সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

পাঞ্জাব প্রদেশের কাপুরথালা জেলা থেকে একটা রোগা পাতলা ছেলে ১৯৫৬ সালের জুন মাসের কোন এক দিন অমৃত্সরে আসে , তার ইচ্ছে যে সে নাম লেখাবে সেনাবাহিনীতে। ফৌজি অফিসারেরা তাকে ভর্তি করে দিলেন কোর্ অব সিগন্যালস -এ । ছেলেটার ডাক নাম অজিত ,ভালো নাম ছিল হরভজন সিং ভাইনি। হ্যাঁ , ওর গ্রামের নাম ছিলো ভাইনি।
১৯৬২ সালে , চীন -ভারত যুদ্ধে আমাদের দেশ ভারত পর্যুদস্ত হয় । আমাদের নেফা সীমান্তের ( অধুনা অরুণাচল প্রদেশ ) অনেক খানি জমি চীন জবর দখল করে নেয় । ব্যাপারটা হরভজনের খুব মনে লাগে এবং সে ঠিক করে যে ও এই ব্যাপারটার বদলা নিয়ে ছাড়বে । যুদ্ধ করতে গেলে সিগন্যাল কোর -এ থেকে কোন লাভ নেই । লড়তে গেলে, পদাতিক সেনা বা ইনফ্যানট্রি তে যোগ দিতে হবে।

ছেলেটি এবার এলো দিল্লীতে। ওর একান্ত ইচ্ছে শুনে রিক্রুটিং অফিসারেরা ওর বিভিন্ন রকম শারীরিক সক্ষমতা এবং সাধারণ জ্ঞানের পরীক্ষা নিয়ে খুশি হলেন। সে যেহেতু ম্যাট্রিক -পাস ছিল, তাকে ১৯৬৫ সালের জুন মাসে ১৪ রাজপুত রেজিমেন্টে অফিসার পদ দেওয়া হল। তখন ভারত-পাকিস্থান যুদ্ধ চলছে বটে, কিন্তু তার পল্টন সেই যুদ্ধে অংশ নেয় নি । ভারত সেই যুদ্ধে জেতে বটে, কিন্তু চীন সম্বন্ধে ভয় কাটে নি । সেরা ভালো ভালো অফিসার পেলে চীন সীমান্তে পাঠিয়ে দিত । এইভাবেই, হরভজন এলেন সিকিমে ১৮ রাজপুতে মেজর পদে যোগ দিতে। প্রথমে তাকে, শেরাথাং -এ বাঙ্কার -ইন চার্জ করা হল। সে বছর সিকিমে দারুন প্রাকৃতিক বিপর্যয় নামে আর হরভজন তার মোকাবিলার জন্য প্রাণপাত করে্ন ।তাঁর কাজে সন্তুষ্ট হয়ে তাকে পাঠানো হল একটা কোম্পানি-কম্যান্ডার হিসাবে,মেজর পদে নাথুলা পাস-এ ।১৯৬৭ সালে সেখানে চীন ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত -রেখা নিয়ে বিবাদ হলে, চীনা সেনারা হঠাৎ ভারতীয় সেনার উপর গুলি চালায়। মেজর হরভজন সিং অসীম সাহসে লড়ে , সেখানেই মারা যান । মতান্তরে, তিনি সেই সময় নাথুলা পাসে, নিজের সেনাদের জন্য খচ্চরের পিঠে চড়িয়ে মাল আনবার পথে, টাল সামলাতে না পেরে হিমবাহে তলিয়ে হারিয়ে যান । বলা হয়, বহু খোঁজা -খুঁজির পর যখন তাঁর মৃতদেহ পাবার আশা সবাই ছেড়ে দিয়েছে, তখন তিনি তার পল্টনের একজনকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে নিজের মরদেহে পাওয়ার ব্যাপারে এক নির্দিষ্ট স্থানের কথা জানান । পরে ,সেইখান থেকেই যখন তাঁর দেহ পাওয়া যায়। তিনি নাকি এর পরে আবার স্বপ্নে দেখা দিয়ে নিজের সমাধি গড়তে বলেন। এইভাবে ধীরে ধীরে তাঁর উপর দেবত্ব আরোপিত হয় তাকে বাবা হরভজন সিং -নাম দেওয়া হয়।

তাঁর পরিচিত এবং অধিনস্থ সেনারা সেই স্বপ্নাদেশ মেনে তাঁর নামে একটি সমাধি মন্দির তৈরি করেন। শেরাথাং বাঙ্কারের পাশে তাঁর নাম মন্দির গড়া হয় । পরে শোনা যায়, বাবার পুজো করলে সেখানে কর্মরত জওয়ানদের অসুখ হয় না. কেউ কেউ আবার, নিশুতি রাতে তাঁর ছায়া দেখতে পেল। শোনা গেছে, শুধু ভারতীয়রাই নয়, এই অপার্থিব ব্যাপারটা চীনারাও স্বীকার করে নিয়েছে আর যখন ভারত -চীন দু পক্ষের মধ্যে ফ্ল্যাগ মিটিং হয়, তখন তারা আলাদা করে একটা ফাঁকা চেয়ার রেখে দেয়, বাবা হরভজনের জন্য।

ফৌজিরা ছাড়া সেখানকার মানুষও বিশ্বাস করছেন যে বাবার পুজো দিলে তাদের ভালো হবে । এখন তো অন্যান্য জায়গা থেকে আসা ভ্রমণার্থীদের জন্য ছাঙ্গু লেক যাবার পথে রাস্তার উপর বাবা হরভজনের আরেকটা মন্দির করা হয়েছে। ভ্রমণার্থীরাও এখন এইসব গল্প সোৎসাহে শুনছে, বিশ্বাস করছে এবং বাবার ভক্ত -সংখ্যা বাড়াচ্ছে। ঘরের মধ্যে তারা বাবার বসবাসের নানা চিহ্ন খুঁজে বার করছে।

বাবা হরভজন সিং মাত্র ২৭ বছর বয়সে মারা যান। ভারতীয় সেনাবাহিনী, এই সাহসী সেনার সম্মানে তাঁকে প্রতি বছর একদিন করে সাম্মানিক ছুটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেনে। সেই নিয়মে, মাত্র কয়েক ছবর আগে অবধিও, যতদিন না কাগজে-কলমে হরভজন সিং অবসর নিচ্ছেন, প্রতি বছর ১১ই সেপ্টেম্বর , একটা খালি ফৌজি জীপ্ , বাবার মন্দির থেকে তাঁর নামে রাখা নিজস্ব জিনিষ্পত্র নিয়ে রওনা হয়ে নিউ -জলপাইগুড়ি পৌঁছাতো। তারপর কাপুরথালা-গামী ট্রেনে আগে থেকে বুক করা সিটের উপর সেসব রেখে দেওয়া হত। সেই ট্রেন ঐভাবে কাপুরথালা পৌঁছে, আবার একইভাবে সবকিছু নিয়ে ফিরে আসত। সাথে অবশ্যই থাকত একজন সেনা, বাবার সহচর রূপে।

এইভাবেই সত্যি কথা আর অন্ধ বিশ্বাস মিলে মিশে এক পুরোপুরি ভারতীয় আধুনিক লোককথার সৃষ্টি হয়েছে।


ছবিঃ পার্থ মুখার্জি

প্রদোষ প্রদীপ ভট্টাচার্য্য পেশায় চিকিৎসক । ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কিছুদিন কাজ করার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন; বর্তমানে স্থায়ীভাবে কলকাতায় কর্মরত। স্কুলজীবন থেকেই লেখার অভ্যাস, কলেজে দেয়াল-পত্রিকার নিয়মিত লেখক ছিলেন। ছোটদের জন্য লিখতেই বেশি পছন্দ করেন।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা