খেলাঘরখেলাঘর

পরের দিন আমরা গেলাম চিঞ্চেরো বলে এক জায়গায়। এইখানে এখনও সেই প্রাচীন ইন্‌কা পদ্ধতিতে কাপড় বোনা এবং রঙ করা হয়। চিঞ্চেরোর অধিবাসীরা এখনও সেই পুরানো প্রথা কে সযত্নে ধরে রেখেছেন। এই প্রথা ধরে রাখার পেছনে ন্যাশ্‌নল জিওগ্রাফিক এর অবশ্য একটা বড় ভূমিকা আছে

চিঞ্চেরো


চিঞ্চেরোতে দিনের বেলা খোলা বাজারে বিক্রি হয় এইসব কাপড়। এর রঙ নষ্ট হয় না, এবং কাপড়গুলি খুব আরামদায়ক।

চিঞ্চেরো


তারপর আমরা দেখলাম লা মারিনেরা, পেরুর জাতীয় নৃত্যশৈলী। এই শৈলীতে একসাথে ছেলে এবং মেয়েরা নাচ করে; তাদের এক হাতে থাকে রুমাল। অন্য হাতে ধরা থাকে টুপি এবং পরনের স্কার্টের কুঁচি।

লা মারিনেরা


পেরুর গল্প শেষ করব 'লর্ড অফ মিরাক্‌লস' এর ছবি দেখে। ১৬৫১ খ্রীষ্টাব্দে, পেরুর রাজধানী লিমার এক দেওয়ালে, লর্ড অফ মিরাক্‌লস বা কৃষ্ণকায় যিশুর মুরাল এঁকেছিলেন বেনিতো নামের এক কৃতদাস। ১৬৫৫,১৬৮৭ এবং ১৭৪৬ সালে পেরুতে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়। খুবই বিস্ময়করভাবে, এই সমস্ত সময়ে, ওই বিশেষ দেওয়ালটিতে কোন ফাটল ধরেনি বা সেটি ভেঙ্গেও পড়েনি। এই অদ্ভূত ঘটনা দেখে মানুষের মনে ধীরে ধীরে বিশ্বাস জেগে ওঠে; সেই কৃষ্ণকায় যিশুর নাম হয়ে যায় 'লর্ড অফ মিরাক্‌লস' । ১৭৭৬ খ্রীষ্টাব্দে ঐ দেওয়াল ঘিরে তৈরি হয় 'চার্চ অফ নাজারেনাস'।
প্রতিবছর অক্টোবর মাসের কয়েকটি বিশেষ দিনে 'লর্ড অফ মিরাক্‌লস' এর উপাসনা করা হয় লিমার রাস্তা শোভাযাত্রা করে। ফুল আর বেগুনী রঙের বেলুন দিয়ে সাজানো হয় গোটা নগর, সবাই বেগুনী রঙের পোশাক পরে।

মিরাক্‌ল্‌স্‌


দুই টন ওজনের সেই মুরাল টিকে নিয়ে বিভিন্ন উপাসকের দল শোভাযাত্রা করে যান নগরের বিভিন্ন রাস্তায়। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন অগুন্তি মানুষ।

কালো যীশু


ভাবলে বেশ অবাক লাগে , তাই না? এই ছবিটা আমাদের খুব পরিচিত একটা ছবির মত, ঠিক কিনা? আমরাও তো দুর্জাপুজোর সময়ে সাজিয়ে তুলি আমাদের শহর গ্রাম, আর ঠিক এইভাবেই পুজোর পাঁচদিনের শেষে, প্রতিমা নিয়ে শোভাযাত্রা করে ভাসান দিতে যাই, তাই না?

যে দেশেই হোক না কেন তোমার বাড়ি, যাই বা হোক তোমার ভাষা, ধর্ম, পোষাক, বা গায়ের রঙ --- সৃষ্টির আনন্দ, ঈশ্বরে বিশ্বাস, একে অপরকে ভালবাসা ও শ্রদ্ধা করা - দেশ-কাল নির্বিশেষে মানুষের মনের ভাবনাগুলি কিন্তু সর্বত্রই এক। তাই আমরা কয়েক হাজার বছর পরেও মাছুপিচ্ছুতে ইনকাদের সৃষ্টি দেখে বিস্মিত হই, মারিনেরা দেখে আনন্দ পাই আর 'লর্ড অফ মিরাক্‌লস' এর শোভাযাত্রায় গিয়ে আমাদের মাথা বিশ্বাসে নুয়ে পড়ে।

 



ছবি ও তথ্যঃ

আশিস্‌ সান্যাল
কলকাতা

অনুলিখনঃ
মহাশ্বেতা রায়
কলকাতা