর মনেই কষ্ট দেখতে পারে না ছুটি। ঠাম্মা বলেন ছুটির মনটা সমুদ্রের মতো অতল, অন্তহীন, গভীর। সবার জন্যই ছুটির মন কাঁদে। বাড়ির কাজের বুড়ি মা, দুধওয়ালা, বাড়িতে ধূপ বিক্রি করতে আসা বুড়ো লোকটা – সবাইকে দেখেই ছুটির কষ্ট হয়। আজকে ওই মেয়েটা ছুটির মনটা উল্টোপাল্টা করে দিয়েছে। অঙ্ক, ভূগোল, বিজ্ঞান – কোনকিছু্তেই মন লাগছে না তার আর। বাবা, মা চলে গেছেন কখন। কিন্তু দুটো দাগও দেয়নি সে খাতায়। কেন তার এত লাগামছাড়া মন? তার এমন কেন হয়?
নাম-না-জানা একটা কষ্ট ছুটির মনে। মেয়েটার মুখটা তার চোখের সামনে ছবি হয়ে আছে। ছুটি কষ্টটাকে রূপ দিতে পারছিলো না। মেয়েটার মুখটা রামধনুর লাল, নীল, বেগুনি রঙের সঙ্গে মিলেমিশে ঢেউয়ের মতো দুলছিল। আর ঠিক তখনই ছুটির রঙ, তুলি নিয়ে বসার ইচ্ছে হল। ছুটির মন খারাপ হলেই ছুটি আঁকতে ভালোবাসে। সাদা পাতায় জলরঙ ছাড়তেই আস্তে আস্তে বৃষ্টিধোয়া পৃথিবীতে ঘড়বাড়ি, গাছপালা সব কেমন ফুটে উঠতে লাগলো। তারমধ্যেই সাত রঙা রামধনু। ছুটির চোখ থেকে বড়ো বড়ো দুইফোঁটা জল পড়লো সাত রঙা রামধনুর মধ্যে। আস্তে আস্তে বিন্দুদুটো ছড়াতে ছড়াতে ছুটির চোখের সামনেই একটা অস্পষ্ট অবয়ব নিতে থাকলো। ঝাঁকড়া চুলের বড়ো বড়ো চোখের ফ্রক পড়া মেয়েটাকে বেশ চেনা যাচ্ছে। আকাশছোঁয়া রামধনুর একপ্রান্ত মেয়েটার হাতে ধরা। ময়লা জামাকাপড় আর চোখে পড়ে না। রামধনুর রঙে ধুয়ে গিয়েছে তার কাপড়জামা। মুখে একচিলতে হাসি। সাতরঙা রামধনুকে ধরে ফেলেছে যে সে! মনে তাই আর কোনও দুঃখ নেই তার। রামধনু কি সবাই ছুঁতে পারে না সবাই ছুঁতে চায়? ছুটির মনটাও ভালোলাগায় পিড়িং পিড়িং করে উঠলো। হঠাৎই মনে আর কোনও দুঃখ জরইলো না তার আর। এবারে হোমওয়ার্কটা শেষ করে ফেলতে হবে। মা, বাবার আসার সময় হয়ে এলো যে।
ঊর্মিঘোষ-দস্তিদার (দত্তগুপ্ত)
নিউ ইয়র্ক, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র
ছবিঃ
কৌস্তুভ রায়
কলকাতা
- বিস্তারিত
- লিখেছেন ঊর্মি ঘোষ দস্তিদার
- ক্যাটfগরি: গল্প-স্বল্প