সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
আমিশ গ্রামে একদিন

আমি থাকি যুক্তরাষ্ট্রের পেন্সিলভানিয়া স্টেটের গেটিসবার্গ শহরে। এখান থেকে ঘণ্টা দেড়েক দূরে ল্যানক্যাস্টার কাউন্টিতে বসবাস আমিশ সম্প্রদায়ের। আমিশরা হচ্ছে একটি খ্রিষ্টান গোষ্ঠী যারা তাদের জীবনযাপনের ধরনের জন্য পরিচিত। আধুনিকতার এই যুগেও তারা ইঞ্জিনচালিত গাড়ি ব্যবহার করে না, ঘোড়ার গাড়িতে চলাফেরা করে। সাদামাটা জীবনযাপন আমিশদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। যেটুকু প্রয়োজন, সেটুকু দিয়েই তারা জীবনযাপন করে।

আমিশদের ব্যাপারে জানার আগ্রহ ছিল আমার ছোটবেলা থেকেই। এত কাছাকাছি আমিশ গ্রাম আছে জেনে কি আর আমি চুপটি করে বসে থাকতে পারি? একটা ছুটির দিনে তাই বেরিয়ে পড়লাম আমিশ গ্রামের উদ্দেশ্যে।

আমিশ গ্রাম পেন্সিলভানিয়ার অন্যতম পর্যটক আকর্ষণ। আমিশ গ্রাম নামে পরিচিত যে জায়গাটা, সেটা মূলত তৈরিই করা হয়েছে পরযটকদেরকে আমিশদের জীবনযাপন সম্পর্কে ধারণা দেয়ার জন্য। এই এলাকায় অনেক আমিশ পরিবারের বসবাস হলেও পর্যটকরা তো আর যে কারো বাড়িতে ঢুকে পড়তে পারে না, তাই একটা আমিশ বাড়ি, যেখানে এখন কেউ থাকে না- সেটাকে জাদুঘরে পরিণত করা হয়েছে। টিকিট কেটে সেই জাদুঘরে ঢোকা যায়। আমরা তাই করলাম। আমাদেরকে আমিশদের জীবনযাপন সম্পর্কে তথ্য দিতে এবং আমিশ বাড়িটির ভেতরটা ঘুরে দেখাতে সঙ্গে এলেন একজন ট্যুর গাইড।

আমিশ গ্রামে একদিন
বাঁ দিকে একটি আমিশ বাড়ি; ডান দিকে বসার ঘর

আমিশ গ্রামে একদিন
আমিশদের শোবার ঘর

আমিশদের বাড়িগুলো তাদের জীবনযাপনের মতোই সাদামাটা। বসার ঘরে গির্জার মতো অনেকগুলো বেঞ্চ, প্রার্থনার জন্য। আমি এতদিন শুনে এসেছিলাম আমিশরা কোনো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে না। তবে অবাক হয়ে দেখলাম, তাদের বাড়িতে ফ্রিজ, টেবিল ল্যাম্প, চুলা- সবকিছুই আছে। এর কোনোকিছুই তারা বিদ্যুতে চালায় না। সবকিছুই আমিশদের নিজেদের তৈরি, আর এসব জিনিস তারা চালায় প্রোপেইন গ্যাস দিয়ে। আমাদের ট্যুর গাইড দেখালেন, টেবিল ল্যাম্পের নিচে কাঠের বাক্সের ভেতরে একটা প্রোপেইন গ্যাসের ট্যাংক রাখা।

আমিশ গ্রামে একদিন
আমিশ মহিলা ও পুরুষদের জামাকাপড়

শোবার ঘরগুলোতে কোনো জামাকাপড় রাখার আলনা নেই। এর মূল কারণ হচ্ছে আমিশদেরমাত্র তিন সেট পোশাক থাকে- এক সেট ঘরে পরার, এক সেট বাইরে কাজে যাওয়ার, আরেক সেট গির্জায় যাওয়ার জন্য। অবিবাহিত মেয়েরা পোশাকের উপরে এক ধরনের সাদা অ্যাপ্রোন পরে। বিয়ের পর তারা আর সাদা রঙ পরে না। ছেলেমেয়ে সবার পোশাকই তৈরি করেন আমিশ নারীরা।

আমিশ গ্রামে একদিন
আমিশ নারীর তৈরি করা 'কুইল্ট'

আমিশ নারীদের আরেকটা অসম্ভব চমৎকার গুণ আছে। তারা চমৎকার নকশাকাটা কাঁথা-কম্বল তৈরি করেন। ছোট ছোট কাপড়ের টুকরো কেটে সেগুলোকে একটা বড় কাপরের উপরে সেলাই করে তারা তৈরি করেন নিখুঁত নকশাকাটা কাঁথা-কম্বল। এসব তারা বাইরে বিক্রিও করেন। কাঁথাগুলোর দাম ঠিক হয়ে বেশ মজার উপায়ে- যে কয় ঘণ্টা লাগে কাঁথা তৈরিতে, সে কয় ডলার দাম। আমরা বিছানার উপরে দেখলাম ৬০০ ডলার থেকে ৭২৫ ডলার পর্যন্ত দামের কাঁথা, অর্থাৎ এগুলো তৈরিতে ৬০০ থেকে ৭২৫ ঘণ্টা সময় লেগেছে!

আমিশ গ্রামে একদিন
আমিশদের পোষ্যরা

বাড়ি ঘুরে আমরা বাইরে এলাম। সেখানে পশুপাখির একটা ফার্ম, যেখানে মূলত আমিশরা যে ধরনের পশুপাখি পোষে, সেগুলো আছে। অবাক হয়ে দেখলাম, অন্য সব পশুপাখির সাথে আমিশরা ময়ূর পোষে! ময়ূর যেহেতু অনেক জোরে শব্দ করে ডাকে, তাই শস্যক্ষেতে পাখি আসতে ভয় পায়। ময়ূর মূলত পাহারাদার কুকুর এবং কাকতাড়ুয়ার কাজ করে।

আমিশ গ্রামে একদিন
বাঁ দিকে হাইড্রো ইলেকট্রিক হুইল, ডান দিকে উইন্ডমিল

আমিশরা যেহেতু গ্রিডের বিদ্যুৎ ব্যবহার করে না, তাদের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি চালানোর শক্তি উৎপাদনের নানা উপায় আছে। এর মধ্যে দুটো পদ্ধতি- উইন্ডমিল এবং হাইড্রো ইলেক্ট্রিক হুইল দেখলাম আমরা। এর উইন্ডমিল হচ্ছে একটা উঁচু টাওয়ারের উপর বড় একটা পাখা যা বাতাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। হাইড্রো ইলেক্ট্রিক হুইল হচ্ছে একটা চাকা যেটা পানির প্রবাহের সাথে ঘুরতে থাকে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন করে।

আমিশ গ্রামে একদিন
ঘোড়ায় টানা গাড়ি

আমিশদের ছোট একটা স্কুলঘরও দেখলাম আমরা। ঘোড়ার গাড়ি দেখলাম, সেগুলোতে উঠে চটপট কয়েকটা ছবিও তুলে নিলাম। শেষমেশ স্মৃতি ধরে রাখার জন্য অনেক অনেক ছবি তোলা ছাড়াও একটা ফ্রিজ ম্যাগনেট আর কয়েকটা পোস্টকার্ড কিনে ফেরার পথ ধরলাম।

ছবিঃ লেখক

কিশোরী লেখক মীম নোশিন নাওয়াল খান বাংলাদেশের ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছে। পড়াশোনার পাশাপাশি সমান তালে চালিয়ে যাচ্ছে লেখালেখি, সাংবাদিকতা, ছবি আঁকা, ফটোগ্রাফি ও হাতের কাজ। ইউনিসেফ থেকে চারবার মীনা অ্যাওয়ার্ডসহ বিভিন্ন পুরস্কারজয়ী মীমের অনেকগুলো গল্প, ছড়া ও কিশোর উপন্যাস বই আকারেও প্রকাশিত হয়েছে।  

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা