সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
সুখী রাখাল

ভারতবর্ষ এক বিশাল দেশ। এর কোণে কোণে, পথে প্রান্তরে কত যে গল্প ছড়িয়ে আছে, তার ইয়ত্তা নেই। এই দেশের এক প্রত্যন্ত রাজ্য মণিপুর। এবারের গল্পটি সেখান থেকেই তুলে আনা।

তরুণ রাখালটি একটি বড় বটগাছের তলায় বসে অলসভাবে বাঁশি বাজাচ্ছিল। বনের ধারে বিশাল প্রান্তরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া হাওয়ার সঙ্গে সে সুর ছড়িয়ে যাচ্ছিল দূর থেকে দূরে, দূরান্তরে। আশেপাশে তার ভেড়াগুলি ইতস্ততঃ ঘাস খাচ্ছিল। এই মায়াময় পরিবেশকে ছিন্ন করে একসময় রাখাল উঠে দাঁড়াল। ফেরার সময় হয়েছে যে। বিচিত্র শব্দে সে ভেড়াগুলিকে ডাকত শুরু করল। অভ্যস্ত সংকেতে পশুগুলি ফিরছে; এমন সময় বন থেকে একটা মস্ত বাঘ বেড়িয়ে এল ভয়ানক হালুম ডাক দিয়ে।

রাখাল ভয়ে চম্‌কে, কেঁপে সারা। বাঘটা সোজা রাখালের কাছে এসে বলল, "বনের কাছে ভেড়া চড়াতে এসেছ, জাননা, বনের রাজাকে কর দিতে হয়? শিগ্‌গির একটা হৃষ্টপুষ্ট ভেড়া দাও দেখি? জঠরজ্বালা শান্ত করি।"

রাখাল হাত জোড় করে কাঁচুমাচু হয়ে বলল, " ভেড়া কোথায় পাব, রাজামশাই? এগুলি তো সব পরের ভেড়া। আমি দুটো পয়সার বিনিময়ে এদের চরাতে নিয়ে আসি। আপনাকে যদি একটা ভেড়া দিয়ে দিই, তবে মালিককে কি কৈফিয়ৎ দেব? তারা তো আমাকে পিটিয়ে বাড়িছাড়া করবে।"

বাঘ চোখ পাকিয়ে তাকে ধমক লাগাল। "কি দিবি না? ঠিক আছে, আজ রাত্তিরে কোন না কোন সময়ে তোকেই তোর বাড়ি থেকেই তুলে নিয়ে আসব। অবশ্য তোকে খেতে ভেড়ার থেকেও বেশি ভাল লাগবে।" তার জিভ থেকে কয়েকফোঁটা জল ঝরে পড়ল।

বাঘের কথা শুনে ভয়ে রাখালের হাড়ে যেন ঠক্‌ঠকি লেগে গেল। কোনক্রমে সে ভেড়াগুলি নিয়ে বাড়ি ফিরে আসল। তার মা তখন উঠানে বসে আনাজ কাটছিলেন। অন্ধকার হয়ে আসছে, রাতের রান্নাটা তাড়াতাড়ি সেরে ফেলতে হবে। ধড়াম্‌ করে রাখাল এসে মায়ের পাশে বসে পড়ল। তার মুখ থেকে কথা আর বের হতে যেন চায় না।

মা ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে অবাক! অন্যদিন লাফাতে লাফাতে মাঠ থেকে ফেরে। মাকে জড়িয়ে ধরে কত গল্প করে। আজ এমনধারা কালিবর্ণ মুখ কেন? "হ্যাঁরে, কি হয়েছে রে?" মার প্রশ্নে রাখাল কেঁদেই ফেলল। "মাগো, আমি আর বাঁচবো না।" "কেন, কি হল"? রাখাল আনুপূর্বিক সব ঘটনা বললে, মার মুখেও চিন্তার মেঘ ঘনাল। কি করে? বাঘের সঙ্গে পাঞ্জা লড়া তো যে সে ব্যাপার নয়। মা গেলেন পড়শিদের সঙ্গে পরামর্শ করতে।

সেদিন রাতে প্রতিবেশীরা তাদের বিছানাপত্র নিয়ে রাখালদের বাড়ি শুতে এল। মাটিতে বড় বড় বিছানা করে তারা শুয়ে পড়ল। একদম মধ্যিখানে রইল রাখালের খাট। ভাবখানা এই যে বাঘ যদি আসে তো তাদের টপ্‌কে কি রাখালকে খেতে পারবে? সবাই মিলে বাঘকে পিটিয়ে মেরে ফেলবে।

কিন্তু আসলে হল কি? গভীর রাতে বাঘ এসে যখন এই ব্যবস্থা দেখল, তার মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল। সে নিশ্চুপে গুঁড়ি মেরে রাখালছেলের খাটের তলায় ঢুকল। তারপর পিঠের উপর খাটশুদ্ধ রাখালকে নিয়ে এক মস্ত লাফে সবাইকে পার হয়ে নিমেষের মধ্যে উধাও। এত ফন্দি এঁটেও কেউ কিছুই করতে পারল না। বাঘ দৌড়ে চলল নিজের পথে।

দৌড়ানোর ঝাঁকুনিতে রাখালের ঘুম ভেঙে গেছে। অবস্থা বুঝে তার তো চক্ষু চড়কগাছ। কি করে বাঁচবে সে? বাঘ তখন একটা মস্ত বড় বটগাছের তলা দিয়ে যাচ্ছিল। গাছের ঝুরিগুলো লম্বা হয়ে প্রায় মাটি ছোঁয় ছোঁয়। রাখাল দিশেহারা হয়ে 'রক্ষা করো বাবা...' বলে খাটের উপর থেকে একটা ডাল ধরে ঝুলে পড়ল। বাঘ টেরও পেল না। খালি খাট পিঠে নিয়ে সে দৌড়ে বেরিয়ে গেল।

গাছের উপর ঘনপাতাঘেরা একটা জায়গা খুঁজে রাখাল উঠে বসল। নিজেকে লুকিয়ে রাখার পক্ষে জায়গাটা ভাল। সে এত ভয় পেয়েছে যে পরের দিন সে সেখান থেকে আর নামলই না, সারাদিন ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিল। বিকালবেলা ঘুম থেকে উঠে সে দেখল, গাছের তলায় একদল গরু বসে আছে। রাখাল দেখেই বুঝল, এগুলো বুনো গরু, কারোর গৃহপালিত নয়। গরুগুলো সারারাত সেখানেই বসে জাবর কাটল। জাবর কাটা কাকে বলে জানো তো? গরু যখন খায়, তখন সব গিলে ফেলে। পরে ধীরেসুস্থে বসে খাবারগুলি উগ্‌রে মুখে এনে ফের চিবাতে থাকে; এটাই জাবর কাটা। যাইহোক, সকাল হতেই তারা আবার বনের দিকে চলে গেল খাবারের খোঁজে।

গাছের তলা নিঃঝুম হতেই রাখালছেলে গাছের ওপর থেকে নেমে আসল। প্রথমে সে এগাছ সেগাছ খুঁজে ফল-টল যা পেল, খেয়ে পেট ভরাল। তারপর শুকনো ডাল-পাতা যোগাড় করে একটা ঝাঁটা বানাল। গাছের তলাটা সেই ঝাঁটা দিয়ে পরিষ্কার করে আবার গাছের উপর উঠে বসে রইল।

সন্ধ্যাবেলা গরুগুলি আবার সেখানেই ফিরে এল। পরিষ্কার জায়গা পেয়ে তারা খুব খুশি হল। এরকম পরপর কদিন হবার পর, গরুরা খেয়াল করল, এটা কোন একজনের কাজ। তারা পরস্পর আলোচনা করে ডেকে বলল, " ওহে অজানা মানুষ, তুমি না চাইতেই আমাদের কত উপকার করেছ। আমরা সবাই মিলে তোমায় ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তুমি কোথায় লুকিয়ে আছ? আমাদের সামনে এস, আমরা তোমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চাই।"

রাখাল সব শুনে খুবই খুশি হল। কিন্তু তার মনের ভয় কাটল না। "যদি এটা আমাকে ধরার জন্য সেই বাঘরাজার কোন দুষ্টু ফন্দি হয়?" সে সাড়াও দিল না, নামলও না, চুপ করে লুকিয়ে রইল।

গরুরা যখন দেখল, তাদের ডাকাডাকিতে কোন কাজই হল না, তারা আরেকটা উপায় ভাবল। তাদের মধ্যে এক বুড়ো গরু ছিল। সকলে মিলে ঠিক করল, কাল সকালে যখন তারা বনের দিকে যাবে, বুড়ো গরুটা থেকে যাবে। সেই দেখবে কে রোজ এসে তাদের জন্য গাছতলা পরিচ্ছন্ন করে রাখে।

গরুরা সকালে চলে যাবার পর, পরিকল্পনামত বুড়ো গরুটা অসুস্থ হবার ভান করে শুয়ে শুয়ে কাত্‌রাচ্ছিল। রাখাল নেমে এসে যখন বুড়ো গরুটাকে দেখল, সে তার সেবা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। নানারকম লতাপাতা, জল খাইয়ে সে গরুটাকে একটু সুস্থ করে ফিরে যাবে, এমন সময় গরুটা তার পরণের ধুতির প্রান্তটা দাঁত দিয়ে চেপে ধরল। রাখাল যত টানাটানি করে, গরুটা তত আরো শক্ত করে ধুতিটা চেপে ধরে। কিছুতেই ছাড়াতে না পেরে হতাশ রাখাল সেখানেই বসে পড়ল।

সন্ধ্যে হতে বাকি গরুরা ফিরে এল। রাখালকে দেখতে পেয়ে তাদের সেকি উল্লাস! তারা যে কতভাবে ছেলেটিকে তাদের অন্তরের ভালবাসা, কৃতজ্ঞতা জানাবে ভেবেই পায় না। তারা রাখালকে বলল, সে তার প্রয়োজনমত যত খুশি দুধ তাদের থেকে নিতে পারে। রাখালের তো ভারি মজা। সে রোজ সকালে পেট ভরে গরুদের দেওয়া দুধ খায়; বেলা হলে এগাছ ওগাছ থেকে নানা রকমের ফল পেড়ে পেট ভরায়। রাতের বেলা গাছের উপর ঘুমিয়ে থাকে। খেয়ে দেয়ে তার চেহারা তো এই তাগ্‌ড়াই হয়ে গেল। সে আর বাড়ি ফিরে গেল না।

একদিন হল কি, রাখাল সকালে যখন গাছের তলা পরিষ্কার করছিল, সে খেয়াল করল, আশপাশের গর্ত থেকে কয়েকটা সাপের বাচ্চা বেড়িয়ে এসে খাবার খুঁজছে। বাচ্চাগুলি এত রোগা যে তাদের দেখে রাখালের মনে কষ্ট হল। তখন থেকে প্রত্যেক দিন সে তাদের খানিকটা করে দুধ খেতে দিতে লাগল। সাপের বাচ্চাগুলির খেতে পেয়ে তো মহাস্ফূর্তি। নিয়মিত দুধ খেয়ে তারা বেশ মোটাসোটা হয়ে উঠল। তাদের গায়ে জোর হল; তারা বনের মধ্যে খেলে আর ঘুরে বেড়িয়ে দিন কাটাতে লাগল। এভাবেই একদিন তাদের সঙ্গে তাদের মায়ের দেখা হয়ে গেল। মা তো বিশ্বাসই করতে চায় না যে এরা তারই ছেলে! খেতে দিতে না পেরে সে বাচ্চাদের জঙ্গলে ফেলে চলে গিয়েছিল। আজ তাদের এই চেহারা! ছেলেরা তখন মাকে রাখালছেলের কথা জানাল, কিভাবে সে তাদের রোজ দুধ খাইয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছে। খুব খুশি হয়ে মা-সাপ রাখালের কাছে এসে কৃতজ্ঞতা জানাল আর তাকে বর দিতে চাইল। "তুমি কি চাও আমার কাছে? আমি তোমার সেই ইচ্ছাই পূর্ণ করব"। রাখাল বলল, " যদি তাই হয়, তবে আমার সমস্ত শরীর ও চুলের রং সোনার মত হয়ে যাক।" আর কি অবাক কাণ্ড! পলকে রাখালের শরীর ও চুলের রং সোনার মত হয়ে গেল! তাকে দেখতে এত সুন্দর লাগছিল যে চোখ ফেরানো যাচ্ছিল না।

সাপেরা তো চলে গেছে। রাখালের দিন কাটছে রোজের মতই। একদিন সে নদীতে স্নান করতে গেছে। জলে ডুব দিয়ে উঠে রাখাল দেখল, তার একটা সোনালী চুল জলে ভেসে যাচ্ছে। কি মনে হতে সে চুলটাকে একটা পাতার ঠোঙায় ভরে আবার ভাসিয়ে দিল। স্রোতের টানে সেটা গিয়ে পৌঁছাল আরেক ঘাটের কাছে যেখানে স্নান করছিল সে দেশের রাজকন্যা। পাতার ঠোঙা ভেসে যাচ্ছে দেখে রাজকন্যা কৌতূহলী হয়ে সেটাকে তুলে নিয়ে সেই চুলটা দেখতে পেল। সোনালী রঙের সুন্দর চুলটা দেখে রাজকন্যার এতই পছন্দ হল যে সে তার বাবার কাছে বায়না ধরে বসল বিয়ে যদি করতেই হয় তবে এই চুলের মালিককেই সে বিয়ে করবে, অন্য কাউকেই নয়। রাজামশাই কি করেন, একমাত্র মেয়ে বলে কথা; তিনি চতুর্দিকে লোক পাঠালেন সোনালী চুলের মালিককে খোঁজার জন্য।

কত মাস কেটে গেল, চার দিক থেকে সবাই ফিরে আসল হতাশ হয়ে। শুধু জঙ্গলে যারা গিয়েছিল, তারা ফেরেনি। আশায় আশায় রাজার দিন কাটে আর রাত কাটে। শেষে একদিন তারা ফিরল। না, না, ভুল হল, তারা নয়, মাত্র একজন। তার জামা-কাপড় ছেঁড়া আর মলিন হয়ে গেছে। সে রাজাকে জানাল, এরকম চুলওয়ালা একজনকে তারা গভীর বনের ভিতর দেখতে পেয়েছিল। সে এক রাখাল ছেলে। সেনাপতি তাকে প্রথমে বিনীতভাবে, তারপর ক্রমশঃ জোর করে তাকে ধরে নিয়ে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সে কিছুতেই তাদের সঙ্গে আসতে রাজি নয়। সে নাকি বিয়েই করবে না। সেনাপতি যখন ঠিক করলেন তাকে চ্যাংদোলা করে নিয়ে আসা হবে, তখন এক অদ্ভুত কাণ্ড ঘটল। ছেলেটি মিষ্টি সুরে বাঁশী বাজাতে লাগল আর কোথা থেকে সব বুনো গরুর দল এসে ধারালো শিং দিয়ে এমন গুঁতোতে শুরু করল যে সব সৈন্যরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালাতে পারলে বাঁচে। কতজন যে মারা পড়ল তার ঠিক নেই। এ লোকটি কোনরকমে প্রাণ নিয়ে ফিরে এসেছে রাজাকে খবর দিতে।

সুখী রাখাল

এসব শুনে রাজা খুব আশ্চর্য হলেন। তাঁর মনে হল, ওই বাঁশীটার এত ক্ষমতা! তবে তো বাঁশীটা তাঁকে পেতেই হবে। মানুষ দিয়ে যে হবে না, সেটা তো দেখাই গেল। তাই তিনি তাঁর পোষা একদল কাককে বনে পাঠালেন বাঁশী আনতে। কাকগুলি গিয়ে প্রথমে বটগাছে বসল, তারপর সবাই মিলে কা কা করে দারুণ হল্লা লাগিয়ে দিল। শান্ত বনভূমিতে সেকি কলরব! রাখাল বিরক্ত হয়ে প্রথমে হাতের কাছে ইঁট পাটকেল যা পেল তাই ছুঁড়ে কাকগুলিকে তাড়ানোর ছেষ্টা করল। কিছুতেই কিছু হয় না। কাকের চিৎকার আর থামে না। এবার রাখাল ভীষণ রেগে হাতের বাঁশীটা ছুড়ে মারল। আরে, কাকরা তো এটাই চাইছিল। চট্‌ করে একজন বাঁশীটা ঠোঁট দিয়ে লুফে নিল, তারপর সবাই মিলে সেখান থেকে হু-উ-স করে একেবারে ভোঁ-ভা।

বাঁশী পেয়ে রাজার আনন্দ তো ধরে না। এবার তিনি রাখালকে ধরে আনতে আরেক দল সৈন্য পাঠালেন। এবারও রাখাল অন্য একটা বাঁশী নিয়ে বাজাতে লাগল। কিন্তু সে বাঁশীর থেকে কিছুতেই তার মনোমত সুর বেরোল না। গরুরা তার বাঁশীর সুর চিনতে পারল না। তাই এবার গরুরা তাকে রক্ষা করতে আসল না। আর সৈন্যরা তাকে বেঁধে রাজার সামনে এনে ফেলল।

রাজা একদম দেরি করলেন না। ধূমধাম করে রাজকন্যার সাথে তার বিয়ে হয়ে গেল। তাদের থাকার জন্য রাজা একটা নতুন বাড়ি সুন্দর করে সাজিয়ে দিলেন, অনেক দাসদাসী আর প্রচুর টাকা দিলেন আরাম করে থাকবার জন্য। রাখাল আর তার রাজকন্যা বউ সেখানে ভালভাবেই থাকতে লাগলেন।

কিন্তু এততেও রাখালের মন খারাপ। কেন! তার এত জাঁকজমক হৈ-চৈ ভালই লাগছিল না। তার সেই ফেলে আসা শান্ত বনের পরিবেশ আর গরু-বন্ধুদের কথা মনে পড়ত আর সে মলিন মুখে মন খারাপ করে ঘুরে বেড়াত। এত সুন্দর বৌ, দুজনেই দুজনকে এত ভালবাসে, কিন্তু তবুও রাখাল আগের জীবনের কথা কিছুতেই ভুলতে পারে না।

একদিন রাখাল তার বৌকে জিজ্ঞাসা করল, "তুমি কি জান, তোমার বাবা আমার যে বাঁশীটা জোর করে নিয়ে এসেছিলেন, সেটা কোথায় আছে? বাঁশীটা আমার এত প্রিয় ছিল।" রাজকন্যা হেসে বলল, "ওঃ, এই জন্য তোমার মন এত খারাপ? তুমি আমায় আগে বলবে তো? " সে বাক্স থেকে বাঁশীটা বের করে রাখালের হাতে দিল।

বাঁশীটা হাতে পেয়ে রাখালের সে কী স্ফূর্তি। মনের আনন্দে দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে সে বাঁশীতে ফুঁ দিতেই বেজে উঠল তার প্রিয় সুরগুলি। বাতাসে ভেসে ভেসে সে সুর পৌঁছে গেল গরুবন্ধুদের কানে। চেনা সুর কানে যেতেই তারা আনন্দে হাম্বা স্বরে ডেকে উঠল, তারপর ছুটে চলল সুর লক্ষ্য করে।

রাজবাড়ির রক্ষীরা হাঁপাতে হাঁপাতে রাজার কাছে এসে পড়ল, "মহারাজ, বাঁচান। হাজার হাজার গরু রাজকন্যার প্রাসাদের চারদিক ঘিরে ফেলেছে। তারা উন্মত্তের মত দরজায় আঘাত করছে। দরজা ভেঙে পড়ল বলে। কী করণীয় বলে দিন।"

রাজা তো অবাক। গরুগুলি এখানেও এসেছে! তিনি দৌড়ে প্রাসাদের বারান্দায় এসে দেখলেন অবস্থা সাংঘাতিক। তিনি চেঁচিয়ে বললেন, "তোমরা কী চাও?" মহাকলরব করে গরুরা জানাল, তারা তাদের প্রিয় বন্ধু রাখালকে ফেরৎ চায়। বেগতিক দেখে রাজা রাজী হলেন তাদের কথা মানতে। গরুরা খুশি হয়ে তাদের বন্ধুকে আর তার বৌকে পিঠে বসিয়ে ফিরে গেল সেই বনে।

কিন্তু রাজকন্যা বলে কথা! সে কী পারে গাছের উপরে থাকতে? রাজা তাঁর মেয়ের কথা ভেবে বনের মধ্যে এক মস্ত প্রাসাদ তৈরী করে দিলেন আর রাখালকে তাঁর রাজ্যের অর্ধেক দান করলেন। কিন্তু তাতে কী হয়? প্রকৃতির কোলে যে সুখ বা স্বাধীনতা আছে, তা দরজা-জানালাওয়ালা বাড়িতে কি করে পাওয়া যাবে? তাই দেখা গেল, রাখাল আর রাজকন্যা বেশির ভাগ সময় বনে ঘুরে ফলমূল খেয়ে আর গাছের উপর আনন্দে রাত কাটাচ্ছে আর বাড়িটা তার সমস্ত বৈভব নিয়ে খালি পড়ে রয়েছে। এভাবেই সুখে দিন কাটতে লাগল সেই রাখাল আর তার রাজকন্যা স্ত্রীর।


(মণিপুরের লোককথা)

ছবিঃ দীপায়ন সরকার

শুক্তি দত্ত ভালবেসে প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। রূপকথা, প্রাচীন সাহিত্য, দেশবিদেশের লোকসাহিত্য, গল্পকথা পড়তে ভালবাসেন। সেগুলো নিয়ে আলোচনা বা শিশুদের সেই গল্প শোনাতেও ভালবাসেন। প্রধানতঃ শিশুমনস্তত্ত্ব ও তাদের শিক্ষাসংক্রান্ত কাজে দীর্ঘকাল কাটিয়েছেন। সেটা শুধু পড়ানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; তিনি শিশু সাহিত্য, লোকসাহিত্য প্রভৃতিকে তাদের মূল্যবোধ বিকাশে কাজে লাগাতে চান।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা