খেলাঘরখেলাঘর

মাল্লী

 ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে চান করছে গাছগুলো, নিঝুম হয়ে ভিজছে হরিণ, কাঠবেড়ালী, রঙীন ডানার প্রজাপতি, হলুদ রঙের ছোট্ট পাখি, বড় পাতার লতানো গাছ... সবাই। ভিজছে এই বিশাল অরণ্য...আর এদের সাথে ভিজছে ছোট্ট মেয়ে মাল্লী।

ও তুমি বুঝি মাল্লীকে চেনো না? আচ্ছা একটু সবুর করো বাপু, আমি তোমাকে মাল্লীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। তার আগে বলো তো, তুমি কি কোনোদিন জঙ্গলে বেড়াতে গেছো?

পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখেছো জঙ্গলকে?

সেই সব দেড়শো-দুশো বছরের পুরোনো গাছ গুলোর কাছে গিয়েছো?

ছুঁয়ে দেখেছো তাদের?

ভাবছো এই এতো প্রশ্ন করছি কেনো আমি। তার একটা কারণ আছে। যদি সত্যি এরপর কোনোদিন জঙ্গলে যাও...যদি সত্যি তুমি পায়ে হেঁটে মা, বাবা, কিম্বা দিদির সাথে জঙ্গলে ঘোরো তাহলে কিন্তু অনেক পুরোনো গাছ গুলোর কাছে যেও। তাদের গায়ে হাত দিও। আর তোমার কেমন লাগলো ফিরে এসে জানিও আমাকে। ইচ্ছে করলে কথাও বলতে পারো তাদের সাথে। হ্যাঁ, গাছ বুঝবে তোমার কথা। সত্যি।

মাল্লী

অন্তত মাল্লী সেই কথা বিশ্বাস করে। মাল্লী গাছের সাথে, পাখির সাথে, মাছের সাথে, বয়ে চলা হাওয়ার সাথে কথা বলে...গল্প করে...সবাইকে ভালোবাসে। এই অরণ্য তার বন্ধু।

মাল্লী

গাছ-গাছালিতে ঘেরা দক্ষিণ ভারতের জঙ্গলের মধ্যে ছোট্ট একটা গ্রামে মাল্লী থাকে। তার খুব কাছের বন্ধু ফরেস্ট অফিসারের ছোট্ট মেয়ে, যে কানে শুনতে পায়না, কথা বলতে পারেনা। অথচ মাল্লীর সাথে টই টই করে সারাদিন জঙ্গলে ঘোরে আর গাছের সাথে, পাখির সাথে, হরিণের সাথে বন্ধুত্ত্ব পাতায়।

 মাল্লী

মাল্লীর আরো বন্ধু আছে ডাকঘরের পিয়ন, দুজন ফরেস্ট গার্ড আর গ্রামের সেই প্রাচীন বুড়ি যে তাকে ময়ূর ঠাকুরের গল্প বলেছিলো। যে ঠাকুর জঙ্গলে থাকেন আর কেউ যদি ভালো কাজ করে তাহলে তার ইচ্ছে পূরণ করেন। ঠাকুর তার ইচ্ছাপূরণের নীল রঙের পাথর দিয়ে যান। মাল্লীর ইচ্ছে তার শহর থেকে আসা বন্ধুটি যেন কথা বলতে পারে, শুনতে পারে।

কিন্তু কবে আসবে ময়ূর ঠাকুর? মাল্লী প্রতীক্ষা করে।

এদিকে জঙ্গলের মধ্যে বাড়ছে চোরা শিকারীদের উতপাত। তারা অবাধে মেরে ফেলছে ছোট্ট পাখি, কাঠবেড়ালী, কেটে ফেলছে অনেক পুরোনো সব গাছ যারা মাল্লীর বন্ধু। এইসব দেখে মাল্লী্র খুব দুঃখ হয়, কান্না পায়, কি করবে বুঝে উঠতে পারে না। শুধু সেই প্রাচীন বুড়ি বলে, এদের সবাইকে ময়ূর ঠাকুর শাস্তি দেবে। একদিন মাল্লী জঙ্গলের মধ্যে খুঁজে পায় তার প্রিয় হরিণ ছানাকে, যার পায়ে গুলি করেছে শিকারী আর ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপছে ছানাটি ।

মাল্লী হরিণ ছানাকে ভালো করতে লুকিয়ে রেখে আসে ডাক্তার কাকুর বাড়ি আর ঠিক সেই রাতে মাল্লীর স্বপ্নে আসেন ময়ূর ঠাকুর।

মাল্লী

কি সুন্দর পেখম ছড়িয়ে দিয়ে নাচেন ঠাকুর। চারিদিকে ছড়িয়ে থাকে ফুল, সুন্দর আলো। তিনি মাল্লীকে দেন নীল রঙের একটা পাথর। এই পাথর পেলে মাল্লীর বন্ধু কি সত্যি ভালো হয়ে যাবে?

মাল্লী

মাল্লী

এই প্রশ্নের কোনো উত্তর দেন না পরিচালক সন্তোষ শিবন। তাঁর ক্যামেরা শুধু ঘুরে বেড়ায় মাল্লীর সাথে জঙ্গলের ভেতরে... লতায়...পাতায়...নদী আর ঝরনার জলে... তাদের গ্রামে। যে গ্রাম গুলোর কথা তুমি বা আমি খুব কম জানি, যাদের কথা কেউ খবরের কাগজে লেখে না, টিভিতে দেখায় না। যে গ্রামের লোকেরা খুব গরীব কিন্তু যারা প্রাণ দিয়ে আগলে রাখে জঙ্গলকে।

মাল্লী

এমন গ্রামের কথা, মানুষের কথা, সবার কথা খুব সুন্দর করে বলেন সন্তোষ শিবন তাঁর ছবিতে। তাহানের কথা মনে আছে তো? সেই কাশ্মীরের ছেলেটা। মাল্লীও তেমনই। যদি কোনোদিন ছবিটা দেখো, যদি তোমার লিখতে ইচ্ছে হয় তাহলে ইচ্ছামতীকে জানিও। ইচ্ছামতী তোমার ছবি দেখার, তোমার লেখা পাওয়ার আশায় রইলো। আর এই বর্ষায় আমার তরফ থেকে তোমার জন্য রইলো জল ছপছপে অনেক শুভেচ্ছা। ভালো থেকো।

মাল্লী

 

কল্লোল
উত্তরপাড়া

 

ছবিঃ
ইউটিউব

চলচ্চিত্রবিদ্যা বিষয়ে অধ্যাপনা, তথ্যচিত্র নির্মাণ, ফিল্ম ও টেলিভিশন ধারাবাহিকের চিত্রনাট্যরচনা, এবং ফাঁকে ফাঁকে পেলে নিজের ব্লগে নানা স্বাদের লেখালিখি - বিবিধ ধারার ব্যস্ততার মধ্যে চাঁদের বুড়ির সাথে ইচ্ছামতীর প্রথম পায়ে হাঁটার দিনগুলিতে হাত ধরেছিলেন কল্লোল । এখনো সময় পেলে মাঝেমধ্যেই ইচ্ছামতীর জন্য কলম ধরেন হুগলী, উত্তরপাড়া নিবাসী কল্লোল।