সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
আমাদের হাওয়াই ভ্রমণ

হাওয়াই বা দ্য স্টেট অফ হাওয়াই (The State of Hawaii) হল আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের একটি অঙ্গরাজ্য। আমেরিকার মূল ভূখন্ড থেকে পশ্চিমে, প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝে রয়েছে আমেরিকার এই অঙ্গরাজ্য। সমুদ্রের মাঝে যখন, তখন বোঝাই যাচ্ছে হাওয়াই অবশ্যই একটা দ্বীপ। কিন্তু না , হাওয়াই একটা দ্বীপ নয়, বরং অপূর্ব সুন্দর সব বেলাভূমি এবং বিশালাকায় আগ্নেয়গিরিতে ভরা একটা বড়সড় দ্বীপপুঞ্জ । হাওয়াই একটা প্রাক্তন দ্বীপ রাষ্ট্র। মাত্র ১৯৫৯ সালে হাওয়াই আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চাশতম রাজ্য হিসেবে যুক্ত হয়। কয়েক মাস আগে মা-বাবার সঙ্গে হাওয়াই-এর সবথেকে বড় দুটো দ্বীপে বেড়াতে গিয়ে আমি হাওয়াই সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য আবিষ্কার করলাম।

আমরা ওয়াহু (Oʻahu) দ্বীপে নামার পরে, রাজধানী হনলুলুর (Honolulu) একেবারে মাঝামাঝি অবস্থিত আমাদের হোটেলে নিজেদের জিনিসপত্র সব জমা করলাম। তারপরেই ছুটে গেলাম সাদা বালির তটভূমি আর সবুজাভ জল দেখতে । আমাদের হোটেলের খুব কাছেই ছিল ওয়াহুর বিখ্যাত বীচ ওয়াকিকি। আমরা ভেবেছিলাম যে বীচটা ফাঁকা থাকবে, কিন্তু সেখানে এত বেশি ভীড় ছিল যে আমার মনে হচ্ছিল কারোর না কারোর সঙ্গে ধাক্কা না লেগে আমরা এগোতেই পারব না।

আমাদের হাওয়াই ভ্রমণ
পার্ল হারবার -এ যুদ্ধজাহাজ ইউ এস এস মিসৌরি (USS Missourie), যা এখন এক মিউজিয়াম

পরের দিন , আমরা 'পার্ল হারবার’ দেখতে গেলাম। আমেরিকার মানুষদের কাছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে এই জায়গাটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সেখানে নানা সংগ্রহশালা, পুরনো যুদ্ধজাহাজ, পুরনো যুদ্ধবিমান ইত্যাদি দেখলাম। ১৯৪১ সালে ঘটে যাওয়া সেই ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী এই সমস্ত জিনিস — যেগুলি যুদ্ধে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছিল, আর যেগুলি বেঁচে গেছিল— দেখে অদ্ভূত অবাক লাগছিল।

আমাদের হাওয়াই ভ্রমণ
রেইনফরেস্ট-এর মধ্যে দিয়ে হাইক

ওয়াহুতে আমাদের শেষ দিনে, আমরা গেলাম 'ডায়মন্ড হেড’ দেখতে। এই জায়গাটাতে একশোটা সিঁড়ি বেয়ে একটা উঁচু জায়গাতে উঠলে পুরো দ্বীপের চারিপাশটা দেখতে পাওয়া যায়— যাকে বলে 'প্যানোর‍্যামিক ভিউ'। কিন্তু , কোভিড দূরত্ববিধি মেনে সেখানে ততক্ষণে দর্শক সংখ্যা পূর্ণ হয়ে গেছে। আর আমাদের হাতে সময় ছিল না যে অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করব। তাই, আমরা চললাম একটা জলপ্রপাত দেখতে। সেখানে যাওয়ার পথের দুইপাশের দৃশ্যগুলি দুর্দান্ত সুন্দর ছিল। কিন্তু সেই জলপ্রপাত অবধি যাওয়ার জন্য হাইক করার পথটি একেবারেই অন্যরকম ছিল —কাদাভরা, পিছল, প্রচুর ছোট ঝোরাতে ভরা সেখানকার রেইনফরেস্ট-এর মধ্যে দিয়ে। সেই ত্রিশ ফুট উঁচু জলপ্রপাতের কাছে পৌঁছাতে গেলে পুরো সেই উচ্চতা হাইক করে ওই দুর্গম পথে উঠতে হত। তাই সেই পুরো পথটা আমরা আর গেলাম না।

আমাদের হাওয়াই ভ্রমণ
ডোল পাইন্যাপ্‌ল্‌ প্লান্টেশন

এর পরেই আমরা গেলাম ডোল পাইন্যাপল্‌ প্ল্যান্টেশন-এ আনারসের খামার দেখতে। এই খামার থেকে আমেরিকার মূল ভূখন্ডে আনারস পাঠানো হয়।

আমাদের হাওয়াই ভ্রমণ
কালোকো- হোনোকোহাউ ন্যাশনাল হিস্টোরিকাল পার্ক

আমাদের হাওয়াই ভ্রমণ
প্রাচীন ফিশপন্ড

পরের দিন সকালে, আমরা একটা আধাঘন্টার ফ্লাইট ধরে 'হাওয়াই’ (Hawaiʻi) নামের সবথেকে বড় দ্বীপে গিয়ে নামলাম 'কোনা’ শহরে । হাওয়াই দ্বীপটি এই দ্বীপপুঞ্জের সবথেকে বড় দ্বীপ, তাই একে 'বিগ আইল্যান্ড’ নামেও ডাকা হয়। প্লেন থেকে নেমে আমরা একটা বড় জীপ নিয়ে চলে গেলাম কালোকো- হোনোকোহাউ ন্যাশনাল হিস্টোরিকাল পার্ক (Kaloko-Honokōhau National Historical Park ) -এ। হাওয়াই এর আদিম অধিবাসীদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে আমাদের ধারণা দিল এখানকার প্রাচীন ফিশপন্ড বা সমুদ্রপাড়ের মাছ ধরার পুকুরগুলি।সমুদ্রের ধারে বিশেষভাবে তৈরি করা উঁচু পাথরের দেওয়াল দিয়ে ঘেরা থাকত এই পুকুরগুলি। পুকুরের দেওয়াল তৈরি হত পাথরের ওপর পাথর সাজিয়ে। কোনো সিমেন্ট জাতীয় জিনিসের ব্যবহার ছিল না। কিন্তু কোনো যন্ত্রের সাহায় ছাড়াই শুধুমাত্র হাতের সাহায্যে তৈরি এই দেওয়ালগুলি কিন্তু সমুদ্রের ঢেউয়ের চাপে ভেঙে পড়েনি আজও। দেওয়ালের ফাঁক এমন রাখা হত যা দিয়ে ছোট মাছেরা পুকুরের মধ্যে ঢুকে পড়তে পারত। তারপরে বড় হওয়ার পরে আর বেরোতে পারত না।

আমাদের হাওয়াই ভ্রমণ
হোনু

এখানেই আমরা দেখলাম পাথরে রোদ পোহাচ্ছে 'হোনু’ বা green sea turtles।

আমাদের হাওয়াই ভ্রমণ
আদিম অধিবাসিদের রেখে যাওয়া পেট্রোগ্লিফস

এখানেই আমরা দেখলাম হাওয়াই এর আদিম অধিবাসীদের রেখে যাওয়া 'পেট্রোগ্লিফস’ (petroglyphs)। পাথরের ওপর খোদাই করে করে কোনো সংকেত বা ছবি আঁকা থাকলে তাকে পেট্রোগ্লিফ বলে। নানারকমের পেট্রোগ্লিফগুলির মধ্যে স্ত্রী,পুরুষ ইত্যাদি চেনা যায়। তবে এখনও এই সমস্ত সংকেতগুলির অর্থ বুঝে ওঠা সম্ভব হয়নি।

আমাদের হাওয়াই ভ্রমণ
পুউ'হোনুয়া ও হোনাউনাউ ন্যাশনাল হিস্টোরিকাল পার্কে প্রাচীন রাজকীয় আসবাবপত্র

এর পরে, আমরা সেই গাড়িতে গেলাম পুউ'হোনুয়া ও হোনাউনাউ ন্যাশনাল হিস্টোরিকাল পার্কে ( Pu’uhonua O Honaunau National Historical Park) -এ। এই পার্কের বহু প্রাচীন ঐতিহ্য রয়েছে, যেগুলির সম্পর্কে আমাদের গাইড আমাদের বহু তথ্য দিলেন। এই জায়গাটিকে হাওয়াই এর সবথেকে পবিত্র স্থান বলেও মানা হয়।

আমাদের হাওয়াই ভ্রমণ
প্রাচীন মানুষদের ব্যবহার করা ক্যানো এবং অন্যান্য জিনিস

আমাদের হাওয়াই ভ্রমণ
বাঁদিকেঃ'হালে ও কিয়াওয়ে', ডানদিকেঃ সমুদ্রের ধারে দাঁড়িয়ে কাঠের তৈরি প্রাচীন প্রহরী, যারা সবাইকে এই ঐতিহাসিক স্থানের মাহাত্ম্য সম্পর্কে সতর্ক করে

এই স্থানটি হাওয়াই এর 'জীবনদেবতা' লোনোকে উৎসর্গ করা হয়েছে। পু'উহোনুয়া ছিল হাওয়াই এর আদিম অধিবাসীদের কাছে এক আশ্রয়শিবিরের মত। যারা দেশের আইন অমান্য করত , যুদ্ধে পরাজিত হত বা যাদের পরিবারের মানুষরা যুদ্ধে যেত, তারা সবাই এখানে আশ্রয় পেত। এখানে আমরা দেখলাম বহু প্রাচীন মূর্তি, একটি প্রাচীন ক্যানো ( সমুদ্রে যাওয়ার বিশাল জাহাজ) এবং 'হালে ও কিয়াওয়ে' (Hale O Keawe ) - যেটি হল প্রাচীন এক রাজকীয় সমাধি।

আমাদের হাওয়াই ভ্রমণ
গল্‌ফ্‌ খেলার সুযোগ ছাড়া যায় না।

এর পরের দিনটা আমরা শুধুই গল্‌ফ্‌ নিয়ে মেতে রইলাম। হাওয়াই জুড়ে সমুদ্রের ধার ঘেঁষে রয়েছে অসাধারণ সুন্দর সব গল্‌ফ্‌ কোর্স , তাই আমাদের তো সেখানে খেলতে যেতেই হত!

আমাদের হাওয়াই ভ্রমণ
কফি গাছে কফি বিন্‌স্‌

সারা সকাল গ্‌ল্‌ফ খেলে আমরা খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। তাই, আমরা ঠিক করলাম একটা কফি বাগানে ঘুরতে যাব। পৃথিবীর সব থেকে দামী কফিগুলির মধ্যে একটি ব্র্যান্ড হল ‘কোনা কফি’ । এই কফি আসে হাওয়াই দ্বীপ থেকে, তাই অনেক রকম কফি চেখে দেখার সুযোগ হবে ভেবেছিলাম। কফি যদিও বড়দের পানীয় বলেই পরিচিত, কিন্তু গতবছর হাই স্কুলে ওঠার পর থেকে আমি মাঝেমধ্যে কফি খাই। তাই আমার বেশ উত্তেজনাই হচ্ছিল...কিন্তু ওরা শুধুমাত্র গরম কফি ছাড়া কিছুই চেখে দেখতে দিল না। তবুও, কফির অপূর্ব সুগন্ধ আর চারদিকের সুন্দর দৃশ্য দেখে, আর কফি চাষ সম্পর্কে নানারকমের নতুন তথ্য জানার পরে আমার সেই দুঃখ একটু কমে গেল।

আমাদের হাওয়াই ভ্রমণ
সবুজ বালির বেলাভূমি

পরের দিন সকালে, আমরা কোনা থেকে বেরিয়ে দ্বীপের দক্ষিণ দিকে গেলাম। আমরা তিন মাইল খুব পরিশ্রম করে হাইক করে সবুজ বালিতে ঢাকা একটা বেলাভূমি দেখতে গেলাম। এই বালিগুলি সবুজ দেখতে লাগে কারণ এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে জারিত তামা বা oxydized copper মিশে থাকে। আমরা হেঁটে বড় বেশি ক্লান্ত হয়ে গেছিলাম, তাই আমরা ফেরার পথে একটা ট্রাকে চাপলাম। সেটাও একটা মজার ব্যাপার, কারণ সেই ট্রাকে বসার জায়গা ছিল না, তাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ধুলোমাখা পথে ঝাঁকুনি খেতে খেতে ফিরতে হল। এরপরে আমরা যেখানে গেলাম, সেই জায়গাটাকে বলা হয় আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণতম প্রান্ত। এই জায়গা থেকে সমুদ্রের অসাধারণ চেহারা দেখতে পাওয়া যায়। দিনের শেষে বৃষ্টির মধ্যে আমরা আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণতম কটেজটিতে রাত কাটাতে পৌঁছলাম।

আমাদের হাওয়াই ভ্রমণ
হাওয়াই-এর দক্ষিণতম কটেজ, যেখানে আমরা রাত কাটালাম

পরের দিন সকালে আমরা ভোর ভোর উঠে চলে গেলাম কালো বালির বেলাভূমিতে। এইখানে সমুদ্রের ঢেউ খুব জোরালো ছিল ; আমরা এক ঝাঁক সামুদ্রিক কচ্ছপ দেখলাম।

সমুদ্রে সময় কাটানোর পর, আমরা পোষাক বদলে, সেখানকার এক স্থানীয় বেকারিতে খেয়ে চলে গেলাম হাওয়াই ভলক্যানোস ন্যাশ্‌নাল পার্ক-এ (Hawaii Volcanoes National Park ) । আমাদের প্রথম গন্তব্য 'কিলাউই আগ্নেয়গিরি’ (Kilauea)। কিলাউই একটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি। কিন্তু এই আগ্নেয়গিরি যখন শান্ত থাকে তখন খুব কাছে গিয়ে দেখার সুযোগ পাওয়া যায়। এখানে, আমরা ' ইকি ট্রেইল’ নামের একটা নির্দিষ্ট পথ ধরে চার মাইল হাইক করে পৌঁছলাম 'ইকি ক্রেটার' নামের এক ছোটমাপের জ্বালামুখে (pit crater) জমাট বেঁধে থাকা এক 'লাভা লেক'-এর কাছে। 'লাভা লেক' মানে যেখানে দীঘির মত বড় এক গর্তের মত এলাকায় প্রচুর লাভা জমা হয়ে এখন জমাট বেঁধে গেছে।

আমাদের হাওয়াই ভ্রমণ
ইকি লাভা লেকে আমরা

আমরা সেখানে দুপুরের খাওয়া সেরে একটা লাভা টিউব দেখতে গেলাম। এই লাভা টিউব আমাদের বোঝায় আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ থেকে বেরিয়ে লাভা কেমনভাবে নীচের দিকে নিজের পথ করে নেয় ! দিনের শেষে, আমরা গাড়ি নিয়ে একঘন্টা যাত্রা করে পৌঁছলাম কালাপানা (Kalapana) শহরে, যে শহরটা মাত্র তিন বছর আগে কিলাউয়ে ভয়াবহভাবে জেগে ওঠায় লাভায় ভরে গেছিল। আমরা এর পরে তিন রাত একেবারে লাভার ওপরেই থেকে গেলাম বলা যায়!

আমাদের হাওয়াই ভ্রমণ
বাঁদিকেঃ তিন বছর আগে জমাট বাঁধা লাভাস্তরের মধ্যে এখনও দেখা যায় 'স্টিম ভেন্ট' বা বাষ্প নির্গমন পথ; ডানদিকেঃ কালাপানার চাষীরা লাভাস্তরের ওপরেই নতুন চাষ করার চেষ্টা করছেন

আমাদের হাওয়াই ভ্রমণ
বাঁদিকেঃ 'লাভা লেক' যেমন দেখায় ওপর থেকে ; ডানদিকে লাভা টিউব

আমাদের হাওয়াই ভ্রমণ
পথের শেষে 'হোলেই সি আর্চ' (Holei Sea Arch)

এই ন্যাশ্‌নাল পার্কে আমাদের দ্বিতীয় দিনে, আমরা হাইক করে গেলাম কিলাউই (Kilauea) এর অন্য একটা ভিউপয়েন্ট দেখতে। ভিউপয়েন্ট হল আগ্নেয়গিরির মুখের ওপর থেকে দাঁড়িয়ে নীচের পুরো অংশটা দেখতে পাওয়ার একেকটা জায়গা। এর পরে, Chain of Craters নামের একটা পথ ধরে গাড়ি চালিয়ে আমরা দেখতে দেখতে চললাম বিভিন্ন সময়ে কোথায় কোথায় মাটি ফেটে লাভা বেরিয়েছিল। এই রাস্তার শেষ দেখলাম উঁচু থেকে সমুদ্রের জলে লাভা পড়ার সময়ে একটা তোরণের মত (sea arch) তৈরি হয়েছে !

আমাদের হাওয়াই ভ্রমণ
মাউনা লোয়া যাওয়ার পথে; দূরে দেখা যাচ্ছে মাউনা কিয়া পর্বত

হাওয়াই - এর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ আগ্নেয়গিরি হল মাউনা লোয়া (Mauna Loa)। ন্যাশ্‌নাল পার্কে আমাদের শেষ দিনে আমরা সেই আগ্নেয়গিরিকে কাছ থেকে দেখার জন্য গাড়িতে করে যাওয়ার চেষ্টা করলাম, কিন্তু ওপরে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ ছিল। তাই আমরা অন্য এক রাস্তা ধরে ৯,০০০ ফিট ওপর অবধি উঠে গেলাম। ওঠার দুপাশের পথের দৃশ্য অসাধারণ! কিন্তু, আমাদের গাড়ি নিয়ে আগ্নেয়গিরির মুখের কাছে যাওয়ার অনুমতি পেলাম না। তবুও যতটুকু যাওয়া গেল তাতেও মজা কম হল না। আমরা গাড়ির ছাদ সরিয়ে দিয়েছিলাম, আর তারপরই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামল। তারপরে সেই ছাদ আবার নিজের জায়গায় ফিরিয়ে আনতে কত যে সময় লাগল! আসলে আমরা দ্বীপের যেদিকে ছিলাম, সেটি বেশি বৃষ্টিপাতের এলাকা। তাই আমরা ঘন সবুজ রেইনফরেস্টের মধ্যে দিয়ে নানারকমের গাছপালা দেখতে দেখতে এগিয়ে চললাম।

আমাদের হাওয়াই ভ্রমণ
আমাদের দেখা বিভিন্ন জলপ্রপাতগুলি

পরের দিন সকালে, আমরা চললাম অনেকগুলো জলপ্রপাত দেখতে। প্রথমটা খুবই সাধারণ ছিল, আর দ্বিতীয়টা ভালো করে দেখা সম্ভব হয়নি কারণ কাছে যাওয়ার পথগুলি বন্ধ ছিল। তবে তৃতীয় আর চতুর্থ জলপ্রপাতগুলি দারুণ সুন্দর দেখতে ছিল। আমরা রেইনফরেস্ট এর মধ্যে দিয়ে হেঁটে হেঁটে অনেক এমন গাছ দেখতে পেলাম যেগুলি আমরা আগে দেখিনি। এর পরে আমরা 'হিলো’ শহরে গিয়ে সেখানকার ফার্মারস্‌ মার্কেট এ প্রচুর তাজা ফল কিনলাম। সেখানে অনেক অচেনা ফলের সঙ্গে নারকেল, কাঁঠাল, নাশপাতি, পেয়ারা, পেঁপে, আম, কলা, লিচু, আপেল— সবই পাওয়া যাচ্ছিল। আমার তো দেখে দারুণ আনন্দ হল, কারণ আমি ভারতে গেলে এই ফলগুলো খেতে পাই ঠিকই, কিন্তু আমেরিকার মূল ভূখন্ডে এগুলি পাওয়াই যায়না। এইসব ফলগুলি আলাদা রকমের সুস্বাদু ছিল । ভারত আর হাওয়াই-এর কৃষিকাজের মধ্যে এমন মিল দেখে অবাক লাগছিল, ভালোও লাগছিল । এখানে পথের ধারেও নানারকমের ফলের গাছ, আমরা মাঝে মাঝেই পথে পড়ে থাকা ফলের ওপর দিয়ে হেঁটেও গেছি।

আমাদের হাওয়াই ভ্রমণ
লিলি'উওকালানি পার্ক

আমরা পরের দিন আবার 'হিলো’ তে ফিরে গেলাম সমুদ্রের তীরে সময় কাটাতে। আমরা একটা ব্রিজ পেরিয়ে কোকোনাট আইল্যান্ড বলে এক দ্বীপে গেলাম , সেখানে খানিক সাঁতার কাটলাম। তারপরে আমরা গেলাম লিলি'উওকালানি পার্ক-এ (Liliʻuokalani Park) । এই পার্কের নামকরণ হয়েছে হাওয়াই এর শেষ রাণীর নামে। এই সাজানো গোছানো পার্কে রয়েছে অনেকগুলি সুন্দর জাপানি বাগান, যেগুলি প্রাচীর জাপানি অভিবাসিদের স্মরণে নির্মাণ করা হয়েছে। দুপুরে খাওয়ার পরে আমরা আবার আরেকটা লাভা টিউব দেখতে গেলাম, কিন্তু সেটা এবড়োখেবড়ো, ভেজা আর অন্ধকার ছিল, তাই আমরা ভেতরে ঢুকে দেখার চেষ্টা করলাম না।

আমাদের হাওয়াই ভ্রমণ
মাউনা কিয়া অবজারভেটরি

এর পরে আমরা চললাম মাউনা কিয়ার (Mauna Kea) পর্বতের দিকে । এটি হাওয়াই এর একটি দর্শনীয় জায়গা । ১৩,০০০ ফুট উঁচু এই পর্বতের ওপরে ওঠার আগে আমাদের গাড়ি পরীক্ষা করা হল। ওপরে ওঠার পথে আমরা প্রথমে শুধুই চারিদিকে মেঘ দেখতে পাচ্ছিলাম। সে যে কী দারুণ দৃশ্য!

আমাদের হাওয়াই ভ্রমণ
মাউনা কিয়ার মাথার ওপর থেকে দূরে দেখা যায় মাউনা লোয়া

মাউনা কিয়া একটি বহু প্রাচীন ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি। এর ওপরে রয়েছে 'মাউনা কিয়া অবজারভেটরি' । এই অবজারভেটরি বা মানমন্দিরে রয়েছে অনেকগুলি বিশাল টেলিস্কোপ, যেগুলির সাহায্যে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালানো হয়।

আমাদের হাওয়াই ভ্রমণ
অনেক ওপর থেকে দেখতে পাওয়া ওয়াইপি'ও উপত্যকা

আমাদের ছুটি শেষ হয়ে আসছিল। হাওয়াই থেকে ফেরার আগের দিন আমরা বিগ আইল্যান্ডের উত্তর দিকে বেড়াতে গেলাম। আমরা ওয়াইকোলোয়া (Waikoloa) নামের একটা ছোট্ট গ্রামে কিছু কেনাকাটা করলাম; তারপরে বীচে বসে খাওয়া সেরে আবার আরেকটা হাইক করতে গেলাম। সেখানে আমরা অনেক দূর অবধি তটভূমি পরিষ্কারভাবে দেখতে পেলাম। এর পরে আমরা গেলাম ওয়াইপিও উপত্যকায় (Waipi'o Valley) । পাহাড়ের ওপর থেকে এই উপত্যকায় নামার যে পথ সেটা এত বেশি খাড়া ছিল যে আমরা সেটা গিয়ে গাড়ি চালিয়ে নামার চেষ্টা করিনি। তাই আমরা পাহাড়ের ওপর থেকেই দেখলাম নীচের উপত্যকা আর পাশের সমুদ্র। সব শেষে, আমরা অন্য এক বেলাভূমিতে গিয়ে দেখলাম কীভাবে একটা নদী একটা উপসাগরে এসে মেশে। জায়গাটা খুবই পাথুরে ছিল, সঙ্গে বড় বড় ঢেউ, কিন্তু চারপাশে নারকোল গাছের সারি আর ছোট্ট ছোট্ট খাঁড়িগুলি দেখতে ভারি ভাল লাগছিল।

আমাদের হাওয়াই ভ্রমণ
সময় হল ঘরে ফেরার...

হাওয়াইতে আমাদের শেষ দিনটা বরং অনেক বেশি একঘেয়ে কাটল। সারাদিন ধরে পুরো দ্বীপটা জুড়ে বৃষ্টি পড়ছিল। তাই, আমরা গাড়িতে করে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ালাম আর নানারকমের ছবি তুলে বেড়ালাম। দিনের শেষে আমরা এয়ারপোর্টের কাছাকাছি একটা ছোট্ট সুন্দর 'বেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্ট’ যাত্রীনিবাসে গিয়ে উঠলাম। সেই যাত্রীনিবাসের মালিক একজন মিষ্টি স্বভাবের ফরাসি মহিলা। আমি স্কুলে ফরাসি ভাষা শিখেছি অনেক বছর। কিন্তু দেখলাম যে আমি তাঁর প্রায় কোনো কথাই বুঝে উঠতে পারছি না! এটাও একটা অভিজ্ঞতা হল!

পরের দিন সকালে আমরা বাড়ি ফেরার জন্য এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। এবং হাওয়াইকে 'গুডবাই’ জানালাম। আমি এই বেড়ানোর অভিজ্ঞতা কোনোদিন ভুলব না, আর অবশ্যই পরে সুযোগ পেলে আবার হাওয়াই এর অন্যান্য দ্বীপগুলিতে বেড়াতে যাব।

( This travelogue is by Anika Lynn Austvold, a student of 10th grade, Providence Academy, Minnesota. Additional information is provided by Prashanti Govindu.)

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা